প্রতিবারের মতো এবারও বেদনাদায়ক ১৫ আগস্ট চলে গেল। আমার জীবনের গতি নষ্ট হয়ে গেছে ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট। জীবন আর গতিময় হলো না। আর যে হবে তেমন মনে হয় না। তবু দয়াময় আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জানাই, তিনি যেভাবেই রাখুন ভালো রেখেছেন। তাই কোনো শোক-আফসোস নেই।
অন্যবারের ১৫ আগস্টের মতো এবারো ফোন বন্ধ, কোথাও যাইনি, কারো সঙ্গে কথা বলিনি। অনেক দিন আগে স্থির করেছিলাম ৩২-এর বাড়িতে এবার আসরের নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করব, তিনি যেন দেশের সব বালা-মসিবত দূর করেন। আমাদের যেন হেফাজত করেন। পরম প্রভু যেন জাতির পিতা এবং তার সঙ্গে নিহত সবাইকে বেহেশতবাসী করেন। আমাদের প্রতি প্রভু যেন দয়াশীল হন। জাতির পিতার কন্যা এবং তাদের স্বামী-সন্তানদের তার পবিত্র ছায়াতলে রাখেন। সেভাবেই দুপুরের দিকে স্ত্রীকে বলেছিলাম, ৪টায় ধানম-ি বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যাব। সেভাবে ৪টার ৫ মিনিট আগে রওনা হয়েছিলাম। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের মুখে পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে রেখেছিল। তাই ঘুরে যেতে হয়। ২৭-এর কাছেও উত্তর-দক্ষিণে বন্ধ। তাই পশ্চিমে ২৭ নম্বর হয়ে এগিয়েছিলাম। কিছু দূর গিয়ে বাঁয়ে মোড় নিতেই দেখি বিরাট জ্যাম। ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলাম। একসময় ডা. করিমের উপশম নার্সিং হোম ছিল। সত্যি সেটা আমাদের মতো বঙ্গবন্ধুপ্রেমীদের জন্য উপশমই ছিল। অসম্ভব সময় লাগছিল। এক মিনিটের রাস্তা ৩০ মিনিটেও শেষ হচ্ছিল না। অধৈর্য যাত্রী কেউ কেউ গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যাচ্ছিল। এখন মানুষ বড় বেশি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ধানম-ির মতো অভিজাত এলাকার মানুষের অত নিচু ভাষা ভাবাও যায় না। যানজটের কারণে প্রথম সরকার, তারপর প্রধানমন্ত্রী, এমনকি শেষে বঙ্গবন্ধুকেও খারাপ বলতে তাদের বাধেনি। কেন যে পিতা ধানম-ির মতো জায়গায় বাড়ি করেছিলেন। এমনও শুনলাম তিনি মরার আর জায়গা পাননি, এই ভদ্রলোকের জায়গায় কেন মরতে গেলেন, কথাগুলো শুনে মন বড় বেশি বিগড়ে যাচ্ছিল। ২০-২৫ বছর আগে হলে প্রতিবাদ করতাম, চোখ-মুখে জবাব দিতাম। কিন্তু কজনকে জবাব দিতাম। মনে হচ্ছিল ধানম-িতে জাতির পিতা বা সরকার খুব বেশি জনপ্রিয় না; সে যাই হোক, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যাচ্ছিলাম। আমার উপায় ছিল না, সময় যতই লাগুক আমাদের যেতেই হবে। শেষ পর্যন্ত পিতার বাড়ির কাছাকাছি গিয়েছিলাম। যারা রাস্তা বন্ধ করেছিল তারা কেউ কেউ ছেড়ে দিতে যাচ্ছিল আবার কেমন যেন দ্বিধা করছিল। ডান পাশে ছিল মেটাল ডিটেক্টর। ভাবলাম সেখান দিয়ে যেতে হবে। যেতে গিয়ে দেখি মহিলা আওয়ামী লীগের মিলাদ মাহফিল। আমাদের বাড়ির দিকে যেতে দেবে না। ভিজিটর নট অ্যালাও। প্রবল বৃষ্টি, পুলিশরা গাড়ি দাঁড়াতে দিচ্ছিল না। তাই আমরা স্বামী-স্ত্রী, কুশি, ঝুনুকে নিয়ে যাচ্ছিলাম আর গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছিল। আমার স্ত্রী এমনিতে তেমন হাঁটতে পারে না, শরীরও তেমন ভালো না। বন্ধুদের পরামর্শে হঠাৎ থাইরয়েডের অপারেশন করে শেষ হয়ে গেছে। একসময় মনে করতাম আমি যেহেতু ওর থেকে নয় বছরের বড় হয়তো আমিই আগে যাব। কিন্তু এখন মনে হয় আমি নই, ওই হয়তো আমাকে ফেলে চলে যাবে। এখন আর স্ত্রীর কষ্ট সহ্য হয় না। কাকভেজা হয়ে গাড়িতে বসতেই হাউমাউ করে কাঁদছিল আর বলছিল, ‘হায় আল্লাহ, আমার স্বামী যে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছে সেই ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যেতে পারবে না। আমি, আমার স্বামী, আমার ছেলেমেয়েরা যেতে পারবে না। আল্লাহ এই তোমার বিচার।’ স্ত্রীর কান্না থামাতে পারছিলাম না। ফেরার পথে আবার ২৭ নম্বর রোডের ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৩২ নম্বরে যাচ্ছিলেন। স্ত্রীর হা-হুতাশ বেড়েই চলেছিল, ‘তবে কি ডালিম-ফারুক-রশিদরা আজ বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যাবে। আমরা যেতে পারব না।’ মাথায় হাত বুলিয়ে বারবার বলছিলাম ধৈর্য ধরো। আল্লাহ ধৈর্যশীলকে পছন্দ করেন। কতজন বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর আমাকে খতম করতে চেয়েছে, কত আর্মি-পুলিশ আমাকে ধরতে-মারতে চেষ্টা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তানিরা আমার মাথার দাম লক্ষ টাকা ঘোষণা করেছে। দেখো আল্লাহর কী দয়া, সেই হানাদার সেনাপতির আত্মসমর্পণের কথা নিয়ে আমরা যারা বাঘের গুহায় গিয়েছিলাম সেখানে আমি ছাড়া কোনো বাঙালি ছিল না। ভেবে দেখো আল্লাহ কত দয়া করেছেন। তুমি অযথা দুঃখ করো না। সব দয়াময়ের হাতে ছেড়ে দাও। কিন্তু তবু সে স্বাভাবিক হতে পারছিল না। আমার মতো গরিবের ঘরের মেয়ে তো নয়। তার মা কুমুদিনী কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাদের বাড়ি গেছেন। হুজুর মওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা এমনকি বঙ্গবন্ধুও দু-তিনবার তার মা নার্গিস হামিদ কোরায়েশীর সঙ্গে কথা বলেছেন। কারণ নারী শিক্ষার একমাত্র কুমুদিনী মহিলা কলেজ ছাড়া আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। বারবার বলছিলাম, শান্ত হও। কুশির খারাপ লাগছে। ও জন্মের পর কোনো দিন তোমার চোখে পানি দেখেনি। কেন যেন সে কান্না থামাতে পারছিল না। যেমনটা একবার কুশির বেলায় হয়েছিল। কত হবে মনে হয় বছর হয়নি। স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার তখন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। বঙ্গভবনে দাওয়াত করেছিলেন। দীপ-কুঁড়ি-কুশি, কুশির মা গিয়েছিলাম। সেই হয়তো সবাই একসঙ্গে ছিলাম। সেদিন কেন যেন হঠাৎ কুশি কেঁদে উঠেছিল। আমরা মনে করেছিলাম একটু বাইরে গেলেই ঠিক হয়ে যাবে। কার কোল থেকে যেন ফরিদ নিয়ে গেল। কান্না থামে না। তখন দীপের ২০, কুঁড়ির ১৪ বছর বয়স। বঙ্গভবন গরম হয়ে গেল। কত কর্নেল-ব্রিগেডিয়ার, কত মহিলা-পুরুষ কত চেষ্টাÑ কেউ কিছু করতে পারল না। ওর কান্না মাঝে মাঝেই আমাদের কানে আসছিল আর কলিজার বোঁটা ছিঁড়ে যেতে চাচ্ছিল। কান্না শুরুর ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। গাড়িতে বসে মায়ের বুকের সঙ্গে মিশেও কান্না থামাতে পারছিল না। কারণ কুশি কখনো কাঁদতে জানত না, কোনো দিন কাঁদেনি। যেহেতু কাঁদতে শেখেনি, সেহেতু কান্না থামাতেও শেখেনি। মায়ের বুকে মুখ লুকিয়েও সারা রাস্তায় ফোঁস ফোঁস করছিল। প্রায় তেমনি হয়েছিল ১৫ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৪টা-পৌনে ৫টায় আমার স্ত্রীর। আমার মনটাও খারাপ ছিল। কিন্তু স্ত্রীর মতো প্রকাশ করতে পারিনি। কার কাছে কষ্টের কথা প্রকাশ করব? বাবা নেই, মা নেই ছায়া দেওয়ার কেউ নেই। বারান্দায় যেখানে বসে পত্রিকা পড়ি, লেখালেখি করি সেখানে গেলেই কেন যেন বেশ আনন্দ পাই। পাশেই দুটি ডাবগাছ। ’৭৩ সালে মা লাগিয়েছিলেন। গাছের পাতা যখন বাতাসে ঝিরঝির-মিরমির করে, আমার ওপর নাড়াচাড়া করে, তখন মনে হয় যেন মায়ের শাড়ির আঁচল দোলে। মনে হয় ছেঁড়া পাতাগুলো যেন মায়ের হাতের আঙুল। পরম যতেœ আমার মাথায় বুলিয়ে দিচ্ছে। টেবিলে বসতে যাব। ফরিদ ছুটে এসে বলল, ‘দাদা, দাদা, গণভবন থেকে খুঁজছে। শেখর সাহেব আপনাকে ফোনে না পেয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীককে বলেছেন। তিনি আমাকে না পেয়ে তারেককে বলেছেন। আপনার ফোন বন্ধ থাকায় আপনাকে বলতে পারেনি। শেখর সাহেবকে ফোন দেব?’ একবার ভাবলাম, কী হবে শেখরকে ফোন দিয়ে? বেঁচে থাকতেই ১৫ আগস্টে ৩২-এর বাড়িতে আমার, আমার পরিবারের প্রবেশাধিকার নেই। তার পরও বলেছিলাম, ঠিক আছে ফোন করো। ফোন করতেই শেখর বলে, ‘চাচা, আপনি ৩২ নম্বরে এসেছিলেন। ফিরে গেছেন। আবার কি আসতে পারেন। আসুন। নেত্রী খুব বিরক্ত হয়েছেন। আসুন না।’
বেগম কাপড় বদলাতে যাচ্ছিল। তার ঘরে গিয়ে যখন বললাম, চলো না, আবার ৩২ হয়ে একবার ঘুরে আসি। প্রথম বলল, ‘এর পরও যাব? না, যাব না।’ বললাম দেখো, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু যে সিঁড়িতে পড়েছিলেন, সেই সিঁড়িতে আসরের নামাজ পড়তে চেয়েছিলাম। এখনো আসর পেরোয়নি। চলো না যাই। কার ওপর রাগ করবে? বাবা নেই, মা নেই, বঙ্গবন্ধু নেই। মায়ের মতো বোন অনেকের কাছে শুনি তিনিও বৈরী। কে তোমার কষ্ট বুঝবে? ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যেতে পারি না, একি আমারও কম কষ্ট। তার পরও আপা যখন যেতে বলেছেন রেহানাকেও হয়তো পাব। চলো যাই। আমার স্ত্রী খুবই সাদামাটা মানুষ। তার মধ্যে কোনো প্যাঁচগোচ নেই। বলল, ‘ঠিক আছে চলো। আমরা দুজন যাই।’ ‘না, ছেলেমেয়ে নিয়ে যাব।’ কুঁড়ি লন্ডনে। দীপ-কুশি দুজন আছে। ওদের নিয়ে যাব। ছোট ভাই আজাদের মেয়ে সপ্তর্ষি, আমি ডাকি ঝুনঝুন। আমাদের পরিবারে এক প্রতিবন্ধী। ওকেও সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে ছিলাম। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে দেখি পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে আছে। ফোন করলাম শেখরকে, ভাতিজা, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আড়ংয়ের সামনে আছি। রাস্তা বন্ধ। সে বলল, ‘চাচা ২-৪ মিনিট অপেক্ষা করুন। আমি দেখছি।’ ৫-৭ মিনিটের মধ্যেই আমাদের গাড়ি পার করে দিল। সামনে বিরাট বিরাট ব্যারিকেড। যেতে যেতে দেখলাম সব সরে গেল। আমরা রাসেল স্কয়ারের উল্টো পথে গিয়েছিলাম। কাঁটাতারের বিরাট ব্যারিকেড। পুলিশরা এদিক-সেদিক মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছিল। ৪-৫ মিনিট পর দেখলাম সব সরে গেল। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির রাস্তায় ঢুকতেই পুলিশ-মিলিটারি দাঁড়িয়ে। সেখানেও লাগল ২-৩ মিনিট। এখানে সেখানে আলাপ করে ছুটে এলেন কয়েকজন, ‘স্যার, এখান থেকে গাড়ি যাবে না। নেমে যেতে হবে।’ কয়েক বছর কাউকে কিছু বলি না। গাড়ি থেকে নেমে চলতে শুরু করলাম। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গেট খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কাপড় দিয়ে সব ঢেকে ফেলেছে। অন্যদিন পয়সা দিয়ে যে গেট দিয়ে লোকজন ঢোকে, সেই গেট আমার চোখে পড়ল। একজন মিলিটারি দাঁড়িয়ে ছিল। এদিকে যাব বলতেই সে সরে গেল। আমরা ঢুকলাম। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির পাশে মহিলাদের মিলাদ হচ্ছিল। একেবারে গা-ঘেঁষে দু-তিন গজের মধ্যে দিয়ে পশ্চিম দিকে গিয়ে পেছনে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু সেখানে প্রধানমন্ত্রী আছেন, ছোট বোন রেহানা আছে কল্পনা করিনি, চোখেও পড়েনি। পেছনে যেতে সবাই ছুটে এলো। সেখানে শেখরও ছিল, ‘চাচা, প্রাইম মিনিস্টার আপনাকে ডাকছেন।’ আমি চমকে উঠলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওখানে! পরিবারসহ আমি যেতেই তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে অন্য সবাই। কত আর হবে, ৫০-৬০ জন। গেটের বাইরে রাস্তার ওপারে মহিলা সমিতির আর সবাই। আমরা সবাই তাকে সালাম করলাম। সালামের সময় তিনি আমার দুহাত ধরে টেনে তুললেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘শরীর কেমন?’ কুশিকে বুকে চেপে অনেক আদর করলেন। বললেন, ‘তুমি মস্তবড় কাজ করেছ। এমন কাজ বেশি মানুষ করতে পারে না। আল্লাহ তোমাকে দেখবেন। এর ফল দেবেন।’ কত কথা শুনি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। কিন্তু কুশিকে নিয়ে তার ওই কথায় বুক ভরে গিয়েছিল। ওয়াজেদ দুলাভাইয়ের নাতিন মিলি না লিলি পেছনে ছিল। বলতে চাচ্ছিল, ‘ভাই এই সেই?’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মায়ের মতো বোন পেছন ফিরে তাকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘ওভাবে বলে না। বজ্রের মনে লাগে। মামণিও বড় হচ্ছে। সে যদি বোঝে।’ সব স্তব্দ হয়ে গেল। গা-ঘেঁষে ছিল রেহানা। সে তার ভাবিকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল যেমনটা মায়ের পেটের বোনেরা সাধারণত ধরে। রেহানা উঁচু-লম্বায় আমার বউয়ের সমান। ওর মাথায় চার-পাঁচবার হাত বুলিয়েছি। ও বলছিল, ‘ভাই, দোয়া করবেন।’ দোয়া তো করিই। কারো মাথায় হাত দিয়ে বদদোয়া করলে আকাশ ভেঙে পড়বে। আল্লাহ নারাজ হবেন। কী করে বদদোয়া করব? এখন কুশিই আমার প্রাণ। রেহানা না হলেও ১০ বার কুশিকে বলল, ‘বাবাকে খুব শাসন করবে। তুমি তো মা।’ আসলে এমনিই কুশির শাসনে টেকা যায় না। কোনো ভুল করা বা বলা যায় না। পান থেকে চুন খসলে আর রক্ষা নেই। এখন আমাদের বাড়ির বারো আনা আনন্দই কুশি। প্রধানমন্ত্রী বললেনÑ
Ñ শুনলাম, তুমি নাকি সিঁড়ির কাছে নামাজ পড়তে চেয়েছিলে? কোন নামাজ পড়বে?
Ñ কেন আসরের।
Ñ ২০-২৫ মিনিট না পেরিয়ে গেছে? কী আর করা। আমি থাকলে সন্ধ্যা পর্যন্ত নামাজ পড়তে পারবে না। তাই আমি যাই। কেন-কীভাবে যেন বলেছিলাম,
Ñ কুঁড়ি ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন,
Ñ কাকে বলেছিলে? বললাম,
- যাদের বললে হয়।
Ñ নাম বলো। বললাম,
Ñ আজ থাক। ১৫ আগস্ট কারো নাম বলতে চাই না। বলব অন্য কোনো দিন।
তিনি চলে গেলেন। ৫-৭ মিনিট পর সিঁড়ির কাছে নামাজে দাঁড়ালাম। তখনো এদিক-ওদিক কথা হচ্ছিল। মনে হলো যত কথা যেন সিঁড়ির কাছে। দ্বিতীয় সেজদার সময় মনে হলো আওয়াজ নেই। কোরআন-হাদিসে পড়েছি, আল্লাহ রাব্বুল আলআমিন দয়াময় প্রভু আসরের নামাজের পর দোয়া কবুল করেন। নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি, হে আল্লাহ পরম প্রভু আপনি আমার দেশকে হেফাজত করুন। যারা দেশ পরিচালনা করছে তাদের সুমতি দিন। এই দিনে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের যারা নিহত হয়েছেন, তাদের শহিদি দরজা দান করুন, বেহেশতবাসী করুনÑ আমিন।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : রাজনীতিক ও কলাম লেখক
উৎসঃ আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন