আক্কেল আলীর খোয়াব – রম্য রচনা

লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ২৭ আগস্ট, ২০১৭, ০৮:১৪:৫২ সকাল

আক্কেল আলী প্রচণ্ড ব্যাথা ও জ্বর নীয়ে তার ব্লাড চেস্ট রিপোর্টটা প্যাথলজী থেকে নিতে যেয়ে হচাৎ খেল। প্রচণ্ড ব্যাথা ও জ্বরের যন্ত্রণায় কাতর আক্কেলকে প্যাথলজীর লোকটা শুনিয়ে শুনিয়ে উচ্চ স্বরে বলতে লাগল, আপনার মত এই ধরনের আখাস্তা লোকদের জন্য আজকে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ডেংগু ও চিকুন গনিয়া । এই ভাইরাসদের সাথে করে আপনি কোন আক্কেলে এই রিপোর্ট নিতে আইছেন। নিজেত মরছেন আবার অন্যকে মরার চেষ্টা করতাছেন-----। যন্ত্রণায় কাতর আক্কেল লোকটার কথার মাথা মুন্ড কিছু বুঝতে পারল না, শুধু এতটুকু বুঝল তার দিন শেষ। এবার শারীরিক যন্ত্রনার সাথে সাথে মরার ভয় এসেও ভর করল তার কাঁধে। সে কাঁপা কাঁপা হাতে রিপোর্টটা নিয়ে বাসায় না যেয়ে সরাসরি তার পারিবারিক ডাক্তার মজিদ খানের চেম্বারের দিকে রওনা দিল।

ডাক্তারের চেম্বারে এসে দেখে রোগীদের লম্বা লাইন। আক্কেল আলী লাইনের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে সরাসরি ডাক্তারের রুমের দিকে যেতে থাকলে, যে লোকটা সিরিয়াল নম্বর দিচ্ছিল সে বলল, আক্কেল ভাই আজকে কী হইল সিরিয়াল ব্রেক করে যাচ্ছেন যে, তার কথা শেষ হওয়ার আগেই একজন যুবক ছেলে আক্কেলের কাঁধে হাত রেখে বলল, চান্দু নবাবী পাইছ, আইলাম আর খাইলাম। আক্কেল দ্রুত যুবকটির হাত তার কাঁধ থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল, ভাইজানের কী মরার সাধ হইছেনি। যুবকটি এই ধরনের উত্তর আশা করেনি। রাগান্বিত স্বরে সে বলল, চান্দু চুরিতো চুরি তার উপর সিনা জুরি। আমারে তুমি বুইঝা উঠতে পার নাই। আমারে হুমকী, তোর থোতা ভাইংগা হাতে ধরাইয়া না দিছি তো আমার নাম কুদ্দুস না।

আক্কেল বলল ভাইজান আফনে আমারে ভুল বুঝতাছেন। আমার সাথে আছে ডেংগু ও চিকুন গনিয়া ভাইরাস তাই ---। যুবকটি আক্কলে আলীর কথা শেষ করার আগেই এক লাফে তার কাছ থেকে দশ হাত দূরে সরে যেয়ে বলল, সর সর ডেংগু আবার চিকুন গনিয়া ভাইরাস, একটা না, একসাথে দুইটা বাজাইয়া বইসছ, হারামজাদা, বজ্জাত কোহানকার এই কথা আগে কবি না, যা যা তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যা।

ডাক্তার আক্কেলের ব্লাড চেস্ট রিপোর্টটা কয়েক বার দেখে বলল, আক্কেল সাহেব, কিছু বুঝে উঠে পারছি না, চিকুন গনিয়া এবং ডেঙ্গু দুটই পজিটিপ। মানুষের হয় একটা কিন্ত আপনারতো দেখছি এক সাথে দুইটা হয়েছে। আক্কেল বলল, ডাক্তার সাহেব কপালের নাম গোপাল, আমারে কী আর এক কিছিমের মশায় কামড়াইছে কোনডার কামর থেকে কী হইছে কে জানে? দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে মশারও যে ব্যাপক হারে উন্নয়ন ঘটতাছে তা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারতাম লাগছি।

আক্কেল জনমানবহীন কোথায় এসে পড়েছে তা বুঝতে পারল না। যে দিকে তাকায় সে দিকেই দেখে লম্বা লম্বা গাছ, সিংস্র জন্তু জানোয়ারের গর্জনও সে শুনতে পেল। ভয় পেয়ে সে চিৎকার করে উঠে। তার পিছনে শব্দ শুনে দ্রুত ঘুরে তাকিয়েই সে দেখতে পায় টুপি ও আলখেল্লা পরিহিত বিশাল লম্বা এক লোক। অনুমান করে বুঝল সে লম্বায় সে ১৯/২০ ফুটের কম হবে না। তার মুখের দাড়ীও বেশ লম্বা ও ধব ধবে দুধের মত সাদা। হাতে একটি আরবী বই। কোন বই বুঝতে না পারলেও বুঝল এটা আল কুরআন হবে। আক্কেল মেনে মনে ভাবল এত লম্বা মানুষ হয়! আর সে কোথা থেকেই বা ভোজবাজীর মত উদয় হল। আক্কেল সাহস সঞ্চয় করে বলল, আসসালাম আলাইকুম বুজুর্গ।

বুজুর্গ ব্যাক্তি বলল আলাইকুম আস সামাল ওয়া রহমততুল্লাহ অবারা কাতুহু। তুমি আমাকে আগে সালাম দিয়েছে তোমার এই ভাল কাজের জন্য আমি তোমার কিছু উপকার করতে চাই আক্কেল আলী। আক্কেল আলী বলল আপনি আমার নাম জানলেন কেমনে?

বুজুর্গ ব্যাক্তি আক্কেলের এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল, তুমি কী প্রশ্ন করতে থাকবে না আমার কথা শুনবে। আক্কেল নিজের ভুল বুঝতে পেরে বুজুর্গেকে বলল আমাকে ক্ষমা করে দিন। বুজুর্গ বলল, আমার কথা মনযোগ দিয়ে শুন। সামনে কুরবানীর ঈদ। এই ঈদে দুইটা গরু কুরবানী দিবা। একটা দেশী গরু এবং আরেকটা গো-পুজারী দেশের গরু। তবেই তুমি চিকুন গনিয়া ও ডেঙ্গু ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাবা। শুধু তাই নয় তুমি এই কাজ সঠিক ভাবে সমাধা করতে পারলে চিকুন গনিয়া এবং ডেঙ্গু ভাইরাস বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে তোমার প্রতিবেশী দেশে চলে যাবে, শুধু তাই নয়---- আক্কেল আর ধরয ধারন করতে না পেরে প্রশ্ন করে বসল, বুজুর্গ আপনি কে? বুজুর্গ বলল, আবারো তুমি প্রশ্ন করছ, আক্কেল চিৎকার করে বলে উঠল বুজুর্গ মাফ করে দিন, মাফ করে দিন। আক্কেলের বন্ধু খেজুর আলী আক্কেলকে ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলল, আক্কেল কী আবল তাবল বকতাছ। আক্কেল বুঝল সে স্বপ্ন দেখ ছিল। আক্কেল তার বন্ধুকে স্বপ্নের বর্ণনা দিয়ে বলল, সে এইবার কুরবানীর ঈদে দুইটা গরু কুরবানী করতে চায়। একটা দেশী ও আরেকটা পার্শ্ববর্তী গো-পুজারী দেশী। তার বন্ধু বলল ঈদের তো বেশী দেরী নাই, কুরবানীর পশুর হাটও বসে গেছে, চল এখনই গরু কিনে এনে তোমার মনকে শান্ত করি।

কুরবানীর পশুর হাটে এসে প্রথমে একটা গরু দেখে আক্কেলের পছন্দ হলে দর দাম করে নব্বই হাজার টাকাতে রফা হল কিন্ত বিপত্তি বাধাল তার বন্ধু খেজুর আলী। সে বলল, দোস্ত এই ঐটারে মনে হচ্ছে না পার্শ্ববর্তী গো-পুজারী দেশের গরু। দেখছে না এটা এক রংগা গরু। বিদেশী গরু এক রং এর হয় না। তাদের রং হয় দুই বা ততোধিক। আক্কেল বলল বিসমিল্লাতেই গলদ। চল আরেকটা দেখি। এবার তিন রং এর একটি গরু দেখে অতি আগ্রহ নিয়ে আক্কেল গরুটির আতি নিকটে যেয়ে দেখতে লাগল। গরুর ব্যাপারী বলল ভাই তেজী গরু একটু সাবধানে ---- তার কথা শেষ হওয়ার আগেই গরুটা আক্কেলকে কসে একাটা লথি দেয়। আক্কেল বাবারে বাবারে গালামরে গেলামরে বলে পড়ে যায়। আক্কেল কোন মতে উঠে দাঁড়িয়ে বলে দোস্ত গরুটা বড় বজ্জাত। আমার এই কীছিমের বজ্জাত গরুর দরকার নাই। আমার দরকার শান্ত শিষ্ট গরুর। এই সময়ে কিভাবে যেন একটা গরু দড়ি খুলে হাটের মাঝ দিয়ে দৌড় দেয়। আক্কেল কোন কিছু না বুঝে অন্যান্যদের দেখাঁ দেখি হিতাহিত ভুল দৌড় দেয়। কিন্ত বিধীবাম গরুর গুবরে ছিলিপ কেটে কাদার মাঝে পড়ে কাদা মেখে একাকার হয়ে যায়। আক্কেল গরু কিনার আগ্রহ হাড়িয়ে তার বন্ধুকে বলে দোস্ত চল চলে যাই আগামীকাল আসবনে। তারা হাট থেকে রর হতেই তাদের সাথে দেখা হয়ে যায় হাটের ইজারাদার তাদের বন্ধু রফিকের সাথে। রফিক তাদের কথা শুনে বলে, দোস্ত এটা কোন ব্যাপার না চল যাই এখনই তোমার সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছি। রফিক তাদেরকে একটা দেশি এবং একটা বিদেশী গরু কিনে দেয়।

কুরবানী ঈদের এক সপ্তাহ পরের ঘটনা। বিস্ময়কর ভাবে আক্কেল ঈদের পর পর ডেঙ্গু ও চুকুন গনিয়া মুক্ত হয়ে যায়। ফুর ফুরা মেজাজে আক্কেল প্রথম কাল সংবাদপত্রটীর অন লাইন সংস্করনটি পরছে। এক জায়গাতে তার চোখ আটকে যায়। সংবাদটির শিরোনাম হল, “ডেঙ্গু ও চুকুন গনিয়া ভাইরাসের বঙ্গমাতা থেকে ভারতমাতাতে মাইগ্রেশন”। বিস্তারিত, খবরে প্রকাশ বাংলাদেশ যখন ডেঙ্গু ও চুকুন গনিয়া মুক্ত-------।

সংবিধিবদ্ধ সতরকরন এই রম্য রচনার চরিত্রগুল কাল্পনিক, তাই কারো সাথে মিলের কোন প্রশ্নই উঠে না।

বিষয়: বিবিধ

৮৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File