‘র্যাব’ একটি কাউন্টার ন্যারেটিভের উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। তবে এ কাজটি তাদের নয়, এর দায়িত্ব সরকার, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর; বিশেষ করে ইসলামিক ইতিহাসবিদদের সম্পৃক্ততা কাম্য। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের দেশে তেমন গবেষণা হচ্ছে বলে মনে হয় না, তেমনি রয়েছে প্রকাশনার অভাব। এ অভাব পূরণের ব্যবস্থা হাতে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন
বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সোভিয়েতবিরোধী কথিত জেহাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কারণ ওই জেহাদে বাংলাদেশের ওই সময়কার কয়েকশ তরুণ যোগদান করেছিল, যারা আফগান মোজাহিদদের ১২টি সংগঠনের বাইরে বিদেশি যোদ্ধাদের সংগঠন মকতব-ই-খিদমাত, যার নেতৃত্বে ছিলেন আবদুল্লাহ ইউসুফ আজম, ওসামা বিন লাদেন ও আয়মান আল জাওয়াহিরি। এ সংগঠনটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আফগান যুদ্ধের জন্য জেহাদিদের সংগ্রহ করত। এই উপমহাদেশের মাদ্রাসাগুলোই ছিল এসব তরুণের সিংহভাগের জোগানদাতা। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এ সংগঠনটি ছিল সুন্নি ওয়াহাবি বা সালাফি তত্ত্বে বিশ্বাসী। এর পর আফগান যুদ্ধ শেষের পথে ১৯৮৯ সালে আল কায়েদার জন্ম হয় বিন লাদেনের নেতৃত্বে, যার আগেই আবদুল্লাহ আজম পেশোয়ারে এক সড়ক দুর্ঘটনায় রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
আল কায়েদা থেকে জন্ম নেয় ১৯৮৪ সালে উপমহাদেশভিত্তিক সংগঠন ‘হুজি’ এবং এই জঙ্গি সংগঠনের বাংলাদেশ শাখা জনসমক্ষে উদয় হয় ১৯৯২ সালের ৩০ এপ্রিল। ১৯৯৯ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে কবি শামসুর রাহমানের ওপর হামলা, একই বছরে যশোরের উদীচী হামলার মাধ্যমে তাদের শক্তি এবং তত্ত্বের জানান দেয়। পরে ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলার পরিকল্পনার মাধ্যমে হুজি আরও পোক্ত অবস্থান কায়েম করে। হালে হুজির কথিত আমির মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের দীর্ঘ বিচারের মধ্য দিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কিন্তু এতগুলো বছরে হুজিকে পেছনে ফেলে জেএমবি এবং আরও পরে কথিত নব্য জেএমবি আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভয়াবহ জঙ্গি তৎপরতা অত্যন্ত হালের। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘আইএস’ বা ‘দায়েশ’। আইএস আছে কী নেই, তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক অনেকটাই স্তিমিত, বিশেষ করে হলি আর্টিজান ও পরবর্তী জঙ্গি এবং জঙ্গিবিরোধী তৎপরতার মধ্য দিয়ে। হালের সিলেট ও মৌলভীবাজারের ঘটনা এর ধারাবাহিকতায়। এখন আমরা দেখছি তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা, আত্মঘাতী হামলা। খোঁজা হচ্ছে জঙ্গি মোকাবিলায় শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধের ব্যবস্থা।
সামাজিক, ধর্মীয় ও জনগণকে জঙ্গিবিরোধী তৎপরতার অংশ হিসেবে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাবের গবেষণা উইং চলমান সন্ত্রাসী কর্মকা- দমনের অন্যতম প্রক্রিয়া কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরির প্রক্রিয়া একটি পুস্তকের মোড়ক উন্মোচন করেছে। বইটির নাম ‘কতিপয় বিষয়ে জঙ্গিবাদীদের অপব্যাখ্যা এবং পবিত্র কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত ও হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা।’ ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপস্থিত ছিলেন পুলিশপ্রধান, র্যাবের ডিজি, মাওলানা মাসঊদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি আফজাল, দুজন সচিব ও দুজন সংসদ সদস্য। র্যাবের বিবরণে যা মনে হয়েছে তা হলো, ধৃত সন্ত্রাসীদের উদ্বুদ্ধকরণের জন্য কোরআনের যেসব আয়াতের অপব্যাখ্যা ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে আর এ প্রয়াসে ইসলামি বিশেষজ্ঞ এবং যারা এ চর্চায় শীর্ষস্থানে রয়েছেন, তাদের সহযোগিতা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই প্রচারণামূলক পুস্তক। এ বিষয়ে র্যাব কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেল যে কাজটি করে এ ধরনের কাউন্টার ন্যারেটিভ প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা বহু জায়গায় বহুভাবে বলেছি।
এটা প্রথম পদক্ষেপ হলেও যথেষ্ট নয়। এ ধরনের কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি করতে হবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলো থেকেও। তবে এই কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরিতে বেশ সাবধানতা ও চিন্তাভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। অনেক সময় কাউন্টার ন্যারেটিভ হিতে বিপরীতও হতে পারে। তৈরি করতে ও প্রচার করতে হবে এমনভাবে, যাতে সমাজের আস্থাভাজন মানুষকে যুক্ত করে। সরকারি সংস্থার পাশাপাশি এ ধরনের আস্থাভাজন মানুষকেও যুক্ত করলে এ প্রয়াস অধিক কার্যকর হবে। এসব কাউন্টার ন্যারেটিভ মিডিয়ার মাধ্যমে জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে। এর সঙ্গে দেশের বিবদমান রাজনীতির সম্পৃক্ততা পরিহার করতে হবে।
৭০ পৃষ্ঠার বইটিতে কোরআন-হাদিসের আয়াতের সন্ত্রাসীদের কর্তৃক অপব্যাখ্যার পাশাপাশি এর সুচিন্তিত এবং বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তবে ভাষাটি আরও সহজ হলে ভালো হতো। বইটি শেষের দিকে আইএস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী কর্তৃক কালো পতাকার ব্যাখ্যায় হজরত আবু হুরায়রার যে হাদিস থেকে উদ্ধৃত তার বিপরীতে অন্য ইসলামিক মনীষীদের ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে, তবে এই পতাকা ব্যবহারের সঙ্গে আরও কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় এবং এর প্রেক্ষাপট যেভাবে বর্তমানে ইরাক-সিরিয়াসহ অন্য সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ব্যবহার করে থাকে, এ পতাকার ভেতরের গোল সাদা অংশকে ব্যাখ্যা করা হয় হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যবহৃত সিল হিসেবে। কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা ছাড়াও বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠী, বিশেষ করে আইএস মনস্তাত্ত্বিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়টিও হয়তো পরবর্তী কাউন্টার ন্যারেটিভে যোগ হতে পারে।
যাহোক, ওই অনুষ্ঠানে পুলিশপ্রধান হালের কয়েকটি জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কথা বলে যেসব বিষয় তুলে ধরেছেন, সেসব বিষয় বহু আগে অনেকবার আলোচনায় এলেও কর্তৃপক্ষ তেমন গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেনি। আমাদের সাধারণদের ধারণা ছিল যে, হালের জঙ্গিরা তাদের পূর্বসূরিদের মতো মাদ্রাসার ছাত্র বা মাদ্রাসা থেকে দীক্ষিত হয়েছেন, বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসা নিয়ে অনেকেই সরলীকরণ করেছেন এবং এখনো করেন। এ কথা ঠিক যে, আশির দশকে আফগান যুদ্ধ-উত্তর সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর প্রায় ৯০ শতাংশই এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, কারণ ওই যুদ্ধে মুজাহিদ বলে খ্যাত যোদ্ধাদের তেমন প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রয়োজন ছিল না। ওই যুদ্ধে জেহাদি মনোভাব যোদ্ধা তৈরি এবং সরবরাহের জন্য মাদ্রাসাপড়–য়াদের তৈরি করা হয়েছিল এবং ওই সময় এ উপমহাদেশে বিদেশি অনুদানে হাজার হাজার মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সময়ের যে কোনো সংগঠনের ইতিবৃত্ত গবেষণা করলেই এ সত্য পাওয়া যায়Ñ মুফতি হান্নান এবং হুজি (বি) প্রথম প্রজন্মের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত। এখনকার বৈশ্বিক সংগঠনগুলোর ৯০ শতাংশ আধুনিক প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ। এ কথা পুলিশপ্রধানের উক্তি থেকেই প্রতীয়মান। তিনি তার হাতে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে বলেছেন, বর্তমান সন্ত্রাসীদের মাত্র ৩০ শতাংশ, বিশেষ করে আমাদের দেশে মাদ্রাসার সঙ্গে সংযুক্ত থাকলেও ৭০ শতাংশ আধুনিক বিষয়ে শিক্ষিত। এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা আমরা আমাদের আলোচনায় অনেক সরলীকরণ করে থাকি।
এই অনুষ্ঠানে পুলিশপ্রধান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছেন। তিনি বলেছেন, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা এ ধরনের বৈশ্বিক ও সামাজিক বিষয় সমাধা করা সম্ভব নয়, প্রয়োজন এদের ফিরিয়ে আনা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ নয়। এ বিষয় বহুবার, বহু সেমিনার ও লেখালেখিতে নানাজনের মন্তব্যে উঠে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে সন্ত্রাসী নিধন হলেও সম্পূর্ণভাবে প্রতিহত করা সম্ভব নয়। শক্তি প্রয়োগে যে জায়গা তৈরি হয়, তাকে ব্যবহার করে এসব তরুণকে ফিরিয়ে আনা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ এখনো তেমন দৃশ্যমান নয়। বাংলাদেশে সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান অথবা ইয়েমেনের মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে না। কাজেই আমাদের দেশের সন্ত্রাসীরা ওই ধরনের পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার অবস্থায় নেই। এখানে বৈশ্বিক যোগাযোগ অবশ্যই রয়েছে, যার অগ্রভাগে রয়েছে আইএসের দর্শন। হলি আর্টিজান, হালের সীতাকু-, সিলেট ও মৌলভীবাজারের ঘটনাগুলোর উদাহরণ যথেষ্ট।
আমাদের দেশে আইএসের শারীরিক উপস্থিতি অথবা ঘাঁটি নেই এবং থাকার মতো পরিবেশও নেই, তবে দর্শনে যে দীক্ষিত হয়েছে এবং হচ্ছে এমনকি স্থানীয়রা যে সদস্য হচ্ছে, তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ওই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য আইএসের উপস্থিতি নেই বলেছেন, তবে মতাদর্শের কথা উহ্য রেখেছিলেন।
বর্তমান বিশ্বে প্রধান সন্ত্রাসী বা যাদের আমরা জঙ্গি বলি, গোষ্ঠীর নাম আইএস। যদিও মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের পাশাপাশি আল কায়েদাও বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। আল কায়েদা সমর্থিত সিরিয়ায় আসাদবিরোধী গোষ্ঠী বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। আল কায়েদার সূতিকাগৃহ উপমহাদেশে কৌশলগত কারণে তৎপরতা কম থাকলেও শক্ত অবস্থানে রয়েছে। আল কায়েদা সৃষ্ট আইএস এখন বিশ্বব্যাপী ত্রাসের নাম। সিরিয়া ও ইরাকে কথিত ইসলামিক স্টেট গঠনের মাধ্যমে তাদের পূর্ব অবস্থান অনেকখানি কমলেও, এখনো শক্তির প্রদর্শন একেবারেই কমেনি। প্রায় পাঁচ মাস যুদ্ধ করে টিকে রয়েছে ইরাকের মসুলে। সিরিয়ার কয়েকটি অঞ্চল হাতছাড়া হলেও ‘রাকা’য় তাদের অবস্থান সুদৃঢ় রয়েছে। এসবের মধ্যেও বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন দেশ থেকে তরুণদের যোগদান অব্যাহত রয়েছে। ক্রমেই ব্যাপ্তি বাড়ছে আইএসের প্রভাব, যার হালের উদাহরণ সুইডেনে ট্রাক হামলা। এখন ‘লোন উলফ’ বা একক হামলাকারীর তৎপরতা ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে আত্মঘাতী হামলা। শুধু আত্মঘাতী বোমা হামলাই নয়, অন্যান্য অপ্রচলিত অস্ত্রের ব্যবহারে এক ধরনের আত্মঘাতী হামলা। আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রচেষ্টা আমাদের দেশেও হালে পরিলক্ষিত হয়েছে।
আইএসসহ অন্যান্য সংগঠন এবং ‘জেহাদ’ তত্ত্ব নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচুর গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রচুর বইও প্রকাশিত হয়েছে। তবে বেশিরভাগই পশ্চিমা লেখকদের লেখা। এ ধরনের কয়েকটি বই থেকে এবং অন্যান্য লেখা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, আইএস শুধু কোরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যা দিয়েই নয়, হাদিসের অনেক ব্যাখ্যা, বাইবেল এবং কোরআনের কিছু কিছু অংশের বিপরীত ব্যাখ্যার ব্যবহারসহ দুই কিতাবের উদ্ধৃতি ও ইসলামের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার দর্শনকে দারুণভাবে ব্যবহার করছে। আইএসের অন্যতম দর্শন হলোÑ কালো পতাকা, ইমাম মেহদী এবং শেষ বিচারের দিনের আগে দাবিখ অথবা আমাক যুদ্ধপ্রান্তে রোমের শক্তিকে পরাস্ত করে ইসলামের গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। ‘রোম’ বলতে খ্রিস্টান শক্তিকে বোঝায়, যে কারণে আইএস ‘শেষ ক্রুসেড’ বলে তাদের এই যুদ্ধকে দেখানোর চেষ্টা করছে। ব্যবহার করছে খোরাসান কালো পতাকা আর দাবিখ বা আমাক তত্ত্ব। অন্যদিকে তাদের মতে, ‘রোম’-এর শক্তি আর্মাগেডনের তত্ত্বে আইএস তথা মুসলিমবিশ্বের অব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে ইসলামকে প্রতিহত করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। আইএসের মতে, ‘বাগদাদি’র পতন হলেও এ যুদ্ধ থেমে থাকার নয়, যত দিন পর্যন্ত কোরায়েশ থেকে নবীর ১২ জন উত্তরসূরির আগমন শেষ না হবে। বাগদাদি নিজেকে তাদের একজন মনে করেন এবং তার পর আর তিনজনের আগমন হবে এবং শেষ হবে ইমাম মেহদীর আগমনের মধ্য দিয়ে।
অন্যদিকে বাইবেলের আর্মাগেডনের স্থানও এই জায়গায় বলেও উল্লেখ রয়েছে যে, যুদ্ধ শেষ হবে হজরত ঈসা বা ক্রাইস্টের পুনরুত্থানের মাধ্যমে। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম গবেষক উইলিয়াম ম্যাকক্যান্ট মনে করেন, আইএসের এ দর্শন এবং বিপরীতে বাইবেলের ভবিষ্যৎ বাণীর ব্যাখ্যা আইএসকে মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী করে তুলেছে। দাবিখ শহরটি ২০১৬ সালে আইএসের হাতছাড়া হলেও তা এখন রয়েছে তুরস্ক সমর্থিত ফ্রি সিরিয়ান আর্মির হাতে, যার অন্যতম অনুযোগী আল কায়েদা সমর্থিত আসাদবিরোধী গোষ্ঠী।
এ অতি সংক্ষিপ্ত আলোচনার কারণ, আমাদের দেশের হালের সন্ত্রাসী তৎপরতার সঙ্গে এ দর্শনের যে প্রভাব রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই; যা আলোচিত অনুষ্ঠানে একাধিক বক্তার মন্তব্যে উঠে এসেছে। বিষয়টি যে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নয়, তা স্পষ্ট করেছেন র্যাবের মহাপরিচালক। আমাদের দেশের সমস্যার প্রেক্ষাপটে যাই থাকুক না কেন, বৈশ্বিক প্রভাব যে রয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং এই অনুষ্ঠানের কোনো বক্তাই প্রকারান্তে অস্বীকার করেননি।
‘র্যাব’ একটি কাউন্টার ন্যারেটিভের উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। তবে এ কাজটি তাদের নয়, এর দায়িত্ব সরকার, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর; বিশেষ করে ইসলামিক ইতিহাসবিদদের সম্পৃক্ততা কাম্য। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের দেশে তেমন গবেষণা হচ্ছে বলে মনে হয় না, তেমনি রয়েছে প্রকাশনার অভাব। এ অভাব পূরণের ব্যবস্থা হাতে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ ধরনের দার্শনিক তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে সংগঠিত সন্ত্রাস সহজে নিবৃত্ত করা সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন বিষয়টিকে অনুধাবন করে সমষ্টিগত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ। র্যাবের মহাপরিচালকের সুরে সুর মিলিয়ে বলতে হয় যে, এ সমস্যা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নয়, পুরো সমাজ ও জাতির। সমাধানও খুঁজতে হবে সম্মিলিতভাবে।
এম সাখাওয়াত হোসেন : এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, কলাম লেখক ও পিএইচডি গবেষক
উৎসঃ আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন