নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকলেও শপথ গ্রহণ এবং তার নিরপেক্ষতার অঙ্গীকারের পর সমালোচনাকারীরা তার এ বক্তব্যের প্রতিফলন দেখার অপেক্ষায় থাকবে।
শুরুতেই, এই কমিশন গঠনের প্রায় তিনদিনের মাথায়, দুর্গম পার্বত্য চট্টগ্রামের ছোট একটি পৌরসভা বাঘাইছড়িতে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আকারে ছোট হলেও নবগঠিত নির্বাচন কমিশন যে বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়নি তার উদাহরণ একজন কমিশনারের সংক্ষিপ্ত সফর। ওই নির্বাচন ভালো হয়েছে বলে স্থানীয় জনগণের ভাষ্য পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ভোটাররা ভোট দিতে পেরেছেন, যা বিগত কয়েক বছরে বিতর্কিত হয়েছিল।
এদিকে জাতীয় সংসদের দুটি নির্বাচনী এলাকায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে কয়েকটি উপজেলা এবং এ কমিশনের অধীনে প্রথম কোনো সিটি কর্পোরেশনে (কুমিল্লা) নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করেছেন।
দুটি উপনির্বাচন ছাড়া হয়তো বাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হবে বহুদলীয় অংশগ্রহণে। কাজেই এসব নির্বাচন একদিকে যেমন নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ওই এলাকার ভোটারদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের ভোটাররা ভোট দিতে আগ্রহী, আর এই আগ্রহকে সম্মান দেখানোর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। অতীতের দুঃস্বপ্ন হয়তো এখনও তিরোহিত হয়নি। আশা করা যায়, নবগঠিত নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে যে ব্যবস্থা নেবে তাতে ভোটারদের মধ্যে কিছুটা হলেও আস্থা ফিরতে শুরু করবে। এ সবের মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথে হাঁটবে নির্বাচন কমিশন।
এত বড় যজ্ঞের প্রস্তুতির জন্য হাতে তেমন সময় নেই, তবু পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ। নির্বাচন কমিশনের হাতে বহু কাজ রয়েছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ স্থাপন করা। নবগঠিত নির্বাচন কমিশন বিগত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যর্থতাগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিলে আগামী নির্বাচনের পথ সুগম হতে পারে।
তবে তা অনেকটাই নির্ভর করবে ওই সময়কার সরকার কেমন হবে এবং নির্বাচন কমিশনের অবস্থানই বা কী হবে, তার ওপর। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের করণীয় রয়েছে বলে আমি মনে করি।
২.
আগামী মার্চ মাসের ৩০ তারিখে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কুমিল্লার আগের নির্বাচনটি ছিল বিগত হুদা কমিশনের অধীনে সিটি কর্পোরেশনের শেষ ও ব্যতিক্রমী নির্বাচন।
নির্বাচনটি কমিশনের ইতিহাসে উল্লেখিত থাকবে (আমার রচিত ‘নির্বাচন কমিশনে পাঁচ বছর’, পালক প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইয়ে দ্রষ্টব্য)। এর কারণ সম্পূর্ণ নির্বাচনটি ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ইভিএম নিয়ে বিএনপির প্রবল আপত্তির মুখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তারপরও মেয়র পদে বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম সাক্কু জয়ী হন। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে ভোট গণনা শেষ করে রিটার্নিং অফিসার বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন।
এর পর ইভিএম ব্যবহার হয় নরসিংদী পৌরসভার মেয়র নির্বাচনে। সেখানেও সফলতার সঙ্গে শেষবারের মতো হুদা কমিশন ব্যবহার করেছিল এ পদ্ধতি। এর পরের কমিশন নিজেরাই নানা বিতর্ক সৃষ্টি করে ইভিএম নিয়ে আর অগ্রসর হয়নি। এর পেছনে কারিগরি ত্রুটির কথা বলা হলেও অন্য কোনো কারণ থাকা অসম্ভব নয়।
ইদানীং আবার ইভিএম, না ডিভিএম, না ই-ভোটিং- এই নিয়ে নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। অতীতের মতো এবারও সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়ে বক্তব্যের পরই পুরনো বিতর্ক রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুনভাবে সামনে এসেছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী যতটা না বলেছেন তার চেয়ে বেশি বলছেন সরকারি দলের অন্য নেতারা, আর সেটাই মাঠ গরম করার জন্য যথেষ্ট। অতীতে যেমন তৎকালীন বিরোধী দল তাদের পক্ষে তেমন জোরালো প্রযুক্তিগত যুক্তি দাঁড় করাতে পারেনি, এখনও হয়তো তেমনটি হবে না, যদি ইভিএমের মতো একক পদ্ধতির যন্ত্র ব্যবহার করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
ইভিএম আর ই-ভোটিংয়ের মধ্যে তফাৎ রয়েছে। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইভিএমের কথাই বলেছেন। ই-ভোটিং বা ডিজিটাল ভোটিং সাধারণত সার্ভারনির্ভর, অন্যদিকে ইভিএম একক যন্ত্র হওয়ায় হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনা শূন্য।
আর যেসব সন্দেহ রয়েছে, তার প্রধান কারণ হয়তো নির্বাচন কমিশন ও ব্যবস্থাপনার ওপর অবিশ্বাস। যারাই বিরোধী দলে থাকে, সরকারের বা সরকারি দলের সবকিছুর বিরোধিতা করা তাদের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বলেই বিএনপির যত আপত্তি, যেমনটা অতীতেও আমরা দেখেছি।
অথচ বিষয়টি খতিয়ে দেখে নির্বাচন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত এই প্রযুক্তি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় মতামত ও পরামর্শ দেয়াই উত্তম হবে। বিরোধিতা করার জন্য বিরোধিতা নয়, কার্যকর বিরোধিতাই এ ক্ষেত্রে কাম্য।
ইভিএম বর্তমানে উপমহাদেশের প্রায় সব দেশেই ব্যবহার হচ্ছে বা হওয়ার পথে রয়েছে। ইদানীং পাকিস্তানেও এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ভারতে ইতিমধ্যেই রাজ্য নির্বাচন ছাড়াও দুটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ইভিএমের সাহায্যে।
তবে ইদানীং ইভিএমের সঙ্গে ‘পেপার ট্রেল’ যুক্ত করায় এটি আরও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ভারতে ব্যবহৃত ইভিএম স্থানীয়ভাবে তৈরি, কাজেই এর প্রযুক্তিগত উন্নতি স্থানীয়ভাবেই করা হচ্ছে। সেখানে বিগত জাতীয় নির্বাচনে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল।
বাংলাদেশেও স্থানীয়ভাবে তৈরি ভারতের অনুরূপ ডিআর-ইভিএম (ডাইরেক্ট রেকর্ডিং ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার করা হয়েছিল। উৎপাদন এবং এর উন্নয়নের পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছিল। সংযোজন করার পরিকল্পনা ছিল ‘ফ্ল্যাশ স্ক্রিনের’।
যা হোক, যে কারণেই হোক, বিগত কমিশন এই যন্ত্র নিয়ে অগ্রসর হয়নি। তবে এ বিষয়ে পুনরায় বিতর্ক শুরু হলে জানা যায়, একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কারিগরি দল আরও উন্নত ডিজিটাল পদ্ধতির অন্য ধরনের ভোটিং মেশিন, যার নাম হবে ডিভিএম (ডিজিটাল ভোটিং মেশিন), তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে; যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশিত বা প্রচারিত হয়নি।
তবে এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সচিব কয়েকবার বিপরীতমুখী বক্তব্য দিয়েছেন, যে কারণে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়নি। নবগঠিত কমিশনের কাছে এই নতুন প্রযুক্তির বিষয়ে রিপোর্টও উত্থাপিত হয়নি। এর সঙ্গে যারা যুক্ত হয়েছেন, তারা প্রযুক্তি বিষয়ে আমাদের দেশের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তথাপি যেহেতু রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তাই কাজটি কঠিন হয়ে উঠবে।
এ পর্যন্ত ডিভিএম সম্পর্কে যে তথ্য সচিবালয়ের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে পাওয়া গেছে তাতে মনে হয়, সামান্য হলেও পরিচিত ইভিএম নিয়ে আগের কমিশন বিভিন্ন কারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় এই নতুন ব্যবস্থা। তথ্যে প্রকাশ, নতুন যন্ত্র হবে ডিজিটাল এবং ভোটারকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পরিচয় নিশ্চিত করে ভোট দিতে হবে।
বায়োমেট্রিকের মধ্যে রয়েছে আইরিশ বা চোখের মণি শনাক্তকরণ এবং আঙ্গুলের ছাপের ব্যবহার এবং একক যন্ত্র (Stand Alone) হলে এর জন্য ব্যবহার করতে হবে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র। এমনটাই সচিবালয়ের বক্তব্যে প্রকাশিত। উদ্ভাবনটি প্রশংসনীয়।
এ ধরনের ভোটিং যন্ত্র পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোয় ব্যবহার হচ্ছে, বিশেষ করে ইউরোপের বহু দেশে, এমনকি এশিয়ার দক্ষিণ কোরিয়াতেও। কাজেই এ উদ্ভাবন যে অত্যন্ত কার্যকর হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তারপরও ব্যবহারিক বিষয়ে বা প্রয়োগের এবং নির্বাচনে এর প্রভাবের বিষয়ে কিছু প্রশ্ন থেকে যায়, যদিও তা পূর্ণ তথ্য পাওয়ার আগে ধারণাকল্প মাত্র।
যারা এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, তাদের কাছে প্রশ্নগুলোর সমাধান নিশ্চয় রয়েছে; তথাপি উত্থাপন করলাম যাতে এ পর্যায়েই তা নিষ্পত্তি করা যায়। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা কেমন হবে বা কীভাবে করা যায়, তা একান্তই একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়।
তথাপি রাজনৈতিক দলের এবং ব্যবহারকারী ভোটারদের মতামত অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। স্মরণযোগ্য যে, ভারতে যে ইভিএম এখন এ পর্যায়ে উন্নীত হয়ে ব্যবহার হচ্ছে এবং অন্যান্য দেশ তা অনুকরণ করছে, তা ওই বৃহৎ রাষ্ট্রের রাজ্যগুলোতে ব্যবহার করে জাতীয়ভাবে ব্যবহারে ২৫ বছর লেগেছে।
সেক্ষেত্রে আমরা ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু এবং ২০১০ সালে প্রথম প্রয়োগের পর ২০১২-২০১৭ এই পাঁচ বছরে আর এগোতে পারিনি। ভারতে সত্তরের দশকের শেষের দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসএল সাকধর (SL Shakdhar) প্রথমে তার ধারণাকে (কনসেপ্ট) ইলেকট্রুনিক্স কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করেন।
সেই থেকে এ পর্যন্ত বহু পরিবর্ধন-পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা এ পর্যায়ে এসেছেন। বর্তমানে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি রয়েছে, যাদের পরামর্শ ছাড়া ভারতীয় নির্বাচন কমিশন কোনো কারিগরি সিদ্ধান্ত নেয় না। তবে ব্যবহারিক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের।
আমাদের দেশে ইভিএম তৈরি এবং রাজনৈতিক দলের পরামর্শে সীমিতভাবে এর ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হুদা কমিশন নিয়েছিল, উদ্দেশ্য ছিল ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর ব্যাপক ব্যবহার। অবশ্য তখন পরিস্থিতি কী হবে তা ধারণাও করা যায়নি।
যা হোক, তারা যে প্রশ্ন বা মতামত তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তা হালের কথিত ডিভিএম সংক্রান্ত। সচিবালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী এই অত্যাধুনিক যন্ত্র যদি একক (Stand Alone) যন্ত্র হয়ে থাকে, তাহলে আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মণি শনাক্তকরণের জন্য স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হবে।
সেক্ষেত্রে আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নির্বাচন নিয়ে যে ধরনের কারচুপি চলে, সেদিকে খেয়াল রাখা আবশ্যক। কারচুপি শুধু ভোট কেন্দ্রেই হয় না। আইনের পরিবর্তন থেকে শুরু করে প্রতি ক্ষেত্রেই এটি সম্ভব। এ ক্ষেত্রে যে আশংকা তার প্রথমটি হল- সব ভোটারের কাছে কার্ড থাকা।
এর পরেরটি হল, অধিকতর প্রান্তিক অঞ্চলে টাকার বিনিময়ে অথবা কার্ড ছিনতাই করে প্রতিপক্ষের ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত রাখা, যা এখনও বহুভাবে করা হয়ে থাকে। এ বিষয়টি শুধু ধারণা থেকে নয়, পাঁচ বছরের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে উত্থাপন করলাম।
যে কারণে প্রথমে ব্যবহারের কথা বললেও পরে ভোট প্রদানে জাতীয় পরিচয়পত্রের অপরিহার্য ব্যবহার থেকে আমরা সরে এসেছিলাম, যখন প্রমাণ পেয়েছিলাম প্রথম দিকের একটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিশেষ এলাকার ভোটারদের কার্ড আগের রাতে জবরদখলে নেয়া হয়েছে (‘নির্বাচন কমিশনে পাঁচ বছর’ দ্রষ্টব্য)।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল আঙ্গুলের ছাপ শনাক্তকরণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বহু মানুষের, বিশেষ করে বয়স্কদের আঙ্গুলের ছাপ একবারে শনাক্ত করা যায় না। এমন অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। শহর ও গ্রামের খেটে খাওয়া এবং কৃষক শ্রেণীর পেশাজীবীদের ক্ষেত্রেও এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সেক্ষেত্রে একজন ভোটারের ভোট প্রদানে কত সময় লাগবে তাও দেখার বিষয়। বর্তমানে ভোট গ্রহণের নির্ধারিত সময় ৮ ঘণ্টা। ভোটার লাইনে থাকা অবস্থায় দেরি হলে অন্যরা নিরুৎসাহিত হয়। অনেক সময় ধীরে চলো নীতিকে কারচুপির অংশ হিসেবে এখনও ব্যবহার করা হয়, যা ‘বুথ জ্যাম’ হিসেবে পরিচিত। চোখের মণি শনাক্তকরণও হবে সময়সাপেক্ষ বিষয়। এ কারণেও ভোট গ্রহণের সময়সীমা বাড়াতে হবে অথবা বুথের সংখ্যা বাড়িয়ে ২৫০ ভোটারের জন্য একটি বুথের প্রয়োজন হতে পারে।
সর্বশেষ বিষয়টি হল, ‘স্মার্ট কার্ড’ ব্যতিরেকে এই যন্ত্র একক যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কিনা তাও খোলাসা করতে হবে। কারণ এটি আঞ্চলিক অথবা কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত করে ব্যবহার করলে অন্তত আমাদের দেশের রাজনৈতিক নির্বাচনী সংস্কৃতির বিবেচনায় খুব একটা সুখকর হবে বলে বাস্তবজ্ঞানের আলোকে মনে করি না।
একই সঙ্গে আর্থিক বিবেচনাও রয়েছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আমার মনে হয়, ইভিএমের আরও কিছু কারিগরি সংযোজনের মাধ্যমে এ প্রকল্প এগিয়ে নেয়া যেতে পারে। তবে আগামী নির্বাচনে এ দুই প্রযুক্তির কোনোটিই সময়ের অভাবে প্রয়োগ করা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ আমরা অনেকখানি এগিয়েও পাঁচ বছর পিছিয়ে রয়েছি।
তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও বিশুদ্ধতা আনার প্রয়াসে প্রযুক্তির ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে। হয়তো আগামীতে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সংস্কৃতির ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন হলে ছবিসহ ভোটার তালিকারও প্রয়োজন হবে না, শুধু ‘স্মার্ট কার্ড’ এবং একটি নামের তালিকাই হবে যথেষ্ট।
তবে সে সময়টি কত তাড়াতাড়ি আসবে তা নির্ভর করবে সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর পূর্ণ আস্থা স্থাপনের ওপর। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমনটি অলীক স্বপ্নই মনে হতে পারে। আমি একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও গবেষক হিসেবে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার পক্ষপাতী। এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয় ততই মঙ্গল। সেক্ষেত্রে আমাদের পারিপার্শ্বিক বাস্তবতা মেনেই অগ্রসর হতে হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন হলেই হয় না, যদি না শরিকরা সহযোগিতা করে। সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করার পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব ভোটার ও জনগণেরও। কারণ তারাও বড় শরিক।
এম সাখাওয়াত হোসেন : সাবেক নির্বাচন কমিশনার, কলাম লেখক ও পিএইচডি গবেষক
উৎসঃ যুগান্তর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন