|
মইনুল হোসেন
test@gmail.com |
|
বিবেক যুদ্ধে হার মেনেই চলেছি
01 June 2018, Friday
আইনের রক্ষক পুলিশের তো বিনা বিচারে হত্যার প্রশ্নই ওঠে না। বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড ঘটানো শাসনতন্ত্র লঙ্ঘনের অপরাধ। আমাদের শাসনতন্ত্রে প্রতিটি নাগরিককে যে অধিকারটিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিশ্চিত করা হয়েছে তা হল জীবনে বেঁচে থাকার অধিকার।
কেউ বিনা বিচারে কারও জীবন নিতে পারবে না। আইন প্রয়োগের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেদের জীবন রক্ষার নামে তারা জনমানুষের জীবন রক্ষার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হতে পারেন না। এভাবে হত্যার মাধ্যমে আমরা বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের রক্ষা করছি কিনা, তাও ভেবে দেখতে হবে।
যাদের ভেবে দেখতে বলছি তারা তো আমাদের পুলিশ বা র্যাব এবং যারা মারা যাচ্ছে তারাও এ দেশেরই সন্তান। প্রতিদিন ১০-১২ জন লোকের বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুবরণ কতটা স্বাভাবিক, কতটা শাসনতন্ত্রসম্মত তা তো আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের বিচার্য বিষয় হতে হবে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশ, মিয়ানমার সরকার তাদের দেশের এবং আমাদের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আশ্রয়ে রেখেছে।
মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের নামে দেশজুড়ে বেশ কিছুদিন ধরে গোপন হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে বিষয়টির সমালোচনা করা হচ্ছে; কিন্তু ক্রসফায়ারে মৃত্যুর কোনো শেষ দেখছি না। সরকার হয়তো ভাবছে মাদকবিরোধী অভিযান তাদের জনপ্রিয়তা বাড়াবে। তবে আমি নিশ্চিত এতে ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে না পারার জন্য সরকারের ব্যর্থতাই প্রকাশ পাবে।
প্রথমত, মাদক ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড হঠাৎ করে শুরু হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকের বিরুদ্ধে প্রচুর মামলা রয়েছে, অপরাধীরা চিহ্নিত, তাহলে এতদিনেও তাদের গ্রেফতার করা হল না কেন? দেখা যাচ্ছে তাদের দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা চালাতে দেয়া হয়েছে বা সাহায্য করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য তো আমাদের দেশে তৈরি হয় না। ভারত এবং মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
ভারতের ফেনসিডিল তৈরির কারখানাগুলো আমাদের দেশের সীমানা ঘেঁষেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সীমান্তে মাদকদ্রব্য প্রবেশের পথে বাধা দিতে ব্যর্থতা কাদের, তারও তো উত্তর থাকতে হবে। জিরো টলারেন্স দেশের সীমান্ত এলাকায় দেখাতে পারলে অধিকতর সুফল পাওয়া যেত।
সর্বনাশা মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা আসক্তদের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। সত্যের খাতিরে এটা সরকারকে স্বীকার করতেই হচ্ছে যে, প্রভাবশালী লোকদের সহায়তায় ইয়াবা ব্যবসা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
শুধু রাজনৈতিক নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট গডফাদাররাই নন, পুলিশের একাংশের সহযোগিতা ভিন্ন সারা দেশে মাদক ব্যবসার বিস্তার ঘটা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারটি পুলিশ এবং র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভালোই জানেন। এভাবে তাদের এই ব্যবসায় সম্পৃক্ত রাখার ব্যবস্থা মাদক ব্যবসার কৌশলেরই অংশ।
এখন হঠাৎ করে আইন-কানুন, শাসনতন্ত্রের কোনো কিছুর গুরুত্ব না দিয়ে পুলিশি বিচারে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের ‘ফাঁসি’ কার্যকর করা হচ্ছে। যদিও আইনত সব মাদক ব্যবসায়ীর শাস্তি হওয়ার কথা নয়।
পুলিশকে অবিশ্বাস করার প্রশ্ন তুলছি না। পুলিশের ওপর আস্থা রেখেই তো অপরাধসংক্রান্ত মামলার বিচার কোর্ট-আদালতে হয়। আমাদের শাসনতন্ত্রও তো পুলিশের দায়িত্বের কথা বলে। শাসনতন্ত্রের ৩২ অনুচ্ছেদে যা বলা হয়েছে তা এরূপ : ‘আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হইতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।’ অর্থাৎ বিচারবিহীন মৃত্যু ঘটানো যে শাসনতন্ত্র লঙ্ঘনের অপরাধ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
যারা মাদক ব্যবসা সম্পর্কে কিছু জ্ঞান রাখেন, তারা স্বীকার করবেন যে মাদক ব্যবসায়ীরা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই মাদক ব্যবসা করে থাকে। কোটি কোটি টাকার এ ব্যবসা রক্ষার জন্য তারা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে নিজেদের বেআইনি কাজের প্রোটেকশনের জন্য।
যাদের ক্রসফায়ারে হত্যা করা হচ্ছে তারা দায়ী হোক বা না হোক, তারা অবশ্যই মাদক ব্যবসার মূল শক্তি নয়। দেশে দেশে মাদক ব্যবসায়ী গডফাদাররা নিজেদের রক্ষার জন্য রাজনীতিবিদসহ সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখে।
তারা তাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই মাদক ব্যবসা করে। তাই বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীকে ধরা মোটেও সহজ নয় যে, দশ-বারোজন করে প্রতিদিন তাদের ক্রসফায়ারে দেয়া সম্ভব হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সবসময়ই বলে আসছেন সব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে। এখন বলছেন, মাদকবিরোধী অভিযান একটি যুদ্ধ। যুদ্ধে তো আইনকানুন মানা হয় না। ধ্বংস আর মৃত্যুই যুদ্ধ। বুঝতে চেষ্টা করা হচ্ছে না যে, এ যুদ্ধ দেশটিকে কী ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। খুন, ধর্ষণসহ সব রকমের অপরাধই তো বেড়ে চলেছে। সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।
মূল কথা, মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের বিচারে সোপর্দ করুন। অপরাধ মোকাবেলার জন্য আইন ও বিচার ব্যবস্থা- বন্দুকযুদ্ধ বিচার ব্যবস্থা নয়। দেশবাসীকে আস্থায় নিন। বন্দুকের শক্তি কোনো গঠনমূলক শক্তি নয়।
মাদকাসক্তি ক্যান্সার রোগের মতো। এটা আমাদের তরুণ শ্রেণীকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো তৎপরতা দেখছি না। মাদকদ্রব্যের চাহিদাও বন্ধ করতে হবে।
সে যা-ই হোক, ১২ মে থেকে এই লেখার সময়কাল পর্যন্ত পুলিশ হেডকোয়ার্টারের তথ্যানুযায়ী আইন প্রয়োগকারীদের হাতে শতাধিক ব্যক্তি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। অসহায় লোকদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। মানুষ মারা সবচেয়ে সহজ। সহজভাবেই তাদের মৃত্যু ঘটছে। মানুষ মারায় কোনো বীরত্ব নেই।
এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এই নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় কী? মাদক সেবন থেকে তরুণ সমাজকে বাঁচাতে হলে ছোটখাটো মাদক ব্যবসায়ীদের হত্যা না করে তাদের জীবিত রেখে জানার চেষ্টা করলে লাভবান হওয়া যেত যে, কোন শক্তিধরদের শক্তি ও সাহসে তারা মাদক ব্যবসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
মাদক ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কেও জানা যেত। মাদক গডফাদারদের নেটওয়ার্ক ভাঙতে না পারলে কিছু লোককে হত্যা করে সাফল্য দাবি করা যাবে, কিন্তু সে সাফল্য দৃশ্যমান হবে না। তা বিরূপ প্রতিক্রিয়াই জন্ম দেবে।
মাদক ব্যবসার অভিযোগে কিছু লোকের মৃত্যু হচ্ছে আবার বহু লোক গ্রেফতার হচ্ছে। যাদের জীবিত অবস্থায় রাখা হয়েছে তাদের আত্মীয়স্বজন এবং স্থানীয় লোকজন থানার সামনে এসে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তাদের দাবি গ্রেফতারকৃত তরুণরা নির্দোষ। তবুও ভালো যে তাদের ক্রসফায়ারে পড়তে হয়নি।
দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান রীতিমতো আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলেছে। তরুণদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসহায়ত্ব। কাকে কখন মাদক ব্যবসায়ী সন্দেহে জীবন হারাতে হয়। এ ধরনের অভিযোগ আমাকেও শুনতে হচ্ছে।
আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হলে বলতে পারতাম বিচার হলে নির্দোষ কাউকে ভয়ভীতির মধ্যে থাকতে হবে না। অসহায় মানুষরা বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা খুঁজছে। সুবিচারের কথা হল কোর্ট কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কেউ কোনো অপরাধে দোষী হিসেবে শাস্তি পেতে পারে না। এসব তো আমাদের মতো দেশেরই আইন-কানুনের কথা।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আমাদের সবার নিরাপত্তার জন্য একটি অপরিহার্য সংস্থা। জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয়ে পুলিশের প্রস্তুতি ও ট্রেনিং দেয়া হয়ে থাকে। পুলিশকে বলা হয় সুশৃঙ্খল আইন প্রয়োগকারী বাহিনী। তাদের আইনবহির্ভূত হত্যার কাজে ব্যবহার করার শক্তি হিসেবে দেখতে চাই না। তাদের জনগণের নিরাপত্তা বিধানে অত্যন্ত আপনজন হিসেবেই দেখতে চাই।
জনগণ, বিশেষ করে আইনজীবী ও বিচারকদের অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে এটা নিশ্চিত করার যে, কেউ যেন এটা অনুভব না করেন, তিনি আইনি প্রক্রিয়া ব্যতিরেকেই অন্যের জীবন নিতে পারেন। আইন প্রয়োগকারী পুলিশের ওপর জীবন রক্ষার দায়িত্বই সুমহান দায়িত্ব। জীবনের ওপর ঝুঁকি নিয়ে অন্যদের জীবন রক্ষা করা তাদের পেশাগত গৌরব।
মেক্সিকো ও কলাম্বিয়ার মতো দেশগুলোর ইতিহাস ঘাঁটলেও দেখা যাবে যে মাদক ব্যবসা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শক্তিশালীদের সংঘবদ্ধ সহযোগিতায় মাদক ব্যবসা জমে ওঠে। কঠিন সমস্যার সহজ সমাধান খোঁজা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
বহির্বিশ্বে আমাদের দেশ ও জাতির ভাবমূর্তি খুবই খারাপ হচ্ছে। কারণ এখানে জীবন রক্ষার নিশ্চয়তা নেই বলা তাদের পক্ষে সহজ হচ্ছে। বর্তমান যুগ মানবাধিকার রক্ষার যুগ। দেশ ও সরকারের সুন্দর ভাবমূর্তি নির্ভর করে মানবাধিকার রক্ষায় আমরা কতটা সফল। জাতীয় এবং নিজেদের ভাবমূর্তি নিয়ে আমাদের পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবশ্যই ভাবতে হবে।
আমাদের আইনজীবী বন্ধুরা যদি অগণতান্ত্রিক রাজনীতির কর্মী না হতেন, তবে তারাই প্রথম চলমান ‘বন্দুকযুদ্ধের’ প্রতিবাদ জানাতেন। মানবাধিকার বিষয়ে কর্মরত এনজিওগুলোর পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু তা তেমন জোরালো হচ্ছে না।
সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার এবং আইনের শাসন সংরক্ষণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সবাই যদি দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে দেশে বন্দুকযুদ্ধের খেলা পাল্টা-খেলাই চলবে। মনে রাখতে হবে মাদক ব্যবসা কোটি কোটি টাকার বিশাল ব্যবসা। মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে ‘জিরো টলারেন্সের’ মতো ধৈর্যহারা হলে চলবে না। বিশেষ শ্রেণীর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অগ্রসর হতে হবে।
জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয় যে, আমাদের মাদক ব্যবসায়ীরা সন্ত্রাসীদের মতো অস্ত্র শক্তিতে শক্তিশালী। বন্দুকযুদ্ধের বিষয়টি তাই বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। বিরাট দুশ্চিন্তার বিষয় তো বটেই। মাদক ব্যবসায়ীদের বিচারের সুব্যবস্থা করলে তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে একটি ধারণা সবাই নিতে পারত।
অনেকেরই ধারণা গডফাদাররা ঠিকই রক্ষা পাচ্ছে। এ ধরনের সন্দেহ-অবিশ্বাস তখন দূর হবে যখন প্রকাশ্য বিচারের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করা হবে। শাস্তি দেয়া হবে। মাদকবিরোধী অভিযানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য জনগণের সহযোগিতা অপরিহার্য। তারাও বন্দুকযুদ্ধের ভয়ে দূরে থাকা শ্রেয় মনে করছে। চরম ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়াও চরম হয়।
লেখক হওয়ার কোনো চিন্তাভাবনা না থাকা সত্ত্বেও অনেক লেখালেখি করেছি, যাতে সবাই মিলে শান্তি ও নিরাপদ ব্যবস্থায় থেকে নিজের ও দেশের মঙ্গল সাধনে অবদান রাখতে পারি। বক্তা না হয়েও বক্তব্য রেখেছি। বলেছি- দেশ জনগণের, তাই সরকারও হতে হবে জনগণের ভোটে।
আমাদের গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র এখনও কোনো না কোনোভাবে টিকে আছে। গুরুত্ব দিয়েছি, শাসনতন্ত্র মেনে চললেই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। জনগণ শাসনতন্ত্র দিয়েছে সুবিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য। প্রতিটি সংকট মুহূর্তে মতামত রেখেছি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে জাতিকে সংকটমুক্ত রাখতে। ভয়-ভীতি বা আতঙ্ক সৃষ্টি দেশ গঠনের পথ নয়। স্বাধীনতা রক্ষা তো নয়ই।
দেশে যার একটু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আছে তিনিই জনগণকে অসহায় মনে করেন। আইনের অপপ্রয়োগ, অন্যায়কারীদের দাপট এবং দুর্নীতির চাপে মানুষ দিশাহারা। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে চলছে প্রতারণা।
কত বললাম সাংবাদিকদের সাংবাদিক থাকতে এবং আইনজীবীদের আইনজীবী থাকতে। তারা বনে গেলেন অগণতান্ত্রিক দলীয় নেতাদের দলীয় কর্মী। গণতন্ত্র বা আইনের শাসনের শক্তি হিসেবে তারা তেমন বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারলেন না। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না।
‘বন্দুকযুদ্ধে’ আইন রক্ষকদের হাতে মৃত্যুর মহড়া দেখে এখন ভাবতে বাধ্য হচ্ছি আমাদের মতো লোকদের বিবেক-যুদ্ধে হার মেনেই চলতে হবে। বন্দুকের শক্তির ওপর নির্ভরশীল থেকে বন্দুকযুদ্ধের শেষ হবে না।
পরিবর্তনের শান্তিপূর্ণ রাজনীতি ও নেতৃত্ব দেখছি না। জনগণের জন্য শুধু একের পর এক সংকটই সৃষ্টি করা হচ্ছে। বেঁচে থাকার উপায় সহজ না করে যে কারও হাতে জীবন হারানো সহজ হয়েছে। সব সমস্যার একই সমাধান- পুলিশি তৎপরতা! সমস্যা যে রাজনৈতিক সুশাসনের তা কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না। বন্দুকযুদ্ধ জনজীবনে একাধিক ভয়াবহ সমস্যার জন্ম দেবে। আমরা আমাদের সময়ে ব্যর্থই থেকে গেলাম।
তবে এ সত্য সত্যই থাকবে যে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ছাড়া কারও জীবনে সুশাসনের নিরাপত্তা আসবে না। সুবিচারের নিরাপত্তা ছাড়া দেশে দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্যই চলবে।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন : আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
উৎসঃ যুগান্তর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন