গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ০৯

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮, ০১:০৩:২০ দুপুর

#গল্প_বড়_ছেলের_বড়_মেয়েঃ০৯

দ্রুত দেনা শোধ করার জন্য আলাল যখন মরিয়া তখন নতুন করে দুলালের বিএ ভর্তি হওয়ার এবাং দুলালীর এসএসসির ফর্ম ফিলাপের জন্য টাকা চাই। হেলালও অষ্টম শ্রনীতে উঠবে, তার নতুন ক্লাসের বই, নতুন জামা কাপড়যে কিনে দিতে হবে তাতো আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। হেলালের একটা বাই সাইকেলের বায়নাও আগে থেকেই ছিল। ওর বায়নাটা অবশ্য যৌক্তিকও কারণ বাড়ির পাশের স্কুলটা অত ভালোনা তাই আলালই পণ্ডিতি করে বলেছিল, হেলাল যদি তিনের মধ্যে রোল নিয়ে আসতে পারে তাহলে ওকে সাইকেল কিনে দিবে এবং রাজাপুর থানা পাইল্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিবে।

হেলাল সত্যিই রোল তিনে নিয়ে এসেছে, এখন না চাইতেই আলালের দায়িত্ব হয়ে গেছে নতুন বই খাতা, স্কুল ড্রেস ও সাইকেল কিনে দেয়া। আলাল যে তার ওয়াদা রক্ষা করবে এটা সবাই জানে তাই দুলালের রেজাল্টের কথা জানিয়েই সবাই ক্ষান্ত।

একদিকে পরির উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অন্য দিকে সংসারের একের পর এক যৌক্তিক দাবী। আলাল কোনটা রেখে কোনটা করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। এভাবে আরও দুইটি বছর কেটে গেছে। প্রবাস জীবনের চতুর্থ বছের শেষ হয়ে এখন পঞ্চম বছর শুরু হয়েছে। কোম্পানী নোটিশ দিয়েছে, ‘যে সকল কর্মী তাদের দুই তথা তদূর্ধ বছরের ছুটি ভোগ করেনি আগামী এক মাসের মধ্যে তারা প্রাপ্য ছুটি ভোগ না করলে তাদের বকেয়া ছুটি বাতিল হয়ে যাবে অবশ্য তারা দুইটি টিকেটের টাকা পাবে। যারা তাদের ছুটি বাতিল করে টিকেটের টাকা তুলতে ইচ্ছুক তাদেরকে এক সপ্তাহের ভিতরে আবেদন করতে হবে, অন্যথায় তাদের ছুটি এবং টিকেটের টাকা উভয়টাই ল্যাপ্স হয়ে যাবে”

পার্ট টাইম শেষে রুমে ফিরতেই রুম মেটরা চেচিয়ে উঠল।

- কিরে আলাল মিষ্টি কোথায়?

- কিসের মিষ্ট?

- কেন কোম্পানী যে তোকে দুই টিকেটের টাকা দিছে সেই খুশির মিষ্ট।

- আসলে তুই একটা ভেজা বেড়াল। মনে হয় আগেই জানতি না হলে আমাদের চেয়ে ভালো বেতন পাওয়ার পরেও চার বছর হয়ে গেল অথচ ছুটিতে যাওয়ার নামটাও নিলি না।

- হ্যারে দোস্ত! ঠিকই বলেছিস, তোরা সব জেনে শুনেও এমন করে বলতে পারলি?

নে চিঠিটা পড়ে দেখ আমার সুখের কথা লেখা আছে।

স্নেহের আলাল,

আমাদের সালাম নিও। আশা করি বাবা তুমি ভালো আছ। সুখের বিষয় হল, আলালীর একটা মেয়ে হয়েছে। প্রথা অনুজায়ি নাতিন দেখতে যেতে হবে, সাথে স্বর্ণের একটা চেইন, একটা খাসী ছাগল, এক মণ চাল আর দশ সের মিষ্ট। দুলালীর জন্য একটা প্রস্তাব এসেছে, কথা ফাইনাল হলে তোমাকে জানাবো। হেলালের পড়া লেখাও ভালো ভাবে চলছে। ও আগামী বছর এসএসসি ফাইনাল দিবে। ফার্স্ট ডিভিশন পেলে ঢাকায় পড়াব বলেছি। দুঃখের বিষয় হল, দুলালের রেজাল্ট ভালো হয়নি। ছেলেটা কেমন যেন আনমনা হয়ে গেছে। জয়নাল বলল ও নাকি সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য ট্রনিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছে। ভিসা পেলেই নাকি আমাদের জানাবে, তার আগে নয়। অনেক কথা হল বাবা, তুমি ভালো থেক, ঠিক মত খাবার খেও, অতিরিক্ত পরিশ্রম করবা না। নিয়মিত নামায পড়বা আর এশার পর পরই খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পরবা। তোমার বন্ধু বান্ধবদের আমার সালাম দিও এবং তাদেরকেও নামাযের জন্য ডেক।

আল্লাহ্‌ তোমার কল্যাণ করুন। আমীন।

মা’আসসালাম

তোমার আব্বা-আম্মা।

- কি রে বেটারা কি বুঝলি?

- আলাল ভাই তুমি বয়সে আমাদের ছোট্ট কিন্তু কাজে আমাদের ওস্তাদ। আসলে না বুঝে তোমার মনে কষ্ট দেয়ার জন্য দুঃখিত। তোমার যখনই টাকা লাগবে আমাদের বলবে, আমরা তোমার সুখে দুঃখে সাথী হব ইনশা’আল্লাহ।

- তা আমি জানি ভাইয়েরা, আল্লাহ্‌ও আমার সাথে আছেন, না হলে টিকেটের টাকা পাব এমনটা তো কখনো ভাবিনি।

- শোন আলাল ভাই, টিকেটের টাকা গুলো কিন্তু তুমি একটাও খরচ করতে পারবা না। ওগুলো তোমার বোনাস, না পেলে কি করতা? ভাব’বা পাওনি। ঐ টাকা গুলো দিয়ে আমাদের পরি ভাবির জন্য গহনা কিনবা, মনে থাকে যেন। আমাদের কথা না মানলে কিন্তু আমরা তোমার সাতে পাচে নাই।

- তাচ্ছা তা দেখা যাবে। এস সবাই মিলে নামায পড়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাই। দেখছনা আমার মা আটটার মধ্যে ঘুমতে বলেছে।

- আলাল ভাই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ এখন সময় কত? রাত ১১টা, আমরা এশার নামায পড়ে খাওয়া দাওয়া করে তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। তোমার সাথে দুষ্টমি করেই তার পরে ঘুমব বলে, কারণ আমাদের পুরানা দশ জনের মধ্যে একমাত্র তুমিই টিকেটের টাকা পেয়েছ কিনা তাই। টিকেটের টাকা পাবে বলে, ভেবেছিলাম তুমি অনেক খুশী হবে এখন দেখছি তুমিই সব চেয়ে বেশী অখুশি। আসলে এই দুনিয়ায় কে খুশী আর কে যে অখুশী তা বলা বড়ই মুশকিল। তুমি ছোট্ট হয়েও আমাদের চেয়ে বেশী বেতন পাও, এখনও বিবাহ করনি তাই ভেবেছিলাম তুমিই আমাদের মধ্যে বেশী সুখি।

- হ্যাঁরে ভাই! আমিই তোমাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশী সুখী। মা-বাবার সংসার চালাচ্ছি, দুইটা ভাইকে পড়াচ্ছি, দুইটা বোনকে পড়া লেখা করিয়ে বিবাহ দিচ্ছি। আজ আমি মামা হওয়ার সংবাদ পেয়েছি। আমার চেয়ে বেশী সুখী আর কে?

- নাও মিষ্টি খাও। মামা হয়েছি সেই খুশিতে মিষ্ট নিয়ে এসেছি।

বিষয়: সাহিত্য

৭১৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384697
১৫ জানুয়ারি ২০১৮ দুপুর ০২:০৯
আবু নাইম লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৫ জানুয়ারি ২০১৮ বিকাল ০৪:৩৮
317287
আবু জারীর লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File