কুরআনের গল্প

লিখেছেন লিখেছেন তবুওআশাবা্দী ২৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৩৩:৩০ দুপুর

" ই'মালু আ- লা- দায়ুদা শুকুর; ওয়া কালিলুম ইবাদিস শাকুর " -অর্থাৎ হে দাউদ পরিবার তোমার (আমার) শোকর স্বরূপ নেক কাজ কর; (আসলে) আমার বান্দাদের মাঝে খুব অল্প সংখ্যক মানুষই (তাদের রবের) শোকর আদায় করে (সূরা সাবাহ :১৩) |

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইন্তিকাল করেছেন মাত্রই কয়েক বছর | খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে | হজরত আবুবকরের (রাঃ) আড়াই বছর খিলাফতের সময় শেষ হয়েছে | মুসলিম খিলাফতের প্রধান আমির উল মুমেনিন হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন রাসূলুল্লাহর (সাঃ) অন্যতম সাহাবী ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)| আরবের মরুভূমির সীমানা পেড়িয়ে উত্তর পূর্বে এশিয়া, দক্ষিণ পশ্চিমে আফ্রিকার বিশাল ভূমিতে ইসলামের বিজয় পতাকা পত্ পত্ করে উড়ছে | ইসলামের অপ্রতিহত গতি পারস্য উপসাগর পেড়িয়ে হাজার বছর পুরোনো খসরুর পারস্য সাম্রাজ্যের অপরাজেয় শক্তি, শৌর্য পদানত করে এশিয়ার বিস্তৃত ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়েছে | উত্তর আর উত্তর পশ্চিমের বিস্তৃত ভূমিতে রোমান সাম্রাজ্যের যে একাধিপত্য শত শত বছর ধরে ইস্পাত দৃঢ়তায় ক্রিস্টান সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠত্ব টিকিয়ে রেখেছে তার প্রাচীরও বুঝি আমির উল মুমেনিন ওমর ইবনে খাত্তাবের (রাঃ) পরিচালনায় মুসলিম বাহিনীর অবিশ্বাস্য রণকৌশলের কাছে ভেঙে যাবার প্রতীক্ষায় ধুঁকছে | ইতিমধ্যেই সিরিয়া, লেবানন, ইসরাইল মুসলিম বাহিনীর কাছে পদানত | রোমান সম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপোলও বুঝি অজেয় মুসলিম বাহিনীর পদানত হবার আশংকায় কাঁপছে | আমির উল মুমেনিন ওমর ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) নিপুন পরিচালনায় পৃথিবীর রাজনৈতিক মানচিত্রে অজেয় এক সামাজিক, রাজনৈতিক আর ধর্মীয় শক্তি হিসেবে ইসলাম মরু ঝড়ের মতোই অকস্মাৎ দীপ্ত গতিতে আবির্ভুত হয়েছে মাত্র পঞ্চাশ বছরের মধ্যে |

আমির উল মুমেনিন যেমন কঠিন তেমনি সহজ সরল ব্যক্তিগত আচরণে | তার দরবারে কেউ মাথা নত করে তাঁকে কুর্নিশ করতে পারে না | আল্লাহ এক | সব ক্ষমতা আল্লাহর | সমস্ত সৃষ্টির উপর তিনি ক্ষমতাধর | সব আনুগত্য পাবার একমাত্র অধিকারী তিনিই | রাসূলের এই শিক্ষা আমিরুল মুমিনীনের সব সময়ের পাথেয় | তার সভায়, তার সামনেই মুসলিম অমুসলিম তার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে | নির্ভয়ে অভিযোগ করতে পারে যে খলিফার নিযুক্ত যে কোনো কর্মচারীর দায়িত্বে অবহেলা সম্পর্কে ! নিজে থাকেন প্রায় পাতার কুটিরে | পৃথিবীর অন্য সব রাজা রাজড়ারা অবাক হয়ে শোনেন তার কাহিনী | রোমান সম্রাটের বার্তা বাহক মদিনায় প্রাসাদ খোঁজ করেন আমিরুল মুমেনীনের সাক্ষাতের আশায় | মদিনায় তেমন কোনো প্রাসাদের দেখা না পেয়ে পথিক কে জিজ্ঞেস করেন আমির উল মুমেনিন ওমর ইবনে খাত্তাবের (রাঃ) প্রাসাদ কোথায় ? অবাক পথিক দ্বিপ্রহরের প্রখর রোদে খেজুর গাছের নিচে সামান্য চটির উপর শায়িত ঘুমন্ত এক লোকের দিকে দেখিয়ে বলে ঐতো আমিরুল মুমেনিন ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) শুয়ে আছেন | আহা সারাদিনের ক্লান্তির পর হয়তো একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন ! বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা রোমান দূতের | রাস্তার পাশে জন কোলাহলে সৈন্য সামন্ত হীন গাছের ছায়ায় নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা এই লোক আমির উল মোমেনীন ! প্রবল ক্ষমতাশালী ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)! যার অকুতোভয়, দুরন্ত বাহিনীর সামনে হাজার বছরের প্রবল পরাক্রান্ত পারস্য সম্রাট খসরুর সম্রাজ্য,বাহিনী ধুলোর মতো লুটিতে পড়েছে ! যার অবিশ্বাস্য সামরিক আর আধ্যাত্মিক শক্তির সামনে নত হয়ে পড়েছে জুলিয়াস সিজারের গড়া গ্রীক বিজয়ী পরাক্রান্ত রোমান সাম্রাজ্য !

ইসলামের পরশে অরবের মরুভূমিও আজ শান্ত | রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইসলামের মধ্যে দিয়ে যে তাওহীদের দাওয়াতের ডাক দিয়েছিলেন আরবসহ বিশ্বের সব অমুসলিম সম্পদায়কে তার অসমাপ্ত কাজটুকু নিপুন ভাবে বিশ্বস্থতার সাথে করে চলেছেন আমির উল মুমেনিন ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)| দিন রাত অক্লান্ত ভাবে খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত মুসলিমদের দ্বীন দুনিয়ার খেদমতগাড়ি করেন আর রাত গভীর হলে একাকী বের হন মদিনার আনাচে কানাচে, অলিতে গলিতে | নিজ চোখে দেখতে তার খিলাফতে আল্লাহর বান্দারা কেমন করে জীবন অতিবাহিত করছে | তিনি আমিরুল মুমেনিন |তার খেলাফতে এমনকি সুদূর ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর তীরে কোনো কুকুর না খেয়ে মারা গেলে আল্লাহ তাঁকে অপশাসনের জন্য দায়ী করতে পারেন | রাসূলের একনিষ্ঠ সাহাবী হজরত ওমরের (রাঃ) কাছে সেটা অজানা নয় | আশরাফ-আতরাফের, আমির- নকিরের কোনো পার্থক্য নেই আল্লাহর দৃষ্টিতে | আল্লাহর দৃষ্টিতে যে তাকওয়াই ব্যক্তির সাফল্য মাপার একমাত্র স্কেল | যার তাকওয়া বেশি হবে সেই শেষ বিচারের দিনে সফল হবে | আর সেটাই হবে ব্যক্তির জন্য আল্লাহর দৃষ্টিতে মহা সাফল্য |রাসূল (সাঃ) সাম্য মৈত্রীর, আরবি আরবি আজমী সবাই যে এক তার যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন সেই শিক্ষার কোনো কিছুই মন থেকে মুছে যায়নি আমির উল মুমেনিন ওমর ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) | তাই নিজে যেমন আচরণে সহজ সরল তেমনি কঠিন দ্বীনের বাস্তবায়নে | গভীর রাতে তাই মদিনার পথে তার একাকী পদচারণা |

খলিফার দায়িত্ব পালনের প্রথমদিকের কঠিন দিনগুলো পার হয়েছে | উত্তর আর উত্তর পূর্বের রোমান বাহিনী তার বশ্যতা স্বীকার করেছে | পূর্বের প্রবল পরাক্রান্ত পারস্য সম্রাট খসরু পরাজিত | তাই বুঝি আমির উল মুমেনিন ওমর ইবনে খাত্তাবের একটু অবসর | তিনি নিয়ত করেছেন এইবার হজ্বের মাসে মক্কা যাবেন হজ্ব করতে | সেই কবে রাসূলের (সাঃ) সাথে বিদায় হজ্ব করেছেন ! তারপর আর হজ্ব করতে যাওয়া হয়নি | রাসূলের (সাঃ) ইন্তিকালের পর আরব ইয়েমেনের কিছু বিভ্রান্ত মুসলিমের ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, ভন্ড নবীদের আবির্ভাব ও তাদের দমন, খলীফাতুর রাসূল হজরত আবুবকরের (রাঃ) ইন্তিকাল, তারপর তার হাতে মদীনাবাসী মুহাজির আর আনসারদের বাইয়াত গ্রহণ, আমির উল মুমেনিন হিসেবে দায়িত্ব পালন, ইসলামের নিরাপত্তা রক্ষায় পারস্য আর রোমান সম্রাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুদ্ধেই চলে গেছে অনেক সময় | এবার শান্ত নিরুদ্বিগ্ন সময়ে তাই হজ্ব করতে মন আকুল হয়েছে |

আমির উল মুমেনিন হজ্ব করতে যাবেন এই কথা জানতে পেরেই মদিনা ও আশে পাশের এলাকার মুসলিমদের মধ্যে সাড়া পরে গেলো | এমনিতেই হজ্ব মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় দায়িত্ব | প্রতি বছর মদিনা আর আশে পাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার মুসলিম হজ্বে সামিল হন | এবার স্বয়ং আমির উল মুমেনিনের সাথে হজ্ব পালনে তাই আরো বেশি মুসলিম যেন যোগ দিয়েছেন |

হজ্বের মাসে যথা সময়ে আমির উল মুমেনীনের সাথে হাজার মুসলিম এসে পৌঁছেছেন মক্কায় | এই সেই মক্কা ! এই মক্কার অদূরবর্তী পাহাড়ে সামান্য রাখাল বালক হিসেবে দুম্বা চড়িয়ে কেটেছে তার শৈশবের কঠিন দিনগুলো ! এখানেই কত দিন আগে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন তাঁকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! রাসূলুল্লার (সাঃ) হাতে হাত রেখেই আল্লাহকে এক মাত্র সৃষ্টিকর্তা হিসেবে ও রাসূলকে (সাঃ) তার প্রেরিত নবী হিসেবে স্বীকার করে ইসলামে দীক্ষা নিয়েছিলেন তিনি ! এই মক্কার আত্মীয়, পরিবার পরিজনেরাই একসময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণের অভিযোগে তাদের দেশ ছাড়া করেছিল ! কত স্মৃতি জাগানিয়া শহর এই মক্কা ! আজ আল্লাহ তাকে অর্ধেক পৃথিবীর শাসন কর্তা করেছেন ! খোদার আলমে আমির উল মুমেনিন হিসেবে তাকেই আল্লাহ সবচেয়ে ক্ষমতাশালী করেছেন ! শৈশবের সেই শহরে তিনি আজ রাখাল বালক নয় সারা আরব উপদ্বীপের প্রধান,সারা মুসলিম জাহানের খলিফা, আমির উল মোমেনীন হিসেবে এসেছেন হজ্ব করতে ! কিন্তু পেছনের কিছুই আজ তাকে আলোড়িত করছে না ! সব কষ্ট ছাপিয়ে বুকে বেজে উঠেছে এক গভীর শুন্যতা | আগেরবার যখন হজ্বে এসেছিলেন তখন সেই কাফেলায় ছিলেন প্রিয়তম নবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বয়ং | এবার তিনি নেই | আমির উল মুমেনিন ওমর ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) বুকে একটা শুন্যতা | তার অভাব বোধ করছেন প্রতিটি পদক্ষেপে | বুকে জমানো ব্যাথা সামলে তিনি মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় দায়িত্ব হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা গুলো করছেন |

আরাফায় অবস্থান শেষ হয়েছে | বায়তুল আকিকের তাওয়াফে জিয়ারতে সামিল হয়েছে আরব ও আশে পাশের দেশ থেকে আসা হাজার মুসলিম | সবার সাথে তাওয়াফে জিয়ারতে সামিল হয়েছেন আমিরুল মুমেনিন ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) | একমনে তাওয়াফে জিয়ারতের দোয়া পড়ছেন আর বায়তুল্লাহকে তাওয়াফ করছেন | একবার, দুবার...|এক সাথে হাজার মানুষের দোয়া পড়ার শব্দ উঁচু গুঞ্জরণের সৃষ্টি করেছে | তার মধ্যেই আমিরুল মুমেনিন ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হঠাৎ থমকে গেলেন বায়তুল্লাহর গা ঘেঁষে এক বেদুঈনের দোয়া শুনে | অবাক বিস্ময়ে তিনি শুনলেন বায়তুল্লাহর গা ছুঁয়ে আকুল হয়ে সেই বেদুইন দোয়া করছে হে আল্লাহ আমাকে আপনি ক্ষুদ্র দলের অন্তর্ভুক্ত করুন, আমাকে আপনি ক্ষুদ্র দলের অন্তর্ভুক্ত করুন | আমির উল মুমেনিন ভাবছেন এ কেমন দোয়া ! ইসলামতো আর ক্ষুদ্র নেই | রাসূলুল্লাহর (সাঃ) ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকের কঠিন দিনগুলোতো কবেই অতিক্রান্ত হয়েছে | সারা আরবে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম নেই বললেই চলে, রোমান সম্রাজ্যের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে শাম ,পবিত্রভূমি জেরুজালেম, খসরুর সাম্রাজ্য পদানত করে সেখানেও ইসলামের আহবান ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে | ইসলাম আরবের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা পৃথিবী জুড়ে | এসব কথা কি আরব বেদুঈনের অজানা ? মুসলিমরাতো এখন আর ক্ষুদ্র জাতি নয় ! তবে কেন এই দোয়া ! তিনি বিস্ময় বোধ করলেন !

তাওয়াফ শেষ হয়েছে | আমির উল মুমেনিন নজরে রেখেছেন সেই নাম না জানা বেদুঈনকে | হজ্ব শেষ হবার পর তিনি তাকে ডেকে নিয়ে এসেছেন তার কাছে | বেদুঈনের মন আশংকায় কাঁপছে | হজ্ব পালনে কি কোনো গাফিলতি হয়েছে ! দ্বীনের অনুশাসন পালনে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কঠিন সেটা কে না জানে ! না, না তেমন কিছু নয় | আমির উল মুমেনিন হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) জানতে চাইলেন হে বেদুইন, তুমি কি দোয়া করছিলে বায়তুল্লাহর গা ছুয়ে ? তুমি কি জানোনা, ইসলাম আরবের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে গেছে শামে, পারস্যে ? মুসলিমরাতো এখন আর কোনো ক্ষুদ্র জাতি নয় ! তবে তুমি কোন দলের অন্তর্ভুক্ত হবার দোয়া করছো আল্লাহর আছে ? তুমিকি ইসলামের অনুসারী হতে চাওনা ? আরব বেদুঈনের মুখের শঙ্কা কেটে গিয়ে ফুটে উঠেছে স্মিত হাসি | সেই হাসি মুখে ধরে রেখেই সেই বেদুইন উত্তর দিলো, আমির উল মুমেনিন, আপনি কি কুরআন পড়েননি ? আশে পাশের দেশের থেকে আসা হজ্ব যাত্রীরা বেদুঈনের দুঃসাহস দেখে চমকে উঠলো ! অর্ধেক পৃথিবীর শাসক আমির উল মুমেনিন ওমর ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) মুখের উপর এই কথা বলার শাস্তি কি হতে পারে তা ভেবেই সবাই ভয়ে অস্থির | কিন্তু আমির উল মুমেনিন তখনও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন বেদুঈনের উত্তরের আশায় | সেই বেদুইন তখন বললো, আল্লাহ কি সূরা সাবায় বলেননি "আমার বান্দাদের মাঝে খুব অল্প সংখ্যক মানুষই (তাদের রবের) শোকর আদায় করে?"আমিতো তাই আল্লাহর শুকুরগোজারী বান্দাদের ক্ষুদ্র দলের অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়েছি | আমিতো পার্থিব কোনো কিছু চাই নি আমার রবের কাছে |

আরব বেদুঈনের গলায় এই অভাবিত উত্তর শুনে রাসূলের প্রিয়তম সহচর, আশরায়ে মুবাশ্বিরার অন্যতম সাহাবী, আমির উল মুমেনিন ওমর ইবনুল খাত্তাবের চোখ জলে ভরে গেলো | তিনি আকুল হয়ে কাঁদলেন | উচ্চস্বরে আফসোস করলেন তিনি নিজে কত কম কুরআন জানেন বলে ! তিনি যাদের জানেন তাদের সবাই বুঝি তার চেয়ে কুরআন বেশি জানে ! একজন আরব বেদুইন, তারও কুরআনের জ্ঞান তার থেকে কত বেশি ! সে তার চেয়ে কুরআন কত বেশি জানে ! তিনি আল্লাহর কাছে নিজের হেদায়াতের জন্য দোয়া চাইলেন আর সেই বেদুঈনের জন্য দোয়া করলেন |

হজরত ওমর (রাঃ) প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন বেহেস্তে অপরূপ সুন্দর একটা প্রাসাদ দেখে তিনি ফেরেস্তাদের জিজ্ঞেস করলেন এটা কার প্রাসাদ? উত্তরে তারা বললো, এটা ওমর বিন খাত্তাবের জন্য নির্ধারিত প্রাসাদ | সেই প্রাসাদে রাসূলুল্লাহকে ঢুকবার জন্য বলা হল | রাসূলুল্লাহ সাহাবীদের জানালেন হজরত উমরের সম্মানের কথা ভেবে তিনি সেই প্রাসাদে ঢোকেন নি | এমন সন্মান ছিল হজরত ওমরের (রাঃ) | তাঁর মতামত এবংঅবস্থানকে সত্যি প্রমাণিত করতে আল্লাহ কুরআন শরীফে একাধিক আয়াত নাজিল করেছেন | দ্বীনের কাজে তাঁর মতো নিবেদিত কাউকে পাওয়া ছিল দুস্কর | হজরত ওমর (রাঃ) ছিলেন ব্যক্তিগত আচরণে সহজ সরল | দ্বীনের জ্ঞানে, আল্লাহ ভক্তিতে, তাকওয়ায় তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সাঃ) অন্যতম অনুসারী | কিন্তু সে নিয়ে কোনো অহংকার তাঁর ছিল না | তাই এক নাম না জানা আরব বেদুইন যখন তাঁকে কুরআনের আয়াত ব্যাখ্যা করলেন তিনি তাকে প্রশংসা করলেন আর নিজের কুরআন না বোঝার অক্ষমতার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন কুরআনকে আরো বেশি বুঝবার জ্ঞানের জন্য |

ফজরের জামাতে সূরা সাবাহ তেলাওতের পর জামাত শেষে হজরত ওমরের (রাঃ) এই কাহিনী আমি শুনেছিলাম আমাদের মসজিদের এক মুসল্লির কাছে | তারপর অনেক দিন পর এই সপ্তাহের জুম্মার খুৎবায় এই ঘটনাটা ইমাম সাহেব বলার পর আমার পাশে বসা রিটায়ার্ড ইঞ্জিনিয়ার ব্রাদার তারিক জামিলকে আমি ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুনেছি | আসুন আমরাও সেই নাম না জানা আরব বেদুঈনের মতো আল্লাহর শুকুর করি তার অপরিসীম দয়ার জন্য | আমরাও অনুভব করার চেষ্টা করি আল্লাহ কি পরিমান রহমত আমাদের করেছেন ! আমাদের অনেকেরই অনেক সমস্যা, অনেক না পাবার কষ্ট আছে | অনেকেই নিজেদের না পাবার কথা মনে করে ভাবতে পারেন তাহলে শুকুর করবেন কেন ? আমি জানি, আমি যাই বলি না কেন আপনাদের সেই কষ্টগুলো দূর হবে না | কিন্তু শুধু বার্মার রোহিঙ্গাদের কথা মনে করুন, আমাদের পাশের একটি দেশেই কি রকম দূরদশাই না তাদের পার করতে হচ্ছে ! একাত্তুরে আমাদের অনেকেই নিরাপদে দেশ থেকে পালিয়ে পাশের দেশে আশ্রয় নিয়ে জীবন বাঁচাতে পেরেছিল | রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা সেই দরজাও বন্ধ করে রেখেছি | তাদের নিজেদের, নিজেদের ছেলে, মেয়ে, মা, বোন, স্ত্রীদের কি পরিমান বর্বরতার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে সেটা মনে করুন ! আর ভাবুন আল্লাহ আমাদের সেই কঠিন পরীক্ষার থেকে মুক্তি দিয়েছেন | তাই আসুন আমরা আল্লাহর শোকর করি উনি আমাদের যা দিয়েছেন তার জন্য | আর শোকর করি তিনি আমাদের রোহিঙ্গাদের মতো সেই অপরিসীম কষ্ট আর অপমানের কঠিন পরীক্ষা থেকে দূরে রেখেছেন বলে | আর আসুন আরো দোয়া করি মুসলিম উম্মার এই কঠিন সময় দূর করে তাদের জন্য দিনগুলো সহজ করে দেবার জন্য |

(এই লেখার মূল কাহিনীটা সত্যি | ইতিহাসের তথ্যগুলো সত্যি | হাদিসের মূল বক্তব্যগুলো সত্যি | আমি শুধু লেখকের স্বাধীনতা কাজে লাগিয়ে ঘটনাগুলো নিজের মতো করে লিখলাম )

বিষয়: বিবিধ

২৪৫১ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380148
২৬ নভেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:৫৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam. Amin, Amin, Amin. Wonderful expression.
২৬ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০২
314663
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : সন্ধাতারা:অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার আর মন্তব্যের জন্য|অনেক দিন ধরেই এই কাহিনীটা আমি জানি|অনেকবার এই কাহিনীটা নিয়ে আমার লিখতেও ইচ্ছে করেছে কিন্তু কেন জানি ইচ্ছেটা আর লেখা হয়ে উঠেনি|কাল মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ে এসে কেন জানি এই লেখাটা লিখতে ইচ্ছে হলো| একদিনের মধ্যেই লিখা|এই লেখাটা লেখার সময় আমি আপনার কথা ভেবেছি|ব্লগে সবাইকে আরো লেখার জন্য অনুরোধ করে আপনার কয়েক দিন আগের লেখাটার কথা আমার মনে হয়েছে| লিখতে ইচ্ছে যে করে না তা নয়| কিন্তু নিজের একাডেমিক কাজগুলোর ব্যস্ততা, নিজের লেখার রেফারেন্সগুলো জোগাড় করে সব সময় আর লেখা হয়ে উঠেনা|তাছাড়া যে কোনো বিষয় নিয়েই আমার লিখতেও ইচ্ছে করে না|নিজের কাজগুলোর থেকে সময় কেড়ে নিয়ে খুব তাড়া করেই এই লেখাটা লিখলাম |আপনার রিকোয়েস্টটা রাখার চেষ্টা করলাম| কতখানি পারলাম বা ভালো করে পারলাম কিনা তা অবশ্য বুঝতে পারছিনা|
৩০ নভেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৪
314752
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু পরম শ্রদ্ধেয় ভাইয়া।

আমি সেদিন কর্মরত ছিলাম। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আপনার লিখা সম্পর্কে বিশদভাবে বলা হয়ে উঠেনি। আপনার প্রায় প্রতিটি লিখাই অনেক হৃদয়গ্রাহী ও বস্তুনিষ্ঠ। আপনার বিষয় নির্বাচন, উপস্থাপনা ও শব্দ চয়নে বৈশিষ্ট্যতা আছে। যদিও সময়াভাবে মন্তব্য করা হয়ে উঠে না। বোনের কথা মনে রেখেছেন এবং অনুরোধে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়াও দিয়েছেন সেজন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা।


জাজাকাল্লাহু খাইর।
380159
২৬ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:৪৩
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : লেখাটা হৃদ্ধয় ছুঁয়ে যায়। একটানে পড়ে ফেললাম। রবের উপর লেখা একটি বই পড়েছিলাম। রোহিঙ্গা ভাই ও বোনদের পাশে
দাড়াবার কেউ নেই। চোখ দিয়ে পানি এসে গেল । ভিডিও এড করলাম, যাতে লেখার
গুরুত্ব বেড়ে যাবে।


২৬ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:২০
314668
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার মন্তব্যের জন্য | দোয়া করছি যেন যেই মুসিবতগুলো রোহিঙ্গদেরসহ মুসলিম উম্মার উপর এসে পড়েছে সেগুলোর থেকে আল্লাহ যেন মুসলিম উম্মাকে রক্ষা করেন |
380162
২৬ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:০৭
মনসুর আহামেদ লিখেছেন :
২৬ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:২০
314669
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ |
380167
২৬ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১০:০৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমিন। অত্যন্ত শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
২৬ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১১:০৪
314673
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : রিদওয়ান কবির সবুজ:আপনি আমাকে মাস্টার মশাই বানিয়ে দিচ্ছেন মন্তব্যে | এই লেখাটা কাউকেই কিছু শেখাবার জন্য নয় কিন্তু|আমি নিজে এই কাহিনী জেনে চোখের পানিতে ভিজেছি|এই অসাধারণ ঘটনাটা সবার সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছে করলো|সেই থেকেই এই লেখা|আপনাদের ভালো লাগলে সেটা উপরি পাওনা|দুর্বল লেখার জন্য সেটা না হলেও অবশ্য কোনো ক্ষতি নেই|অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়া আর মন্তব্যের জন্য|ক্যাস্ট্রোর লেখাটার জন্য ধন্যবাদ |মন্তব্যে ধন্যবাদ জানানোটা অনিচ্ছাকৃতভাবে বাদ পরে গেছে|
380200
২৭ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০১:৪৯
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! সুন্দর ও শিক্ষনীয় বটে। জাযাকুমুল্লাহ ভাইয়া। বইয়ের রেফারেন্সটা দিলে আরো অনেক ভালো হতো।
২৭ নভেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:০৫
314687
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : মাহবুবা সুলতানা লায়লা:আমাদের ইমাম সাহেবের কাছে মূল ঘটনাটা যে বইয়ে আছে তার রেফারেন্সটা চেয়েছি আমি গতকাল|উনি বলেছেন সেটা দেবেন | সেটা পেলেই জানিয়ে দেব|আর এছাড়া লেখার হাদিসটা খুব সম্ভবত বুখারী শরীফেই পড়েছিলাম|প্যারাফ্রেইজিং করেছি দেখে আর রেফারেন্সটা দেইনি|অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়া আর মন্তব্যের জন্য|
০৭ জানুয়ারি ২০১৭ রাত ১১:২৫
315321
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : মাহবুব সুলতানা লায়লা:আপনার প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলো|গতকাল রাত্রে (জানুয়ারি ৬,২০১৭) আমাদের ইমাম সাহেব আমাকে ফোন করে জানালেন যে, আরব বেদুঈনের দোয়া আর তার সাথে হজরত ওমরের (রাঃ) কথা আবি শাইবা তার "মুসান্নাফ" গ্রন্থে বলছেন | তাছাড়া এই ঘটনা তাবারী তার "আহকাম উল কুরআন"-এ যা "তাফসীর ই তাবারী" নামেই বিখ্যাত তাতে উল্লেখ করেছেন | আবারো ধন্যবাদ |
380224
২৭ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১০:৫৯
আফরা লিখেছেন : ভাইয়া সত্যি বলছি অসাধারন একটা লিখা । জাজাকাল্লাহ খায়ের ভাইয়া ।
২৮ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ০৭:০৪
314708
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : আফরা:নতুন একটা ফর্মে লিখবার চেষ্টা করলাম|অনেকটা ইতিহাস ভিত্তিক লেখার মতো করে |এখন পর্যন্ত কেউ যে গালাগাল করলো না তাতে খানিকটা আশ্চর্য হয়েছি|ভয়ে ভয়েই ছিলাম| এখনো ভয়টা যে কমছে তা নয়| আপনার মন্তব্যটা পরে খানিকটা আশ্বস্থ হলাম|ভাইয়াইতো বলছেন তাই না ? ভাইয়ার লেখার এতো প্রশংসা করতে হবে না| নিজের অনেক ব্যস্ততার মাঝেও সময় করে যে ভাইয়ার লেখা পড়ছেন তাতেই আমি খুশি|এ'রকম আরো কিছু লেখা লিখলে কেমন হয় কুরানের গল্প আর হাদিসের গল্প হেডিঙে? ও,একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম| এটাতো ডিসেম্বর মাস | আপুর বাচ্চাদেরতো স্কুল নেই | আপুকে আরো কিছুদিন রেখে দিন | হলিডের দিনগুলো মজা করে একসাথে কাটিয়ে তারপর দেশে যেতে বলুন |
৩০ নভেম্বর ২০১৬ রাত ০৩:১৯
314738
আফরা লিখেছেন : ভাইয়া লোকে বলে আমি নাকি কঠিন কথা ও সহজ ভাবে বলতে ও গ্রহন করতে পারি , যদিও আমি বুঝি না । আবার সবাই বলে আনি নাকি কারও প্রশংসা করতে পারি না । তবে আমি জানি ,আমি সঠিক টা বলি ।

তাই আবার ও বলছি ভাইয়া লিখাটা সত্যি খুব ভাল হয়েছে আর লিখবেন জেনে খুশী ও হয়েছি ।

ধন্যবাদ ভাইয়া ।
১৮ অক্টোবর ২০১৭ সকাল ০৫:৪২
316956
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : আফরা:আবার নতুন করে লেখা শুরু করা যায় না ব্লগে ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File