অনেক আগে একবার সিলেট যাচ্ছিলাম বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে। সেটাই আমার প্রথম আকাশভ্রমণ। পথে একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল, বিমানটি যেন হঠাৎ ওপর থেকে নিচের দিকে পড়ে যাচ্ছে। আসলে স্থানভেদে বাতাসের চাপের মাত্রায় বেশি পার্থক্য থাকলে উড্ডয়নকৌশল হিসেবে বিমান অনেক সময়ে উঠতে বা নামতে হয় বেশ কিছুটা। পাশে বসা একজন প্রবীণ সাংবাদিক বলছিলেন, তিনি চীনে গিয়েও বিমানে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
যা হোক, আমাদের সে দিন আসলে ভয় পাওয়ার কারণ ছিল না। তবে কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানে হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে যা ঘটতে যাচ্ছিল, তাতে সত্যিকার বিপদের কারণ হওয়া অসম্ভব ছিল না। আল্লাহর রহমতে অঘটন ঘটেনি। বারবার মারাত্মক ত্রুটিবিচ্যুতি কিংবা দায়িত্বে বড় ধরনের গাফিলতি চোখে পড়ার পরও আমরা শিক্ষা না নিলে কখন কী বিপদ নেমে আসে, বলা যায় না।
এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাঙ্গেরি যাচ্ছিলেন পানি সম্মেলনে যোগ দিতে। তাকে বহনকারী বিমানের পাইলট একপর্যায়ে টের পান যে, বিমানের জ্বালানির চাপ কমে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, এই অস্বাভাবিক অবস্থা দেখা দেয়ার পরও বিমানটিকে আরো অনেক দূর চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। আফগানিস্তানের আকাশসীমা পার হওয়ার পর বিমানটি তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশকাবাদের বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এই বিমানবন্দর সাধারণত কম বিমানই ব্যবহার করে থাকে। সেখানে কয়েক ঘণ্টা ধরে মেরামতের পর আবার প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিমানটি যাত্রা করে বুদাপেস্টের উদ্দেশে এবং বিলম্বে গিয়ে পৌঁছে। জানা গেছে, আর কিছু সময় আকাশে থাকলে জ্বালানি একেবারে ফুরিয়ে গিয়ে বিমানটি বিপদের সম্মুখীন হতো। অনুসন্ধানে জানা যায়, ফুয়েল ট্যাংকারের নাটবল্টু ঢিলা হয়ে যাওয়ায় তেল বেরিয়ে যায় এবং উপরি উক্ত বিপত্তি ঘটে। বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা সরকারপ্রধানকে বহনকারী বিমান এ ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার নজির এটাই প্রথম।
বেগম খালেদা জিয়ার আমলের বেসামরিক বিমান চলাচল দফতরের মন্ত্রী মীর নাসিরউদ্দিন পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি হওয়া গভীর উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেছেন, দেশের সরকারপ্রধান যে বিমানে যাতায়াত করবেন, তার নিরাপত্তার দিকটি বারবার চেক করে শতভাগ নিশ্চিত হতে হয়। ঊর্ধ্বতনপর্যায়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতো তার সময়ে। তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরের বর্তমান মন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
গত শুক্রবার একটি দৈনিকের লিড নিউজ ‘দিক হারিয়েছে বিমান’। উপশিরোনামÑ ‘মিয়ানমারের ফ্লাইট নামলো ঢাকায়, যাওয়ার কথা সিলেট গেল কলকাতা, ঢাকার ফ্লাইট চট্টগ্রামে, কেউ জানে না দায়িত্ব কার, বিভ্রান্ত পাইলট, বিস্মিত যাত্রী।’
এতটুকু পড়েই যেকোনো নাগরিক অনুধাবন করতে পারেন বাংলাদেশ বিমানের সর্বশেষ কী অবস্থা। একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যখন চরম উৎকর্ষ এবং যখন ডিজিটাল দেশ গড়ার জন্য সরকারের মহাতোড়জোড়, সে সময়ে আমাদের অনেকের সাধ ও স্বপ্নের বিমান সংস্থাটি সামনে এক কদমও না এগিয়ে যেন পশ্চাৎযাত্রার জন্য জেদ ধরেছে। উল্লিখিত অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হয় স্বীকার করবেন না, নতুবা নানান সাফাই গাইবেন। কিন্তু বাস্তবে বিমান নিয়ে যে বিরাট বিপত্তি (সেই সাথে বিপদও), তার সুরাহা হবে কি? এই প্রতিষ্ঠানে বিদেশী প্রধান নির্বাহী নিয়োগ করা হয়েছিল অনেক আশায়। উনি কয়েক মাসেই ‘শক্তিশালী কায়েমি স্বার্থ’র দাপটের কাছে হার মেনে দেশ ছেড়ে বেঁচেছেন। এখন যেসব দেশী কর্মকর্তা সংস্থাটির হর্তাকর্তা বিধাতা, তাদের দেশপ্রেমের পরীক্ষা হচ্ছে দায়িত্ববোধ কতটা আছে, তা প্রমাণিত হওয়ার মধ্য দিয়ে।
যে খবরগুলো ওপরে সংক্ষেপে দেয়া হলো, সেগুলোর বয়ান দিয়ে সংশ্লিষ্ট পত্রিকার রিপোর্টটির সূচনা হয়েছে এ ভাবে- ‘গত সপ্তাহের ঘটনা। ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট যাবে সিলেট। যাত্রীরা আসন নিয়েছেন। বিমান উড়ল আকাশে। বেশ কিছু সময় পর বিমানবন্দরে অবতরণ করল ফ্লাইটটি। রানওয়েতে ছুটে চলা উড়োজাহাজ তখনো থামেনি। যাত্রীদের অনেকেই তখন জানালা দিয়ে বাইরে তাকাচ্ছেন। একি! সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের চেহারা এমন কেন? এ প্রশ্ন করেই চিৎকার দিলেন এক যাত্রী। অন্য যাত্রীরাও তখন বাইরে তাকাচ্ছেন। বলছেন, ‘আরে, তাই তো! কোথায় এলাম?’ যাত্রীদের অনেকেই তখন হইচই শুরু করলেন। সিলেট নয়, এটা কলকাতা বিমানবন্দর। পাইলটের কাছে এমন খবর শুনে যাত্রীরা বিস্মিত।
সিলেট থেকে ১০২ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে আকাশে ডানা মেলেছিল বাংলাদেশ বিমানের অন্য একটি ফ্লাইট। বিমানবন্দরে অবতরণের পর যাত্রীরা সে দিন জানলেন, তারা ঢাকায় নয়, এসেছেন চট্টগ্রামে। গত রোববার এমন ঘটনার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিমান যাত্রীরা।’
জানা যায়, সিলেট থেকে ঢাকার ফ্লাইটটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের অনুমতি না পেয়ে চট্টগ্রামে শাহ আমানতে গিয়ে নামতে হয়। বিজয় দিবসের মহড়া চলছিল ঢাকায়। এ কারণে সিলেট থেকে আসা বিমানটি চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
কিন্তু বিজয় দিবসের মহড়ার তো হঠাৎ সিদ্ধান্ত হয়নি। কয়েক দিন আগে থেকেই এসব ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়। তাহলে ঢাকায় সে দিনের ফ্লাইটটি নামতে পারবে না, এটা সিলেট বিমানবন্দরে কেন জানানো হলো না? বিমানের এমডি পর্যন্ত এর সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে পত্রিকা জানিয়েছে। বিমানটি ঢাকায় নামার অনুমতি না পেয়ে ২০ মিনিট আকাশে চক্কর দিয়ে শেষে চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে। এ ব্যাপারে একজন এমপি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেছেন, ‘বিকালে সংসদ অধিবেশন থাকায় আমার ঢাকায় আসা ছিল জরুরি।’ তিনিও ওই বিমানের দুর্ভাগা যাত্রী।
এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে সিলেটগামী ফ্লাইটের সময় নির্ধারিত ছিল দুপুর পৌনে ১২টা। প্রায় ২ ঘণ্টা বিলম্বে এটি যাত্রা করে সিলেট অভিমুখে। আড়াইটায় বিমানটি অবতরণের পর যাত্রীরা টের পান, তারা গন্তব্যে নয়Ñ অন্য কোথাও পৌঁছেছেন। জায়গাটা দেশ নয়, বিদেশ। এটি কলকাতা বিমানবন্দর। পাইলট যাত্রীদের এ ব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেননি বলে পত্রিকার খবরে প্রকাশ। ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ এ প্রসঙ্গে লিখেছে, ‘সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশের এভাবে হুট করে সিলেটের বদলে কলকাতায় যাওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। কারো কারো ধারণা, ওই ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কলকাতায় কোনো কিছু পাচার করা হয়েছে।’ যা হোক, আসলে কী ঘটেছিল, তা আমরা জানি না এখনও। তাই এসব বিষয়ে অবিলম্বে যথাযথ তদন্ত করে প্রকৃত বিষয়টি উদঘাটন ও প্রকাশ করা দরকার।
আমাদের এ অঞ্চলে বেসামরিক বিমান পরিবহন শুরু হয় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে। প্রথমে দেশী বিমান সংস্থা হিসেবে ছিল শুধু ওরিয়েন্ট এয়ারওয়েজ, যার মালিকানায় ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ইস্পাহানি। কয়েক বছর পর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এবং অনেকটা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স বা পিআইএ যাত্রা শুরু করে। ষাটের দশকে পত্রিকায় প্রতিদিন রেডিওর দৈনিক প্রোগ্রামের পাশাপাশি ট্রেন ও বিমানের ফ্লাইটগুলোর সময়সূচি বিস্তারিত ছাপা হতো। তখন ঠাকুরগাঁও, ঈশ্বরদী ও কুমিল্লা ছাড়াও মৌলভীবাজারের শমসের নগরে নিয়মিত ফ্লাইট যাতায়াত করত। বাংলাদেশ আমলে এই ক’টি বিমানবন্দর আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। তবে সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশালে নতুন বিমানবন্দরের মাধ্যমে ফ্লাইট চালু রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, যশোর, সিলেট ও কক্সবাজারে ফ্লাইট তো আছেই। পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে হাতিয়া সন্দ্বীপের মতো দ্বীপাঞ্চলসহ কয়েকটি জায়গায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু হলেও দুর্ঘটনার কারণে এক সময়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। এমন এক দুর্ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সুপরিচিত বুদ্ধিজীবী ড. মাহফুজুল হক নিহত হন। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে আবির্ভূত হওয়ার কিছু দিন পর, ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘বাংলাদেশ বিমান’ নামে জাতীয় বিমান সংস্থার সূচনা। এর উদ্বোধনী ফ্লাইট ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে। তবে দুর্ভাগ্যবশত কয়েক দিন পরই এই বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে বিধ্বস্ত হয় এবং এর চালক নিহত হন। তিনি ছিলেন উদ্বোধনী ফ্লাইটের চালকদের একজন। তখন বাংলাদেশের যাত্রীবাহী বিমান বোধ হয় দু-তিনটির বেশি ছিল না। ক্রমান্বয়ে সংস্থাটির উন্নতি ও প্রসার ঘটতে থাকে। বিশিষ্ট শিল্পী কামরুল হাসান এর লোগো তৈরি করেন। বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশ বিমানের পরিচয় দেয়া হলো ‘আকাশে এক টুকরো শান্তির নীড়’।
এই সংস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৪ সালে। এই ট্র্যাজেডি ঘটেছিল ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই। এতে বাংলাদেশের প্রথম নারী পাইলট রোখসানা প্রাণ হারিয়েছিলেন। বিধ্বস্ত বিমানটির যাত্রীদের মধ্যে সম্ভবত কেউ বাঁচতে পারেননি। বিমানটি চট্টগ্রাম থেকে আসছিল রাজধানীতে। কী কারণে এই শোচনীয় দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তা মনে পড়ছে না। তবে এতটুকু মনে আছে, দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটির ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার অভিযান ও আনুষঙ্গিক কাজের তদারকির দায়িত্বে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন তখনকার উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান। তিনি ছিলেন নৌবাহিনীপ্রধান এবং কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সাথে খুব সম্ভবত বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে। এর প্রায় দুই দশক আগে বর্তমান বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ১৯৬৫ সালে। অবশ্য দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল দেশের বাইরে এবং সেটা ছিল পিআইএ’র কায়রো রুটের উদ্বোধনী ফ্লাইট। কোনো কারণে বোয়িং বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল সম্ভবত মিসরের আকাশে। আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক আহমেদুর রহমান (ভীমরুল নামে কলাম লিখতেন), দৈনিক পাকিস্তান (পরে নাম হয় দৈনিক বাংলা) পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মোজাম্মেল হক, দৈনিক পয়গাম-এর মালিক প্রকাশক আখতারুজ্জামান খান, চট্টগ্রামের ইংরেজি দৈনিক ইউনিটি সম্পাদক এস এম মবিন প্রমুখ। অন্যসব যাত্রীর মতো তারা সবাই মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন সে দিন।
ছোটবেলায় শুনেছি সেই পঞ্চাশের দশকে আমার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বিমানে ঢাকা থেকে চাটগাঁ যাচ্ছিলেন। তাদের একজন পুরো পথ চোখ বন্ধ করে কাটিয়েছিলেন। এর কারণ প্লেনে চড়ার ভয়, যা ‘উচ্চতা ভীতি’র দৃষ্টান্ত। এটা অনেকের মাঝেই দেখা যায়। কথা হলো, বিমানে চোখ বুজে থাকুন আর নাই থাকুন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন পরিণতি একই হবে। কারণ প্রবাদ আছে, বালুতে মাথা গুঁজে বিপদ এড়ানো যায় না। বাংলাদেশ বিমানের যে দশা এখন, ‘বালুতে মুখ গুঁজে’ সরকার আর এটাকে না দেখার ভান করে চলার উপায় নেই। গৎবাঁধা স্টাইলে দায়সারা তদন্ত, রিপোর্ট ও ব্যবস্থা নিলে সরকারের দায় যে মোটেও সারে না, বিমানের ঘনঘন অঘটন আর ঘনঘন আইওয়াশ এর সাক্ষ্য দেয়। মলমে কাজ না হলে সার্জারিই আসল দাওয়াই।
বাংলাদেশ বিমান ‘আকাশে এক টুকরো শান্তির নীড়’ কথাটায় আস্থা রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। হালহকিকত দেখে এবং ফ্লাইটের যাত্রীদের উদ্বেগ আশঙ্কা থেকে পুরো জাতির বিষম দুর্ভাবনার কারণ হয়ে উঠেছে সংস্থাটি। সম্ভাবনাময় এই প্রতিষ্ঠানের দশা দাঁড়িয়েছে ডানা ভেঙে মুখ থুবড়ে পড়া বিমানের মতো। এটা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির ব্যাপার নয়। এর সাথে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণের নিরাপত্তা এবং দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্নও জড়িত।
উদ্ভূত সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় কী? ওয়াকিবহাল মহলের অভিমতÑ বাংলাদেশ বিমান নামে সংস্থাটির যাবতীয় অনিয়ম, দুর্নীতি, অদক্ষতা, অপচয়, স্বজনপ্রীতি, গাফিলতি প্রভৃতি ব্যাপারে ক) যথোপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন, খ) কমিটির টার্মস অব রেফারেন্স বা কর্মপরিধি যথাযথভাবে নির্ধারণ, গ) নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত সম্পন্ন করা, ঘ) তদন্তের রিপোর্ট শুধু পেশ নয়, সেই সাথে প্রকাশ করা, ঙ) এই রিপোর্ট মোতাবেক দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, চ) প্রয়োজনে দাফতরিক যেকোনো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া, ছ) দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, জ) সংস্থার পুরো প্রশাসন কাঠামো ও কার্যক্রম ঢেলে সাজানো, ঝ) এসব বিষয়ের কোনো ক্ষেত্রেই কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতিস্বীকার না করা এবং ঞ) নিছক মন্ত্রণালয় নয়, সরকারের সর্বোচ্চপর্যায় থেকে পুরো বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সাথে নিয়মিত মনিটর করা জরুরি।
এখন সবাই উদ্বিগ্ন এটা ভেবে যে, আমাদের একটি বিমানের নাটবল্টু খুলে গেছে। বাস্তবে যে পরিস্থিতি দীর্ঘ দিনের, তাতে বলতে হয় বাংলাদেশ বিমান নামে জাতীয় সংস্থাটির ‘নাটবল্টুই ঢিলা হয়ে গেছে’। কেন এমন হলো আর কী করে এই দুরবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব? যদি দেশের সরকার নিজের সব নাটবল্টু টাইট করে তার ফিটনেস বজায় রাখতে পারে, তা হলেই বিমান নিয়ে আর আশঙ্কা বা দুশ্চিন্তা থাকবে না। তখন কেউ ঠাট্টা মশকারাও করবেন না ‘বাংলাদেশ বিমান’ নিয়ে। প্রশাসন ও দেশ পরিচালনার সর্বস্তরে সুশাসন ও সুবিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হলেই জাতি নিশ্চিন্ত হবে যে, সরকারের নাটবল্টু খুলে যাওয়া কিংবা ঢিলা হওয়ার আর সম্ভাবনা নেই।
উৎসঃ dailynayadiganta
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন