দারিদ্র বিমোচন ও মানব সম্পদ উন্নয়নে যাকাত

লিখেছেন লিখেছেন জীবরাইলের ডানা ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৫৪:০৬ রাত



১. ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব

যাকাত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। আল-কুরআনে বারংবার নামায কায়েমের পরেই যাকাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বারংবার বলা হয়েছে- “সালাত কায়েম করো এবং যাকাত আদায় করো।” (দ্রষ্টব্য: সূরা আল-বাকারাহ: ৪৩, ৮৩, ১১০ ও ২৭৭ আয়াত; সূরা আন-নিসা ৭৭ ও ১৬২ আয়াত; সূরা আন নুর: ৫৬ আয়াত; সূরা আল-আহযাব ৩৩ আয়াত, সূরা মুয্‌যামম্মিল: ২০ আয়াত)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন- “তাদের অর্থসম্পদ থেকে যাকাত উসুল করো যা তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবে।” (সূরা আত্‌-তাওবা: ১০৩ আয়াত)

“মুশরিকদের জন্যে রযেছে ধ্বংস, তারা যাকাত দেয় না।” (সূরা হামীম: ৬-৭ আয়াত)

“আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমরা যে যাকাত দাও মূলতঃ তা যাকাত দানকারীরই সম্পদ বৃদ্ধি করে।” (সূরা আররুম: ৩৯ আয়াত)

রাসূলে করীম (স) নির্দেশ দিয়েছেন- “তোমাদের সম্পদে যাকাত পরিশোধ করো।” (তিরমিযী, হিদায়া)

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, যাকাদের বিধি-নির্দেশ শুধু উম্মাতে মুহাম্মাদীর উপরই নাযিল হয় নি, অতীত কালে অন্যান্য নবীদের উম্মতের উপরেও এই হুকুম ছিল আল্লাহর পক্ষ হতেই। হযরত ইসমাঈল (আঃ) ও হযরত ঈসার (আঃ) সময়েও যাকাতের বিধান প্রচলিত ছিল। (সূরা মরিয়ম: ৩১ ও ৫ আয়াত এবং সূরা আল আম্বিয়া: ৭৩ আয়াত)।

কেন যাকাতের এই গুরুত্ব? ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় যাকাত সম্পদ বন্টনের তথা সামাজিক সাম্য অর্জনের অন্যতম মৌলিক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। সমাজে আয় ও সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে বিরাজমান ব্যাপক পার্থক্য হ্রাসের জন্যে যাকাত অত্যন্ত উপযোগী হাতিয়ার। কিন্তু যাকাত কোন স্বেচ্ছাসেবক দান নয় বরং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের জন্যে আল্লাহ নির্ধারিত বাধ্যতামূলক প্রদেয় অল্থ-সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ। যাকাতের সংগে প্রচলিত অন্যান্য সকল ধ রনের করের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কারণ, ইসলামের এই মৌলিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একাধারে নৈতিক, ধর্মীয ও সামাজিক মূল্যবোধ অন্তর্নিহিত রয়েছে। কিন্তু করের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন নৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক তাগিদ নেই।

যাকাত ও প্রচলিত করের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। প্রথমতঃ কর হচ্ছে বাধ্যতামূলকভাবে সরকারকে প্রদত্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ যার করদাতা কোন প্রত্যক্ষ উপকার প্রত্যাশা করতে পারে না। সরকারও করের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দরিদ্র ও অবাবী জনসাধারণের মধ্যে ব্যয়ের জন্যে বাধ্য থাকে না। পক্ষান্তরে যাকাতের অর্থ অবশ্যই আল-কুরআনে নির্দেশিত নির্ধারিত লোকদের মধ্যেই মাত্র বিলি-বন্টন করতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ যাকাতের অর্থ রাষ্ট্রীয় সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে ব্যয় করা যাবে না। কিন্তু করের অর্থ যেকোন কাজে ব্যয়ের ক্ষমতা ও পূর্ণ স্বাধীনতা সরকারের রয়েছে।

তৃতীয়তঃ যাকাত শুধুমাত্র সাহেবে নিসাব মুসলিমদের জন্যেই বাধ্যতামূরক। কিন্তু কর, বিশেষতঃ পরোক্ষ কর, সর্বসাধারণের উপর আরোপিত হয়ে থাকে। অধিকন্তু প্রত্যক্ষ করেরও বিরাট অংশ জনসাধারণের উপর কৌশলে চাপিয়ে দেওয়া হয়।

চতুর্থতঃ যাকাতের হার পূর্ব নির্ধারিত ও স্থির। কিন্তু করের হার কোনক্রমেই স্থির নয়। যেকোন সময়ে সরকারের ইচ্ছানুযায়ী করের হার ও করযোগ্য বস্তু সামগ্রীর পরিবর্তন হয়ে থাকে। সুতরাং, যাকাতকে প্রচলিত অর্থে সাধারণ কর হিসেবে যেমন কোক্রমেই গণ্য করা যায় না। তেমনি তার সঙ্গে তুলনীয়ও হতে পারে না।

যাকাত ইসলামী অর্থনীতির কত বড় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তা বুঝতে হলে ইসলামের প্রথম খলীফা হযরত আবু বকরের (রা) সময়ের ঘটনা জানতে হবে। তিনি খলিফা হওয়ার পর পরই কিছু ভণ্ড নবীর প্ররোচনায় কয়েকটি গোত্র যাকাত দিতে অস্বীকার করে। খলীফার নিকট তারা যাকাত প্রদান হতে অব্যাহতি চাইল। হযরত আবু বকর (রা) তাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেণ- “যদি কারো কাছে ‍উট বাধার রশি পরিমানও যাকাত প্রাপ্য হয় আর সে তা দিতে অস্বীকার করে তবে তার বিরুদ্ধেই আমি জিহাদ ঘোষণা করব।” ইতিহাস সাক্ষী, তিনি তা করেছিলেনও। এরই ফলশ্রুতিতে খলীফা উমর ইবন আব্দুল আযীযের সময়ে জাযিরাতুল আরবে যাকাত গ্রহণের সন্ধান পাওয়া ছিল দুর্ভল। সেই যাকাত মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশে আজ শুধু প্রথা হিসেবে চালু রয়েছে। সেজন্যেই মুসলিম বিশ্বের দুঃস্থ অভাবী ও নিঃস্ব লোকের সংখ্যা ক্রমশঃই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাকাতরে অর্থ ব্যয়ের বিদ্যমান প্রথায না সমাজের প্রকৃত কল্যাণ হচ্ছে, না অভাবী ও দরিদ্র জনগণের সমস্যার স্থায়ী সুরাহা হচ্ছে।

২. যাকাতের খাত ও হকদার

ইসলাম শরীয়হা অনুসারে যে সমস্ত সামগ্রীর যাকাত দিতে হবে সেগুলো হলো-

ক) সঞ্চিত বা জমাকৃত অর্থ,

খ) সোনা, রূপা সোনা-রূপা দ্বারা তৈরী অলংকার,

গ) ব্যবসায়ের পণ্য সামগ্রী,

ঘ) কৃষি উৎপন্ন,

ঙ) খনিজ উৎপাদন, এবং

চ) সব ধরনের গবাদি পশু

উপরোক্ত দ্রব্য সামগ্রীর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ যখন কোন মুসলমান অর্জন করে তখন তাকে যাকাত দিতে হয়। এই পরিমাণকে ‘নিসাব’ বলে। নিসাবের সীমা বা পরিমাণ দ্রব্য হতে দ্রব্যের ভিন্নতর। একইভাব

বিষয়: বিবিধ

১২৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File