দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বহুদিন থেকেই নিরুত্তাপ। সরকারবিরোধীরা নিজেদের খুঁজে পেতে যেমন ব্যস্ত, তেমনি ধরে নিয়েছে সুশাসনের কিছু কিছু জায়গায় ব্যত্যয় এবং দুর্নীতির লাগাম টানতে না পারা ছাড়া এ সরকার বেশ সুবিধাজনক অবস্থায়ই রয়েছে। কাজেই আগাম নির্বাচনের স্বপ্ন এখন দিবাস্বপ্নের মতোই। সরকারি দলও সময়ের আগে নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করছে বলে মনে হয় না এবং মনে করার তাগিদও নেই। হয়তো আগামী এগারোতম সংসদের নির্বাচন কয়েক মাস এগিয়ে ২০১৮-এর শেষের দিকেই হতে পারে। অন্তত সরকারি দলের প্রস্তুতিতে তেমনই মনে হয়। ততদিনে পদ্মা সেতু হয়তো দৃশ্যমান এবং উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকবে, যা হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় প্রদর্শন। কারণ বিশ্বব্যাংককে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে অন্য কোনো সরকার এতটা সাহস হয়তো করত বলে মনে হয় না।
অপরদিকে দেশের প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে যে ধরনের জনবল এবং সামরিক সরঞ্জামের সমাবেশ ঘটেছে, বিশেষ করে চীন থেকে ডুবোজাহাজ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত তাতেও সরকারের বৈদেশিক নীতির ভারসাম্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিএনপির প্রথমদিকের হলেও বিশ্ব পরিস্থিতি এবং ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে এ নীতি বদলায়নি বরং জোরদার হয়েছে। বর্তমান সরকার দারুণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। অপরদিকে রাশিয়ার সঙ্গেও অতীতের যে কোনো সময় থেকে সম্পর্ক অনেক ভালো। চীন এখন বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তিই নয়, আফ্রো-এশিয়ান উন্নয়নশীল দেশগুলোর অন্যতম অর্থলগ্নিকারী দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে অতি দক্ষিণপন্থি সরকার এবং শক্তির উত্থানের কারণে চীন ও রাশিয়া দারুণ স্বস্তিতে রয়েছে। বিশ্বের পটপরিবর্তনের ক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন এই দুই শক্তির বিস্তার ও প্রভাব দেখব বলে মনে হয়।
এমন অবস্থায় দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বর্তমান সরকার রাজনৈতিকভাবে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। সরকারের বিরোধিতা করার মতো শক্তি এবং রাজনৈতিক হাতিয়ারের অভাবের কারণে যা হওয়ার কথা ছিল প্রথাগত পরিবর্তন সেটাই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রধান আলোচ্য ও প্রতিযোগিতার জায়গা। আমি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে চলতি তর্ক-বিতর্কের কথাই বলছি। আগামী নির্বাচন কমিশন গঠন এখন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ আগামী নির্বাচন সরকারি দল ও বিএনপি উভয়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সরকারের জনপ্রিয়তা ক্ষমতায় পুনরায় আসীন থাকা এবং বিএনপির জন্য অস্তিত্ব ফিরে পাওয়ার লড়াই। সে কারণেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এত উদ্বিগ্ন। আগামী জাতীয় নির্বাচন যে অতীতের মতো হবে না তা সরকারি দল এবং এর প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন।
দেশ এখন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া, গঠন এবং কমিশনের ভবিষ্যৎ চরিত্র নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত, বিদগ্ধও সাধারণ নাগরিক। কেউ কেউ নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে এতই আলোচনামুখর যেন দেশে আর কোনো সমস্যা নেই। রাজনৈতিক অঙ্গনও এখন এই একটি বিষয় নিয়ে তর্কে-বিতর্কে জড়িত। এমন আলোচনা-সমালোচনার মাঝে যে বিষয়টি হারিয়ে গেছে তা হলো আগামী নির্বাচন যাতে ৫ জানুয়ারি ২০১৪-এর নির্বাচনের মতো না হয় তার জন্য করণীয়। বহুবার আমার বিভিন্ন লেখায় বলেছি, আবার উল্লেখ করতে চাই যে, একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন একমাত্র প্রচুর ক্ষমতাবান নির্বাচন কমিশন হলে তার একার পক্ষে সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন সহযোগীদের সহযোগিতা। তবে সক্ষম ব্যক্তিদের দ্বারা নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে সহযোগীদের সহযোগিতা আদায় করা যায়। সহযোগীদের মধ্যে প্রধান সহযোগী ওই সময়কার সরকার। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, একটি ভালো, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সক্ষম নির্বাচন কমিশনের বিকল্প নেই। আর তারই প্রয়াসে রত ছিল ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি। অবশ্য এবারের সার্চ কমিটির উদ্যোগ অতীত থেকে যথেষ্ট স্বচ্ছ এবং আন্তরিক বলে দেশবাসীর মনে হয়েছে।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে সেগুলো নিয়ে এত মতামাতি, আলোচনা, দীর্ঘ প্রক্রিয়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি রাজনৈতিক দলের এমন অংশগ্রহণ অতীতে হয়নি। এমনকি বিদায়ী কমিশন গঠনের সময়ও হয়নি। এর কারণের বিশদ বিশ্লেষণে নাই গেলাম, তবে যারা এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন বা করবেন তাদের বিশ্লেষণের বিষয় হয়ে থাকবে। নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া বা গঠন করা বা গঠিত হওয়া রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অঙ্গনের রুটিন বিষয় অথচ ইদানীং আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সমগ্র দেশে আলোচনার একমাত্র বিষয় হয়, যা অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে সচরাচর প্রতীয়মান হয় না। এবারের নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া ভিন্নতর বিষয় ছিল কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সার্বিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে কী ধরনের ব্যক্তিদের প্রয়োজন তার ওপর আলোচনা করা, যার মধ্যে পূর্ণ হুদা কমিশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর এ কারণেই আমার সুযোগ হয়েছিল সম্পূর্ণভাবে কিছু কারিগরি বিষয় তুলে ধরা। আমি আমার বক্তব্য লিখিত আকারে দিয়েছিলাম। ওই বক্তব্যে শুধু কমিশনের সদস্যের ন্যূনতম গুণাবলির কথাই নয়, তার বাইরে সার্বিকভাবে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং দায়িত্বের উপলব্ধির কথাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। আর এসব বিষয় চয়ন করা হয়েছিল আমার গবেষণালব্ধ যৎসামান্য জ্ঞান এবং কমিশনার হিসেবে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে।
হুদা কমিশনের অভিজ্ঞতা শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমিত ছিল না, নির্বাচনের আয়োজনের বাইরেও কমিশনকে একটি স্বাধীন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার সর্বাঙ্গীণ প্রয়াস ছিল। ভৌত কাঠামোগত স্বাধীনতা যার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে চারশ উপজেলাভিত্তিক সার্ভার স্টেশন, জেলা, আঞ্চলিক এবং কমিশন সদর স্থাপনের মধ্য দিয়ে ওই স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। ডিজিটাল ভোটার তালিকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, বিশাল তথ্যভা-ার স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং তথ্যভা-ারের জন্য লোকবল সবই পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ করা হয়েছিল। আইনের ব্যাপক সংস্কার করা এবং এ প্রক্রিয়ায় শরিকদের সম্পৃক্ত করার সংস্কৃতির সূচনা করা হয়েছিল। এ অর্জনগুলোর কারণে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন উপমহাদেশে তো বটেই, আফ্রো-এশিয়ান দেশগুলোর রোল মডেল হতে পারে যার জন্য প্রয়োজন সঠিক ব্যক্তিদের কমিশনে অন্তর্ভুক্তি এবং ধারাবাহিকতা ধরে রাখা, যার অনেকটা ব্যত্যয় হতে দেখা গেছে। এখানেই আমি মনে করি, বাছাই কমিটির বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকতে পারে।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি। এত বড় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কমিশনের ওপর শুধু জনগণ অথবা রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিবিদদেরই আস্থা নয় বরং এত সহস্র কর্মকর্তা-কর্মচারীর আস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আন্তর্জাতিক ও গবেষণায় স্বীকৃত। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবলও একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও পরবর্তী কর্মকা-ের বড় ধরনের শরিক। কাজেই অস্থায়ী কমিশন সদস্যদের ওপর আস্থা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই অস্থায়ী কমিশন সদস্যদের কর্মকা- এবং সুদূরপ্রসারী ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাতে যেমন সহায়ক হতে পারে, তেমনি দুর্বল করতেও পারে। স্মরণযোগ্য যে, ২০০৬ সালে নির্বাচন কমিশন শুধু সাংগঠনিকভাবেই দুর্বল হয়নি, বহু জায়গায় অনেক অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সামগ্রিকভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দারুণ হীনম্মনতায় ভুগছিলেন শুধু কমিশনের সদস্যদের ওপর দেশবাসী ও অভ্যন্তরীণ অনাস্থার কারণে। এর আরও উদাহরণ হয়তো বিশ্লেষণ করলেই পাওয়া যাবে। অভাব ছিল নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় সার্বিক কার্যকর ইলেক্টোরাল গভর্নেন্সের (ঊভভবপঃরাব ঊষবপঃড়ৎধষ মড়াবৎধহপব) অভাব। কাজেই সদস্য নির্বাচন, নিয়োগের সময় এ বিষয়টি বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশ প্রয়োজন। এখনো আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্ত ভিত স্থাপিত হতে পারেনি।
বাংলাদেশের সংবিধান নির্বাচন ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের তিনটি স্বীকৃত কাঠামোর মধ্যে, সরকারি, মিশ্র এবং স্বাধীন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকেই গ্রহণ করেছে এবং এই কমিশন এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞ পরিচালিত কারণ সংবিধান বা অন্য কোনো আইন অন্য ধরনের ব্যক্তিদের উল্লেখ করেনি। স্মরণযোগ্য, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন মোটা দাগে তিন ধরনের সদস্যম-লী দ্বারা পরিচালিত হতে পারে। যথাÑ শুধু বিচারিক ব্যবস্থাপনায় (ঔঁফরপরধৎু ইধংবফ) যেমন ব্রাজিল, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বেশ কিছু দেশ হতে পারে রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সংমিশ্রণে। সে ক্ষেত্রে সংসদে উপস্থিত রাজনৈতিক দলেরই মাত্র অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। তবে এ ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক সদস্যের মিশনে হয়ে থাকে। তবে রাজনৈতিক মতামত গ্রহণ করা হয় নির্বাচনসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও পরিচালনায়। মেক্সিকো, আইভরিকোস্ট এবং সোমালিয়ায় উদাহরণ; তবে গবেষক এবং বাস্তবতার নিরিখে স্বাধীন ও বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিচালিত নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংগঠন বা নির্বাচন কমিশনকে গবেষকরা সবচেয়ে বেশি কার্যকর বলে মনে করেন। তবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনই সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক দেশে গৃহীত হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সবিচালয় ২০০৯ সালে আইন দ্বারা কমিশনের এখতিয়ারে ন্যস্ত হওয়ার পুরোপুরি স্বাধীন (ওহফবঢ়বহফবহঃ) সংস্থা হিসেবে নির্বাচন কমিশনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেও পূর্ণতা পেয়েছে। এর মধ্যে যে বিষয়গুলো এই প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী বা ক্ষমতাবান করে তোলে তার মধ্যে রয়েছে সাংগঠনিক, আর্থিক ও কার্যক্রমের স্বাধীনতা; নিরপেক্ষতা; বিশ্বাসযোগ্যতা; স্বচ্ছতা; দক্ষতা; পেশাগত উৎকর্ষ এবং সেবার মনোভাব। কাজেই যাদেরই নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন, প্রতিষ্ঠানের এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যতা শুধু অনুধাবনই নয়, সমুন্নত রাখার প্রয়াস যেমন নিতে হবে, তেমনি এ প্রয়াস দৃশ্যমান হতে হবে। এর মধ্য দিয়ে ব্যাপক আস্থার সংকটে ভুগতে থাকা নির্বাচন কমিশন আস্থার সংকট কাটিয়ে ওঠার প্রয়াস পাবে। শুধু কমিশনই নয়, আস্থার সংকট থেকে বের করে আনতে হবে সমগ্র কমিশনকে।
কমিশনের সদস্যদের মধ্যে হৃদ্যতা এবং দল হিসেবে কর্মপরিচালনা করার দক্ষতাসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন। যিনি সর্বশীর্ষ দায়িত্বে থাকবেন তাকে যেমন নেতৃত্ব দিয়ে দল গঠন করতে হয়, তেমনি অন্যদের সহযোগিতার মনোভাব থাকতে হয়। তবে তার মানে এই নয়, নিজস্ব স্বকীয়তা বিসর্জন দিতে হবে। তেমনটি নয়, তবে সংকটের সমাধানে একত্রে কাজ করার মনোবৃত্তির প্রয়োজন খুব বেশি। অতীতে এই মনোভাবের অভাবে অনেক কমিশন অকার্যকর হয়েছে অথবা তেমনভাবে কার্যকর হয়নি।
নির্বাচন কমিশন সদস্যদের বিশেষ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনারদের অভিজ্ঞতার মেয়াদ, বয়স এবং প্রশাসনিক প্রজ্ঞা প্রায় সমসাময়িক হওয়া গুরুত্ব বহন করে। কারণ বিশেষ করে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো সমমতামতের ভিত্তিতে গৃহীত হয়। যদিও আইন বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার শুধু সচিবালয়ের দৈনন্দিন পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও এখানেও প্রয়োজনবোধে অন্য সদস্যদের সম্পৃক্ততা দলীয় স্পৃহা বা উদ্যমকে উন্নত করে। এসব বিষয়ে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের কার্যক্ষমতার প্রতিফলন ঘটে।
বাংলাদেশের সংবিধানে যে কটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যার উদাহরণ সংবিধানের ধারা ১১৮ হতে ১২৬ পর্যন্ত বিস্তৃত। অবশ্য এসব ধারা সংবিধানে নির্বাচন, পার্লামেন্ট বিষয়ক ধারার সম্পূরক। কারণ গণতান্ত্রিক দেশের শাসনব্যবস্থার ভিত রচিত হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। স্বচ্ছ, অবাধ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন একটি জবাবদিহি কার্যকর সরকারের ভিত রচনা করে। এর পরিবর্তে বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়েও অনেক জনপ্রিয় দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। গবেষকদের মতে, এ ধরনের হাইব্রিড সরকারকে নির্ভর করতে হয়ে অন্যান্য শক্তির ওপর। কোনো গণতন্ত্রীমনা রাজনৈতিক দল এবং জনগণ এমন ব্যবস্থা প্রত্যাশা করে না। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রীয় ভূমিকা রয়েছে, যে বিষয়টি কমিশনকে উপলব্ধি করতে হবে। অন্যথায় জনগণের ধারণায় নির্বাচন কমিশনকেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ইতিহাস ঘাঁটলে প্রতীয়মান হয় যে, অনেক কমিশনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং এক ব্যক্তির সিদ্ধান্তের কারণে বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পর্যালোচনায় এ পর্যন্ত প্রতীয়মান যে, বড় কলেবরের নির্বাচন কমিশন খুব কার্যকর হয়েছে, তেমন নয়। কাজেই কমিশন কত বড় হওয়া উচিত তাও ভেবে দেখার বিষয়।
যাহোক ইতোমধ্যেই সার্চ কমিটি তাদের কাজ সম্পন্ন করেছে বলে প্রকাশ। কয়েকদিনের মধ্যেই নতুনভাবে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। আশা করব যে, গঠনের পর নির্বাচন কমিশন নিয়ে নতুন বিতর্ক যাতে শুরু না হয়। অবশ্যই আশা করা যায়, নির্বাচকম-লী জনগণের এবং কমিশনের স্থায়ী সদস্যদের পারসেপশনের বিষয়টি আমলে নেবেন। সর্বশেষ অন্য শরিকদের সহযোগিতা ছাড়া শুধু নির্বাচন কমিশন জনআকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারবে না।
এম সাখাওয়াত হোসেন: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও কলাম লেখক
উৎসঃ আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন