|
শাহ আবদুল হান্নান
shah_abdul_hannan@yahoo.com |
|
নারী পাচার : প্রধান গন্তব্য ভারত
02 November 2017, Thursday
বিগত জুলাই মাসে ডেইলি স্টারে প্রকাশ করা হয় যে, দেশ থেকে নারী পাচার বাড়ছে। আরো খবর দেয়া হয়েছে, ভারত থেকে ফেরত আসছে অনেক পাচার হওয়া নারী। বাংলাদেশের দিল্লির দূতাবাস জানিয়েছে, ২০১৭ সালের প্রথম ছয় মাসে ১৪৬ জন পাচার হওয়া নারীকে তারা বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু এনজিও তাদের রক্ষার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে ইঘডখঅ (বাংলাদেশ ওমেন ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন) এবং ভারতের জবংপঁব ঋড়ঁহফধঃরড়হ এ ক্ষেত্রে কাজ করছে। রেসকিউ ফাউন্ডেশনের পরিচালক দীনেশ তাংক জানিয়েছেন, ভারতের বোম্বে শহরের পতিতালয়ের ৬০ শতাংশ নারীই বাংলাদেশের। কেউ না কেউ একজন কিশোরী বা নারীকে দেশের সীমান্তে নিয়ে যায়, সেখান থেকে আরেকজন দিল্লি নিয়ে যায়, সেখান থেকে নেয়া হয় বোম্বে। সেখানে কিশোরীকে বিক্রি করা হয় দুই থেকে চার লাখ ভারতীয় রুপিতে। এ হচ্ছে দীনেশ সাহেবের দেয়া তথ্য।
বিএনডব্লিউএল-এর আশ্রয়কেন্দ্র আছে। সেখানে ইন্টারভিউ করা এক মেয়ে সোহানা (আসল নাম নয়) বলেছে, সে তেজগাঁওয়ে একটি পার্লারে কাজ করত। একটি ছেলের সাথে তার পরিচয় ছিল। ছেলেটি তাকে বলে যে, ভারতে সে আরো বেশি রোজগার করতে পারবে। সে তাকে ভারতের গুজরাটের সুরাটে নিয়ে যায়। সেখানে ছেলেটি তাকে একটি ফ্ল্যাটে রেখে চলে যায়। তারপর শুরু হয় তার এবং আরো কয়েকজন মেয়ের ওপর যৌন অত্যাচার। তাদের মদ খাইয়ে নাচতে বলা হয়। তারপর ১০ জনের মতো পুরুষ তাদের ওপর চড়াও হয়।
কিছু দিন পর সে কোনোভাবে পালিয়ে রেলস্টেশনে এসে কাঁদতে থাকে। তখন পুলিশ তাকে উদ্ধার করে এবং নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার ব্যবস্থা করে। পরে সে বাংলাদেশে ফিরে আসে।
আগে বেশি কিশোরী ও মহিলাকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হতো। এখন বোম্বেতে বেশি নেয়া হয়, যেমন আগেই বলেছি।
এ হৃদয়বিদারক ঘটনা জানার পর বিষয়টি আমি ভারতে আমার পরিচিতি ব্যক্তিদের নজরে আনি এবং তাদের অনুরোধ করি, যেন ভারত সরকারের নেতৃস্থানীয় লোকদের কাছে এ খবরটি পাঠানো হয় (যা ইংরেজিতে ছিল)। আমার চিঠিতে এ কথাও ছিল যে, বাংলাদেশ ও ভারত সরকারকে যৌথভাবে এ কাজ করতে হবে এবং পতিতালয়গুলো বন্ধ করে দিতে হবে। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও রিপোর্টটি পাঠিয়েছি এবং একই অনুরোধ করেছি। বাংলাদেশে পতিতালয় বেশি নেই। তবে মংলা পোর্টে অনেক মেয়ে আছে, যারা দালালদের নির্যাতনের শিকার।
এ পরিস্থিতিতে আমি বাংলাদেশ সরকার ও পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি, তারা যেন পাচার রোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেন এবং মংলাসহ যে ক’টি পতিতালয় বাংলাদেশে আছে তা বন্ধ করে দেন। বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে, পতিতালয় উঠিয়ে দেয়া হবে। ভারত সরকারের উচিত ভারতীয় দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং পতিতালয় বন্ধ করা।
আরেকটি প্রসঙ্গ, রোহিঙ্গা শিশু ও নারীদের পাচার করার চেষ্টা চলছে। অপরাধীরা সব কাজই করতে পারে। না হলে এসব অসহায় রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের তারা পাচার করার চেষ্টা করত না। এ ব্যাপারেও আমি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন