|
শাহ আবদুল হান্নান
shah_abdul_hannan@yahoo.com |
|
সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ কাদের বিরুদ্ধে?
01 July 2017, Saturday
আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতার কথা আজকাল বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ ও সুশীলসমাজের লোক প্রায়ই সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে থাকেন। এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা মূলত সেকুলার বা বাম ধারার। ভাষা দিবস পালনের সময় ভাষা আন্দোলন অসাম্প্রদায়িক ছিল, এ কথার ওপর জোর দেয়া হয়েছে অহেতুক নতুন করে। তাদের জীবনের ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে, দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করা বা দূর করা। তবে তারা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অনেক কথা বললেও এ কথা বলে না যে, কাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান এবং তারা সরাসরি স্পষ্ট করে বিষয়টি প্রকাশও করে না। তাদের কাছে মনে হয়, একটি অব্যাখ্যাত শব্দের আড়াল থেকে বক্তব্য দেয়াই সহজ। বলাও হলো, আবার কেউ সরাসরি ধরতে পারল না, কার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে।
তবে তাদের সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কিত বক্তব্যগুলো ইঙ্গিতপূর্ণ। আমরা সহজেই সে সব বক্তব্য বা কথাবার্তা থেকে এটা অনুমান করতে পারি যে, এসব সাধারণভাবে ধর্ম ও ধর্মীয় শক্তির বিরুদ্ধে। সেই সাথে বিশেষভাবে তা ইসলামি শক্তির বিরুদ্ধে। তারা কি এ দিয়ে সহনশীলতা বোঝান? অসহিষ্ণুতা দূর করতে চান? প্রকৃতপক্ষে এসব লোকের আচরণই সবচেয়ে অসহিষ্ণু। ধর্ম তো কোনোভাবেই অসহিষ্ণুতা প্রচার করে না কিংবা অসহিষ্ণুতার সপক্ষে কথা বলে না। অন্তত এ যুগে তো নয়ই। ইসলাম প্রকৃতপক্ষে সহনশীলতা, সহমর্মিতার কথাই বলে। ইসলাম ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়। স্বাধীন ধর্মচর্চার পক্ষেই কথা বলে। কিন্তু কিছু লোক ‘সাম্প্রদায়িকতা’র বিরুদ্ধে কথা বলে প্রকৃতপক্ষে ধর্মের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। বাস্তবে আমরা দেখতে পাই, বাংলাদেশে গত ৫০ বছরে ধর্মীয় সঙ্ঘাতে লোক মারা যায়নি বা গুটিকয়েক লোক মারা গেছে। তার থেকে শতগুণ বেশি মারা গেছে রাজনৈতিক সঙ্ঘাতে বিভিন্ন দলের মধ্যে, রক্ষীবাহিনীর হত্যাকাণ্ডে, বিভিন্ন মাওবাদী ও বাম গোষ্ঠীর হত্যাকাণ্ডে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সম্প্রদায়গত সঙ্ঘাতে। সাম্প্রদায়িকতার স্লোগান মূলত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইসলামের বিরুদ্ধে দেয়া হয়ে থাকে। তারা আসলে চান ইসলামি দলগুলো নিষিদ্ধ হোক, অফিসিয়াল অর্ডার দিয়ে বা সংবিধানের মাধ্যমেই ইসলামি দল নিষিদ্ধ করতে। এটা অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক। এই সেকুলার শক্তিগুলো ইসলামি শক্তিগুলো কাজ করুক তা চায় না, তাদের কাজ করতে দিতেও চায় না। তারা ভয় পায় ইসলামি দলগুলো যদি কাজ করতে পারে তাহলে ক্ষমতায় না গেলেও তারা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তারা কোনো প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা পছন্দ করে না। সে জন্য তারা তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকুক, তা চায় না।
তারা ইসলামকে ব্যক্তিগত বিষয়াদির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিতে চায়। তারা রাষ্ট্র থেকে ইসলাম দূরে থাকুক তাই চায়। তারা আরো চায়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্র থেকেও ইসলাম দূরে থাক। সেকুলারিজম প্রকৃতপক্ষে এটাই চায়। এর অর্থ, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ধর্ম বর্জন। ধর্মনিরপেক্ষতা কথাটা ভুল অনুবাদ। অবাক লাগে, ইসলাম বা ধর্ম রাষ্ট্রীয় আদর্শ হতে পারবে না অথচ সেকুলারিজম (যা অধর্মের সমার্থক) রাষ্ট্রীয় আদর্শ হতে পারবে- এটা গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলাম যেখানে একটি ব্যাপক দ্বীন বা জীবনপদ্ধতি, সেখানে এই প্রত্যাশা কিভাবে সম্ভব? ইসলামের কোনো অংশ বিশ্বাস করা এবং কোনো অংশ বিশ্বাস না করাকে আল্লাহ কুরআনে কঠোরভাবে নিন্দা করেছেন। তদুপরি ইসলাম, ইসলামি আইন এবং রাষ্ট্র সব সময় একত্র ছিল। এগুলো একে অন্যের সাথে জড়িত। আমরা মুসলিম ইতিহাসেও এসবের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত লক্ষ করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় থেকে শুরু করে, খোলাফায়ে রাশেদিন, পরবর্তী খেলাফতের সময় কিংবা সুলতানি আমলেও আমরা তা দেখি; যদিও পরবর্তীকালে তার আদর্শ রূপ ছিল না। বাংলাদেশের ও বিশ্বের অন্য মুসলমানদের জন্য ইসলামই তাদের মূল পরিচিতি। তাদের নাম, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-আশাক, আদবকায়দা, তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইনকানুন, পারিবারিক মূল্যবোধ, তাদের নৈতিকতা, এমনকি তাদের সার্বিক আচরণ- কোনো কিছুতেই ইসলামের চেয়ে বেশি প্রভাব অন্য কোনো কিছু ফেলতে পারেনি। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাব, এসব হীন কাজ থেকে দূরে থাকতে। তাদের দূরে থাকা উচিত সাম্প্রদায়িকতা শব্দের অপব্যবহার থেকে। এটি এখন গালাগালির টার্ম বা শব্দবাচ্য হিসেবেই ব্যবহৃত হয়।
লেখক : সাবেক সচিব
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন