যখন ‘সাধারণ’ করদাতাদের কয়েক হাজার টাকা কর আদায়ের জন্য প্রশাসনের হুমকি, মামলা ও শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়, তখন ‘অসাধারণ’ করদাতারা শত শত কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়ে এর অনেক গুণ বেশি অর্থ বিদেশে পাচার করছেন, ‘নিরাপদ’ স্থানে লুকিয়ে রাখছেন। এমন অবস্থা বিশ্বের দেশে দেশে এবং এই অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের নাম শুনলে চমকে উঠতে হয়। এবার ‘প্যারাডাইস পেপার্স’ কেলেঙ্কারি ফাঁসের সর্বশেষ ঘটনা আধুনিক বিশ্বের বহু ভিভিআইপি’র ভয়াবহ আর্থিক কলঙ্ক উন্মোচন করে দিয়েছে। বলা নিষ্প্রয়োজন, নৈতিকভাবে দেউলিয়া না হলে কেউ অনৈতিক পন্থায় কোটি কোটি টাকার মালিক হতে পারে না।
ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ‘প্যারাডাইস পেপার্স’ নামে অভিহিত মহারথীদের বিশাল অঙ্কের কর ফাঁকির নথিগুলো ৫ নভেম্বর প্রকাশ করেছে। সাথে সাথে বিশ্বমিডিয়ার শিরোনাম দখল করে নেয় বিষয়টি। সব দেশের মানুষের কৌতূহল, তার দেশের কোন কোন ভিভিআইপি কিংবা বিলিয়নিয়ারের নাম আছে এই লিস্টে। যাদের নাম উঠেছে, তাদের কারো সম্পর্কে আগে থেকেই মানুষের মন্দ ধারণা, কেউ বা ‘আইন মেনে চলা নীতিবান’ হিসেবে এ যাবৎ পরিচিত। এই তালিকায় রানী এলিজাবেথের নাম দেখে অবাক হবেন অনেকে। তবে এই অশীতিপর রানী যে বহু বছর ধরে বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় পাকা ব্যবসায়ী, তা জানা দরকার। হয়তো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য যত সঙ্কুচিত হয়েছে, রাজকীয় ভোগবিলাস ধরে রাখতে রাজপরিবার ততই লাভজনক খাতে পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। প্যারাডাইস পেপার্সে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো বিতর্কিত ব্যক্তির নাম প্রত্যক্ষভাবে এসেছে। আর কানাডার সুদর্শন তরুণ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পরোক্ষে হলেও জড়িয়ে গেছেন এতে। তালিকায় আরো আছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল, গত বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট মানুয়েল সান্তোস, সৌদি বাদশাহ সালমান, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মাক্রি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পোরোশেংকো, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ, লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট সারলিফ, কানাডার তিনজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্রেটিয়েন, পল মার্টিন ও ব্রায়ান মালরনি, কাতার, ইরাক, জর্ডান, জাপান, মঙ্গোলিয়া, ইউক্রেন ও আইসল্যান্ডের একজন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, কাতারের সাবেক আমির হাম্মাদ বিন খলিফা প্রমুখ। সেইসাথে ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের বন্ধু, মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের ছেলে, মালয়েশিয়া ও তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ এবং আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দুই ছেলে ও এক মেয়ে, জর্ডানের রানী, ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর ছেলে-মেয়ে, ভারতের মোদি সরকারের একজন মন্ত্রী এবং ‘বলিউড সম্রাট’ অমিতাভ বচ্চন ও নায়ক সঞ্জয় দত্তের স্ত্রীর নামও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্যারাডাইস পেপার্সে।
Haven (হ্যাভেন) মানে, নিরাপদ বা স্বস্তির জায়গা। Tax- haven-রূপী অফশোর ব্যাংকিং ও বিনিয়োগের বিশেষ ক’টি স্থানে যত অর্থই জমা রাখুন, কর দিতে হবে না। তদুপরি সেখানে এই ব্যাপারটার গোপনীয়তা বজায় থাকে। সাধারণত ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে এসব জায়গায় নানা দেশের সম্পদশালীরা প্রধানত অসৎ উদ্দেশ্যেই হাজার হাজার কোটি টাকা জমা রাখেন (আসলে লুকিয়ে রাখেন)। এসব স্থানের মধ্যে ক্যারিবিয়ান বারমুডাসহ কিছু দ্বীপের কুখ্যাতি বেশি বটে। তবে পানামা, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, মাল্টা, ভার্জিন দ্বীপ, জার্সি দ্বীপ প্রভৃতিও কম যায় না। জানা গেছে, ইউরোপ মহাদেশে যত কর ফাঁকি ঘটছে, এর তিন ভাগের দুই ভাগ অর্থের গন্তব্য ক্যারিবিয়ানের সাথে ইংলিশ চ্যানেলের জার্সি দ্বীপ এবং আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন।
প্যারাডাইস পেপার্সে যেসব দেশের হর্তাকর্তাদের নাম উঠেছে, সে দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া কী? প্রথমে মৃদু প্রতিক্রিয়া এসেছে। এর অর্থ, অফশোর কর্মকাণ্ডের অভিযোগটি সত্য এবং এটা যতই অনৈতিক বা আপত্তিকর হোক, তা অব্যাহত থাকবে। আয়ারল্যান্ড সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া মৃদু ও দায়সারা। এমনকি, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে তার প্রতিক্রিয়ায় ‘অধিক স্বচ্ছতা’র বুলি আওড়ালেও এত গুরুতর অভিযোগ তদন্তের ব্যাপারও এড়িয়ে গেছেন। তিনি আইনে বড় পরিবর্তন এনে অফশোর বিনিয়োগ রোধের গরজও বোধ করেন না। তাই তার দেশের রানীর নাম প্যারাডাইস পেপার্সে থাকায় ওয়াকিবহাল মহল অবাক নন। এ দিকে, কর ফাঁকির প্রবণতায় জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। এ কারণে জার্মানির প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে জোরালো। জার্মানি চায় ইইউ’র মধ্যে যেসব ফাঁক থাকায় কর ফাঁকি দেয়া সম্ভব হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করা হোক। তবে এ জন্য চাপ দেয়ার পরও কাজ হয়নি তেমন। তাই প্যারাডাইস পেপার্সের পরও কর ফাঁকিবাজেরা বিশেষ ক’টি দেশে ‘ভালোমন্দের টাকার ভাণ্ডার’ পাঠিয়ে প্যারাডাইস বা স্বর্গের সুখ অনুভব করার সুযোগ পেতে পারে। অথচ কর ফাঁকির কৌশল কাজে লাগিয়ে সুযোগসন্ধানীরা জার্মানিকে তার প্রাপ্য কর্পোরেট ট্যাক্সের এক-তৃতীয়াংশ থেকে বঞ্চিত করছে। ব্রিটেন এই করের ২০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৬ শতাংশ পায় না একই কারণে।
এর আগে পানামা পেপার্স, এবার প্যারাডাইস পেপার্স ফাঁস হলো। আগামী দিনে আরো একাধিক এমন তালিকা প্রকাশ পেয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে; কিন্তু কর ফাঁকি, অবৈধ অর্থ আর গোপন ভাণ্ডারের যত লিস্ট ফাঁস হোক, এই অপরাধের দায়ে কারো ফাঁসি দূরের কথা, কোনো সাজা হবে কি না, বিরাট সন্দেহ। পানামা পেপার্স নিয়ে কত তোলপাড়, মিডিয়ায় নিন্দামন্দÑ কিন্তু পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফ ছাড়া কাউকে কি এ জন্য ‘ঝামেলা’য় পড়তে হয়েছে? আদালতের রায়ে নওয়াজের এখন দুর্দিন; আর ‘হাতি খাদে পড়লে ব্যাঙও লাথি মারে’। তা না হলে নওয়াজ শরিফও পার পেয়ে যেতেন। বিশ্বের দেশে দেশে প্রেসিডেন্ট-প্রাইম মিনিস্টার, মন্ত্রী-মোড়ল, রাজনীতিক ও ধনকুবেরদের আর্থিক দুর্নীতি, অসততা এবং সম্পদ জমানোর স্বভাবে মিডিয়া সমালোচনামুখর আর সাধারণ মানুষ তাদের ধিক্কার জানায়; কিন্তু তাদের নিজেদের এ নিয়ে ভীতি বা উদ্বেগ কতটুকু? আদৌ কি এসব ক্ষমতাবান তালিকা ফাঁস, মিডিয়ার মাতামাতি কিংবা মানুষের নিন্দাবাদের ধার ধারেন? মনে হয় না।
এই প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটন পোস্টের লন্ডনের সাংবাদিক রিক নোয়াক মনে করেন, ‘কর ফাঁকির ঘটনা ফাঁস হলেও বৃহত্তর পরিসরে তেমন পরিবর্তন ঘটবে না। খোদ ব্রিটেনের রানীর নাম প্যারাডাইস পেপার্সে থাকলেও আগের মতোই অফশোর ভাণ্ডারে অর্থ জমা হবে বলে ইঙ্গিত মিলছে। রিক নোয়াক বলেছেন, ‘রানী এলিজাবেথের অফশোর বিনিয়োগকে সমর্থন দিয়েছেন তার প্রধান অর্থকর্মকর্তা। পরামর্শদাতাদের জোর সুপারিশেই এই বিনিয়োগ করা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, শোরগোল হলেও কর ফাঁকির নিরাপদ স্থান হিসেবে অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগকে গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়।’
সৌদি আরবে চলছে মহা তোলপাড়। রিয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রকৃত প্রাণকেন্দ্র এখন বৃদ্ধ বাদশাহ সালমানের তরুণ সন্তান MBS অর্থাৎ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সুলতান। সৌদি অর্থনীতির আমূল সংস্কারের প্রবক্তা এই রাজপুত্র এবার দৃশ্যত রাষ্ট্রের ও সমাজের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি দমনে সর্বাধিক শক্তি নিয়োগ করেছেন। এ অভিযোগে হঠাৎ গ্রেফতার হয়েছেন রাজপরিবারের সদস্য, সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এক রাজপুত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন। কয়েকজন আকাশপথে দেশ থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্ন জেগেছে, আসলে কি অর্থনৈতিক দুর্নীতি উৎখাতের সাথে যুবরাজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দেয়ার কাজও সুকৌশলে সারিয়ে নেয়া হচ্ছে? সাধারণভাবেই মনে হচ্ছে যে, এই দুটোই সৌদি রাষ্ট্রে চলমান শুদ্ধি অভিযানের উদ্দেশ্য।
তবে এ ক্ষেত্রেও প্যারাডাইস পেপার্সে উল্লিখিত, বিদেশে গচ্ছিত গোপন অর্থের প্রসঙ্গ এসেছে। মিডিয়ার খবর, সৌদি আরবে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনেকে প্রচুর সম্পদের অধিকারী। শুধু বেতনভাতায় এটা সম্ভব হতে পারে না। তাদের অধিকাংশ সম্পদ এসেছে অফশোর অ্যাকাউন্টের অর্থের বিনিময়ে। এসব অ্যাকাউন্টের কোটি কোটি ডলার দেশে কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশের কয়েকটি ‘ঝামেলামুক্ত’ স্থানের ব্যাংকে জমা করা হয়। এই বিরাট অন্যায় করে আসছেন পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের নানা দেশের ক্ষমতাশালী ও খ্যাতনামা কিছু লোক। সৌদি আরব প্রধানত জ্বালানির মূল্যধসের কারণে কয়েক বছর যাবৎ সঙ্কটে রয়েছে। বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পরিষেবা প্রদান করা কঠিন হয়ে উঠছে। এখন দেশ চালাতে সরকারের বিপুল অর্থ দরকার। তাই সরকার গোপন বা অফশোর হিসাবের বিশাল অঙ্কের অর্থ উদ্ধার করতে চাচ্ছে। এর পরিমাণ ৮০০ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশের হিসাবে ৬৫ লাখ কোটি টাকা)। প্রশ্ন হচ্ছে, যারা সর্বময় ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষের সুনজরে আছেন, তাদের সে অর্থ দেশে আনার কোনো উদ্যোগ কি নেয়া হবে? নাকি শুধু সন্দেহভাজন প্রভাবশালী লোকজনের ওপর বরখাস্ত, গ্রেফতার, শাস্তি প্রভৃতি বালামুসিবত ‘নাজিল’ হবে?
প্যারাডাইস পেপার্স নিয়ে একটি প্রশ্ন উঠেছে। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন কোম্পানি, অনেক বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, এমনকি বিশ্বে সর্বাধিককাল সিংহাসনে অধিষ্ঠিত রানী এলিজাবেথ পর্যন্ত ঞধী যধাবহ অর্থাৎ কর রেয়াত বা অবকাশের সুযোগ নিয়েছেন। কেউ তো আর এমন কর দেবেন না যা আইনে বাধ্যতামূলক নয় এবং সংশ্লিষ্ট দেশে যা না দিলে তা মোটেও বেআইনি হবে না। কর অবকাশ যদি অবৈধ না হয়, তা হলে এ ক্ষেত্রে সমস্যাটা কী? এখানে আইন ও নৈতিকতার মাঝে কিছুটা হলেও পার্থক্য দৃশ্যমান। আসলে আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার একটা বড় ত্রুটি এটা। হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবেই এমনটা করা হয়েছে ক্ষমতাশালী ও বিত্তবান শ্রেণীর স্বার্থে।
কানাডার কয়েকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রধান নির্বাচনী তহবিল সংগ্রাহকের নাম উঠেছে প্যারাডাইস পেপার্সে। সে দেশের একজন বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষক বলেছেন, Tax avoidance (কর এড়ানো) আর Tax evasion (কৌশলে কর ফাঁকি) এ দু’টি পরিভাষা মাঝে মাঝে বিভ্রান্তির জন্ম দেয়। এখানে একটি আইনানুগ এবং অন্যটি অবৈধ ব্যাপার। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে করের ব্যাপারে কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না, সুস্পষ্টভাবে এসব চিহ্নিত করা কঠিন বৈকি। ফলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কর অবকাশ দেয়া এবং এই সুযোগ নেয়া আইনসম্মত। তবে অপকৌশল খাটিয়ে কর এড়িয়ে যাওয়া অন্যায় ও অবৈধ। এর মাধ্যমে দায়িত্ব এড়ানো এবং আইন লঙ্ঘন হয়ে থাকে। তবে আইনি অস্পষ্টতা কানাডার মতো কোনো কোনো দেশে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বেঁচে যাওয়ার পথ করে দিতে পারে। কানাডায় অফশোর কোম্পানি বা ট্রাস্টের ব্যবহার বেআইনি নয়। আরো কোনো কোনো দেশেও এই সুযোগ থাকতে পারে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যদি অফশোর Tax haven বৈধ হয়, তাহলে সাংবাদিকদের একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন কেন অনেক দেশের রাজা-রানী, উজির-নাজির, সওদাগরের নাম দিয়ে প্যারাডাইস পেপার্স ফাঁস করেছে এবং কেন এটা নিয়ে দুনিয়ায় এত হই চই? এর জবাবে সাংবাদিকদের ওই ফোরাম আইসিআইজে-নৈতিকতার সঙ্কটকে গুরুত্ব দিয়ে বলেছে, অফশোর অ্যাকাউন্ট সাধারণত অবৈধ কার্যক্রমকে উৎসাহ জোগায়। অফশোর বা গোপন অস্তিত্ব বজায় রাখা প্রায় সময়ে বৈধ বলে গণ্য। তবে এ ধরনের গোপনীয়তা গোপনে যারা কাজ করতে আগ্রহী, সেই অর্থ ও মাদক পাচারকারী এবং চুরির প্রবণতা আছে যাদের, এসব লোককে আকৃষ্ট করতে পারে। এর পাশাপাশি, এ যাবৎ যারা কর শোধ করছেন স্বচ্ছভাবে, বিশেষ করে যারা কর পরিশোধের সামর্থ্য রাখেন, গোপন অফশোর তাদেরও প্রলুব্ধ করতে পারে।
সমাজের কথিত অভিজাত শ্রেণী, তথা ধনাঢ্য গোষ্ঠীই অফশোর সুবিধা ভোগ করে আসছে। বিরাট অঙ্কের ফি দিয়ে উকিল আর অ্যাকাউন্ট্যান্ট নিয়োগ করে এসব ‘মতলবি মক্কেল’ ক্রমবর্ধমান অফশোর সিস্টেম গড়ে তুলেছে। সব মিলিয়ে এটা বলাই যৌক্তিক হবে যে, ‘সম্পদশালী উচ্চশ্রেণীর জন্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার অস্বচ্ছ ব্যবস্থার আরেক নজির এই অফশোর সিস্টেম’।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন