|
শাহ আবদুল হান্নান
shah_abdul_hannan@yahoo.com |
|
তাওহিদ, বিজ্ঞান ও মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান
25 August 2017, Friday
উপরিউক্ত বিষয়ে ড. উসমান বকর অনেক প্রবন্ধ ও বই লিখেছেন। তার প্রধান বইয়ের নাম হচ্ছে ‘Tawhid and Science: History and Philosophy of Islamic Science’ (তাওহিদ এবং ইসলামি বিজ্ঞানের ইতিহাস ও দর্শন)। এ বইতে ১২টি অধ্যায় আছে এবং দুটি পরিশিষ্ট আছে। পরিশিষ্টে তিনি বিজ্ঞানের কোর্স দিয়েছেন।
ভারত ও চীন থেকে বিজ্ঞানের যা ছিল, তা জানার পর মুসলিম বিজ্ঞানীরা নিজেরা কাজ শুরু করেন ইংরেজি নবম শতকে। এ কাজ চলতে থাকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত। তারা বিজ্ঞানের প্রায় সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটান, যা পরবর্তীকালে ইউরোপীয় বিজ্ঞানের ভিত্তি হয়েছে।
মুসলিম বিজ্ঞানীরা তাওহিদকে তাদের ভিত্তিরূপে গ্রহণ করে দুটি নীতি গ্রহণ করেন। প্রাকৃতিক জগতের ঐক্যের নীতি এবং জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ঐক্যের নীতি। তাদের গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাথে ইসলামের কোনো সঙ্ঘাত হয়নি।
অন্য দিকে, একজন স্রষ্টা যে বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন এবং সব কিছু স্রষ্টার দেয়া প্রাকৃতিক আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত, এ ধারণা পাশ্চাত্য বিজ্ঞানে অনুপস্থিত। তাদের ভিত্তি হচ্ছে- সেকুলার, নাস্তিকতার কাছাকাছি বা নাস্তিকতা। পাশ্চাত্যে বিজ্ঞানের কোনো বইয়ে স্রষ্টার কোনো কথা উল্লেখ নেই। তারা মনে করেন যে, মহাবিশ্ব হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়েছে। মানুষও হঠাৎ সৃষ্টি হয়েছে (প্রথমে একটি জীবকোষ সৃষ্টি হয় এবং তা পরে আস্তে আস্তে পশু-পাখি ও মানুষ হয়েছে)।
সুতরাং, পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের মূলভিত্তির সাথে মুসলিমদের তৈরি করা বিজ্ঞানের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সে জন্য মুসলিম বিজ্ঞানকে নামেও পাশ্চাত্য বিজ্ঞান থেকে আলাদা করে উল্লেখ করা দরকার; যেভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রে পার্থক্য করার জন্য ইসলামি অর্থনীতি, ইসলামি ব্যাংকিং, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি রাষ্ট্র ও ইসলামি সংবিধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সেভাবেই তাওহিদভিত্তিক মুসলিম বিজ্ঞানকে ‘ইসলামি বিজ্ঞান’ বলাই সঙ্গত।
প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায়ে ড. উসমান বকর ইসলামি ঐতিহ্যে বৈজ্ঞানিক চেতনা এবং ইসলামি বিজ্ঞানে পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর একত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য হচ্ছে, মহাজাগতিক ঐক্যের বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। জ্ঞানের উৎস হিসেবে ধর্ম বিশ্বাস করে, মহাজগতের সব বস্তু মহাজাগতিক নিয়মের মাধ্যমে পরিচালিত এবং মহাজাগতিক সংহতিতে প্রত্যেক বস্তু পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। মুসলিম বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জন্য ‘বুরহান’ শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা কুরআনের অন্যতম নাম। রজার বেকন কর্তৃক ইউরোপীয় বিজ্ঞানে এক্সপেরিমেন্ট প্রবর্তনের অনেক আগেই মুসলিম বিজ্ঞানীরা তা প্রয়োগ করেছিলেন। ইবনে সিনা, আল বেরুনী, ইবনুল হাইসাম ও তুসিসহ অনেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন (পৃ: ১-৪)। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অধ্যায়ে যথাক্রমে ইমাম গাজ্জালির দার্শনিক অভিজ্ঞতা, বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের ঐক্য এবং আশয়ারির ধর্মতাত্ত্বিক মতবাদে বিশ্বপ্রকৃতির পর মানবিক ধারণা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ষষ্ঠ ও নবম অধ্যায়ে ড. বকর ইসলামি চিকিৎসা দর্শনের ভূমিকা এবং এ সংক্রান্ত নীতি-নৈতিকতা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘চিকিৎসাবিদ্যা হিসেবে বিবেচনা করলে ইসলামি ভেষজবিদ্যাকে বিশ্বের জ্ঞাত চিকিৎসাব্যবস্থাগুলোর মধ্যে সর্বাধিক উন্নত এবং সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থার মর্যাদা দিতে হবে। এ বিদ্যা ভারতে এসে আয়ুর্বেদিক ব্যবস্থার সাথে সংযোগে আরো উন্নত হয়েছে।
মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানে যেসব বিষয় ছিল, তার মধ্যে রয়েছে শারীরবৃত্ত, অঙ্গব্যবচ্ছেদবিদ্যা, রোগনির্ণয়বিদ্যা, কারণবিদ্যা (ইলমুল আসবাব), রোগ লক্ষণবিদ্যা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান (হিফজ আল সিহাহ্) (পৃ: ৯৫-১০৪)।
অন্যান্য অধ্যায়ে মধ্যযুগে খ্রিষ্টান ধারণার ওপর ইসলামি বিজ্ঞানের প্রভাব, ওমর খৈয়াম কর্তৃক ইউক্লিডের সমালোচনা, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলিম বুদ্ধিবৃত্তিক সাড়া, মুসলিম বিশ্বে বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ গঠন, বিজ্ঞানের জন্য ইসলামের আলোকে পাঠ্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বইটির বাংলা অনুবাদ করে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (BIIT), বাড়ি নম্বর-৪, রোড নম্বর-২, সেক্টর-৯, উত্তরা, ঢাকা। তাদের ওয়েবসাইট iiitbd.org
বইয়ের মূল ইংরেজি কপি মালয়েশিয়ার আরা পাবলিকেশন থেকে পাওয়া যাবে (বিস্তারিত তথ্য google -এর মাধ্যমে তালাশ করে পেতে পারেন)।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
উৎসঃ dailynayadiganta
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন