|
মাসুম খলিলী
mrkmmb@gmail.com |
|
সৌদি ৯/১১ আইন, মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা
06 October 2016, Thursday
ওবামা প্রশাসনের মেয়াদের একেবারে শেষ দিকে এসে কংগ্রেসের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যরা সম্মিলিতভাবে প্রেসিডেন্টের দেয়া প্রথম ভেটোকে অকার্যকর করে দিয়ে ‘জাস্টিস অ্যাগেইনস্ট স্পন্সর্স অব টেরোরিজম বিলকে (জাস্টা)’ আইন হিসেবে কার্যকর করেছেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের এ সিদ্ধান্তের পর আমেরিকান আদালতে এক-এগারোর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সে দিনের ঘটনায় সৌদি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ এনে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারবে। আর সেটি বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমেরিকান আদালত নিষ্পত্তি করতে পারবে। এ আইন আমেরিকার আদালতে ভিন্ন কোনো দেশের বিরুদ্ধে বেসরকারি নাগরিকদের মামলার সুযোগ সৃষ্টি করল প্রথমবারের মতো। এ সুযোগ নিয়ে ইতোমধ্যে নিউ ইয়র্কে এক আমেরিকান সৌদি সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছেন। আইনটিতে অবশ্য আমেরিকার পররাষ্ট্র দফতর সুনির্দিষ্ট মামলাটি পররাষ্ট্র সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে মর্মে আবেদন করলে মামলাটি স্থগিত করার এখতিয়ার দেয়া হয়েছে বিচারককে। সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যাবে মর্মে পররাষ্ট্র দফতর আরজি জানালে সে ক্ষেত্রেও আদালত মামলা স্থগিত করতে পারে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনটির লক্ষ্য যে, সৌদি আরবের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা এবং দেশটিকে চাপের মধ্যে রেখে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করা, তাতে সন্দেহ থাকে না। আমেরিকার টুইন টাওয়ারসহ বিভিন্ন স্থানে এক-এগারোর সন্ত্রাসী হামলায় অংশ নেয়ার জন্য অভিযুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই সৌদি নাগরিক বলে উল্লেখ করা হয়।
কংগ্রেসের অনেকটা সর্বসম্মতিতে পাস করা এই নতুন আইনের মাধ্যমে মার্কিন মাটিতে সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে সার্বভৌম দায়মুক্তির আইনগত মূলনীতির ব্যতিক্রম করে সৌদি সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলার পথ পরিষ্কার করা হলো। একই সাথে, এ আইন পাস করার কারণে অন্য দেশের মাটিতে আমেরিকার সৈন্য, কর্মকর্তা বা কোনো কোম্পানির অপরাধের জন্য রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা দানের অভিযোগ এনে ক্ষতিপূরণ আদায়ের আইন তৈরির অবকাশও তৈরি হলো। বিষয়টি বিবেচনা করে আমেরিকার জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানি, ডাউ কেমিক্যাল কোম্পানিসহ মার্কিন করপোরেশনগুলো এ আইনের বিরোধিতা করেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব অ্যাশটন কার্টার, জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ড এবং সিআইএ পরিচালক জন ব্রেনান এই বিলের বিরোধিতা করেছেন। তারা যুক্তি দেখিয়েছেন, এ আইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে তার মিত্রদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে। আইনটি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
রহস্যজনকভাবে দেখা গেছে, কংগ্রেসে এ সম্পর্কিত ভোটের সময় ভৌগোলিক দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম দেশ সৌদি আরব বা অন্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ প্রশ্নটিকে এক প্রকার দূরে সরিয়ে রাখা হয়। বরং এর পরিবর্তে সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘন, ওয়াহাবি মতবাদ প্রচার, ইসলামের উগ্র রূপের বিস্তার ঘটানো এবং আন্তর্জাতিক শরণার্থী সঙ্কট রোধে ‘আরো বেশি কিছু’ করার ব্যর্থতার জন্য সৌদি আরবের সমালোচনা করা হয়। এ আলোচনা থেকে এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যায়, যেসব অভিযোগ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে করা হয়েছে; সেগুলোকে দেশটির শাসন পরিবর্তন অথবা ভাগ বিভাজনে কাজে লাগানো হতে পারে। সম্ভবত বিষয়টি উপলব্ধি করে সৌদি আরব এ আইন পাসের ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কড়া কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। তবে সৌদি গণমাধ্যমে যেসব প্রতিক্রিয়া ও করণীয় সম্পর্কে বিকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সেসব বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এসব বিকল্পের মধ্যে রয়েছে- আইনটির বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে আমেরিকার আদালতে এ মামলার ব্যাপারে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে, এর আগে আমেরিকার প্রশাসন ও বিচার বিভাগ থেকে একাধিক সৌদি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ব্যক্তিকে এ অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়ার দৃষ্টান্তগুলোকে উপস্থাপনের কথা বলা হয়। অন্য বিকল্পের মধ্যে রয়েছে- আমেরিকার বৈরী আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া বা চীনের সাথে নতুন কৌশলগত সম্পর্ক তৈরি করা। এ দু’টি দেশের সাথে সৌদি আরব বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পাদন করেছে ইতোমধ্যে। এ ক্ষেত্রে মার্কিন বলয় থেকে অনেকখানি বেরিয়ে গিয়ে পাকিস্তানের চীনের সাথে মৈত্রী আরো দৃঢ় করা এবং নতুন করে রাশিয়ার সাথে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ার বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে পেশ করা হয়। সৌদি আরব এখনিই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না-ও নিতে পারে। বিশেষত ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কী ফলাফল হয়, তা পর্যবেক্ষণে রাখতে পারে রিয়াদ। এ নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হলে আমেরিকার নীতিতে বড় রকমের পরিবর্তন আসতে পারে। আর হিলারি নির্বাচনে জয়ী হলে বর্তমান সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা চলতে পারে। অবশ্য ওবামা যেখানে সৌদি এক-এগারো বিলের ব্যাপারে ভেটো দিয়েছেন, সেখানে হিলারি এ বিলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তবে সেই সমর্থনের মাত্রা ট্রাম্পের তুলনায় নমনীয় ছিল।
সৌদি আরবের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে দল-মত নির্বিশেষে যে পরিবর্তন আসছে, সেটি নানা ঘটনায় স্পষ্ট। সৌদি-মার্কিন মৈত্রীর একটি গুরুত্বপুর্ণ কারণ ছিল দেশটির তেলের ওপর মার্কিন-নির্ভরতা। ওবামা ক্ষমতায় আসার পর সময় নিয়ে এ নির্ভরতার অবসান ঘটিয়েছেন। তার বিশেষ উদ্যোগেই ইরান পরমাণুচুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা সমর্থনের ব্যাপারে উন্মাসিক অবস্থান ওবামার সময়েই নেয়া। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অরাজক যুদ্ধাবস্থার শুরুটা বুশের ইরাক আক্রমণের মধ্য দিয়ে হলেও এখনকার ব্যাপকভিত্তিক যুদ্ধাবস্থা ও মৃত্যুর ছড়াছড়ি ওবামার আমলেই সৃষ্টি হয়েছে। তিনি যুদ্ধকে প্রলম্বিত করছেন আমেরিকার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়াই। বিবদমান এক পক্ষের বিরুদ্ধে অন্য পক্ষকে মাঠে নামানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। এসব বিবেচনায় উপসাগরীয় দেশগুলো অনিশ্চয়তার মুখে পড়ার মধ্যে ওবামার বা ডেমোক্র্যাট শাসনের ‘অবদান’ বেশি। সর্বশেষ, প্রেসিডেন্টের ভেটো অকার্যকর করে ‘সৌদি এক-এগারো আইন’ পাসের আগে ২১ সেপ্টেম্বর সিনেটে সৌদি আরবে ১.১৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের ওপর ভোট নেয়া হয়। সিনেটে এ প্রস্তাবটি পাস না হলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সদস্য সৌদি আরবে নতুন অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রস্তাবের পক্ষে সিনেটের এক-চতুর্থাংশের বেশি সিনেটরের সমর্থন পাওয়া যায়, যার অর্ধেকের বেশি ছিল প্রেসিডেন্টের নিজ দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য। তারা ইয়েমেনের সংঘর্ষে সৌদি ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন। ওবামা একবার সৌদি আরব সফরের সময় জন ম্যাককেইনকে সাথে নিয়ে গিয়ে রহস্য করে বলেছিলেন, আপনাদের লোককে সাথে নিয়ে এসেছি। ফলে ট্রাম্প যতই সৌদিবিরোধী বাগাড়ম্বর করুন না কেন, আগামীতে রিয়াদ রিপাবলিকান প্রশাসনের ব্যাপারে বেশি স্বস্তি বোধ করার কথা।
মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র পরিবর্তনে নানা তৎপরতার মধ্যে সৌদি আরবের সাথে আমেরিকার মৈত্রী সম্পর্কে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা ধরনের টানাপড়েন শুরু হয়। সৌদি আরব ইরাককে ইরানি প্রভাববলয়ে ছেড়ে দেয়া এবং মার্কিন মধ্যস্থতায় ইরান পরমাণুচুক্তির জোরালোভাবে বিরোধিতা করে। প্রেসিডেন্ট ওবামা এ বছরের শুরুর দিকে এক সাক্ষাৎকারে উপসাগরীয় দেশগুলো ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট গ্রুপের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে সমর্থন সত্ত্বেও ‘আরো বেশি কিছু’ না করার সমালোচনা করেন।
সৌদি আরবের প্রতি আমেরিকার এ বিরূপ মনোভাব দু’পক্ষের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক, উভয় ধরনের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তার সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি থেকে। সেখানে ১০ হাজারের মতো মার্কিন সৈন্য রয়েছে। সৌদি আরব ও তার উপসাগরীয় মিত্ররা গোয়েন্দা তথ্যও বিনিময় করে থাকে। সৌদি আরব ও তার উপসাগরীয় মিত্ররা গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় স্থগিত করতে পারে। নতুন টানাপড়েন উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সদস্যদেশগুলোর মার্কিন বিমান বাহিনীর কার্যক্রমসহ অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতাকে কম বেশি প্রভাবিত করতে পারে। এ অঞ্চলে জিসিসি যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনার বাইরে আরো স্বাধীনভাবে ইয়েমেন, বাহরাইন, মিসর এবং অন্যত্র কাজ করতে পারে।
সৌদি আরব আমেরিকার বৃহত্তম বিদেশী ঋণদাতাদের অন্যতম। সৌদি পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী আদেল আল জোবায়ের গত মার্চ মাসে বলেছিলেন, ‘এক-এগারো’ বিলটি আইনে পরিণত হলে দেশটি ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের ট্রেজারি বিল বিক্রি করে দিতে পারে। আইনটি পাস করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর রিয়াদ মার্কিন ট্রেজারি বিলের বড় একটি অংশ চীনের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ প্রক্রিয়া সামনে অব্যাহত থাকতে পারে। রিয়াদ ইতোমধ্যে তার জাতীয় মুদ্রা রিয়ালকে ডলারের সাথে সমন্বয় করার ব্যবস্থা থেকে সরে এসেছে। দেশটির রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলার সংরক্ষণ থেকেও সরে আসতে পারে। এটি বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের অবস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
অরেক দশক ধরে ব্যক্তি খাতে সৌদি অর্থ ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। আদালতের আদেশ দ্বারা সৌদিদের বিনিয়োগ আটকে যাওয়ার ভয় থেকে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ আস্তে আস্তে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। ইতোমধ্যে সৌদি নেতৃত্বের ১৫ বছর মেয়াদি ভিশন ২০৩০ প্রোগ্রাম শুরুর পর বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। নতুন অবস্থায় এর সুযোগ গ্রহণ আমেরিকার কোম্পানিগুলোর জন্য সীমিত হয়ে আসতে পারে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পারস্য উপসাগরের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ও বিশ্বের বৃহত্তম তেল রফতানিকারক দেশ হিসেবে সৌদি আরব পাল্টা চাপ প্রয়োগের ক্ষমতাও রাখে। গত বছর সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালসট্রো মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য রিয়াদের জোরালো সমালোচনা করেন। রিয়াদ পাল্টা ব্যবস্থা নিলে পারস্য উপসাগর এলাকায় সুইডিশ ব্যবসায়িক স্বার্থ হুমকির মুখে পড়ে যায়। সুইডেন অবশেষে তার অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়।
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, মার্কিন আইনপ্রণেতারা প্যান্ডোরার বাক্স খোলার পরিণতি নিজেদের পায়ে গুলি করার মতো হলে বিস্ময়ের কারণ থাকবে না। ‘এক-এগারো’ সংক্রান্ত এ সিদ্ধান্ত শুধু রিয়াদ ওয়াশিংটনের সম্পর্কে আঘাত করবে না, এটি মার্কিন-জিসিসি সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া অন্যান্য দেশ তাদের নিজস্ব সংস্করণের জাস্টা তৈরি করে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে। এতে মার্কিন সামরিক কার্যক্রম বা অন্য দেশে সিআইএর তৎপরতা বেশ মাথাব্যাথার কারণ হতে পারে। বিদেশে নজরদারি ও ড্রোন হামলা থেকে শুরু করে অনেক কিছু এর আওতায় পড়ে যেতে পারে। মার্কিন সম্পদ অন্য দেশে, সে দেশের আদালতের বিধানে বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে। কূটনীতিক ও সামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জাতীয় আইন অনুযায়ী অন্যান্য দেশে মামলা দায়ের করাও হতে পারে।
দেখা যাচ্ছে, বৃহত্তর অর্থে জাস্টা বলবৎ হচ্ছে একটি প্রবণতা হিসেবে। এটি অসম্ভব নয় যে, ওয়াশিংটন ইরাক, লিবিয়া ও ইয়েমেনে ব্যর্থ হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের একই পরিণতি হতে পারে। এখন আমেরিকা সিরিয়া হারাচ্ছে। বিশেষত চুক্তি করে আলেপ্পোর রক্তপাত প্রতিরোধে রাশিয়া সঙ্গে দরকষাকষিতে অক্ষমতার পর্যায়ে পৌঁছেছে মার্কিন প্রশাসন। সৌদি আরবের মতো আরো কোনো কোনো দেশ ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। সুন্নি বলয়ের দেশগুলো সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ৩৪ রাষ্ট্রের নিজস্ব জোট গঠন করেছে। সৌদি আরব ও মিসরসহ বৃহত্তম আরব সুন্নি রাষ্ট্রগুলো মার্কিন নীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট। অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পর তুরস্কের জনমত এখন আমেরিকার প্রতি সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক। বরং চাপ দিয়েও মধ্যপন্থী ইসলামিস্টদের বিরুদ্ধে দমনাভিযানে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশকে রাজি করানো যাচ্ছে না। জর্ডানে আবার মুসলিম ব্রাদারহুড প্রবলভাবে সংসদে ফিরে এসেছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান সৌদি প্রিন্স ওয়ালিদের মালিকানাধীন আল আরাবিয়া টিভিতে জামাল কাসুগির সাথে এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, মিসরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি ও তার সঙ্গীদের মুক্তি দিলেই দেশটির সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে। সৌদি আরবের ওপর নানাভাবে চাপ তৈরি করেও মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে নতুন অভিযানে নামানো যাচ্ছে না দেশটিকে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা নীতির বিরুদ্ধে একধরনের পাল্টা মেরুকরণ বেশ দ্রুত এগোচ্ছে। এ মেরুকরণে চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বে শক্তিমান একটি যুগ্ম পরাশক্তির আবির্ভাব ঘটতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে। তেমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র নিজের প্রভাবকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হওয়ার মতো পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে। সেই সাথে, মধ্যপ্রাচ্য অথবা দক্ষিণ এশিয়ায় মানচিত্র বিন্যাসের যে স্বপ্ন দেখার কথা বলা হচ্ছে, সেটিও পাশ্চাত্যের জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে পারে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধ উন্মাদনা শুরু হওয়ার পর তা আবার থেমে যাওয়ার বাস্তবতায় মনে হয়, অনেক কিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে আমেরিকা।
mrkmmb@gmail.com
উৎসঃ dailynayadiganta
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন