প্রবাসের দুঃসহ জীবন নিয়ে লিখতে গিয়ে এ দেশের শ্রেষ্ঠতম কথাসাহিত্যিক পিতৃতুল্য শওকত ওসমানের দুর্দিনের কথা লিখেছিলাম। তার হাতে দু-তিনটি ইনভেলপ তুলে দিলে তিনি মনে করেছিলেন কোনো জরুরি কাগজ।
ইনভেলপ খুলে টাকা দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন। বলেছিলেন, এ তো দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। আমার আজ কয়েক শ টাকার খুবই দরকার। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, তিনি কখন কাকে কোথা থেকে সাহায্য করেন কেউ জানি না। বেশ কয়েকজন জিজ্ঞাসা করেছেন, সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে আমাদের এত সম্পর্ক! শুধু তার সঙ্গে কেন, অনেকের সঙ্গেই গভীর সম্পর্ক ছিল। কারণ তখন সততা-আন্তরিকতাই ছিল প্রধান শক্তি। রং মেখে সঙ সাজার সুযোগ তেমন ছিল না। দলীয় নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি, খুনাখুনি করত না। তখন সক্রিয় নেতাদের প্রায় পুরো পরিবার দল করত। কোনো নেতার বাড়ি গেলে কর্মীদের গেট থেকে ফিরতে হতো না। আর গেট থেকে ফিরবে কী, অনেকের বাড়ির কোনো গেটই ছিল না। দরজায় টোকা দিলেই দুয়ার খুলে যেত, অনেকের আবার দুয়ার খোলাই থাকত। নেতা না থাকলেও বাড়ির লোকজন জিজ্ঞাসা করতেন, কোথা থেকে এসেছেন, কখন খেয়েছেন, আগে খাবার খেয়ে নিন। আমি নিজেই কতবার ঢাকা-মানিকগঞ্জ-জামালপুর-নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ-বিক্রমপুর-জয়দেবপুর বহুবার বহু নেতার বাড়ি খেয়েছি। জামালপুরের অ্যাডভোকেট আবদুল হাকিম, অ্যাডভোকেট সোবান, ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূইয়া, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, হাতেম আলী তালুকদার, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, ফুলপুরের শামসুল হক, দেওয়ান ফরিদ গাজী, সামাদ আজাদ, কিশোরগঞ্জের আসাদুজ্জামান, পাবনার ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ভাই, বগা ভাই, সিরাজগঞ্জের মোতাহার ভাই, কামারখন্দের আনোয়ার হোসেন রতু, এমনকি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বাবা পাকিস্তানের শিল্পমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ— এ রকম আরও অনেকের বাড়ি গেলে তাদের প্রথম কথাই ছিল হাতমুখ ধুয়ে খাবার খেয়ে নিন অথবা খেয়ে নাও। একবার ঠেঙ্গারবান্দে শামসুল হকের বাড়ি গিয়েছিলাম আমরা ছয়-সাত জন অচেনা কর্মী। শামসুল হক বাড়ি ছিলেন না। তার পরও সে কী যত্ন। কুমিল্লার জহুরুল কাইয়ুম, ’৭০-এ ছাত্রকর্মী হিসেবে তার বাড়ি গিয়েছিলাম। তাকে পাইনি, কিন্তু বাড়ির লোকজন পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন নিজের বাড়ি এসেছি। আজ সেসব কোথায় গেল। কেউ কারও খবর রাখে না, জিজ্ঞাসা করে না। যশোরের নেতা রওশন আলী একজন সাদামাটা মানুষ। বাড়ির লোকজন আরও সাদামাটা। মাগুরার মন্ত্রী সোহরাব হোসেন আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিএস বা এপিএস শেখরের বাবা আসাদুজ্জামান অসম্ভব জনপ্রিয় নেতা। আমাদের মান্নান ভাই, তার বাড়ি গেলে খাবার ছাড়া কথা ছিল না। আর এখন একজন আরেকজনকে মারতে পারলে বাঁচে। খাবারে বিষ মেশাতেও কেউ দ্বিধা করবে না। স্বাধীনতার পর কর্নেল তাহের এবং হাসানুল হক ইনুর গণবাহিনী ৩৫-৪০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আসার পর আওয়ামী লীগের যত কর্মী নিহত হয়েছে তার ৯০ ভাগ প্রতিপক্ষের হাতে নয়, দলীয়দের হাতে হয়েছে। এ রকম অবস্থায় সৈয়দ আশরাফের স্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যুতে দুই কথা লিখতে গিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেছিলাম। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, এখন আর কেউ কাউকে সহজভাবে স্বীকার করে না। আমি তা করতে গিয়ে নাকি ভালো কিছু করেছি। তা বেশ। পাঠকের উৎসাহের জন্যই যে কোনো লেখক চেষ্টা করেন। পাঠক যা ভাবেন তার সামান্যও যদি কোনো লেখকের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে সেটাই লেখার সার্থকতা। আমরা লতায় পাতায় ছায়ায় মায়ায় জড়িয়ে ছিলাম। স্বামী-স্ত্রী মিলে একটি মানবজীবন। অসময়ে তাদের একজন চলে গেলে রসুনের কোয়ার মতো বাঁধন আগলা হয়ে যায়। কোয়ায় বাঁধা রসুন যেমন সাবলীল তেমনি বাঁধন ছুটে গেলে সারা দিন কুশিকাঁটায় বোনা সুতার মতো এক নিমেষে খুলে যায়। সেজন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশতবাসী করেন এবং আশরাফকে এই শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি দেন।
বর্তমানে দেশের জন্য সবচেয়ে জ্বলন্ত সমস্যা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সে নির্বাচনের ওপর যেমন দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুস্থিতি নির্ভর, ঠিক তেমনি অনেকের নেতৃত্বও নির্ভর। এর মধ্যে রোহিঙ্গা সমস্যা একটি অতিরিক্ত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে সময় থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা আসা শুরু হয়েছে সে সময় বাংলাদেশ তাদের গ্রহণ না করলে মিয়ানমার খুন করে যে নিন্দার শিকার হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি নিন্দা বাংলাদেশ পেত আশ্রয় না দিয়ে, মানবতাহীন আচরণ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঠিক সময় সীমান্ত খুলে দিয়ে নিরাপদ আশ্রয় দিয়ে যথার্থ দেশনায়কের ভূমিকা পালন করেছেন। শুধু দেশনায়ক নয়, বিশ্বদরবারে মানবতাবাদী নেতার এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এই কয়েক মাসের সামাজিক-রাজনৈতিক-কূটনৈতিক তত্পরতায় দেশে-বিদেশে সরকার এবং আওয়ামী লীগ অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনৈতিক যে সফলতা অর্জন করার কথা ছিল তা হয়নি। দেশের অভ্যন্তরে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, সে ক্ষেত্রে সরকার এবং আওয়ামী লীগ পুরোপুরি না হলেও আংশিক ব্যর্থ হয়েছে। এখনো রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশকারী বলা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ একটা অপরাধ যা বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিনের ক্ষেত্রে বলা হয়। রোহিঙ্গারা এখন অনুপ্রবেশকারী নয়, তারা আশ্রিত।
’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে শেখ মুজিব আগরতলা মামলা থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রধান জাতীয় নেতা ছিলেন না। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন। তার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন আরও ২-৪-১০ জন নেতার মতো একজন। ’৭০-এর নির্বাচন তাকে একমাত্র প্রধান জাতীয় নেতায় পরিণত করে। ঠিক তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার পিতার মতো রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রধান জাতীয় নেতা হতে পারতেন। কেউ তাকে ফেরাতে পারত না। বাংলাদেশের জনমত রোহিঙ্গাদের প্রতি এত সহানুভূতিশীল ছিল যে, যিনি এটাকে নিয়ে সঠিক নেতৃত্ব দিতেন দেশের সবাইকে ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক তার পেছনে দাঁড়াতে হতো। একাই সব খেতে গিয়ে সরকার এবং আওয়ামী লীগ জিনিসটাকে নষ্ট করে ফেলেছে। ছেলেবেলায় শুনেছি, ‘চুরির চুড়ি আবার সিনা জুড়ি’। ‘চোরের মায়ের বড় গলা’। যেখানে সারা বিশ্ব মিয়ানমার কর্মকাণ্ডের নিন্দায় সোচ্চার সেখানে মিয়ানমার বাংলাদেশকে অভিযুক্ত করছে, বাংলাদেশ তাদের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের ফিরতে দিচ্ছে না। তার আগে বলছে, যাচাই-বাছাই করে প্রতিদিন ৩০০ জন ফেরত নেবে। ৩০০ জন করে নিলে রাত-দিন কাজ করলেও ওদের নিতে দেড় যুগ লাগবে। সেই সময় আবার কখন নির্যাতিত হয়ে ১০-২০ লাখ রোহিঙ্গা চলে আসে। যদিও অনেকে গা করেনি, কিন্তু কথাটা যে কত মারাত্মক তা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশ বিদেশি সাহায্য পেয়ে লাভবান হচ্ছে বলে তারা রোহিঙ্গা সমস্যা জিইয়ে রাখছে। এর চেয়ে মারাত্মক অসত্য অভিযোগ আর কী হতে পারে? কিন্তু আমরা এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে পারিনি। মানবতার ধারক-বাহক হিসেবে যেখানে আমরা সারা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিতে পারতাম সেখানে মিয়ানমারের অভিযোগে আমরা অভিযুক্ত হয়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছি। সবই পরিচালনার অভাব।
বলছিলাম, একটি নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া আমাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন পরিচালনার প্রধান নিয়ামক নির্বাচন কমিশন। আগের নির্বাচন কমিশনের মতো অথর্ব কমিশন জগৎ দেখেনি। বর্তমান কমিশন সম্পর্কে এখনো তেমন কিছু বলা যায় না। ১৬ অক্টোবর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের পূর্বনির্ধারিত সংলাপ ছিল। তার আগের দিন বিএনপির সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা বলেছিলেন। আমরা সংলাপের একপর্যায়ে কমিশনে ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে, জিয়াউর রহমান সম্পর্কে মন্তব্য পুরো কমিশনের নাকি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিজের? সবার সামনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, মন্তব্যটা কমিশনের নয়, মন্তব্যটা তার নিজের। তার মন্তব্য আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি, তাই সংলাপ বর্জন করেছিলাম। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলে কেউ বহুদলীয় গণতন্ত্র খণ্ডন করে একদলীয় করেছিলেন অথবা কেউ গণতন্ত্র খুন করেছিলেন। তাহলে সে কে? তবে কি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্র হত্যা করেছেন— এমনটাই কি তিনি বলতে চান? যদিও আওয়ামী লীগ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য নির্বাচন কমিশনের এটা এক কৌশল। ইতিহাস বিকৃতি, সত্যকে মিথ্যা সে আবার কৌশল? অপকৌশলও তো নয়। কেউ সরকারি উচ্চপদে চাকরি করে নিজেকে অনেক বড় পণ্ডিত ভাবতে পারেন। সব কজন নির্বাচন কমিশনারকে দেখে এবং তাদের সম্পর্কে যতটুকু জানি তাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়া আর কাউকে খারাপ লাগেনি। বরং অনেকের অতীত বেশ চমৎকার। অতীতের ওপর ভরসা করে তারা আরও সুন্দর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবেন এটা ভাবা কোনো দোষের কথা নয়। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বলেছেন, ’৭৫-৭৭ দেশে গণতন্ত্র ছিল না। সত্য কথা, ’৭৫-৭৭-এ গণতন্ত্র না থাকলেও জিয়াউর রহমান ছিলেন, তার কর্তৃত্ব ছিল। যার দ্বারাই হোক তিনিই দেশে প্রথম সামরিক শাসন জারি করিয়েছেন। আর ’৭৫-৭৭-এ জিয়াউর রহমানই নামে-বেনামে রাষ্ট্র চালিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট। সিপাহি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছেন ৭ নভেম্বর। বর্তমান সরকারের শরিক হাসানুল হক ইনুর পীর কর্নেল তাহের জিয়াউর রহমানকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করার প্রধান সেনাপতি ছিলেন। তাই তার সময়ও গণতন্ত্র ছিল না। তিনি সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় শাসন ক্ষমতায় এসেছিলেন। এখন জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে আনলেও সেই অবৈধতা আর বৈধ হবে না। বিষয়গুলো ভেবে দেখা দরকার।
জাতীয় এক মহাক্রান্তিলগ্নে যখন একের পর এক পাটের গুদাম জ্বলছিল, অফিস-আদালত পুড়ছিল, প্রকাশ্য ঈদের মাঠে সংসদ সদস্যদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছিল তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ ও মানুষের কল্যাণে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। সেজন্য সর্বদলীয় এক জাতীয় মহাঐক্যের প্রয়াস নিয়েছিলেন। সেই প্রয়াসকে খাটো করে দেখার জন্য বলা হলো একদলীয় শাসন কায়েম করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন। অথচ সর্বদলীয় এক মহাজাতীয় ঐক্যের প্রয়াস ছিল সেটা। ঠিক একই জিনিস ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের কাঠামোয় করেছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। ’৬২ সালে বিধিনিষেধ তুলে নিলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট নামে এক অদলীয় জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছিলেন। যদিও তার আকস্মিক মৃত্যু সেই প্রয়াস সফল হতে দেয়নি। তবু তিনি সবার কাছে গণতন্ত্রের মানসপুত্র। আর যিনি সারা জীবন নিজেকে জ্বালিয়ে জাতির ইন্ধন শক্তিতে পরিণত হয়ে একটি দেশকে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, সেই দেশের মানুষের জীবন সম্পদ সম্মান রক্ষায় দ্বিতীয় বিপ্লবের পদক্ষেপ নিয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে গণতন্ত্র হত্যা নামে স্বার্থলোলুপদের পক্ষে বলা মানায়, প্রকৃত গণতন্ত্রের ধ্বজাধারীদের মানায় না। মনে রাখতে হবে, সিআইএর ষড়যন্ত্রে চিলির সালভাদোর আইয়েন্দে যখন নিহত হন, তখন বলেছিলেন, ‘আজ পৃথিবী দুই ভাগে বিভক্ত। এক শোষক আর এক শোষিত। আমি শোষিতের দলে। আমি শোষকের গণতন্ত্র চাই না, আমি শোষিতের গণতন্ত্র চাই। ’ তিনি বলেছিলেন, ‘চিলির আইয়েন্দের পরিণতিও যদি হয় তবু আমি শোষিতের পক্ষে থাকব। ’ এই ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, এই ছিলেন জাতির পিতা। তার মতো পরিষ্কার স্বচ্ছ ধারণার নেতা এ বিশ্বে খুব বেশি আসেনি। আগরতলা চকিরতলা দুটাই তলা, কিন্তু বিষয়টা এক নয়। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজ একদিকে কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়া কিছু স্বার্থপর ধনিক আর অন্যদিকে রাত-দিন খেটে খাওয়া কোটি কোটি বঞ্চিত মানুষের মিছিল আমাদের দেখতে হতো না। মাঝে-সাঝে বড় বিস্মিত হই, কদিন আগে পাকিস্তান জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে ঘোষণা করেছে বা স্বীকৃতি দিয়েছে। এতে একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির খুশি হওয়ার কথা ছিল না। শুনছি, বিএনপি নাকি দারুণ খুশি। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে স্বার্থান্ধদের নানা সমালোচনা থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে নিয়ে আমার মনে কোনো প্রশ্ন ছিল না। বঙ্গবন্ধুর নামে বাংলাদেশের পক্ষে তার স্বাধীনতা ঘোষণা সে সময় জাতিকে উজ্জীবিত করত। এটা ছিল আমাদের অহংকার। আজ যদি পাকিস্তান তাকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে তাহলে তো বিশুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জিয়াউর রহমানের চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করা হয়। তার মুক্তিযোদ্ধার গৌরব ম্লান হয়ে যায়। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জিয়াউর রহমানের এতকাল যে ভাবমূর্তি ছিল তা বিনষ্ট হয়ে যায়। এখন কাকে কী বোঝাব, কারও কথা কেউ বোঝে না, বুঝতে চায় না। সবাই স্বার্থান্ধের মতো ছুটছে তো ছুটছে। লেখক : রাজনীতিক।
উৎসঃ বিডি প্রতিদিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন