ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ - ১

লিখেছেন লিখেছেন মেরিনার ১৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১০:৫৭:২২ রাত

ভূমিকা: এই ব্লগে (আগের সোনাব্লগসহ) আমার বিচরণ অনেকদিন। একটা বিষয় আমাকে খুব পীড়া দেয় – অনেক সময়ই দেখা যায় একজন মুসলিম নামধারী মানুষ ইসলাম, আল্লাহ্, রাসূল(সা.), কুর’আন বা হাদীস সম্বন্ধে হালকাভাবে এমন একটা মন্তব্য করে বসেন, যার পরে theoretically তার আর মুসলিম থাকার কথা নয়। এধরনের ঘটনার frequency গত ৭ বছর+ ধরে উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দেখছি বলেই মনে হয়। ব্যাপারটা তিনি সজ্ঞানে করে থাকলে আলাদা কথা। কিন্তু, না বুঝে করে থাকলে তা তার জন্য কতই না দুর্ভাগ্যজনক! কাউকে অমুসলিম প্রতিপন্ন করা আমার উদ্দেশ্য নয় এবং তাতে আমার কোন লাভও নেই। কিন্তু অনেকবারই মনে হয়েছে তাকে/তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া বোধহয় আমার ঈমানী দায়িত্ব। একবার জানিয়ে দেয়ার পরে, তিনি নিজেকে নিয়ে কি করলেন, তা আমার দেখবার বিষয় নয়! এই তাগিদ থেকেই আজকের লেখাটায় হাত দেয়। যদি আপনাদের কোন কাজে লাগে তবে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর – আলহামদুলিল্লাহ্!

মূল বক্তব্য: আল্লাহয় ও আখরাতে বিশ্বাসী মুসলিমদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, পরকালের জীবনে জান্নাত লাভ করা। মুসলিমদের জীবনের সকল কর্মকান্ডই তাই, ঐ একটি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। সকালে ঘুম থেকে উঠে দৈনন্দিন জীবন শুরু করার পর থেকে, দিনশেষে, আবার রাতে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত আমরা যত কাজ করি – সব কাজে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করি, মূলত জান্নাতে যাবার আকাঙ্খা থেকেই। কিন্তু মুসলিম মাত্রই জানেন যে, জান্নাত লাভের পূর্বশর্ত হচ্ছে ঈমান, তাই জান্নাতে যেতে হলে আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানের উপর থাকতে হবে – আর সেজন্য, ঈমান বলতে কি বুঝায়, কি কি বিশ্বাস করা ঈমানের জন্য অপরিহার্য্য ইত্যাদি জানার পাশাপাশি, কি কি কারণে আমাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে সেটা জানাটা অত্যন্ত জরুরী। কুর’আনে আল্লাহ্ বলেন:

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলমান হওয়া ছাড়া মারা যেও না।“ (কুর’আন, ৩:১০২)

আরবী ভাষার রীতি অনুযায়ী এই আয়াতের সঠিক অর্থ দাঁড়ায় এমন যে, আল্লাহ্ আমাদের বলছেন: আমরা যেন অমুসলিম অবস্থায় মারা না যাই – অর্থাৎ মৃত্যুর সময় যেন মুসলিম অবস্থায় থাকি। আর তা থাকতে হলে, কি কি কারণে আমাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে, বা, কি ঘটে গেলে আমরা সারাজীবন মুসলিম নাও থাকতে পারি তা জানাটা অত্যন্ত জরুরী। আমরা সারাজীবন মুসলিম থেকেও যদি মৃত্যুর ৬ মাস, ৬ দিন, ৬ঘন্টা বা ৬ মিনিট আগেও ঈমান হারিয়ে অমুসলিম হয়ে যাই - তা হলে আমাদের সকল সৎকর্ম ও ইবাদত বৃথা হয়ে যাবে – আমরা আর জান্নাত আশা করতে পারবো না।

আমরা মুসলিমরা যখন জীবনের প্রারম্ভে অযু করতে শিখি, তখন কি কি কারণে আমাদের অযু থাকে না সেটা জানাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়ায় খুব সহজ কারণে: যে ইবাদতগুলোতে অযু অপরিহার্য্য (যেমন নামায বা সালাত, তাওয়াফ ইত্যাদি), অযু না থাকলে সেগুলো সমাধা হবে না বরং আমাদের প্রচেষ্টা পন্ডশ্রমে পরিণত হবে। তাই কিসে অযু ভঙ্গ হয় তা যদি আমরা না জানি, তবে অযু করার পর অযু আছে মনে করে আমরা হয়তো কোন ইবাদতের জন্য অনেক মেহনত করলাম, কিন্তু কার্যত দেখা গেলো অযু করার সাথে সাথেই হয়তো আমাদের অজ্ঞাতসারে আমাদের অযু ভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল আর সেহেতু, আমাদের সকল ইবাদত-প্রচেষ্টা বিফলে গেলো। পাঠক হয়তো জেনে থাকবেন যে, কাবাসংলগ্ন মক্কার মসজিদুল হারামে ১টা সালাতের সওয়াব, অন্যত্র ১ লক্ষ সালাতের সওয়াবের সমান। এজন্য যারা হজ্জ্ব বা উমরাহয় যান, তারা চান ওখানে বেশী বেশী ইবাদত করতে। কিন্তু আপনার যদি অযুই না থাকে, তবে ঐ রকম ফজিলতের স্থানও আপনার কোন উপকারে আসবে না! একইভাবে ঈমান আনার সাথে সাথে ঈমানদার বান্দাদের এটাও জানা উচিত যে, কিসে কিসে ঈমান বিনষ্ট হয়ে যায় – কেউ ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায়। অযুর মতই, আপনার যদি ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়, তাহলে কোথায় কোন ফজিলতের জায়গায় বা ফজিলতের সময়ে কত ইবাদত করলেন তা অর্থহীন হয়ে যায়। সেজন্যই ঈমান/ইসলাম ভঙ্গের কারণগুলো যে কোন মুসলিমের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জানা আবশ্যক! বিশ্বমানের প্রায় সকল স্কলারই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছেন, লিখে গেছেন। অথচ, আমাদের দেশের সারাজীবন-৫ওয়াক্ত-সালাত-আদায়-করা বহু মুসলিমই হয়তো এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো সম্বন্ধে কখনো শোনেনই নাই!

আজকে আমরা প্রথমেই যে কয়টি বিষয়ের জন্য কোন মুসলিমের ঈমান বিনষ্ট হয়ে যায়, সেগুলো শুধু পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করবো ইনশা’আল্লাহ্। যে বিষয়গুলোতো ঈমান/ইসলাম বিনষ্ট হয়ে যায় সেগুলো হচ্ছে:

১) কোন প্রকার (বড়) শিরকে লিপ্ত হওয়া।

২) নিজের এবং আল্লাহর মাঝে কাউকে মধ্যস্থতাকারী জ্ঞান করা।

৩) অমুসলিমদের অবিশ্বাসী মনে না করা।

৪) মুহাম্মদ (সা.) যা নিয়ে এসেছিলেন, তার চেয়ে উন্নততর কোন জীবনব্যবস্থা বা পথ-নির্দেশনা রয়েছে এমন মনে করা।

৫) দ্বীনের (ইসলামের) অবিচ্ছেদ্য কোন অংশকে অপছন্দ করা – যদি বাস্তবে বা বাহ্যিকভাবে কেউ তা পালন করেও থাকে।

৬) দ্বীনের কোন বিষয় বা তা পালনকারীদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা।

৭) যাদু-টোনা করা।

৮) অবিশ্বাসীদের সমর্থন করা এবং তাদের প্রতি আনুগত্য জ্ঞাপন করা।

৯) কারো কারো শরিয়ত না মানলেও চলে – এমন বিশ্বাস পোষণ করা।

১০) দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি না শেখা ও না প্রয়োগ করার মাধ্যমে দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া।

১১) দ্বীনের অবিচ্ছেদ্য কোন অংশকে অস্বীকার করা।

১২) (কারো কারো মতে)সালাত পরিত্যাগ করা, তবে সকল আলেম এমন মনে করেন না।

আমরা আগামী পর্বগুলোতে প্রত্যেকটি পয়েন্ট বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশা’আল্লাহ্!

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:২২

বিষয়: বিবিধ

১০২৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384255
২২ অক্টোবর ২০১৭ রাত ১২:৪৩
আবু জারীর লিখেছেন : এই দোষগুলো যাদের মধ্যে আছে তারা ঈমান আনার পরেও ঈমান হারা হয়ে গেল তাইনা? মুসলিম হওয়ার পরেও মুসলমানিত্ব হারিয়ে ফেল্ল তাইনা?

রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা আছে তারা আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মানুষের মন গড়া আইনে রাষ্ট্র চালেওতো তাদের মুসলমানিত্ব থাকার কথানা তাইনা?

এখন প্রশ্ন হল যারা আমাদেরকে ঈমান এবং ইসলাম বিনষ্টের কারণগুলো যারা শিখান আবার তারাই এসব দোষ বিদ্ধমান দেখার পরেও কাউকে ঈমান হারা, ইসলাম হারা বা ত্বাগুতের সাথী বলতে রাজিনা!

দুঃখ লাগে। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File