রিভার পার্ক

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৪ নভেম্বর, ২০১৮, ১০:৩১:০৫ রাত



------------

গতকাল ছিলো সুন্দর রৌদ্রঝলমলে দিন। সম্ভবত আগামী সপ্তাহ থেকে বৃষ্টি শুরু হতে যাচ্ছে। শীতে এটাই ওরেগনের আসল চিত্র। প্রচুর পিচপিচে বৃষ্টি, মাঝে মাঝে ভারী বৃষ্টি। ওরেগন কৃষির জন্যে বিখ্যাত। এটা সুন্দর সবুজ স্টেট,সাইজে বাংলাদেশের দ্বিগুন। শীতের শেষে পাহাড়ী এলাকায় জমা বরফ গলে পানি প্রবাহিত হয় নানান সব নব নদী দিয়ে। এখানে নদী নালাও প্রচুর। কৃষককে পানি নিয়ে ভাবতে হয়না। আর প্রচুর ভূর্তুকী পায়,সহযোগীতা পায়, ফলে কৃষি খুব উন্নত। কৃষকরাও খুব ধনী। কারো কারো ব্যক্তিগত প্লেনও রয়েছে। আমার আশপাশে থাকা বেশ কিছু কৃষক প্রায়ই তাদের প্লেন নিয়ে আকাশে ওড়ে।

যাইহোক আমি মাটির উপরে চলাই পছন্দ করি, অত সাধ্য আমার নেই। চিৎ হয়ে পড়ে ছিলাম। হঠাৎ ভাবলাম আচ্ছা লেবাননের দিকে গেলে কেমন হয় ! ওদিকে পেটে প্রবল ক্ষুধা কিন্তু খেতে আলসেমী লাগছিলো। এক পিছ বেগল(গোলাকার শক্ত,ভারী পাউরুটি) সাথে মাখন আর মধু দিয়ে পেটে চালান করলাম। সাহারা মরুভূমীতে যেন এক পশলা বৃষ্টি নেমে হারিয়ে গেল ! ঝটপট রেডী হয়ে লেবাননের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পথে কৃষকদের বেশ কিছু ব্যক্তিগত আউটলেট পড়ল,যেখানে তারা তাদের উৎপাদীত সব্জী,ফলমূল বিক্রী করে। সবগুলোই বন্ধ, এখন ক্ষেতে কোনো ফসল নেই। কোথাও কোথাও কেবল মিস্টী কুমড়া বিক্রী হচ্ছে, আর কিছু আপেলও রয়েছে।

রাস্তা ধরে চলতে চলতে হঠাৎ আপেলের ক্ষুধা লাগল। পেটের যে অংশে আপেল থাকে,সেই অংশ হাহাকার করে উঠলো। জীবনেও এরকম হয়না আমার। আপেল তেমন ভালো লাগেনা তবে দামে সস্তা হওয়ায় কিনি প্রচুর। বেশীরভাগই স্মুথী বানিয়ে খাই। কিন্তু আজ এরকম হাহাকার করে উঠলো কেন বুঝলাম না। দামী এক স্টোরে ঢুকলাম। এখানে অন্য স্টোরের চেয়ে দাম অনেক বেশী,তবে কোয়ালিটি সুপার। আমি পাকা টসটসা দেখে গাঢ় হলুদ রঙের আপেল কিনলাম,,ওরে দারুন মিস্টি। চলতে চলতে কুড়মুড় করে আপেল খেতে থাকলাম। কিন্তু ভুলে গেলাম আমি আসলে কোথায় যাব !

এক স্টোরের সামনে থামলাম। এই স্টোরে মাঝে মাঝে মেক্সীকান কাচকলা পাওয়া যায়। সেটা খুঁজতে গেলাম, দেখী ভিন্ন জাতের প্লানটেইন বানানা বা কাচকলা রয়েছে,তাও অর্ধেক পেকে গেছে,,তাও দাম ভারতীয় দোকানের দ্বিগুন। কেনার প্রশ্নই ওঠেনা। চলে আসছি এরকম সময় দেখী এক বুড়ি পার্কিং থেকে গাড়ি বের করতে গিয়ে স্টোরের কার্ট স্ট্যান্ডে মেরে দিয়ে স্ট্যান্ড ও গাড়ী দুটোই ভেঙ্গেছে। দেখলাম আশপাশের লোকেরা তার দিকে দ্রুত ছুটে গেল, কিন্তু কেউই বুড়ির গায়ে হাত দিলনা। এটাই এদেশের নিয়ম। কেউ পড়ে গেলে ওভাবেই পড়ে থাকতে দেয়, অযথা হাতাহাতি করেনা, তবে ৯১১ এ কল করে অপেক্ষা করে।তবে কোনো স্টোরের ভেতর পড়ে গেলে সেই স্টোরের সার্টিফায়েড কর্মকর্তা,কর্মচারীরা বিষয়টি দেখাশুনা করে। গায়ে হাতদিলেও সাবধানে দেয়। সর্ব প্রথম তার সাথে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করে, সে আগাত পেয়েছে কিনা, কতটুকু পেয়েছে।

দেখলাম স্টোরের ম্যানেজারসহ অন্য অভিজ্ঞ কর্মচারী বের হয়ে আসল এবং ৯১১ এ কল করল। বুড়ির আসলে কিছুই হয়নি,তবে সে প্রচন্ড লজ্জা পেয়েছে বুঝলাম। আমি দেখলাম মাত্র ১ মিনিটের ভেতর পুলিশ হাজির। সম্ভবত পুলিশ খুব নিকটেই ছিলো। তবে যেকোনো স্থানেই পুলিশ কয়েক মিনিটের ভেতরই পৌছে যায়।

আমি লেবাননের এক অপরিচিত ও সুন্দর এলাকায় আন্দাজে চলে আসলাম। এত চমৎকার এলাকা দেখা যায়না। অসম্ভব সুন্দর সুন্দর বাগান বাড়ী আর মসৃন রাস্তা। কারো কারো প্রাইভেট জঙ্গল রয়েছে। বড় বড় গাছ সেখানে। প্রাইভেট পার্কও রয়েছে। বায়ে সুন্দর নদী প্রবাহিত। নদীর গা ঘেষে দারুন সব বাড়ি তৈরী হয়েছে অনেক ফাঁকা স্থান রেখে। খুব দারুন লাগছিলো। অনেকক্ষন চলতে চলতে দেখী এক পরিচিত রাস্তায় এসে পড়েছি, সামনেই ওয়াটার লু পার্ক। এই পার্কটা অসম্ভব সুন্দর। সাথে আছে খরস্রোতা পাহাড়ী নদী। মানুষ হুইল দিয়ে মাছ ধরতেও আসে। গ্রীষ্মে নানান নৌযান নিয়ে বিনোদনে আসে মানুষ। এর উজানে একটা ছোট বাঁধ দেওয়া হয়েছে, দেখতে খুব চমৎকার। আমি নেমে সেটার ছবি তুললাম।

ওয়াটার লু পার্কের ওপাশে গেলাম নদীর ওপরের ব্রিজ দিয়ে। এপাশটা বড় বড় ফার্ম হাউসে ভরা। সুন্দর রাস্তা ধরে আবারো লেবাননের দিকে আসতে শুরু করলাম। পুরো রাস্তাটা দারুন। জিপিএসে একটা পার্ক সেট করলাম -রিভার পার্ক।

অনেক ঘুরে রিভার পার্কে আসলাম। খুব দারুন এটা। পাশেই রয়েছে বহু পুরোনো কালের তৈরী রেলওয়ে সেতু। এখনও রেলগাড়ী চলছে। আমি পার্কে এসে হাটাহাটি করলাম। নদীর ধারে হাটলাম। বোট রাম্প আছে,এখান দিয়ে নৌযান পানিতে নামে, সেখানে গিয়ে দাড়ালাম। এখানে আরভি পার্ক আছে,যেখানে অনেকগুলো মোটরহোম পার্ক করা দেখলাম। অবসরপ্রাপ্ত লোকেরা বিভিন্ন পার্কে মোটরহোম নিয়ে কাটায়।তবে প্রতি রাতের জন্যে তাদেরকে ৪০ থেকে ৫৫ ডলার গুনতে হয় পার্ক করার জন্যে। বিনিময়ে ইলেকট্রিসিটি পায়,বর্জ্য ডাম্প করতে পারে,পানি নিতে পারে ইত্যাদী।

এক পাশে দেখলাম বাচ্চাদের খেলার স্থান। সেখানে লাফালাফি করলাম খানিক। এরপরও অনেকক্ষন ছিলাম। খুব ভালো লাগল। এরপর এক থাই রেস্টুরেন্টে গিয়ে মোটামুটি মাথা পর্যন্ত খেলাম,তারপর বাসার পথ ধরলাম।

বিষয়: বিবিধ

৫৪৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386135
১৬ নভেম্বর ২০১৮ সকাল ০৮:৫০
হতভাগা লিখেছেন : লেবানন কি আমেরিকাতেও আছে?
২৬ নভেম্বর ২০১৮ সকাল ০৮:৩৯
318112
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হ্যা আছে,,ছোট্ট এলাকা
386146
২১ নভেম্বর ২০১৮ দুপুর ১২:৪৭
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : আপনার ভ্রমণ বিষয়ক মজাদার বই কখন পাবো? Happy>-
২৬ নভেম্বর ২০১৮ সকাল ০৮:৩৯
318113
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হাহাহাহা ইচ্ছা আছে কিন্তু বই এখন কেউ পড়েনা

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File