|
শাহ আবদুল হান্নান
shah_abdul_hannan@yahoo.com |
|
নৈতিকতা পুনর্বহালে আমাদের করণীয়
29 September 2017, Friday
আমরা সবাই জানি, বর্তমানে বিশ্বে নৈতিকতার অবস্থা কী। মানুষ ও রাষ্ট্রগুলো অনেক ক্ষেত্রে নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে। অন্তত বেশির ভাগই তা হারিয়ে ফেলেছে। রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন দেশে হামলা চালায়, একের পর এক যুদ্ধ করে। এ দিকে আবার সন্ত্রাসীরাও রয়েছে, যারা হত্যা করে থাকে। আমরা যদি বিশেষ করে বাংলাদেশের দিকে তাকাই, দেখতে পাচ্ছিÑ আমরা দুর্নীতির চূড়ান্তপর্যায়ে চলে গেছি এবং সমাজের একটা বড় অংশ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, খাল দখল, নদী দখল এসব করছে। এর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। নৈতিকতার এত পতন অতীতে ছিল বলে মনে হয় না।
আমাদের ভেবে দেখতে হবে, সারা বিশ্বে নৈতিকতার পতন কেন হচ্ছে? এর মূল কারণ মনে হয়, ভোগবাদ ও বস্তুবাদ, বিশেষ করে যখন সেকুলার মতবাদকে রাষ্ট্রীয় ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হলো। বস্তুবাদের মূল কথা হচ্ছেÑ মানবজাতি চলবে তার নিজের যুক্তির মাধ্যমে। কোনো রকম ডিভাইন বা আল্লাহপ্রদত্ত কোনো বিধানের ভিত্তিতে নয়; বরং সে তার আইন নিজেই তৈরি করবে। এভাবে শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রায় বিদায় করে দেয়া হয়েছে। এমনকি, আমাদের দেশেও শিক্ষায় ধর্মের অবস্থান বর্তমানে খুবই দুর্বল।
নৈতিকতার পুনর্বহাল কিভাবে আমরা করতে পারি, সে বিষয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন। তবে আমার কাছে প্রথমত প্রতীয়মান হচ্ছে, এটা পুনর্বহাল করতে গেলে শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে নৈতিকতাকে আমাদের কোর্সের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নৈতিকতাকে একটি সাবজেক্ট হিসেবে চালু করা যেতে পারে। সে সাবজেক্টে মুসলিমদের জন্য আল কুরআনের কিছু অংশ, রাসূল সা:-এর জীবনী ও কিছু নির্বাচিত হাদিস থাকতে পারে। অনুরূপভাবে ইসলামি জীবনব্যবস্থার ওপরও জোর দেয়া যেতে পারে।
অমুসলিমদের জন্য তাদের ধর্মীয় পুস্তকের কিছু অংশ, তাদের ধর্মীয় মহাপুরুষদের জীবনীর কিছু অংশ থাকতে পারে। মোটামুটিভাবে বলতে চাচ্ছি, নৈতিকতার গুরুত্ব সব পর্যায়েই দেয়া প্রয়োজন।
আমার বলতে দ্বিধা নেই, আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন লক্ষ করলাম যে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করলাম; কিন্তু গোটা শিক্ষাজীবনে কুরআনের একটি লাইন শেখানো হয়নি। এমনকি রাসূল সা:-এর জীবনের একটি লাইনও শেখানো হয়নি। এই যদি হয় একটি দেশ বা জাতির শিক্ষাব্যবস্থার নমুনা, তাহলে কী করে একটি জাতির ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজন পূরণ হতে পারে?
এখন যে বিষয়টির কথা বলছি তা হচ্ছেÑ অশ্লীলতা আমরা গ্রহণ করব না। অশ্লীলতার যত রুট আছে, তা বন্ধ করতে হবে। অশ্লীল পোশাক, অশ্লীল গান, অশ্লীল নাটক কিংবা সিনেমার অশ্লীলতা ইত্যাদি আইন করে বন্ধ করতে হবে। সিনেমা বা নাটকের অশ্লীল গল্প, দৃশ্য ও পোশাক বন্ধ করা দরকার। বিজ্ঞাপনের ব্যাপারেও আপত্তিকর পোশাক পরিহার করা প্রয়োজন। কারণ বিজ্ঞাপনে নারীদের এমন সব অশ্লীল দৃশ্যে উপস্থাপন করা হয়, যা দেখতে বেমানান। নারী তার ইজ্জত রক্ষা করার জন্য যেখানে জীবন দেয়ার কথা, সেখানে এক শ্রেণীর নারীকে ‘খোলামেলা’ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। শুধু কি তাই, ফ্যাশন শো বা টিভি বিজ্ঞাপনে ও বিলবোর্ডে এক শ্রেণীর মডেলকন্যা বা নারীদের খোলামেলাভাবে বারবার দেখিয়ে তাদের সৌন্দর্য বিক্রি করা হচ্ছে। সৌন্দর্য তো বিক্রির পণ্য নয়। এমনকি তারা টাইট পোশাক পরে। বুকে কাপড় দেয় না। যা দেখলে খুবই লজ্জা লাগে। এটা আমাকে নারীরাই বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা নারীদের বুক ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখার বিষয়ে কুরআনে আয়াত নাজিল করেছেন (সূরা নূর)। অথচ এক শ্রেণীর মডেলকন্যা এই নিষেধকে পর্যন্ত উপেক্ষা করে চলেছে। পত্রিকা দেখে জানতে পেরেছি, মডেলিং করেন এমন নারীর সংখ্যা এ দেশে ৭০-৮০ জনের বেশি নয়। বিজ্ঞাপনে অশ্লীল পোশাকে নারীদের না দেখালে পণ্য বিক্রি হবে না- এর কোনো কারণ নেই। মানুষ এসব অশ্লীল ছবি দেখে পণ্য কেনে না। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, পুঁজিবাদ সব কিছুকেই পণ্য বানিয়ে ফেলেছে। এমনকি নারীর শরীরকেও। এ থেকে আমাদের অবশ্যই উদ্ধার পেতে হবে।
অনৈতিকতা থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে বাবা-মা ও শিক্ষকদের দায়িত্ব অনেক। তারা এ ব্যাপারে সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন। সংবাদপত্র, সাংবাদিক, টিভি কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব এ ক্ষেত্রে অনেক। তারা অনৈতিকতা ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে বারবার লিখতে ও প্রচার করতে পারেন। সিনেমার প্রযোজকদের দায়িত্ব এ ব্যাপারে অনেক। তাদের মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে। সব অশ্লীলতার শিকার মূলত নারীরা, সারা দুনিয়াতেই। নারী নেত্রীদের দায়িত্ব, এ ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা গ্রহণ করা। হ
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন