আমাদের জীবনেই ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ায় আমি খুবই গর্বিত। নাগরিক কমিটির নামে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বীকৃতি মহাসমাবেশে কে কী বলল সেদিকে না ভেবে হাজির হয়েছিলাম।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে হাজির হয়ে একদিকে যেমন ভালো লেগেছে, অন্যদিকে কিছুটা বিরক্তিবোধও যে করিনি, তা নয়। নাগরিক কমিটির নামে সমাবেশটি হলেও সব ব্যবস্থাপনাই করেছে আওয়ামী লীগ এবং সরকার। তাই আরেকটু যত্নবান হলে ’৭১-এর মতো সারা দেশকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্র করা যেত। একখানা চিঠি দিয়ে সবকিছু হয় না। তাদের উপস্থিতি যে সত্যি সত্যি কাম্য সেজন্য আন্তরিকতা ও তাগিদ থাকতে হয়। ২৪ নভেম্বর শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের বাগদান অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। না গিয়ে উপায় ছিল না। শামীম ওসমানের বড় ভাই নাসিম ওসমানের বিয়ের দিন বঙ্গবন্ধু নিহত হন। বাসর থেকে নাসিম বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ সংগ্রামে আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। আজমিরী জন্মেছে প্রবাসে। ভীষণ অনাদরে বড় হয়েছে। তাই ওর সম্পর্কে যখন অভিযোগ শুনি কেমন যেন লাগে। আজমিরীর মা পারভীন কী যে কষ্ট করেছে খুব কম নারী তার স্বামীর জন্য অমন কষ্ট করে। সেই নাসিম আওয়ামী লীগ করতে পারেনি বা করেনি। একসময় জাতীয় পার্টি করত। আল্লাহ তাকে হঠাৎই নিয়ে গেছেন। শামীমের বাপ-চাচারা সব সময় আমাদের আদরযত্ন, সম্মান করতেন। শামীমের মধ্যেও প্রচুর আদব-কায়দা আছে। সেলিমের নির্বাচনের সময় নারায়ণগঞ্জের এক মিটিংয়ে গিয়ে দেখি আমাদের নির্ধারিত সভাস্থলে শামীমের লোকজন নাচানাচি করছে। শামীমকে ফোন করেছিলাম। মুহূর্তে সব নাচানাচি বন্ধ। নির্বাচনের সময় নাসিমের স্ত্রী পারভীন ফোন করেছিল, ‘দাদা! আমাদের কেউ নেই। চারদিকে ষড়যন্ত্র। তিন হাজার র্যাব এসেছে। তারাও শামীমকে নানাভাবে নাজেহালের চেষ্টা করেছে। ’ কথাগুলো উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছিল না। কমবেশি সত্যতাও ছিল। পরিবারটার প্রতি সব সময় আমার একটা শ্রদ্ধা-ভালোবাসা রয়েছে। কারও কারও কর্মকাণ্ডে সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভালোবাসা নিয়েই পরপারে যেতে চাই।
অনেকে হয়তো ভুলে গেছে, কেউ কেউ ভোলেনি। ২০১৫ সালে ৩০৮ দিন ঘরের বাইরে অবস্থানে ছিলাম। নিজের ঘর তো দূরের কথা অন্যের ঘরেও থাকিনি। তাঁবু টানিয়ে মাঠে থেকেছি। ওর মধ্যে ঈদের সময় সখীপুরের বাড়িতে চার বা পাঁচ দিন, ঢাকায় ছোট বোন শাহানার বাসায় তিন দিন। বাকি দিন ঝড়-বৃষ্টি-তুফান যা কিছুই হয়েছে হাটে-মাঠে-ঘাটে-স্কুল-কলেজ-খেলার মাঠে তাঁবু খাটিয়ে কাটিয়েছি। এমন এক পর্যায়ে বন্দরের ত্রিবেণীতে এক রাত ছিলাম। ত্রিবেণী সেতুর পাশে একটা জায়গা আমার পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু সেখানে শামীম ওসমানের বাবার নামে একটি হাইস্কুল আছে। হাইস্কুলের লোকজন অনেক বলেকয়ে স্কুল আঙিনায় নিয়ে গিয়েছিল। সে সময় নাসিমের স্ত্রী পারভীনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। বার বার বলছিল, ‘দাদা! আমাদের বাড়ি আসবেন। ’ আমারও যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। মাগরিবের নামাজ তাদের অফিসে পড়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেছিল। আমি বারান্দাতেই নামাজ আদায় করেছিলাম। একটু পর রং বদলে গেল। যারা পায়ে ফুলচন্দন দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তারা বললেন, ‘সেলিম সাহেব বলেছেন, এখানে থাকা যাবে না। স্কুলমাঠে থাকলে তিনি তার ব্যক্তিগত সব অনুদান বন্ধ করে দেবেন। ’ আমরা ত্রিবেণীর একটা মার্কেটের সামনে খালি জায়গায় সে রাত বড় আনন্দে কাটিয়ে ছিলাম। হিন্দু মুসলমান প্রায় ৪০ বাড়ি থেকে খাবার এসেছিল। স্কুল আঙিনায় থাকলে তারা নাকি সেখানে যেত না। সেলিম ওসমানের কর্মকাণ্ডে অবশ্যই কিছুটা ব্যথিত হয়েছিলাম। আমি জানি, অতিরিক্ত টাকা-পয়সা হলে গরিব বাপ-মার প্রতিও সন্তানের তেমন আকর্ষণ থাকে না। তাই সেলিমের কর্মকাণ্ডে সমগ্র জোহা পরিবারের কর্মকাণ্ড হিসেবে কখনো বিবেচনা করিনি।
গত ১৯ নভেম্বর হঠাৎই শামীমের ফোন, ‘দাদা! আমার ছেলের বাগদান, আপনাকে আসতে হবে। ’ আমি আমতা আমতা করছিলাম। কারণ সেদিন কোথায় যেন আমার কাজ ছিল। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। এরপর প্রতিদিন না হলেও ১০ বার মেসেজ পাঠিয়েছে, নিজে ফোন করেছে, ‘বাবা নেই, বড় ভাই নেই, আপনি আমাদের মুরব্বি। অবশ্যই আসবেন। আপনি না এলে আমার সন্তানের মঙ্গল হবে না। ’ তার কথা ফেলতে পারিনি। ছেলেমেয়েকে দোয়া করতে গিয়েছিলাম। তারা ভীষণ যত্ন করেছে। তাই বলছিলাম, ১৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমার মনে হয় না, সারা দেশের নানা মত-পথের মানুষকে একত্র করতে খুব একটা কষ্ট হতো। কারণ বিষয়টা কারও ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত ছিল না। ৭ মার্চের ভাষণ একটা জাতীয় সম্পদ। আমার তো মনে হয় বেগম খালেদা জিয়াও না এসে পারতেন না। আর যদি না আসতেন দেশবাসীর কাছে অবশ্য অবশ্যই জবাবদিহি করতে হতো। ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে নাগরিক কমিটির অনুষ্ঠানটি বেশ সুশৃঙ্খল ছিল। কিন্তু তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। প্রধান আয়োজক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান একজন নিবেদিত ভালো মানুষ, অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম একজন সাবলীল চরিত্রের মানুষ। কিন্তু অন্য সবাই তেমন ছিলেন না। আমার দুর্ভাগ্য আমি অনেক কিছু ভুলতে পারি না। বঙ্গবন্ধু যেদিন নিহত হন তার দুই দিন পর ধানমন্ডির ড. আর এ গনির বাড়িতে ছিলাম। তার পাশের বাড়িতে রামেন্দু মজুমদার থাকতেন। তার সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য বলতে পারব না, ১৫ তারিখের পর বেশ কদিন লাগাতার বেতার-বিটিভিতে তাকে দিয়ে খবর পড়ানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সরকার, বঙ্গবন্ধুর নামে কীসব জঘন্য কথা থাকত তাতে। সেই রামেন্দু মজুমদার যখন মিটিংটি পরিচালনা করছিলেন, মাঝে মাঝে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অংশবিশেষের উদ্ধৃতি দিচ্ছিলেন তখন বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যার পর রামেন্দু মজুমদারের বেতার-টিভিতে খবর পাঠের শব্দগুলো বার বার আমার কানে বাজছিল। সমাবেশে মাঝে মাঝে চমৎকার গান পরিবেশন করা হয়েছিল। তার মধ্যে মমতাজ ছিল। মমতাজ এখন বেশ দামি শিল্পী। আল্লাহ তাকে সত্যিই এক সুন্দর গলা দিয়েছেন। যত্ন থাকলে সুন্দর মানুষ আরও সুন্দর হয়। তাকে আমি বাউল আবদুর রশিদ বয়াতির স্ত্রী হিসেবে সেই ছোটকাল থেকে চিনি। সে তার নিজগুণে এত দূর এসেছে। কিন্তু সময় কী জিনিস, একসময় মহানগর নাট্যমঞ্চে ‘জিয়া আমার পিতা, তারেক আমার ভাই’ গেয়ে মঞ্চ কাঁপিয়েছে। এখন তার কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর সুর। মনির খান এখন খুব সম্ভবত বিএনপির সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক। মনিরের অসম্ভব সুন্দর গানের গলা। বিয়ানীবাজারের শেখ আবদুল ওয়াহিদের আউল বাউল শিল্পীগোষ্ঠীর সঙ্গে কতবার টুঙ্গিপাড়ায় গেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের কাঁদিয়েছে। সেই মনির এখন কঠিন বিএনপি। এই হলো বাস্তব।
প্রবীণ অধ্যাপক দেশপ্রিয় শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত নাগরিক কমিটির পদক্ষেপটি আরও ভালো হতে পারত। সমাবেশে একমাত্র প্রধান অতিথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ ভালো বক্তব্য দিতে পারেননি। মানুষের ভিতরে যা থাকে যত চেষ্টাই করুন একসময় তা বেরিয়ে আসে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম তাদের বক্তব্য মনে হচ্ছিল ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে। শ্রোতারা মুগ্ধও হয়েছেন। অন্যদিকে শহীদজায়া প্রফেসর শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী একজন অসাধারণ গুণগ্রাহী মহিলা। তিনি কুমুদিনী কলেজের ছাত্রী ছিলেন। আমার শাশুড়ি তাকে মেয়ের মতো স্নেহ করতেন। আমার স্ত্রীকে কোলেপিঠে নিয়েছেন। একসময় উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। গৌরীপুরের মেয়ে। যে কোনো সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অসাধারণ বক্তব্য দেন। মনে হয় তারা দুই বোন। হালিম সাহেব মারা গেলে তার ছোট বোনও সেই বাড়িতে থাকতেন। হালিম সাহেবের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়। অত বড় মাঠে তাদের বলার অভ্যাস ছিল কিনা জানি না। তবে তার বক্তব্য হৃদয়স্পর্শী ছিল। সমাবেশটি নাগরিক কমিটির নামে হলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মহাসচিব যে বলেছেন, ‘সমাবেশটি সরকারি সমাবেশে রূপ নিয়েছিল। ’ কথাটি অস্বীকার করতে পারলে বেশ খুশি হতাম। কিন্তু বিএনপি নেতার বক্তব্য তেমন অসত্য বলার উপায় ছিল না। ৭ মার্চের ভাষণ কারও একার নয়, এমনকি বঙ্গবন্ধুরও নয়। তার কণ্ঠে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষা, দুঃখ-বেদনা, হাসি-কান্নার কথা একবার উচ্চারিত হওয়ার পর তা আর তারও থাকেনি, জনতার সম্পত্তিতে পরিণত হয়ে গেছে। ’৭১-এর ৭ মার্চ যেমন সমগ্র জাতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্রিত হয়েছিল, একটু আন্তরিক হলে আবার জাতি-ধর্ম, দল-মত সবাইকে একত্র করা যেত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার আগে অন্যদের মধ্যে আ স ম আবদুর রব সাহেবকে ফোন করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘কাদির! কে বা কারা অফিসে কার্ড দিয়ে গেছে। আমরা কি ফকির! ওইভাবে পিয়ন দিয়ে কার্ড পাঠালে যাওয়া যায়?’ আমি তার সঙ্গে দ্বিমত হতে পারিনি। অমিল যাই থাকুক ড. কামাল হোসেনকে নেওয়া যেত। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে নেওয়া যেত, বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নিয়ে গেলে কোনো দোষ হতো না। যদিও এখন আমরা দলে দলে ভাগ হয়ে গেছি। পাকিস্তানের সময় ড. অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহীম, বোস প্রফেসর মতিন চৌধুরী, মোজাফফর আহমদ, আবু সাঈদ চৌধুরী আরও কিছু মানুষ ছিলেন জাতির কাছে সর্বজনশ্রদ্ধেয়। কিন্তু এখন তেমন কেউ নেই। সবাইকে মনে হয় পোঁ ধরা। আমরা যদি প্রতিদিন সুযোগ হারাই সেটা কেন ফিরে আসবে। কোনোমতেই আসবে না। নাগরিক কমিটির নামে এই বিশাল সমাবেশ না করে আওয়ামী লীগের নামে করলেও তেমন ক্ষতি হতো না। সেখানেও যারা ছিলেন তারাই থাকতেন। উদ্যোক্তারা যে চেষ্টা করেছেন তা আওয়ামী লীগের বাইরে খুব একটা প্রসারিত হয়নি। মঞ্চে যারা ছিলেন দু-তিন জন ছাড়া অন্যদের তেমন মানায়নি। ৭ মার্চে তোফায়েল আহমেদ নিচে বসে থাকলে জাতীয় মহিমা ম্লান হয়। বিক্রমপুরের মহিউদ্দিন ভাষণের সময় পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি এখনো জীবিত। তাকে মঞ্চে রাখা যেত। আমরা যে যেখানেই বসি। ৭ মার্চ নিয়ে নাগরিক সমাবেশ হলে তোফায়েল আহমেদকে আলাদা সম্মান দেওয়া উচিত ছিল। অধ্যাপক আবু সাঈদ এখনো জীবিত, তাকে নেওয়া যেত। সেদিন যারা মঞ্চে ছিলেন বেশি মানুষ নেই। কিন্তু যারা আছেন দলমতনির্বিশেষে তাদের সবাইকে সম্মান দেওয়া যেত— সেটাই কাজের কাজ হতো। ’৭০-এর নির্বাচনের পর পূর্ব পাকিস্তানের সবকিছু আপনা-আপনি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানিরা যখন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল করে দেয়, বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, পল্টন ময়দানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর আর কোনো কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল না। বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তো বটে, পুলিশ-ইপিআর, এসডিও, এসডিপিওরা সংগ্রাম পরিষদ অফিসে বসে থাকতেন, নেতাদের হুকুমমতো চলতেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে কদিন আগে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে এক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। সরকার মনে করছে, চুক্তি স্বাক্ষর করে লাভবান হয়েছে এবং সমস্যার তাড়াতাড়ি সমাধান হবে। কিন্তু অন্যরা মনে করছে, বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে। এ চুক্তির মাধ্যমে ১০ লাখ রোহিঙ্গার ফিরে যেতে ১২ বছর বা তার চেয়ে বেশি লাগবে। রোহিঙ্গা প্রশ্নে সারা পৃথিবী যখন জ্বলে উঠেছিল, তখন আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়কে এড়িয়ে একলা চলার পথ ধরেছি। এই একলা চলা আমাদের জন্য খুব একটা সুখকর হবে বলে মনে হয় না। মিয়ানমারের নিয়ত ভালো না। নব্বই দশকের চুক্তি তারা বাস্তবায়ন করেনি, ২০১৭-এর চুক্তি কতটা কী করবে? কারণ বিশ্বদরবারে মিয়ানমারের তেমন কোনো বিশ্বস্ততা নেই।
আগস্টে যখন রোহিঙ্গাদের আসা শুরু হয়, তখন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত খুলে দিয়ে যথাযথ একজন বিশ্বনেত্রীর মতো কাজ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কোনোটিই তেমন জুতসই হয়নি। যে জাতীয় উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছিল তাকে কাজে লাগানো যায়নি। সারা পৃথিবীতে রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের প্রতি যে সম্মান ও আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছিল রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সে আগ্রহ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বদরবারে আরও সুসংহত বা প্রতিষ্ঠিত করার তেমন জোরদার চেষ্টা হয়নি। যা হয়েছে তা তেমন কোনো কাজে আসেনি। বরং চোরের মায়ের বড় গলার মতো মিয়ানমার আমাদের প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে, আমরা রোহিঙ্গাদের ফিরতে দিচ্ছি না। এসব নানা কারণে রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ যেমন হতে পারে, সঠিক পরিচালনার অভাবে অভিশাপও হতে পারে। তাই সময় থাকতে সতর্ক হওয়া উচিত।
লেখক : রাজনীতিক।
উৎসঃ বিডি প্রতিদিন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন