নিজকে যাচাই করুন; সত্যকে গ্রহণ করুন: (সত্যের সন্ধানে)

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৭ জুলাই, ২০১৭, ০২:৫৬:২৭ রাত

নিজকে যাচাই করুন; সত্যকে গ্রহণ করুন:



আমরা যেমন হুজুগে বাঙ্গালি, তেমনি মুসলিম পৈত্রিকসূত্রে! বুঝে, শুনে, যাচাই-বাছাই করে ঈমানকে পাকা করি নি, বরং বাপ-দাদার বিশ্বাস-মত-পথের উপরই থাকতে বেশি পছন্দ করি। তাই আমাদের সামনে যখন কোনো সত্য আসে তখন তা অপরিচিত হলে (জানা না থাকলে) যাচাই না করেই দুরে ঠেলে দিই বা বাতিল বলে ঘোষণা করে থাকি। কখনো পূর্বপুরুষদের দোহাই দিয়ে কখনো অধিকাংশের (বেশি লোকের আমল) দোহাই দিই।

চিন্তা করুন! যদি আপনি মুসলমান না হয়ে হিন্দু বা খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধ বা শিখ (অন্যান্য যে কোনো ধর্মের) পরিবারে জন্ম গ্রহণ করতেন তাহলে আপনার অবস্থা কী হতো?

সুতরাং যা আপনার বিশ্বাস, মত, পথ তা একটিবার চিন্তা করুন, যাচাই করুন বিবেক দিয়ে, প্রমাণাদি দিয়ে।



মুসলমান হিসেবে জন্ম নিয়েছি আলহামদু লিল্লাহ! কুরআন পড়ুন, বুঝুন। কেননা এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাহর জন্য সর্বশেষ এবং চুড়ান্ত দিকনির্দেশনা (হেদায়েত)।

হাদীস পড়ুন, বুঝুন, গবেষণা করুন, সেই পদ্ধতিতে যেই পদ্ধতিতে সালাফ তথা পূর্ববতী লোকেরা করে গেছেন। হাদীসকে গ্রহণ করতে হয় সনদ যাচাইয়ের মাধ্যমে, নিজের আকল দিয়ে নয়, যুক্তি দিয়ে নয়!



চিন্তা করুন! যদি আপনি "আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতে"র পরিবারে না হয় শিয়া কিংবা কাদিয়ানী (বাতিল যে কোনো ফিরকায়) পরিবারে জন্ম নিতেন, তাহলে কুফুরির সাগরে হাবু-ডুবু খেতেন, যদি কথিত সুন্নী পরিবারে জন্ম নিতেন তাহলে বিদআ'তে লেপ্টে থাকতেন। আলহামদু লিল্লাহ! মহান আল্লাহ আমাকে মধ্যপন্থী পরিবারে এবং মধ্যবিত্ত পরিবারে পাঠিয়েছেন। তাই, অনেক বিদআ'তকে ছাড়তে পেরেছি আর পৃথিবী আমার উপর ভর করে নি।

জাগতিক লিপ্সাই মানুষকে অমানুষ করে তোলে, চাহিদাকে সীমিত রাখতে পারলেই জীবনে সুখি হওয়া যায়। আলহামদু লিল্লাহ!



আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পাঠ করেনঃ

هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ

"তিনিই আপনার প্রতি এই কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন; যার কিছু আয়াত মুহকাম (সুস্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন) এগুলি কিতাবের মূল অংশ; যার অন্যগুলি মুতাশাবিহাত বা রূপক; যাদের মনে বক্রতা আছে, তারা ফিতনা (বিশৃংখলা) সৃষ্টি ও ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রূপক তার অনুসরণ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা সুবিজ্ঞ তারা বলে, আমরা এ বিশ্বাস করি। সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত। বস্তুতঃ বুদ্ধিমান লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে।"



রাবী আইশা (রাঃ) বলেনঃ এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন তোমরা লোকদের 'মুতাশাবিহ', আয়াতের অনুসরণ করতে দেখবে ; তখন জানবে যে, এরা তারা যাদের নাম আল্লাহ্‌ বর্ণনা করেছেন। কাজেই তোমরা এদের থেকে দূরে থাকবে। (বুখারী, তাফসীর অধ্যায়: ৪২৭৩, মুসলিম,কিতাবুল ইলম: ২৬৬৫, আবু দাউদ: ৪৫৯৮. তিরমিযী: ২৯৯৪)

বাতিলপন্থী ফিতনাবাজ, বিদআ'তীরা সব সময়ই আল কুরআনের মুতাশাবিহাহ আয়াত নিয়ে নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে সাধারণ মানুষদের ধোঁকা দেয়। আর সহীহ হাদীসের কথা উপস্থাপন করলে পৌরাণিক বা ইসরাইলি বলে চালিয়ে দেয়।

মুআবিয়া ইবন আবূ সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বলেনঃ জেনে রাখ! তোমাদের আগের আহলে-কিতাব (ইয়াহূদ ও নাসারাগণ বাহাত্তর ফিরকায় বিভক্ত হয়েছে, আর এ মিল্লাতের লোকগণ অদূর ভবিষ্যতে তিয়াত্তর ফিরকায় বিভক্ত হবে। এক ফিরকা হবে জান্নাতী; আর তারা ঐ জামাআতভূক্ত, যারা আল্লাহ্‌র কিতাব এবং তাঁর রাসূলের সুন্নাতের অনুসারী হবে।রাবী ইবন ইয়াহ্‌ইয়া এবং আমর (রহঃ) তাদের হাদীছে এরূপ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে অদূর ভবিষ্যতে এমন একদল লোক সৃষ্টি হবে, যাদের মাঝে গুমরাহী এভাবে বিস্তার লাভ করবে, যেমন ক্ষিপ্ত কুকুরের কাঁমড়ানোর ফলে সৃষ্ট রোগ (যা রোগীকে পাগল বানিয়ে দেয়)।রাবী আমার (রহঃ) বলেনঃ ক্ষিপ্ত কুকুরের দংশন জনিত রোগ এমন একটা মারাত্নক ব্যাধি যার বিষাক্ত প্রভাব থেকে রোগীর দেহের রগ ও জোড় কিছুই রক্ষা পায় না।(আবু দাউদ:৪৫৯৭, দারেমী: ২৫১৮, আহমাদ:১৬৪৯০)

কুরআন নিয়ে ঝগড়া করা কুফুরি:



আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআনের মধ্যে নিজের মত ব্যক্ত করে ঝগড়ার সৃষ্টি করা কুফর। (আবু দাউদ:৪৬০৩)

দলীল বিহীন কথা আলেমদের থেকে গ্রহণ করা যাবে না:



ইয়াযীদ ইবন উমায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি মু'আয ইবন জাবাল (রাঃ)-এর সাথী ছিলেন, তিনি বলেনঃ মু'আয ইবন জাবাল (রাঃ) যখন কোন যিকিরের মজলিসে বসতেন, তখন এরূপ বলতেন যে, আল্লাহ্‌ তা'আলা সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং সন্দেহ পোষণকারীরা ধ্বংস হয়েছে। একদিন তিনি বলেনঃ তোমাদের পরবর্তী সময়ে ব্যাপক ফিতনার সৃষ্টি হবে। সে সময় ধন-সম্পদের প্রাচুর্য হবে এবং কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হবে। ফলে, মু'মিন, মুনাফিক, স্ত্রী-পুরুষ, ছোট-বড় গোলাম ও স্বাধীন ব্যক্তি তার জ্ঞান অর্জন করবে। তখন এক ব্যক্তি এরূপ বলবেঃ লোকদের কি হয়েছে? তারা আমার অনুসরণ কেন করে না, অথচ আমি কুরআন পড়েছি! তারা ততক্ষণ আমার অনুসরণ করবে না, যতক্ষণ না আমি কুরআন ব্যতীত অন্য জিনিস তাদের সামনে পেশ করি। কাজেই, কেউ যদি এরূপ কিছু করে, তবে তোমরা তা অস্বীকার করবে। কেননা, এরূপ যা কিছু উদ্ভাবিত হবে, তা গুমরাহী এবং আমি আলিমদের গুমরাহী সম্পর্কে অধিক শংকিত। কেননা, শয়তান কখনো কখনো আলিমদের মুখ থেকে গুমরাহীর কথা বের করে দেয় এবং কোন কোন সময় মুনাফিক ও সত্য কথা বলে।

রাবী বলেনঃ তখন আমি মু'আয (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করিঃ জ্ঞানী ব্যক্তি যে অজ্ঞানের মত কথা বলতে পারে এবং মুনাফিক ও কোন সময় সত্য কথা বলতে পারে, তা আমরা কিভাবে অবগত হতে পারি? তিনি বলেনঃ তোমরা জ্ঞানীদের সে সব কথা পরিহার করবে, যা ভুল ও মিথ্যার সাথে প্রসিদ্ধি লাভ করবে এবং লোকেরা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করবে। এ সময় ও তোমরা তাদের সাথে সস্পর্কচ্ছেদ করবে না; কেননা, হয়তো তারা তা থেকে ফিরে আসতে পারে। তোমরা তাদের থেকে সত্য কথা শ্রবণ করবে এবং তা গ্রহণ করবে। কেননা, হকের মধ্যে সত্যের নূর নিহিত থাকে। (আবু দাউদ: ৪৬১১)

হাদীস অস্বীকারকারী:

আবূ রাফি (রহঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের মাঝে কাউকে যেন এরূপ না পাই- যে তার খাটের উপর বালিশে হেলান দিয়ে থাকে (পার্থিব বিলাসিতায় মত্ত থেকে)। যদি তার কাছে আমার কোন আদেশ বা নিষেধ আসে, তখন সে বলেঃ আমি তো এ জানি না। বরং আমি আল্লাহ্‌র কিতাবে যে নির্দেশ পেয়েছি, তার অনুসরণ করি। (আবু দাউদ: ৪৬০৫, তিরমিযী: ২৬৬৩, বাইহাকী: ১৩০৬৬)

বিদআ'তী গোমরাহী:

আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনের মধ্যে নতুন কিছুর সংযোজন করবে, যা এতে নেই তা পরিত্যাজ্য।রাবী ঈসা (রহঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরা যা করিনি, যদি এমন কাজ কেউ করে, তাবে তা পরিত্যাজ্য। (বুখারী: ২৫৫০. মুসলিম:১৭১৮, আবু দাউদ: ৪৬০৬)

আল্লাহ আমাদের সকল প্রকার ভ্রান্ত মতবাদ, মত-পথ ও বিদআ'ত থেকে হেফাজত করুন। আমীন!!

বিষয়: সাহিত্য

৬৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File