সম্প্রতি যে ঘটনা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা ও নানা ধরনের বিশ্লেষণ হচ্ছে সেটি হলো সৌদি আরবের নেতৃত্বে আপাত ৪০টি সুন্নিপ্রধান মুসলিম দেশ নিয়ে গঠিত ইসলামিক সামরিক জোট। এই জোট গঠনের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, এই জোট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জোটগত অভিযান পরিচালনা করবে। জোটের অংশীদার হিসেবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রথম সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন, যা সৌদির রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত হয়। এ উদ্বোধনে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই জোটের একটি সম্মিলিত বাহিনী থাকার কথা, যার নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল রাহেল শরিফকে। ধারণা করা যায়, বেশিরভাগ নেতৃত্বই থাকবে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর। বর্তমানে সৌদি আরবে বহু পাকিস্তানি সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। এমনকি সৌদি বাহিনীর ইয়েমেনে হুতিবিরোধী অভিযানে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কারিগরি সদস্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, এমনকি বিমান হামলায় অংশ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কমব্যাট ব্রিগেড দক্ষিণ সৌদি আরবের ইয়েমেন সীমানায় পাহারার জন্য মোতায়েন রয়েছে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ সৌদি আরবে অনেক তেলক্ষেত্র যেমন রয়েছে, তেমনি সংখ্যাধিক্য শিয়াগোষ্ঠীর বাস।
ইয়েমেনে শিয়া মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে সৌদি অভিযান এবং সিরিয়ার জটিলতম পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া উত্থানের আশঙ্কায়ই এই জোট গঠনের অন্যতম কারণ তাতে কোনো সন্দেহ নেই, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের পর। অবশ্য এই বাহিনীর নামকরণ করা হয়েছে, ইসলামিক মিলিটারি এলায়েন্স টু ফাইট টেররিজম (ওগঅঋঞ) পক্ষান্তরে অনেকে একে মুসলিম ন্যাটোও বলেন।
যাহোক এই জোট গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির উপস্থিতি তার মুসলিমবিরোধী অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে থাকার বিষয়টি কতদূর গড়ায় তা এখন দেখার বিষয়। এই জোটে বাংলাদেশের যোগদান এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে যে বিস্তারিত তথ্যের প্রয়োজন তার জন্য হয়তো আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে ওই অঞ্চলের ভূ-পরিস্থিতির পর্যালোচনায় অনেকটাই পরিষ্কার যে মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে আরব ভূখ-ে, শিয়া জনগোষ্ঠীর ওপর ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং সৌদি আরবের অন্যতম প্রতিবেশী ইরাকে শিয়া শক্তির অবস্থান, বাহরাইনে শিয়া শক্তির প্রভাব এসবই এ অঞ্চলে সৌদি নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে সুন্নিগোষ্ঠী থেকে ইসলামিক স্টেটের উত্থান সৌদি আরবের জন্য ভূ-রাজনৈতিক আঙ্গিকে ততটা সমস্যার সৃষ্টি করেনি, যতটা করেছে ইরানের কথিত প্রভাব বিস্তার। সৌদি আরব তথা উপসাগরীয় আমিরশাসিত রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিপরীতে ইরানের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার প্রভাব যে ওইসব দেশের জনগণের ওপর পড়ছে তার কিছু প্রমাণ সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সৌদি আরবের এই উদ্যোগের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কতখানি অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো বিতর্কিত রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম সফরের দেশ হিসেবে বেছে নেওয়াই প্রমাণ করে। ইতোমধ্যেই ট্রাম্পের প্রথম সফরেই প্রায় ১১০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক ক্রয়ের চুক্তি দিয়ে তার সফরের সূচনা করেছেন। আগামী ১০ বছরে মোট ৩৫০ বিলিয়নের সামরিক ক্রয়েরও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অপরদিকে নতুন নতুন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোও চুক্তি করেছে। সৌদি আরবে উপস্থিত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ দল ‘দি ইউনাইটেড স্টেট ট্রেইনিং মিশন’-এর সদস্য হিসেবে। এদের অবস্থান জোরালো হয়েছে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর থেকে। বর্তমান অর্থনৈতিক ও সামরিক চুক্তি শুধু যে অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল তা নয়, সবচেয়ে বড় লক্ষ্য ছিল সৌদি আরবের মাধ্যমে অন্য দেশগুলোকে ইরানের প্রভাব বিস্তারের বিপরীতে দাঁড় করানো। যুক্তরাষ্ট্র ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সামরিক অস্ত্র উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ সৌদি আরবে রপ্তানি করেছে।
মধ্যপ্রাচ্য এখন যে সমস্যার মুখোমুখি রয়েছে তার দুটি উপাদানের একটি আইএস বা ইসলামিক স্টেটের অবস্থান ও সন্ত্রাসী সংগঠনের ভবিষ্যৎ এবং সিরিয়ায় জটিল পরিস্থিতির সমাধানের উপায়। আইএসের বিরুদ্ধে বর্তমান ন্যাটো জোটের যে অভিযান চলছে তাতে ভূমিতে কোনো আইএসবিরোধী সামরিক বাহিনীর তৎপরতা নেই। যা রয়েছে সেগুলো সিরিয়ার আসাদবিরোধী কয়েক গোষ্ঠীতে বিভাজিত মিলিশিয়া বাহিনী, যার মধ্যে ন্যাটো সমর্থিত ফ্রি সিরিয়ান আর্মি। কিন্তু এই মিলিশিয়া সংগঠনটি আইএসকে পরাস্ত করতে কত সময় নেবে তা বলা বড় কঠিন, কারণ ইরাকি বাহিনী এখনো সমগ্র মসুল শহর দখলে নিতে পারেনি। এই যুদ্ধ চার মাসের ওপর গড়িয়েছে, যদিও ইরাকি বাহিনীর সমর্থনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপদেষ্টা এবং বিমান বাহিনীর শক্তি। এখন যে বড় প্রশ্নটি সামনে আসছে তা হলো মসুল পতনের পর এই সুন্নি অধ্যুষিত শহরটির ভবিষ্যৎ কী হতে পারে।
অপর প্রশ্নটি যা মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নকশা পাল্টাতে পারে তা হলো সিরিয়ার বাশার আল আসাদ, যার পেছনে রয়েছে ইরান আর লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং পরাশক্তি হিসেবে রাশিয়া ও চীন, সিরিয়া প্রশ্নে কি ভূমিকা পালন করবে। বর্তমানে বাশার বাহিনীর হাতে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সিরিয়া রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। মাত্র কয়েকদিন আগে দখল নিয়েছে হোমস শহর। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সিরিয়া থেকে ইসলামিক স্টেট এবং আল কায়েদা সমর্থিত সুন্নিগোষ্ঠীকে পরাজিত করতে হলে সিরিয়ায় মার্কিন সহযোগিতায় আঞ্চলিক সুন্নি শক্তিগুলোকে কাজে লাগাতে হবে যা সৌদি আরবে ইসলামিক-আমেরিকান সম্মেলনে তার বক্তৃতায় পরিষ্কার হয়েছে। সিরিয়ার বর্তমান জটিল পরিস্থিতি সিরিয়ার সম্ভাব্য তিন ভাগে ভাগ হওয়ার পরিকল্পনায় রয়েছে। কথিত যুক্তরাষ্ট্রের এই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় সুন্নি অঞ্চল তৈরিতে এবং ইরানের হাত থেকে আসাদকে বের করার পরিকল্পনায় এই জোট কতখানি সহযোগিতা করবে বা আদৌ করবে কিনা।
সিরিয়ার পরিস্থিতি দারুণ এক জটিল চৌরাস্তায় রয়েছে। সিরিয়ায় সম্পূর্ণভাবে আসাদ তথা শিয়া কর্তৃত্ব হারাবে এমন চিন্তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো সরে এসেছে। অপরদিকে সিরিয়া আর ইরান মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার শেষ ভরসা। কাজেই রাশিয়া যে এখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ তা নতুন করে বলার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয় না। সিরিয়া সংকট এখন শিয়া-সুন্নি বিভাজনে রয়েছে, এমনকি আইএসের উত্থানের পেছনে যে উপসাগরীয় দেশ এবং সৌদি আরবের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল, সে বিষয়টি এখন আর রাখডাকে নেই। সিরিয়ার এই সংকটের এক প্রান্তে রয়েছে তুরস্ক। তুরস্কের সেনারা সিরিয়ার অভ্যন্তরে বহু আগ থেকেই সামরিক অভিযানে লিপ্ত। তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আসাদবিরোধী সিরীয় কুর্দিদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। সিরীয় কুর্দিরা, ইরাকি কুর্দি এবং তুরস্ক অঞ্চলের কুর্দিদের সঙ্গে সহযোগিতা করে আসাদবিরোধিতা করলেও তুরস্কের রোষানলে রয়েছে। তুরস্কের সেনারা এখন তুরস্কের পিকেকে কুর্দি মিলিশিয়াদের সঙ্গে যুদ্ধরত। কাজেই আসাদের পতন অথবা সিরিয়ার ভাগ হয়ে যাওয়ার পূর্বক্ষণে তুরস্কের ভূমিকা কী হবে সেটাও এই জোটের অন্যতম বিবেচ্য হবে, যদিও তুরস্ক সৌদি নেতৃত্বের জোটের অন্যতম প্রধান দেশ, যার সামরিক ক্ষমতা ওই অঞ্চলের যে কোনো দেশ থেকে অধিক এবং একমাত্র মুসলিম দেশ যা ন্যাটোর সদস্য।
এই জটিল মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে প্যালেস্টাইন-ইসরায়েল সমস্যা। যদিও মার্কিন রাষ্ট্রপতি এই দুই জায়গাই সফর করবেন এবং মুখে শান্তি স্থাপনের কথা বললেও কতখানি আন্তরিক সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। ইসরায়েল সৌদি আরবকে এত বিপুল পরিমাণ আধুনিক অস্ত্র বিক্রয় নিয়ে খুব খুশি হতে পারেনি। এখন পর্যন্ত (এই লেখা পর্যন্ত) নেতানিয়াহু ট্রাম্পের সম্মানে পরিকল্পিত নৈশভোজ বাতিল করেছেন। এমনটা যদি হয় তবে ট্রাম্প, যিনি তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দেওয়ার ওয়াদা করেছিলেন, তিনি কীভাবে শান্তি স্থাপনের বিষয়টিতে কতখানি আন্তরিক হবেন তা বুঝতে আরও সময় লাগবে।
জোট গঠনের এবং কনফারেন্সে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান সম্বন্ধে যে মন্তব্য করেছেন তাতে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চোখে বর্তমান ইরানের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তিনি পক্ষান্তরে ইরানকেই মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসের সহায়ক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি মাত্র দুদিন আগে নরমপন্থি বিবেচিত হাসান রুহানি প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। হাসান রুহানি তার বক্তব্যে বলেছেন, তিনি পশ্চিমা রাষ্ট্র তথা সব দেশের সঙ্গে সম্পর্কের সূচনা করতে চান। একদিন পর ইসরায়েলে পৌঁছে আরেকবার ইরানকে এই অঞ্চলের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করে বক্তব্য দিয়েছেন যা প্রায় ইসরায়েলের মনোভাব। ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক শক্তি অর্জন নিয়ে দারুণ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে থাকে। এর একদিনের মাথায় ইসলামিক জোটের উদ্বোধনী বক্তব্যে ইরানকে যেভাবে হেয় করেছে তা এ অঞ্চলে শিয়া-সুন্নি সংঘাতকে আরও উসকিয়ে দেবে। এমন ইঙ্গিত ট্রাম্প প্রদত্ত বক্তব্যেই রয়েছে। তিনি তার বক্তব্যে উপস্থিত রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদের বলেন, এ অঞ্চলে ইরানই দুষ্ট চক্র। আরও পরিষ্কার করে বলেন, ‘লেবানন থেকে ইরাক, ইরাক থেকে ইয়েমেন ইরান জঙ্গি, মিলিশিয়া এবং অন্য চরমপন্থিদের অর্থ এবং প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, যাতে সমগ্র অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তার মতে, ‘যতদিন ইরান শান্তির পথ না ধরবে ততদিন উপস্থিত জাতিসমষ্টি ইরানকে একঘরে করে রাখার জন্য একসঙ্গে কাজ করবে।’
ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের রিয়াদ সম্মেলনে এবং জেরুজালেমে পৌঁছে যে শক্ত বক্তব্য দিয়েছেন তার জবাবে ইরানের সদ্য পুনর্নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানি বলেছেন, ট্রাম্প এ অঞ্চলের জটিলতা সম্বন্ধে কিছুই জানে না বরং এ অঞ্চলে সেক্টেরিয়ান বিভাজন সৃষ্টি করছেন। ইরান মধ্যপ্রাচ্যের সব সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। অপরদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মনে করেন, ইরানই বর্তমানে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় শত্রুভাবাপন্ন দেশ। যাহোক তিনি তার বক্তব্যে ‘ইসলামিক টেররিস্ট’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন যা তার লিখিত বক্তব্যে ছিল না। তার এই উক্তি সন্দেহাতীতভাবে পূর্বতন অবস্থানের পরিচায়ক।
এ জোট গঠনের মাধ্যমে এবং সৌদি আরবের এই বিশাল অস্ত্রভা-ার ক্রয়ের আদেশ ট্রাম্পের ব্যবসায়িক কূটকৌশলের বিজয় হলেও এ অঞ্চলে দারুণ এক অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা করবে। প্রথম পর্যায়েই সৌদি আরব ১৫০টি আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টার ‘ব্ল্যাক হক’ পেতে যাচ্ছে, যা হবে এতদঞ্চলের সবচেয়ে বড় অ্যাটাক হেলিকপ্টার বহর। আরও রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক এবং চড়া মূল্যের লকহিড মার্টিনের এন্টি ব্যালাস্টিক মিসাইল রাডার যার মধ্যস্থতা করেছেন ট্রাম্পের ব্যবসায়ী জামাতা ক্রুশনার। এই সফর ট্রাম্পের জন্য তার রাশিয়া সম্পর্কের তদন্তে ছায়ার কাজ করতে পারে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এত বড় রপ্তানি অর্ডার নিয়েছেন।
যাহোক ইসলামিক মিলিটারি জোটে অংশগ্রহণ করার পেছনে বাংলাদেশের স্বার্থ যতটুকু রয়েছে তা কতখানি সফল হবে, ফলাফল পেতে হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। তবে বাংলাদেশের এই যুক্ত হওয়া যেন অন্য দেশের, বিশেষ করে ইরান ও রাশিয়া ভুল ব্যাখ্যা না করে সে বিষয়ে আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তরকে যতœবান হতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে যে, আমরা যেন জটিল মরু ঝড়ের মধ্যে পড়ে না যাই।
মধ্যপ্রাচ্যের জটিলতা কমার নয় বরং জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমনি বৃদ্ধি পাবে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, তা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সহায়ক হবে না। তবে জোটের শরিকদের কার কী লাভ হবে তা অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও পুরনো ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প এ অঞ্চলে অস্ত্র ব্যবসায়ের দরজা খুলে দিয়েছেন। একদিকে ইসরায়েল অপরদিকে তুরস্ক, উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো অন্য প্রান্তে ইরান এক বড় ধরনের প্রতিযোগিতায় নামবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম রাষ্ট্রের কর্ণধারদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দাঁড়াতে বলে এক কথায় বলে গেলেন যে, এ সমস্যা ইসলামিক টেররিজমের, যা সামলাতে হবে তাদেরই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি শান্তি স্থাপনের পথে ইরানকে প্রতিবন্ধক চিহ্নিত করলেও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল, আফগানিস্তান, সিরিয়া এমনকি ইরাকের সংকটের সমাধানের কথা একবারও উল্লেখ করেননি। যেমন করেননি ইয়েমেনে সৌদি অভিযানের কারণে মানবিক বিপর্যয়ের।
যাহোক সৌদি আরবের নেতৃত্বে এই জোট ভবিষ্যতে কীভাবে এবং কোথায় একযোগে কাজ করবে তা হবে দেখার বিষয়। তবে বাংলাদেশের প্রাপ্তি যাই থাক, এই জোটে অংশগ্রহণ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক দলই দাঁড়াবে না তা এক প্রকার নিশ্চিত, তা যতই বাম বা ডানপন্থি হোক। অন্তত এই বিষয়ে একমত হতে পারা গেছে মনে হয়। আশা করব বাংলাদেশের সরকার বিচক্ষণতার সঙ্গে দেশের প্রাপ্তি আর পরিস্থিতির জটিলতার বিবেচনা করবে।
য় এম সাখাওয়াত হোসেন : সাবেক নির্বাচন কমিশনার, কলাম লেখক ও পিএইচডি গবেষক
উৎসঃ আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন