ইকামাতে দ্বীন !!!

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০৪:৩৩ দুপুর





===========

"হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ডাকে সাড়া দাও যখন তোমাদেরকে ডাকা হয় (এমন বিষয়ের দিকে) যা তোমাদের মাঝে জীবন সঞ্চার করে, আর জেনে রেখ যে আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে যান আর তোমাদেরকে তাঁর কাছেই একত্রিত করা হবে।"

"আর তোমরা ভয় কর ফিতনাকে* যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু যালিমদের উপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।"(সূরা আনফাল: ২৪-২৫)

ইকামাতে দ্বীন একটি ব্যপক অর্থবহ শব্দ। এটি হল দ্বীনের প্রতিষ্ঠা। আলেমদের ভেতর অবশ্য এটা নিয়েও মতদ্বৈততা রয়েছে যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠিত রয়েছে নাকি নেই ! কেউ কেউ মনে করেন আরবের কিছু দেশে বিশেষ করে সৌদী আরবে এটি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে সামগ্রিকভাবে। কেউ কেউ বলেন সেখানে দ্বীন সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শাসকের আচরন প্রমান করেনা যে দ্বীন প্রতিষ্ঠিত। কাউন্টারে বলা হয়, শাসকের ভেতর ভালো মন্দ থাকতেই পারে, পূর্বেও ছিলো কিন্তু দ্বীন সেখানে প্রতিষ্ঠিত। যাইহোক সৌদী আরব নিয়েও অলেমদের ভেতর মত পার্থক্য রয়েছে।

বিশ্বের বেশীরভাগ আলেমই বলেন - ইসলাম পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত নেই, এটাকে প্রতিষ্ঠা করা ফরজ। আর সেটার রূপ হল "খিলাফাহ আলা মিনহাজ্জুন্নাবুয়াহ" অর্থাৎ নবুয়্যতের আদলে খিলাফাহ, যা রসূল(সাঃ) করেছিলেন, তার প্রখ্যাত সাহাবীগণও জারি রেখেছিলেন, যারা খুলাফায়ে রাশিদা হিসেবে পরিচিত(খুলাফায়ে রাশিদাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহন করা নিয়ে মুসলিমদের ভেতর দ্বন্দ নেই)। পরবর্তীতে ইসলামি খিলাফতের খলিফাগনের ভেতর কিছু ভালো ও কিছু বিতর্কিত শাসক এসেছেন। কিন্তু সেই সিস্টেমটা নিভূ নিভূ অবস্থায় ১৯২৪ সাল পর্যন্ত টিকে ছিলো অটোমান খলিফাহ আব্দুল মাজিদ পর্যন্ত। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর বৃটিশরা তাদের মিত্রদের দ্বারা ১৯২৪ সালে এটা ভেঙ্গে ফেলে এবং রাতারাতি মুসলিমদের ভেতর অঞ্চলভিত্তিক ভাঙ্গন তৈরী হয়,জাতিয়তাবোধের ভেতর এই কৃত্তিম অঞ্চলসমূহ প্রাধান্য বিস্তার করে। বিষয়টি পূর্বেও ছিলো তবে ১৯২৪ সালের পর এটি ব্যপক প্রকাশ্যতা,কদর্যতা লাভ করে। এরপর নানান উদ্যোগ দলগতভাবে মুসলিমরা নানান সময়ে গ্রহন করেছেন পূর্বের মত করে খিলাফত প্রতিষ্ঠায়,কিন্তু সফল হয়নি। বরং মুসলিমরা খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি নিয়ে ইজতেহাদী মতবিরোধে জড়িয়ে নিজেরা দূর্বল হয়ে পড়ে।

মূলত:এ সময়ে মুসলিমরা মানুষিকভাবে জর্জরিত ছিলো। কারন খিলাফত ছিলো মুসলিম উম্মাহর মানুষিকক ঐক্যের প্রতিক। এরপর সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম মনীষীগণ ইসলামী খিলাফতের পূণ:প্রতিষ্ঠার নানান রূপ নিয়ে আলোচনা,সমালোচনা করতে থাকেন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে কুরআন সুন্নাহর দলিলের ব্যাখ্যা বিশ্লেষনে এক মনীষীর সাথে অন্য মনীষী মত বিরোধেও জড়ান। তাদের নিজস্ব ইজতিহাদী মতের অনুকূলে জনসাধারনের সমর্থন থাকাতে তারা নানান ইসলামী দল তৈরী করতে সক্ষম হন। সকলের মূল ছিলো ইকামাতে দ্বীন কিন্তু তার প্রতিষ্ঠায় তারা জায়েজের ভেতর থেকে নানান কৌশল,উপায়,পদ্ধতি অবলম্বন করতে থাকেন। এভাবে অনেক ইসলামী দলের সৃষ্টি হয়।

আমরা যদি বৃহত্তর ঐক্যের অনুভূতি সংরক্ষ করি, তাহলে বলতে হয় দলের আধিক্য ইসলাম প্রতিষ্ঠায় বাধা নয়, যদি উদ্দেশ্য এক হয়। বরং এটি ইসলাম প্রতিষ্ঠার গতিকে বেগবান করতে পারে। কিন্তু যদি মুসলিমরা পারষ্পরিক ইজতেহাদের শেষ্ঠত্ব প্রমানে শক্তি নিয়োগ করে, তাহলে বিষয়টি হিতে বিপরীত হয়ে দাড়ায়, যা বর্তমানে ব্যপকভাবে প্রচলিত। ইসলাম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য মুসলিমকে পারষ্পরিক ঐক্যের অনুভূতিতে ভোগাবে, সৎ কাজে প্রতিযোগীতার মানুষিকতা সৃষ্টি করবে। কিন্তু যদি উদ্দেশ্য হয় নিজের মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করা, তাহলে উদ্দেশ্য মারাত্মকভাবে ব্যহত হবে, এমনকি প্রতিষ্ঠিত ইসলামও এই কারনে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়।

বাংলাদেশের ইসলাম প্রতিষ্ঠিত রয়েছে কিনা সেটা নিয়েও কিছু কিছু আলেমের মত বিরোধ আছে। কেউ কেউ বলেছেন এখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত আছে। তারা ইসলামকে নামাজ,রোজা,হজ্জ,যাকাতের প্যাকেজ ভাবেন এবং এগুলো পালনে যে মুসলিম শাসক বাধা প্রদান করেনা সেই মুসলিম শাসকের আনুগত্যকে তারা জায়েজ মনে করেন। এরকম ধরনের শাসকের কোনো কাজের প্রতিবাদ করাকে তারা সঠিক মনে করেন না অথবা নানামুখী ক্ষতির আশঙ্কায় চুপ থাকাকে নিরাপদ ভাবেন। অথবা মনে করেন, নিজেরা চারিত্রিক শুদ্ধতা অর্জন করে, যথেষ্ট গুনাবলী অর্জন করে তখন এগুলো নিয়ে ভাববেন। ইসলামী হুকুমতের বিষয়ে তারা বলেন, যখন ব্যক্তিগতভাবে সকল সুন্নাহ পালন করে যথেষ্ট যোগ্য হবেন,চারিত্রিক গুনাবলী অর্জন করে পাকা ঈমানদার হবেন তখন আল্লাহ এমনিতেই খিলাফাহ দান করবেন। ...."তোমাদের ভেতর যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে, তাদেরকে আল্লাহ ওয়াদা দিচ্ছেন যে, তিনি তাদেরকে অবশ্যই খিলাফত দান করবেন,যেভাবে প্রদান করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে.............." (আল কুরআন ২৪: ৫৫)

তারা ভাবেন, আয়াতটি ব্যক্তিগত আমল আখলাক ঠিককারীদের পক্ষে কথা বলছে। অন্যরা ভাবেন যে, এটি পাবার জন্যে সুন্নাহ অনুযায়ী প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে, এরপর আল্লাহ যখন খুশী হন তখন তা প্রদান করবেন। শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সামগ্রিকভাবে সকল ক্ষেত্রে ইসলাম নিয়ে যেতে হবে, এমনটি তারা মনে করেন। যেমন "রসূল(সাঃ)কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো মর্বোত্তম জিহাদ কোনটি ? তিনি(সাঃ) বলেন-যালিম শাসকের সামনে দাড়িয়ে হক কথা বলা বা তার প্রতিবাদ করা"

(তিরমিযী,নাসাঈ,ইবনে মাযাহ,রিায়াদুসসালেহীন,মিশকাত,আল মাজমু আল যায়েদ)

"শহীদের সর্দার হল হামযা(রাঃ) এবং সেই ব্যক্তি, যে যালিম শাসকের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে হক কথা বলে এবং উক্ত শাসক তাকে হত্যা করে" (তিরমিযী,আবু দাউদ)

কিছু আলেম মনে করেন, রাজনৈতিক বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং নামাজ,রোজা,হজ্জ,যাকাত,তসবিহ তাহলীল করতে হবে, শীরক,বিদাত থেকে মুক্ত হতে হবে, এসবই কেবল ইসলামী কাজ, অন্যগুলো পরে। আর ইসলামের প্রতিষ্ঠা নিয়ে আমাদের চিন্তা না করলেও চলবে, ওটা আল্লাহ দেখবেন।

কিছু আলেম মনে করেন, প্রচলিত রাজনৈতিক কৌশলের ভেতর দিয়ে ইসলাম কায়েম করলে তা দ্রুততর হবে। প্রচলিত ব্যবস্থাপনাকে ইসলামের আলোকে সাজিয়ে তার ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেলে আন্দোলনটি বেগবান হবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে। এরপর সর্বস্তরে ইসলামী হুকুমাত প্রতিষ্ঠিত করা হবে। তবে যদি গণ বিপ্লবের মাধ্যমে কাজটি সম্পাদিত হয়ে যায়, সেটাও সঠিক হবে।

কিছু আলেম বলেন, প্রথমবার মদীনার রাষ্ট্র যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ঠিক সেভাবেই করতে হবে। সেটাই সুন্নাহ ও সঠিক। সেটাই অধিক কার্যকরী। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন মূখ্য নয়, কারন সংখ্যা লঘিষ্ট মুসলিম নিয়েই তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। সেটি ছিলো মোটামুটি শান্তিপূর্ণ বিপ্লব,যেখানে অমুসলিমরাও মুসলিমদের কর্তৃত্ব মেনে নিতে চেয়েছিলো তাদের স্বার্থের কথা ভেবে। কেউ বিপ্লবকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন,কেউ কম। আবার কেউ নির্বাচনকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন,কেউ কম।

ইকামাতে দ্বীনের বিষয়ে প্রথম শ্রেনীর আলেমদের ভেতর যে মত দ্বৈততা ; তা পুরোপুরি ইজতিহাদী বিষয়। কারন প্রত্যেকেই স্পষ্ট হারামকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং হালালের ভেতর থেকে সুন্নাহ বিশ্লেষনে ভিন্নতার পরিচয় দিয়েছেন। কেউ প্রচলিত পদ্ধতিকে একটি প্রযুক্তি হিসেবে গ্রহন করে কুরআন সুন্নাহর অনুকূলে প্রয়োগের কথা বলেছেন, আবার কেউ সেটা প্রত্যাখ্যান করে প্রথমবারের মত করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। আবার প্রথমবার রসূল(সাঃ)কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শাসন ব্যবস্থার ভেতরও প্রত্যেকে নিজেদের মতের প্রতিচ্ছবি প্রত্যক্ষ্য করেছেন।

আমার আলোচনা কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতির পক্ষ বিপক্ষ তৈরী ও সমালোচনার ভেতর সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমি সামগ্রিকভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা এবং এ লক্ষ্যে মুসলিমদের ঐক্য তৈরীতে মানুষিকতা সৃষ্টির পক্ষে কথা বলছি। যা কিছু লিখছি তা কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যেই। আমি ইসলাম প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত বর্তমান দুনিয়ার উল্লেখযোগ্য সকল মতাদর্শ বা অভিমতসমূহ অধ্যায়ন করেছি এবং এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, মুসলিমদের একটি ব্যপক ভিত্তিক ঐক্য প্রয়োজন এবং তা সম্ভব। তাদের একের সাথে অপরের যে বিরোধ, তা একেবারেই কৃত্তিম এবং উভয়ের ভেতর সুক্ষ্ণ কিছু বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আর সর্বনাশ করছে উভয় পক্ষের কিছু অপরিনামদর্শী অনুসারী, যাদের ইসলাম সম্পর্কে প্রবল অন্ধ তাকলিদ একপেষে করে ফেলেছে। ফলে তারা নিজ শাইখ, আলেমের একটি ফিকহী মতামতকেই ইসলামের জন্যে খাস করে নিচ্ছেন। অপর মতামতকে স্রেফ অহংকারবশত, অথবা নিজের মতের উপর অধিক আস্থাশীলতার কারনে প্রত্যাখ্যান করছেন। আবার অন্যকে ভ্রান্ত প্রমানে প্রচারনাও চালাচ্ছেন। এভাবে ফিকহী বিষয়ে যারা ব্যপক কুৎস্যা রটনা,প্রচারনায় লিপ্ত, তাদের উক্ত বিষয় সম্পর্কে শরিয়তী জ্ঞান নীম্ন পর্যায়ের। ফিতনা সম্পর্কেও তারা ওয়াকিবহাল নন। তবে এর ভেতর দিয়ে ইসলামী পন্ডিতগণও নানান মন্তব্য করে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছন এবং ফিতনাটিকে জীবন্ত রাখতে ভূমিকা রেখেছেন।

রসূল(সাঃ) আমাদেরকে জানিয়েছেন ফিতনার সময় দাড়িয়ে থাকা মানুষটি চলন্ত মানুষের থেকে বেশী নিরাপদ, বসে থাকা মানুষটি দাড়িয়ে থাকা মানুষের থেকে বেশী নিরাপদ....আরও বলেছেন উত্তম কথা বলতে না পারলে যেন আমরা চুপ থাকি। আরও বলেছেন, তর্কে জিতে যাব বা যুক্তিতে জিতে যাব এমন মনে করা সত্বেও চুপ থাকলে আল্লাহ আমাদেরকে ব্যপক নিয়ামত দান করবেন, সম্মানিত করবেন....(৩টি হাদীসকে একসাথে সংক্ষেপে প্রকাশ করেছি নিজের ভাষায়, কারো পুরো জানা থাকলে সংশোধন প্রযোজ্য)

আমাদের ব্যপক ধৈর্য প্রয়োজন। মুসলিমদের সাথে কোমল আচরন করা প্রয়োজন। ফেসবুকে এসব বিষয় নিয়ে অপর পক্ষকে কটাক্ষ করার নীতি থেকে সরে আসতে হবে। কেউ অপরকে খোচা দিয়ে দুটো লাইন লিখে যদি মনে করি ইসলামের খেদমত করছি, তাহলে আমাদের শয়তানের কারসাজি,ওয়াসওয়াসা সম্পর্কে আরও ১০০ বার স্ট্যাডী করার প্রয়োজন মনে করছি। শয়তান আলেমদের/চিন্তাশীলদের ভেতর আমিত্ব,অহংকার,চিন্তার বিশুদ্ধতা,সঠিকতা এসব নিয়ে এমন এক অনুভূতি প্রকাশে বাধ্য করে, যা করলে তার আত্মা তৃপ্ত হয় কিন্তু আল্লাহ ব্যপক অসন্তুষ্ট হয়। আর বিষয়টি তার আত্মা উপলব্ধী করতে সক্ষম হয়না। আমাদেরকে নিজেদের চিন্তার জগতের বিশ্লেষনেরও উপরে উঠে নিজেদেরকে বিশ্লেষন করতে হবে এবং বিনয়ী মানুষের কাতারে নিজেদেরকে নামিয়ে আনতে হবে, এটাই সাহাবীদের আদর্শ। অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, অপরের প্রকাশিত বিষয়ের সমালোচনাতেও সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে। আমরা যেন আখিরাতে নিজের শাস্তি মওকুফের চিন্তায়, জাহান্নামের শাস্তির চিন্তায় নিজেদেরকে নিজেই প্রতিহত করি ! নইলে সকলে হয়ত আমাদেরকে বিশাল পন্ডিত বলবে কিন্তু আল্লাহ ভয়ঙ্কর শাস্তি প্রদান করতে পারেন ! প্রত্যেকটি শব্দ,যা মুখ থেকে বা কলম থেকে বের হয়েছে, তার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কোনো আপন লোকও সেদিন আপন থাকবে না। সেদিনকে ভয় করে যেন আমরা আচরনসমূহকে পরিবর্তন করি। মনে রাখতে হবে, আল্লাহর দ্বীন আমি চাই অথবা না চাই, তা প্রতিষ্ঠিত হবেই সকল স্থানে ও সর্বস্তরে। কিন্তু তা যদি প্রতিষ্ঠিত হয়, আর আমি জাহান্নামে প্রবেশ করি, তাহলে দ্বীনের প্রতিষ্ঠায় আমার কল্যান কোথায় !!! আমাদেরকে আমাদের আখিরাতের স্বার্থেই কথা বলতে হবে ও কাজ করতে হবে।

ইকামাতে দ্বীন নিয়ে আমার ভিন্ন মত থাকলে সেটি অত্যন্ত বিনয় ও অপরের প্রতি সম্মানের সাথে প্রকাশ করা যায়, তবে আমাদের যে যে ক্ষেত্রে অনৈক্য রয়েছে, সেটি প্রকাশের পূর্বে যেসব ক্ষেত্রে ঐক্য রয়েছে সেসব বেশী প্রকাশ করা জরুরী। এতেই কল্যান রয়েছে। আর বর্তমান কালের নানামুখী প্রযুক্তির কল্যানে ইচ্ছা করলেই নিজের বানী অন্যের কাছে পৌছানো যায়, ফলে এখন ফিতনা প্রতিষ্ঠিত। আর তাই কোনো বক্তব্য প্রকাশের পূর্বে বহু চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।

"আর তোমরা ভয় কর ফিতনাকে* যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু যালিমদের উপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।"(সূরা আনফাল: ২৫)

এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, ফিতনা কেবল যালিমদের জন্যেই নয়, অর্থাৎ এটি ব্যপক ও এর ব্যপকতা সকলকে গ্রাস করবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি কঠিন পরিক্ষা। আর আযাবের সংবাদও প্রদান করা হয়েছে। ফলে সাবধান !

পরিশেষে বলতে চাই ইসলামে ব্যক্তিগত ,পারিবারিক,সামাজিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক,সাংষ্কৃতিক,আর্ন্তজাতিক,সামরিক এগুলো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। এগুলোর সম্মিলিত রূপের পূর্ণ প্রতিষ্ঠাই হল ইকামাতে দ্বীন। এ সংক্রান্ত বিষয়ে কুরআন সুন্নাহ অধ্যায়ন,বিশ্লেষনে যদি একের সাথে অপরের অমিল হয় তাহলে উচ্চ পদস্থ আলেমগন অপরের প্রতি সম্মান রেখে পারষ্পরিক আলোচনা করতে পারেন খোলা মনে। অপরের সমালোচনার ভেতরও আল্লাহর ভয় থাকতে হবে। এতে অপরের প্রতি সম্মানবোধ বজায় থাকবে। অপরকে ভাই মনে করার প্রবনতা তৈরী হবে। তাহলে আমরা নানান ক্ষেত্রে বিভক্তি নিয়েও ইসলামের জন্যে নিজের বুঝ অনুযায়ী কাজ করলেও সেটি সম্মিলিতভাবে মুসলিমদের স্বার্থের পক্ষে যাবে। নইলে আমাদের আচরন থেকে উম্মাহ তো উপকৃত হবেইনা, বরং নিজেরাও জাহান্নামের জন্যে নিজেদের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে থাকব।

আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন ! মুসলিমরা পরষ্পরকে ভাই মনে করুক ! একে অপরকে আরও অধিক পরিমানে ভালোবাসুক ও শ্রদ্ধা করুক ! ইসলামের জন্যে অন্তর সমূহকে আল্লাহ পঙ্কিলতা মুক্ত করুক !

বিষয়: বিবিধ

১১৮৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384157
০৮ অক্টোবর ২০১৭ দুপুর ০২:০৭
আবু জারীর লিখেছেন : আল্লাহর জমিনে আল্লাহর রাসূল (সঃ) যেভাবে দীন কায়েম করেছেন এবং খোলাফায়ে রাশেদিন যেভাবে তা প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন আমাদেরও উচিৎ সেভাবে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন কায়েমের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। সফলতা দেয়ার মালিক আল্লাহ।

সুন্দর লিখেছেন।
ধন্যবাদ।
১১ অক্টোবর ২০১৭ সকাল ১০:৫১
316907
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ
384159
০৮ অক্টোবর ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:৩৯
শেখের পোলা লিখেছেন : চাচা ভাই ধন্যবাদ। এমনটি আরও চাই। এটি জেহাদ বা তাবলীগ দুটাই বলতে পারেন। ই মেইলে গিয়েছিলাম।
১১ অক্টোবর ২০১৭ সকাল ১০:৫১
316908
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এখন তো আপনি আমার ফেসবুকেও আছেন....Happy আছেন কেমন? আপনাকে তো মিস করি অনেক....
১১ অক্টোবর ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
316915
শেখের পোলা লিখেছেন : ফেস বুকে যাইনা। মাঝে মাঝে ই মেইলে দাওয়াত করে তাই গুঁতা মারি। ব্লগে ঘন ঘন ঠিকানা বদলের জন্যই বোধ হয় অনেক বন্ধুই গায়েব হয়ে গেছে। ভাল আছি, ভাল থাকেন। খুলনায় আছি।
384167
০৯ অক্টোবর ২০১৭ সন্ধ্যা ০৭:৪৩
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : বস্তুনিষ্ঠ লিখনী। জাযাকাল্লাহ!
১১ অক্টোবর ২০১৭ সকাল ১০:৫১
316909
দ্য স্লেভ লিখেছেন : বারাকাল্লাহ ফিক
384202
১৫ অক্টোবর ২০১৭ রাত ০১:১১
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

পড়লাম, দোয়া করি, জাযাকাল্লাহ..
১৪ নভেম্বর ২০১৭ রাত ০৯:৪১
317093
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম আস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। জাজাকাল্লাহ খায়রান

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File