হাসান ফেরদৌসি - ৯

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১৫ অক্টোবর, ২০১৭, ০৫:৪৬:০২ বিকাল

১৫

ফেরদৌসি এখন আর বালিকা বা তরুণী নয়। সে এখন ষোড়শী- ষোল বছরে পদার্পন করেছে। একটা একটা করে কলা পূর্ণ করে এখন সে ষোল কলা পূর্নিমা চাঁদ। তার স্নিদ্ধ কৌমুদী ও বাসন্তি কুসুমদাম অলি মধুকর আকর্ষণে লক্ষ কোটি পাওয়ার ম্যাগনিটিকের চেয়েও তীব্রতর। যৌবন ভারে শরীর ঈষৎচঞ্চল, রুপরাশি উছলিয়া উঠছে, ভাদ্রের ভরা নদীর মত টলমল। কাঁচা হলুদ গাত্রবর্ন, হেমাঙ্গ স্বর্ণ লতিকায় যৌবন শোভা নলিনীর মত সুবিকাশিত, পূর্নেন্দু জ্যোতির ন্যায় বিমল সুশীতল, পূর্বাহ্নিক রশ্মির ন্যায় তেজোময়। আজানু লম্বিত কৃষ্ণ রেশমের মত সুবিশাল চিকুরদাম অবেনি সংবদ্ধ হয়ে যখন পৃষ্ঠোপরি ছড়িয়ে থাকে তখন পশ্চাৎভাগ যেন মখমল মোলায়েম আবরনে ঢেকে যায়, মিহির রশ্মি প্রতিবিম্বিত হয়, মৃদুমন্দ বাত্যা প্রবাহে জল তরঙ্গের মত ঢেউ তুলে, পেঁজা তুলার মত ইতস্তত আন্দোলিত হয়। অলকাবলি প্রাচুর্য্যে কপোল আবৃত হয়ে মুখমণ্ডল যেন মেঘ নিঃসৃত চন্দ্র রশ্মির ন্যায় জ্বলতে থাকে। চওড়া ললাট, শুক্লা দ্বিতীয়ার মত বঙ্কিম ভ্রু যুগল অলকস্পর্শি। তার নীচে ঘন কৃষ্ণ পল্লব রেখা বিশিষ্ট মৃগাক্ষি, মদন চঞ্চল কটাক্ষ- যেন মেঘমালায় বিদ্যুৎদাম। শুক্লা চতুর্দশির মত বর্তুলাকার মুখায়ব অলকমণ্ডল মধ্যে পুর্নেন্দু কৌমুদির প্রভা বিচ্ছুরক, লোহিত পদ্মের ন্যায় গণ্ডদেশ মৃদু হাসিতে টোল খায়, রক্তজবার মত ওষ্ঠাধর মদন রসে টলটলায়মান। কবরী পিষ্ঠ পদ্মারক্ত মরাল গ্রীবা, এর বঙ্কিম ভঙ্গি ও লোল কটাক্ষে উদ্দাম যৌবনের গৌরব দিপ্যমান। চওড়া কাঁধ, প্রশস্ত বক্ষে উদ্যত শৃঙ্গমান বক্ষোজ, সরু মাজা প্রশস্ত কটি। সব মিলিয়ে রুপের বিমুর্ত প্রতিমা, যৌবন আকর। শ্রাবণের ভরা গাঙ্গের ন্যায় তনুদেহে যৌবনের ঢেউ উথলে উঠছে। বর্ষার প্ত্র পল্লব ভারাক্রান্ত বিটপীর ন্যায় যৌবন ভার দলমলিয়ে উঠছে।

ফেরদৌসির জন্য নর পতঙ্গ ঝাপটে পরে, বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের সম্বন্ধ আসতে থাকে আর মা কাঠ অসম্মতি জানিয়ে দেয়। কিন্তু ইদানিং শ্বশুর বাড়িতে পটেটোর আনাগুনা বেড়ে গেল। সে এসে শাশুড়ির সাথে ফিসসিফ করে আলাপ করে আর ফেরদৌসি রাগে গজগজ করে। সে হাসানের সাথে কথা বলে না, এমনকি সালামের উত্তর পর্যন্ত দেয় না, হায়েনার মত চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে থাকে। লোকটাকে তার ভাল লাগে না, এজন্য সে আসলে হাসান দূরে দূরে থাকে। পটেটো কয়েক দিন পরপরই আসে তার ছোট ভাইয়ের সাথে ফেরদৌসির বিয়ের আলাপ নিয়ে কিন্তু শাশুড়ি পাত্তা দেয় না বিধায় তাকে বারবার আসতে হয়। সে শাশুড়ির সাথে পিটপিটিয়ে আলাপ করে আর বুঝায়, নূরানীকে দেখে আমার আব্বা আম্মা খুব পসন্দ করেছেন আবার ফেরদৌসির কথাও শুনেছেন। এখন তারা আমার ছোট ভাইয়ের জন্য ফেরদৌসিকে দাবী করছেন। কাজেই আমি জামাই হয়ে আপনার হাত ধরে অনুরোধ করছি, মুরুব্বীদের দাবীটা আপনি পুরন করুন। আমার ছোট ভাই খুব ভাল ছেলে, এর মত ভদ্র ছেলেই হয় না, কলেজে পড়তেছে, একদিন ভাল চাকরি বাকরি করবে। ফেরদৌসি খুব সুখি হবে।

এভাবে সে দুয়েক দিন পরপর এসে শাশুড়ির হাতে পায়ে ধরে, অনুরোধ করে, কাকুতি মিনতি করে। শাশুড়ি কখনো বলে ‘ওর বিয়ে নিয়ে তোমাদের মাথা ঘামাতে হবে না। কখনো বলে, ‘ওকে অন্যত্র বিয়ে দেয়া যাবে না, সমস্যা আছে। পটেটো চেপে ধরে ‘কি সমস্যা বলেন’ আসল কথাটা জানার জন্য সে শাশুড়িকে বাধ্য করে। তখন তিনি বলেন, তোমার শ্বশুর হাসানের সাথে ওর বিয়ের অসিয়্যত করে গেছেন, আমি অসিয়্যত ভাঙ্গতে পারব না। পটেটো কৃত্রিম বিস্ময় প্রকাশ করে, ‘সর্বনাশ, এত ভাল মেয়েটাকে এমন একটা ছিন্নমূল ফকিরের কাছে বিয়ে দিবেন, ওর জীবনটা নষ্ট করবেন? ওর তো মাথা গুজার একটু ঠাই পর্যন্ত নাই। ফেরদৌসির জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে। এত বড় ভুল কাজ আপনি করবেন না। আপনার মেয়ে বলেই আপনি যাচ্ছে তাই করতে পারেন না, আল্লাহ্‌র কাছে তজ্জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এভাবে সে হাসানের বিরুদ্ধে শাশুড়িকে উসকাতে থাকে।

শাশুড়ি কখনো অধৈর্য্য হয়ে বলেন, তোমাকে এত দরদ দেখাতে তো কেউ বলেনি। তোমাদের যে কি চাল চুলাটা আছে, আর তোমার ভাই যে হাসানের চেয়ে কতটুকু যোগ্য তা তো আমার জানাই আছে। তুমি তো ভাগ্য গুণে নূরানীকে পেয়েছ। মাজেদা আর তার জামাই ষড়যন্ত্র করে নুরানীর এত বড় সর্বনাশটা করল। তোমার শ্বশুর বেঁচে থাকলে তোমার চৌদ্দ গোস্টি মাথা খুটে মরলেও নূরানির পায়ের একটা নখও দেখার ভাগ্য হত না। কাজেই তোমার এসব ফালতু আলাপ বাদ দাও। আমার পরিস্কার কথা শুন, তুমি যাই বল আর যাই কর তোমার ভাইয়ের কাছে আমি বিয়ে দিব না, হাসানের সাথেই ফেরদৌসির বিয়ে হবে। এ বিষয়ে আমি দ্বিতীয়বার তোমার সাথে কথা বলব না।

ফেরদৌসি পটেটোকে দেখলেই ইছা মাছের মত লাফায় আর শুনিয়ে শুনিয়ে গালিগালাজ করে। কখনো হাসানকে ডেকে বলে, ভাইয়্যা আমাদের সেই বিড়ালটা তো এখনো আছে, ওটাকে আবার একটু কাজে লাগাতে হবে। মাকে রাগ দেখায়, ঐ হারামজাদা যদি আরেকদিন আসে তাহলে কিন্তু আমি সত্যি সত্যিই বলছি, ওকে ঝাটা পেটা করব। মা শুধু মুচকি হাসে। পটেটো হল হায়েনার মত হিংস্র আর কুকুরের চেয়েও জেদী। বিয়ের দিন হাসান তাকে নাস্তানাবুদ করার জন্য আগেই সে প্রতিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। এখন আবার শাশুড়ি ও শ্যালিকার অপমানে সে হিংস্র হয়ে উঠেছে, প্রতিশোধ নিতে পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু ভাইয়ের জন্য শেষ চেষ্টা হিসাবে সে নূরানীকে পাঠায় ফেরদৌসিকে পটানোর জন্য। স্ত্রীকে বুঝায়, ‘দেখ সেই সুদূর বরিশালে গিয়ে তুমি একা থাকতে পারবে না। তোমার একটা বোন সাথে নিয়ে নাও, তাতে তোমারই উপকার হবে। তারপর ফেরদৌসিকে কি বলবে, কিভাবে পটাতে হবে- সব মন্ত্র শিখিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দিল। নূরানী মহিয়সি নারী, সে বিশ্বসুন্দরী হয়েও পটেটোর মত কুৎসিত কদাকার স্বামীকে শুধু মেনেই নেয়নি, মাথার মুকুট হিসাবে বরন করে নিয়েছে। এখন স্বামীর মনঃতুষ্টির জন্য বোনের বিরুদ্ধে মিশনে নামল।

বাড়িতে গিয়ে সে ফেরদৌসির সাথে মধুর ব্যবহার করল, আলাপ সালাপে খাতির জমাল। তারপর বলল, ‘দেখ তোর দুলা ভাইয়ের ছোট ভাই খুবই ভাল ছেলে, সে লেখাপড়া করতেছে একদিন ভাল চাকরি করবে। তখন তোরা আর আমরা একসাথে শহরে জায়গা কিনব, একসাথে বাসা করে দু’বোন একসাথে থাকব। এটা তোর জন্যও ভাল হবে আমার জন্যও ভাল হবে। তুই এই বিয়েতে রাজী হয়ে যা। হাসান একটা রাস্তার ছেলে, ওর বাড়িটা পর্যন্ত --- কথা শেষ হল না। ফেরদৌসি আগে থেকেই তাতিয়ে আছে, এবার লাফিয়ে উঠল, ‘হারামজাদী, হাসান রাস্তার ছেলে আর তোর জামাই বুঝি তালুকদার? মনে করেছিস আমরা কিছুই জানি না, তোর শাশুড়ি অন্যের বাড়িতে ধান বানত আর তোর শ্বশুর রোজানা কামলা দিত। তোর জামাইয়ের ভাইগুলি এখনো মাইনসের বাড়িতে রোজানা কামলা খাটে, আর তুই এখানে ভদ্দর লোকি গপ্প মারাচ্ছিস। হাসান ছোট লোক আর তোরা বড় লোক। তুই তো চাচ্ছিস তোর কপালে যেমন একটা পটেটো জুটেছে আমার কপালেও আরেকটা গোল আলু জুটুক। বড় দুলাভাই তোকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, এজন্য বড়াপা রাগে তোকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে। আর এখন তুই আমার উপর এর প্রতিশোধ নিতে এসেছিস, তোর সাথে আমাকেও সেই সুদূর বরিশালে টেনে নিয়ে একটা ভিক্ষুক পরিবারের বউ বানাতে চাচ্ছিস। হারাম জাদী মাগী, তোর এত বড় সাহস তুই আমার হবু স্বামীকে রাস্তার ছেলে বলিস। এক্ষুনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যা। নইলে ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে তোর কপালের কাটা ভেঙ্গে দেব।

ফেরদৌসি রাগে অন্ধ হয়ে গেছে, সত্যি সত্যি সে দৌড়ে গিয়ে উঠান থেকে ঝাড়ু নিয়ে দৌড়ল নুরানিকে ঝাটা পেটা করবে। অবস্থা বেগতিক দেখে মা দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরল কিন্তু ধরে রাখতে পারছে না, সে নূরানিকে ঝাটা মেরে বাড়ি থেকে বের করবে। তার এতদিনের রাগ উথলে উঠেছে। হাক ডাক শুনে হাসান দৌড়ে এসে তার হাত থেকে ঝাড়ু কেড়ে নিয়ে বলল, ‘বেয়াদবী করিস না, সে তোর বড় বোন না? এসব পটেটো করাচ্ছে নূরানির দোষ নাই, পটেটো হল কুকুর, আর কুকুর কামড়ালেও কুকুরকে কামড়ানো যায় না। তারপর নুরানী ক্ষোভে দুঃখে অপমানে কান্নাকাটি করে চলে গেল। ঘটনা শুনে পটেটোর মাথায় রক্ত উঠে গেল। তার চোখ দুটি অস্তগামী সূর্যের ন্যায় লাল হয়ে উঠেছে। সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, বাইরে কিছুক্ষণ ঘোরাফিরা করল। তারপর হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত পিষে চিৎকার করল, আমি যদি এর প্রতিশোধ না নেই তাহলে আমি কুত্তার পয়দা।

ডঃ মনোজ মোহন দাস, একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি। তার স্ত্রী শিক্ষিতা চাকরিজীবি, তাদের চারটি সন্তান বড় হয়ে গেছে। ডঃ মনোজ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে উবায়দুল্লাহ নাম ধারণ করেছে। কিন্তু তার পরিবারের কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি বিধায় সে পরিবার ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসে এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হয়। ডঃ উবায়দুল্লাহ ও পটেটোর বাড়ি একই এলাকায়। আবার তাবলীগ করার সুবাদে পটেটোর সাথে তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। সে পাত্রী চায় আর পটেটো মনে মনে হাসে, এইবার তার প্রতিশোধ ষোল কলায় পূর্ণ হতে যাচ্ছে। কারণ ফেরদৌসিকে তার সাথে বিয়ে দিতে পারলেই হল, আর ভার্সিটি শিক্ষক হিসাবে বিয়ে তো দেয়া যাবেই। তারপর দু’দিন আগে আর পিছে উবায়দুল্লাহ তার পরিবারে ফিরে যাবে, স্ত্রীর টানে না গেলেও অন্তত সন্তানের টানে তো অবশ্যি যাবে। ব্যস তখনই তো শুরু হবে খেলাটা। ফেরদৌসি সতীনের ঘর করবে না, বাধ্য হয়ে উবায়দুল্লাহ তাকে তালাক দিবে। আর তখনই হারামজাদি ফেরদৌসির মজাটা শুরু হবে। তখন বেশ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া ছাড়া তার কোন গত্যন্তর থাকবে না।

একদিন সে ডঃ উবায়দুল্লাহকে বলল, হাঁ পাত্রি আমার কাছে আছে, মেয়ে বিশ্বসুন্দরি, রুপে গুণে অতুলনীয়, পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি লম্বা। মার্কেটে এমন মেয়ে বড় বেশি একটা দেখা যায় না। আমার সর্ব কনিষ্ঠ শ্যালিকা। কিন্তু আপনার তো অনেক সমস্যা, প্রথমতঃ আপনি প্রায় বৃদ্ধ অথচ আমার শ্যালিকা ষোড়শী। দ্বিতীয়তঃ আপনার বউ আছে, একহালি সন্তান আছে এবং সন্তানরাও বড় হয়ে গেছে। তৃতীয়তঃ আপনি নও মুসলিম। কাজেই আপনার এসব জানলে এমন মূল্যবান মেয়ে আপনার কাছে বিয়ে দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু দেশের মানুষ হিসাবে, তাবলীগী সাথী ভাই হিসাবে আপনার প্রতি আমার সহমর্মিতা আছে, এই বিয়ের জন্য আমি আপ্রান চেষ্টা করব। তবে শর্ত হল, আপনার কোন কিছুই প্রকাশ করতে পারবেন না, বউ বাচ্চার কথা কিছুই বলা যাবে না। শুধু বলবেন যে, আমার বয়স খুব বেশি না, শুধু অনার্স মাস্টার্স আর পি এইচ ডি করতে যতটুকু সময় গেছে এই আর কি। তারপর বাকী যা করার আমি করব। এভাবে সে আরো অন্যান্য পরামর্শ দিয়ে ও শ্যালিকার আশ্বাস দিয়ে ডঃ উবায়দুল্লাহকে লোভাতুর করে তুলল।

তারপর সে হাসানের উদ্দেশ্যে স্বগতোক্তি করল, হারামজাদা জমিদারের বাচ্চা, বিয়ের দিন তুই আমাকে মুতাইছিলি, এখন আমি তোকে সাড়া জীবন মুতাব। আবার ফেরদৌসির উদ্দেশ্যে বলল, বেশ্যা মাগী, আমাকে পটেটো ডাকা, আমার পরিবার ও ভাইকে অবজ্ঞা করার মজাটা তোকে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াব, তোকে আমি বেশ্যা বানিয়ে ছাড়ব’। এইভাবে সে প্রতিশোধের ছক একে নিয়ে বসে থাকে।

ফেরদৌসির এস এস সি পরীক্ষা এসে গেছে, ফরম ফিলাপ করতে হবে। সে আগে হাসানকে ভাইয়্যা বা হাসান ভাইয়্যা ডাকত কিন্তু এখন হবু বরকে ভাইয়্যা ডাকতে লজ্বা পায়, আবার পুরনো অভ্যাস বদলাতেও পারে না, তবে চেষ্টা করছে। হাসান শব্দটা জোরে উচ্চারন করে ভাইয়্যা শব্দটা বিকৃত করে নিম্ন স্বরে ডাকে ‘ভায়ে’। স্কুলে যাওয়ার সময় হাসানের রুমে গিয়ে বলল, হাসান ভায়ে আমার ফরম ফিলাপের জন্য ফটো লাগবে, চল। - আমার যাওয়ার কি দরকার, বাজারে ফটো তুলে নিবি টাকা নিয়ে যা। - না তোকে যেতে হবে। হাসান ভাবল মেয়ে মানুষ একা স্টুডিওতে যাওয়া ঠিক না, অগত্যা সেও সাথে রওয়ানা হল। স্টুডিওতে ঢোকে ফেরদৌসি আগে পাসপোর্ট সাইজ ছবি করল তারপর হাসানকে ডাকল। সে ঢুকলে বলল, আমরা দুজন একসাথে ফটো করব’ বলে বোরকা খোলল। তারপর দুজন পাশাপাশি বসে একে অন্যের কাঁধে হাত রেখে ফটো করল। দু’দিন পর সে যুগল বন্ধি দুটি ফটো হাসানের হাতে দিয়ে বলল, এগুলি লুকিয়ে রাখ। হাসান সেগুলি তার বাক্সে লুকিয়ে রাখল।

পরীক্ষার মাত্র তিন মাস আছে। এবার হাসান তার হবুবধূর লেখা পড়ার প্রতি মনোযোগি হল। নিজেদের গল্প আড্ডা, সাংসারিক পরামর্শ ইত্যাদি বাদ দিল। রান্না বান্নার কাজ সম্পূর্ণ মায়ের উপর ন্যস্ত করল। সে নিজে হবু স্ত্রীর কাপড় চোপড় ধোয়া ও অন্যান্য দায়িত্ব গ্রহণ করল। এখন তার কাজ শুধু রাত দিন পড়া। কখনো ঘোরাফিরা করলে বা পড়তে না চাইলে হাসান ধমক দেয়, পড়ার টেবিলে বসতে বাধ্য করে। তার জন্য দুধ ডিম ইত্যাদি রোজিনা করে দিয়েছে। এ ভাবেই সে নিজের স্ত্রীকে গড়ে নিচ্ছে আর তার আনুগত্যে বাধ্য করছে। সে জানে এবং নিজেও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে যে, এস এস সি পরীক্ষার পর তাদের বিয়ে হয়ে যাবে। পরীক্ষা সন্নিকট, কেন্দ্র তাদের বাড়ি থেকে মাইল তিনেক দূরে। আনা নেয়ার জন্য হাসান গ্রামের একটা রিকশা রিজার্ভ করল। মা বললেন, এত দূরে সে একা আসা যাওয়া করবে কেমনে, তোকেও সাথে যেতে হবে। তবে দু’জন এক রিকশায় যেতে পারবি না, তুই আরেকটা রিকশা রিজার্ভ কর।

হাসান বলল, আমার জন্য রিজার্ভের দরকার নাই- এতে টাকা বেশি লাগবে। আমি প্রতিদিন বাজার থেকে রিকশা নিয়ে যাব। মা মেনে নিলেন আর হাসান মুনাফেকি হাসি হাসল। কারণ সে রিজার্ভ রিকশা ওয়ালাকে গোপনে বলে দিয়েছে, আপনি প্রতিদিন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় উঠে আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। তারপর রিকশা রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, হাসান হেঁটে বাড়ি থেকে বের হয়। মা মনে করেন সে বাজার থেকে আলাদা রিকশায় যায়। কিন্তু আসলে দু’জন একই রিকশায় স্বামী স্ত্রীর ন্যায় আনাগুনা করে। যাওয়ার সময় হাসান ফেরদৌসির সাথে কথা বলে না বরং সাম্ভাব্য যেসব প্রশ্ন আসতে পারে সেগুলি তাকে মনে মনে আওড়ানোর নির্দেশ দেয়। কিন্তু আসার সময় হাসাহাসি খোচাখোচি হাতাহাতি ইত্যাদি যা কিছু করার ও বলার সবই করে। দূরের লোকেরা মনে করে এরা স্বামী স্ত্রী, আর পরিচিত লোকেরা জানে যে, এরা হবু স্বামী স্ত্রী। তাই এ বিষয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু একজনের চরম মাথা ব্যাথা, সেইজন দোকানের পাশে বসে বসে আড় চোখে দেখে আর বুক চেপে ধরে। কারণ মহিউদ্দির বুকে আগুন জ্বলছে।

বিষয়: সাহিত্য

৮৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File