মানবতার বড় বড় উদাহরণ মায়েরা ছাড়া আর কারা দিতে পারে ?

লিখেছেন লিখেছেন হুদাই প্যাচাল বাক্স ০৮ নভেম্বর, ২০১৩, ০৮:৪৩:৩৮ সকাল

মাকড়শা নামের কুৎসিত পোকাটাকে ঘৃণা করেনা , এমন মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই আছে । কিন্তু জীবনে প্রথমবার অধ্যবসায় রচনা পড়তে গিয়ে , লিখতে গিয়ে আমরা কিন্তু আটপেয়ে অদ্ভুৎ কুৎসিত এই জীবটার উদাহরণই দিয়েছিলাম । ওই যে , শত্রুপক্ষের নিকট বারবার পরাজিত হয়ে রবার্ট ব্রুস যখন খাটে শুয়ে কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে ছিল তখন দেখল এক মাকড়শা কড়িকাঠের একপাশ থেকে আরেকপাশে যাওয়ার জন্য অসংখ্যবার চেষ্টা করছে ।

এভাবে চেষ্টা করতে করতে মাকড়শাটা সফল হয় আর এটা দেখে রবার্ট ব্রুসের উৎসাহ একলাফে কয়েকগুন বেড়ে যায় । হতাশাকে মাটিচাপা দিয়ে রবার্ট ব্রুস এর পর শত্রুপক্ষকে দ্বিগুণ বিক্রমে আক্রমন করে জয় লাভ করে ।

সামান্য এক মাকড়শা এইভাবে অধ্যবসায় এর জ্বলন্ত এক উদাহরণ হয়ে টিকে আছে শত বছর ধরে ........... । কিন্তু মাকড়শা নামের ভয়াবহ কুৎসিত প্রাণীটা যে মাতৃত্বের সবচেয়ে বড় উদাহরণ সেটা জানার পর আমি কিছুক্ষনের জন্য হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম । বলছি ।

অন্যান্য পোকামাকড়ের মত মাকড়শা নামের আর্থ্রপোডা শ্রেণীর পোকাটিও ডিম পাড়ে । কোন কারণে যাতে ওগুলো নষ্ট হয়ে না যায় সেজন্য ডিমগুলো সবসময় নিজে বহন করে মা মাকড়শা । প্রকৃতির নিয়মে একদিন ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় । এত বাচ্চার খাবার জোগার করা মাকড়শা মায়ের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না । ক্ষুধার জ্বালায় মাকড়শার বাচ্চাগুলো জন্মদাত্রী মায়ের দেহই খাওয়া শুরু করে দেয় ।

সত্যি কথা ।

সব কষ্ট সহ্য করে মা মাকড়শা বাচ্চাদের কাছে নিজের দেহ বিলিয়ে দেয় । সময় যায় , মৃত মা পড়ে থাকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে , মায়ের দেহ খেয়ে বেঁচে থাকা মাকড়শার দল আবার পায় মাতৃত্বের স্বাদ ! কি অদ্ভুত ! তাই না ?

বনী ইসরাইল বংশের দু মহিলা একবার গল্প করছিলো । তাদের দুই বাচ্চা ছেলে ( যারা দেখতে ছিল প্রায় একই রকম আর যাদের বয়সও একই ছিল ) অদূরেই খেলা করছিলো ।

হঠাৎ একটা বাঘ

এসে একটা বাচ্চা ছেলেকে তুলে নিয়ে গেল । এরপরে ...... বাকি শিশু ছেলেটি নিজের বলে দুই মহিলাই দাবি করতে লাগলো । মাতৃত্বের দাবি নিয়ে সঠিক বিচারের আশায় দুই মহিলাই সুলাইমান আঃ এর কাছে গেল । সুলাইমান আঃ এর সামনে বাচ্চার দাবীতে দুই মহিলাই বুক ফাটিয়ে কান্নাকাটি করতে লাগলো । এরপরে হাতে একটা চাকু নিয়ে সুলাইমান আঃ বাচ্চাটাকে কেটে দুই টুকরা করতে উদ্যত হলেন । তিনি ঠিক করলেন বাচ্চাটার দুই টুকরা তিনি দুই মহিলাকে ভাগ করে দিবেন । তার এই রায় শুনে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী মহিলা কেঁদে বলল যে বাচ্চাটাকে কাটার দরকার নেই । সে স্বীকার করছে যে বাচ্চাটা তার না , বয়স্ক মহিলার ।

এই কথা শোনার পর সুলাইমান আঃ বুঝলেন বাচ্চাটা আসলে ওই কম বয়সী মহিলারই । তিনি তার হাতে তার বাচ্চা ছেলেকে তুলে দিলেন । মায়েরা এমনই । যেকোনো কিছুর বিনিময়ে তারা চান , তাদের সন্তানের গায়ে যাতে ফুলের টোকাটাও না পড়ে !! গত কিছুদিন ধরে হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক্স ওয়ার্ডে ( শিশু বিভাগ ) আমার প্লেসমেন্ট । গত তিনদিন যাবত আমি লক্ষ্য করছি , বারান্দার সামনে পাটি বিছিয়ে এক মহিলা তার তিন বছরের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে দেয়াল ঘেসে একই ভঙ্গিতে বসে আছেন !

সকাল - সন্ধ্যা দুই বেলাই আমাকে ওয়ার্ডে যেতে হয় । এভাবে মহিলাকে বসে থাকতে দেখে আমার কেন যেন মনে হল তিনি সারারাতও এভাবে বসে থাকেন । দ্যাট মীনস রাতে তিনি হয়তো ঘুমোন না । কাছে গিয়ে মহিলার সাথে কথা বলে সব বুঝলাম । আসলেই মহিলা গত তিনদিন যাবত ঘুমুচ্ছেন না । দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজে কিছুক্ষনের জন্য হয়তো বিশ্রাম নেন , পরমুহুর্তে বাচ্চাটার কান্নায় তার তন্দ্রা ছুটে যায় । অর্ধ-তন্দ্রার চোখ নিয়ে বাচ্চার শুশ্রূষায় নিজেকে নিয়োজিত করেন তিনি । জানলাম , বাচ্চাটার ব্রঙ্কিওলাইটিস নামের রোগ হয়েছে । এই রোগে বাচ্চাদের প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হয় ।

শুয়ে থাকলে প্রবলেমটা আরও বেশি হয় , কিন্তু বসে থাকলে আবার শ্বাসকষ্টটা কম হয় ।
তাই বাচ্চার কষ্ট লাঘবের জন্য মা নিজে বসে কোলে বাচ্চাকে বসিয়ে রেখে ঘুম পাড়ান !! নিজে ঘুমুতে পারছেন না , সেদিকে তার খেয়াল নেই । নিজের এই আত্মত্যাগের বদলে অবুঝ বাচ্চাটার শ্বাসকষ্ট যদি একটুও কমে তাতেই তিনি খুশি । মানবতার বড় বড় উদাহরণ মায়েরা ছাড়া আর কারা দিতে পারে ?

https://facebook.com/rrbzlove

বিষয়: Contest_mother

২৮৬১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386171
২৪ নভেম্বর ২০১৮ সন্ধ্যা ০৬:৩২
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File