|
ইকতেদার আহমেদ
|
|
রাষ্ট্র, সংবিধান ও গণতন্ত্র
19 June 2017, Monday
রাষ্ট্র্র গঠনে যে চারটি বিষয় অত্যাবশ্যক তা হলো ভূখ-, জনগণ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। এর অতিরিক্ত রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজন সরকার। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অনুসৃত হয় এমন সব রাষ্ট্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। মেয়াদান্তে পুনর্নির্বাচিত হলে তারা পুনঃ দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়। আমাদের বাংলাদেশ ভারতবর্ষের বাংলা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত একটি অঞ্চল। ভারতবর্ষ বিভাজন-পূর্ববর্তী বর্তমান বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলা সমন্বয়ে বাংলা গঠিত ছিল। ব্রিটিশ ও মোগল শাসনামলে বাংলা রাজ্যের মর্যাদা ভোগ করতো। সমগ্র বাংলা একটি একক অঞ্চল হিসেবে কখনো একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র ছিল না। ভারত বিভাজন-পরবর্তী বর্তমান বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। ভারত বিভাজন ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে হলেও পাকিস্তান হতে বাংলাদেশের সৃষ্টি জাতিগত জাতিসত্তার ভিত্তিতে। একদা ব্রিটিশ শাসকরা ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাকে বিভাজন করে পূর্ব বাংলা ও আসাম সমন্বয়ে একটি পৃথক প্রদেশ সৃষ্টি করেছিল। সে সময় পূর্ব বাংলা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল ছিল। বাংলা বিভাজনকে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার বর্ণ হিন্দুরা তাদের স্বার্থের জন্য হানিকর গণ্যে এর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে এবং তাদের আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশরা বিভাজনের ৫ বছরের মাথায় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বাংলা বিভাজন রদ করে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে ভারতবর্ষ বিভাজনের প্রশ্ন দেখা দিলে মুসলিম ও হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল সমন্বয়ে দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত হয় এবং দেশীয় রাজ্যসমূহকে এ দুটি রাষ্ট্রের যে কোনো একটিতে যোগ দেওয়ার অথবা স্বাধীনভাবে থাকার অধিকার দেওয়া হয়। সে সময় সমগ্র বাংলা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হিসেবে মুসলিম রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও বাংলার পূর্বাংশ মুসলিম রাষ্ট্রটির অন্তর্ভুক্ত হয়। ইতিহাসের নির্মম পরিহাস ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে যে বর্ণ হিন্দুদের অবস্থান ছিল বাংলা বিভাজনের বিপক্ষে সেই বর্ণ হিন্দুরাই ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলা বিভাজনের সপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। ব্রিটিশ কর্তৃক বাংলা বিভাজনের অব্যবহিত আগে বাংলা ও আসামে ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে গঠিত দল মুসলিম লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্বে ছিল।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির অভ্যুদয় পরবর্তী স্বল্পতম সময় এক বছরের মধ্যে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়। সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি, নাগরিক অধিকার, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের গঠন, সরকার পদ্ধতি, নির্বাচন অনুষ্ঠান, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নিয়োগ প্রভৃতি বিষয়ের উল্লেখ থাকে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের সংবিধানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা দ্বারা সরকার পরিচালনার বিধান ছিল। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ বিধানটি রহিত করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা দ্বারা সরকার পরিচালনার বিধান প্রবর্তিত হয় এবং এ বিধানটি সংবিধানে দ্বাদশ সংশোধনী আনয়ন পূর্ববর্তী ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর অবধি কার্যকর ছিল। দ্বাদশ সংশোধনী পরবর্তী সরকার পরিচালনায় পুনঃ সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয় যা অদ্যাবধি অব্যাহত আছে।
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সকল নির্বাহী ক্ষমতা যেমন রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত অনুরূপ সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সকল নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত। সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান হলেও প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি এ দুটি পদের নিয়োগ ব্যতীত তিনি তার অপর সকল কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী সমাধা করেন। উপরোক্ত দুটি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতির পক্ষে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। যে কোনো সংসদ নির্বাচন পরবর্তী যে সংসদ সদস্য সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন একমাত্র তাকেই রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিতে পারেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে এ দেশে দীর্ঘকাল যাবৎ আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারককে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়ে আসছে। আর তাই রাষ্ট্রপতির পক্ষে এ পদে এর ব্যত্যয়ে কোনো নিয়োগ দেওয়া হলে তাতে জনমনে নানাবিধ প্রশ্নের উদয় হতে পারে।
রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে ৫ বছর হলেও তিনি সর্বোচ্চ দু মেয়াদ পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। রাষ্ট্রপতির ন্যায় প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ নির্ধারিত করে না দেওয়া থাকলেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে যতদিন পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের আস্থাভাজন ততদিন পর্যন্ত অপর কারো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ নেই; তবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত দল সংসদ নির্বাচনে পরাভূত হলেও তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি পদে বহাল থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় কারা অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং অন্তর্ভুক্তি পরবর্তী কতদিন মন্ত্রী পদে আসীন থাকবেন এটি প্রধানমন্ত্রীর একক এখতিয়ার। রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয় বিধায় ১৯৯০ পরবর্তী আমাদের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলে সরকার ও দলীয় প্রধান এক ব্যক্তি হওয়ায় তার ইচ্ছা বা আকাক্সক্ষার বাইরে অপর কারো রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই।
আমাদের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী প্রবর্তন পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে যে বিধান করা হয়েছে তাতে উল্লেখ রয়েছে- মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যবস্থায় একটি সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এ নির্বাচনটি সংসদ বহাল থাকাবস্থায় অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রবর্তন পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ক যে বিধান ছিল তাতে উল্লেখ ছিল- মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ দেশে একটি সরকারের মেয়াদান্তে নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। এ ব্যবস্থাটির অধীন সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নবম সংসদ নির্বাচনটি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয় এবং এ সরকারটি সংবিধানের বিধানাবলি অনুসরণপূর্বক গঠন করা হয়নি।
আমাদের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী প্রবর্তন পরবর্তী ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান কার্যকর করা হয়। এর আগে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান কার্যকর করা হয়েছিল। আমাদের দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিরোধী দলে থাকাকালীন অবস্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ক অবস্থান দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। উভয় দলের এ অবস্থানটি যে সঠিক তা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনসমূহের ইতিহাস পর্যালোচনায় পাওয়া যায়। এ যাবৎকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যালোচনায় দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও দশম সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলই বিজয়ী হয়েছে। অপরদিকে দলীয় সরকারবহির্ভূত পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম যে চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এ চারটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অব্যবহিত আগে বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ দলের বিজয় ঘটেছে।
আমাদের ষষ্ঠ ও দশম সংসদ নির্বাচন একতরফা এবং সহিংস ও গোলযোগপূর্ণ ছিল। ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনটি আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী বর্জন করে। এ সংসদটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিল পাস পরবর্তী অবলুপ্ত করা হয়। দশম সংসদ নির্বাচনটি বিএনপি ও এর জোটভুক্ত দলসমূহ বর্জন করে। এ নির্বাচনটি অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ হতে যদিও বলা হয়েছিল নেহাত সাংবিধানিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা রক্ষার্থে এ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং অচিরেই সকল দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে, কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠান পরবর্তী দেখা গেল দলটি তাদের ব্যক্ত অবস্থান হতে বিচ্যুত হয়ে নির্ধারিত ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনীহ।
একটি সরকারের মেয়াদ অবসানান্তে কোন ধরনের সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ প্রশ্নে বড় দুটি দলের অবস্থান সরকার ও বিরোধী দলে থাকাবস্থায় ভিন্ন হওয়ায় এ বিষয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো না গেলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বিষয়ক প্রশ্নের অবসান হবে না। ইতিপূর্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে এটি অবসানের প্রয়াস নেওয়া হলেও তা যে সফল হয়েছিল বোধকরি এ কথাটি বলা যাবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে বিজিত দলের কাছে ফলাফল গ্রহণযোগ্য হয়নি এবং বিজিত দলের পক্ষ হতে পরাজয় স্বীকার করে গণতন্ত্রের চিরায়ত রীতি অনুযায়ী বিজয়ী দল ও এর প্রধানকে অভিনন্দন জানানো হয়নি।
আমাদের দেশে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও রাষ্ট্রপতির পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আকাক্সক্ষার বাইরে কাউকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। ইতিপূর্বের অভিজ্ঞতা হতে দেখা গেছে দলীয় সরকারের অধীন গঠিত প্রতিটি নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রে দলীয় সুবিধাভোগী ও মতাদর্শীদের একমাত্র বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসনকে এমনভাবে সাজানো হয় যাতে দলীয় অনুগতদের রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার পদে নিয়োগ দিয়ে নির্বাচনের ফল অনুকূলে নেওয়া সহজতর হয়। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন হলেও এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা নিরপেক্ষ অবস্থান হতে দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে উভয়ের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা যে মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয় তা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেশবাসীর প্রত্যক্ষ করার সুযোগ ঘটেছে।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনমতের প্রতিফলনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটপ্রাপ্ত দল একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য সরকার পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করে। এরূপ শাসনব্যবস্থায় যে কোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া কাম্য। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত না হলে সে সরকারের পক্ষে স্বচ্ছতার সঙ্গে জবাবদিহিমূলকভাবে সরকার পরিচালনা সম্ভব নয়। তা ছাড়া অস্বচ্ছ ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে যে কোনো দল বিজয়ী হলে দেখা যায় যাদের সহায়তায় অন্যায়ভাবে নির্বাচনে বিজয় হাসিল করা হয়েছে তাদের দ্বারা দুর্নীতিমুক্তভাবে প্রজাতন্ত্রের কাজ চালনা অনেকটা দুরূহ।
যে কোনো দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র পূর্বশর্ত। সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে সে নির্বাচন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে ইতিপূর্বে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচন কাক্সিক্ষতমাত্রায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হওয়ায় তার গ্রহণযোগ্যতা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের জš§ দিয়েছে। নির্বাচন বিষয়ে দীর্ঘকাল এ ধরনের পরিস্থিতি দেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য শুভ নয়। আর তাই কোন ধরনের সাংবিধানিক ব্যবস্থায় একটি সরকারের মেয়াদান্তে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সার্বিক বিবেচনায় সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যাবে এটি উদ্ভাবনের দায়িত্ব দেশের সকল রাজনৈতিক দলের হলেও ক্ষমতাসীন দলের জন্য অধিক। ক্ষমতাসীন দল এ দায়িত্বটি সঠিকভাবে পালন করতে পারলে এটি এ দেশে শুধু গণতন্ত্রের ভিতকেই চিরস্থায়ীভাবে মজবুত করবে না বরং গণতন্ত্রের সপক্ষের দল হিসেবে তাদের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে।
ইকতেদার আহমেদ : (সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক)
উৎসঃ আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন