বেশ কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলাম। নিছক ভ্রমণে কাটিয়েছি প্রায় ১৮ দিন। আমার সফরসঙ্গী ছিলেন আরও ১২ জন। বহুদিন থেকে বিশ্বের বহু দেশে একসঙ্গে বেড়াতে বেড়াতে একটি সফর গ্রুপ তৈরি হয়েছিল। প্রথমে ছোটই ছিল এই পরিধি, আমি যুক্ত হয়েছিলাম ২০১২ সালে। পরে আরও কয়েকজন যুক্ত হয়েছিলেন। এখন মাঝে মধ্যে অনেকেই যুক্ত হন। এবার ছিলেন হাবিবুর রহমান খান, জাকারিয়া, ড. তানভীর, জোবায়েদুল হক, শমসের তারা ছিলেন সস্ত্রীক। পরে সরাসরি গ্রিসে যুক্ত হলেন আমানুল্লাহ। একমাত্র আমি ছিলাম একা। ২০১২ সাল থেকে একসঙ্গে প্রতিবছর কোথাও না কোথাও সফর করেছি। গত বছর গিয়েছিলাম রাশিয়ার দুটি শহর মস্কো এবং সেন্টপিটার্সবার্গে প্রায় অপরিবর্তিত গ্রুপ নিয়ে।
এবার গিয়েছিলাম দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বলকান রাষ্ট্র বা অঞ্চল বলে কথিত রাষ্ট্রগুলোয়। বলকান রাষ্ট্রগুলোর বাইরে আর দুটি দেশ গ্রিস ও রোমানিয়াও ছিল আমাদের সফরের তালিকায়। বুলগেরিয়া সম্পূর্ণভাবে না হলেও আংশিকভাবে বলকান রাষ্ট্রগুলোর অন্তর্ভুক্ত। মোট ৮টি দেশের ভ্রমণ তালিকার মধ্যে বসনিয়া-হার্জেগোবিনা, মেসিডোনিয়া, মন্টিনিগ্রো এবং সার্বিয়া এক সময় যুগোসøাভিয়ার অংশ ছিল। এর বাইরে গিয়েছিলাম আলবেনিয়ায়।
আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল গ্রিস থেকে এবং শেষ হয়েছিল রোমানিয়ার বুখাপেস্ট শহরে। শুধু রোমানিয়াই বলকান অঞ্চলের বাইরের দেশ হলেও মাত্র ৫ শতাংশ বলকান অঞ্চলে রয়েছে। তেমনি গ্রিসের ৮০ শতাংশই বলকান অঞ্চলে, যদিও দুটি দেশ বলকান অঞ্চলের বাইরে বলেই প্রচার করে থাকে। গ্রিস সম্পূর্ণভাবেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সর্বদক্ষিণ ও পূর্বের দেশ, যেটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থনৈতিক বলয়ের মধ্যে। ইউরো অঞ্চল। বুলগেরিয়া আর রোমানিয়া ইইউভুক্ত হলেও অর্থনৈতিকভাবে একীভূত নয়। অন্য দেশগুলো ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) অথবা ইউরো কারেন্সির দেশ নয়। এসব দেশই মূলত ইইউর দেশগুলোর তুলনায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিমাপে পিছিয়ে থাকা দেশ।
গ্রিসের অর্থনৈতিক মন্দা ইইউর জন্য এক ধরনের বোঝা হয়ে রয়েছে। এখনো গ্রিস মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। যদিও গ্রিসের মাথাপিছু আয় ১৭,৯০১ মার্কিন ডলার। জনসংখ্যার দিক থেকেও বড়। প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যার দেশ, যার আয়তন ১,৩১,৯৫৭ বর্গকিলোমিটার। গ্রিসের প্রধান আয়ের উৎস সেবা খাত, যা জিডিপির প্রায় ৮০ ভাগের জোগান দেয়। এর মধ্যে রয়েছে সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরি, বিভিন্ন দেশের সমুদ্রগামী জাহাজ কোম্পানির নিবন্ধন এবং জ্বালানি তেল শোধনাগার। গ্রিসের বাণিজ্যিক জাহাজ ব্যবসা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংস্থা বলে বিবেচিত। এর বাইরে কৃষিতেও বেশ উন্নত, বিশেষ করে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে। এ অঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম অলিভ অয়েল উৎপাদনকারী দেশ। পশ্চিম ইউরোপের মূল রাষ্ট্র থেকে পিছিয়ে থাকলেও উন্নত দেশের অন্তর্ভুক্ত।
গ্রিস, বিশেষ করে রাজধানী এথেন্স এবং আশপাশের শহরগুলো পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। গ্রিক সভ্যতার নিদর্শনগুলো খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ বছরের বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রিক সভ্যতার বিষয় এবং বিবরণ পাঠকমাত্রই অবগত রয়েছেন। গ্রিস স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে মার্চ ২৫, ১৮২১ সালে। এখানে গ্রিক, রোমান, বাইজেনটাইন সভ্যতার নিদর্শনগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এক সময় মেসিডোনিয়া গ্রিসের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মেসিডোনিয়ার খ্যাতির সঙ্গে দুজনের নাম সাধারণ মানুষের কাছে অতিপরিচিত। মেসিডোনিয়ার শাসক ফিলিপ এবং তার পুত্র বিশ্ব ইতিহাসখ্যাত দিগি¦জয়ী বীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট যার আগমন হয়েছিল উপমহাদেশের পাঞ্জাব পর্যন্ত; সময় ৩৫৬ থেকে ৩২৩ খ্রিস্টপূর্ব। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টোটলের শিষ্য ছিলেন আলেকজান্ডার।
গ্রিস বিশ্বে প্রথম গণতন্ত্রের ধারক এবং সিটি স্টেটের প্রবর্তক। অন্যান্য বলকান দেশের মতো গ্রিসও প্রায় ৩০০ বছর ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। ধর্মের দিক থেকে গ্রিস গ্রিক অর্থডক্স খ্রিস্টানÑ সাধারণত পূর্বাঞ্চলীয় খ্রিস্টান বলে পরিচিত। ওসমানিয়া ধর্মের ব্যাপারে উদার ছিল বলেই গ্রিস গোঁড়াপন্থি খ্রিস্টান (ঙৎঃযড়ফড়ী) হিসেবেই রয়ে গেছে। পরে ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এ অঞ্চলে ওসমানীয়দের পতন শুরু হলে গ্রিস স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পুনরায় আত্মপ্রকাশ করে। তবে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে রাজার ক্ষমতা খর্ব করা হয় এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। পরে সরকার এবং সমর্থক দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সমান্তরাল দুই সরকারের একভাগ জার্মানির পক্ষে, অপর ভাগ মিত্রপক্ষকে সমর্থন করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই রাজা এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার দ্বন্দ্বের পর লোয়ান্নিস মেটাব্রসাসের নেতৃত্বে স্বৈরতন্ত্র কায়েম হয়, যার জের চলে ১৯৭৪ পর্যন্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বহু নাটকীয়তার পর নাৎসি জার্মানি গ্রিস দখল করে। নাৎসিদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে রেসিস্টান্স যুদ্ধ। বর্তমানে গ্রিস ন্যাটো জোটের সদস্য এবং গণতান্ত্রিক দেশ। গ্রিসের বর্তমান বড় সংকট জনসংখ্যা। জন্মের হার ১.৪১ যা বর্তমান জনসংখ্যাকে সমান রাখছে না। জনসংখ্যার বেশিরভাগই শহরকেন্দ্রিক।
গ্রিস অবশ্য বিশ্ব পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। গ্রিসের অলিম্পিয়া গ্রাম থেকেই শুরু হয়েছিল আজকের অলিম্পিক গেম। হুমারের ওডিসি আর দ্য ইলিয়াডের ট্রোজান ওয়ারÑ প্লেটো, অ্যারিস্টোটাল, পিথাগোরাস, সক্রেটিসের দেশ গ্রিস কয়েকদিনে দেখা সম্ভব নয়। আমরা মাত্র তিন দিনে গ্রিসের সামান্যই দেখতে পেরেছি।
গ্রিস বর্তমানে ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠেছে বলে আমাদের গাইড জানালেন। একই সঙ্গে জানালেন যে, গ্রিস অর্থডক্স খ্রিস্টান গির্জা এবং বিশপদের দ্বারা দারুণ প্রভাবিত এবং এরা শুধু শক্তিশালীই নয়, অভাবনীয় বিত্তবান। প্রতিটি মনেস্টারি, ব্যাসিলিকা আর গির্জার যে সম্পত্তি রয়েছে তা গ্রিসের সেন্ট্রাল ব্যাংকেরও বেশি। গ্রিসের মন্দাভাব কাটাতে অর্থডক্স চার্চ সরকারকে তাদের সহায়তার আহ্বান জানিয়েছিল কিন্তু বর্তমান সরকার তা গ্রহণ করেনি, যদিও গ্রিসে গির্জার পুরাহিতরা সরকারের বেতনভুক্ত এবং গির্জার আয় ট্যাক্সমুক্ত। গির্জার বিদ্যুৎ ও অন্যান্য ব্যবহারিক সবই বিনামূল্যে সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত। স্কুলে গ্রিক অর্থডক্স ধর্মের শিক্ষা বাধ্যতামূলক।
গ্রিস নিয়ে অনেকখানি লেখার কারণ বিশ্বের অন্যতম সভ্যতার ধারক হিসেবে, বিশেষ করে ইউরোপিয়ান সভ্যতার গোড়াপত্তনও করে গ্রিক সভ্যতা বাদবাকি ৭টি দেশের ৫টি দেশই এক সময় যুগোসøাভিয়ার অংশ ছিল যে ফেডারেশন প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জোসেফ রোজ টিটোর মাধ্যমে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তৎকালীন রাজকীয় যুগোসøাভিয়া যুদ্ধরত কোনো পক্ষে যোগ না দিলেও অক্ষশক্তি দখল করেছিল। অপরদিকে রাজকীয় শক্তি ১৯২৯ গঠিত উসটাসের (টংঃধংব) সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল সার্ব, ইহুদি আর রোমা জিপসিদের নিধনে, অন্য আরেক অংশ সার্ব রাজকীয়দের সহায়তায় ছিল। অপরদিকে জোসেফ রোজ টিটোর শক্তি ১৯৪৩ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষলগ্নে সোস্যালিস্ট ফেডারেল রিপাবলিক অব যুগোসøাভিয়া গঠন করে। প্রায় ৪০ বছর টিটো যুগোসøাভিয়াকে একক ফেডারেশন হিসেবে ধরে রেখেছিল।
এত বছর একটানা এককভাবে ক্ষমতায় থাকলে তার পরিণতি যা হয় তাই হয়েছে যুগোসøাভিয়ায়। টিটোর মৃত্যুর পর (১৯৮০) দশ বছরের মাথায় যুগোসøাভিয়ায় ভাঙন শুরু হয়। একে একে ছয়টি রাজ্য স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সার্ব আর ক্রোয়েটসদের মধ্যে প্রথম গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। কসোভো আলবেনীয়দের নিয়ে বৃহত্তর সার্ব অঞ্চল গঠনে সার্ব-ক্রোয়েটস হানাহানির মাঝেই মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল বসনিয়া-হারজেগোবিনা স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ওই অঞ্চল তিনটি প্রধান গোষ্ঠী দ্বারা অধ্যুষিত এবং বসনিয়ায় যারা মুসলমান, ক্রোয়েশিয়ানস এবং সার্ব অন্যান্য অঞ্চলের মতো বসুনিয়াও প্রায় সাড়ে চারশ বছর ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। বসনিয়া-হারজেগোবিনার স্বাধীনতা ঘোষণার পর যা হয়েছিল তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বৃহৎ মানবতাবিরোধী অপরাধ, যার বিচার এখনো চলছে।
আমরা মেসিডোনিয়া, মন্টিনিগ্রোয় কয়েকদিন কাটিয়ে বসনিয়ার রাজধানী সারাজেভোতে দু’রাত কাটিয়েছি। পাহাড়ে ঘেরা ছোট শহর। মূলত মুসলিম অধ্যুষিত একমাত্র ইউরোপিয়ান শহর, যার গোড়াপত্তন করেছিলেন ইসাবেগ ইসাকাভিক, যার নামে সারাজেভোর পুরনো শহরের প্রধান চত্বর এবং ইস্তানবুলের গ্র্যান্ড বাজারের অনুরূপ ছোট আচ্ছাদিত বাজারের প্রবেশপথে। তার পাশেই শহরের প্রধান মসজিদ ‘কারেভো জামাজিয়া, তৈরি হয়েছিল সুলতান দ্বিতীয় মেহমুদের সম্মানে। এই শহর থেকেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল, যখন এক সøাব যুবক গ্যাবেরিলো প্রিসসিপ অস্ট্রোহাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের হবু শাসক যুবরাজ ফ্রাঞ্জ ফারডিনান্ড এবং তার স্ত্রী সোফিয়াকে হত্যা করেন। ওই জায়গাটি সারাজেভোর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মিলজাকা নদীর ওপরের সবচেয়ে পুরনো পুলের, যেটি তৈরি করেছিলেন আলী আজনী বেগ, পাশে এখনো চিহ্নিত রয়েছে।
বসনিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় এই শহরটি ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রথমে যুগোসøাভ পরে সার্ব মিলিশিয়া দ্বারা অবরুদ্ধ ছিল। মোট ১,৪২৫ দিন এ শহরের বাসিন্দারা অবরুদ্ধ ছিলেন, যা ছিল বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা সময়ের অবরোধ। এ অবরোধ ছিল স্ট্যালিনগ্রাডের তিনগুণ এবং লেনিনগ্রাদ অবরোধের এক বছর বেশি সময়ের।
বসনিয়া-হার্জোগোবিনায় যা ঘটেছিল তা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদি নিধনের চিত্রের প্রায় অনুরূপ। শুধু ছিল না গ্যাস চেম্বার। প্রায় ষাট হাজার মহিলা পরিকল্পনার ছকে ধর্ষিত হয়েছিল সার্ব মিলিশিয়াদের হাতে। যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে এসব মহিলাকে ক্যাম্পে রেখে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরও প্রসবের প্রাক্কালে ছেড়ে দেওয়া হতো। অন্তঃসত্ত্বা নিশ্চিত করতে ‘গ্যাং রেপ’ করা হয়েছিল বসনিয়ার আগামী প্রজন্মে সার্বদের রক্ত প্রবাহিত করতে। এটা ছিল এসনিং কিন্সিংয়ের এক অধ্যায়। অতীতের মতো এবারও ইউরোপের এবং পরাশক্তিগুলো সম্পূর্ণ সময়ের জন্য কথার ফুলঝরি ছাড়া আর কিছুই করেনি, যেমনটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং আগে চারটি বছর নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী কর্মকা-ে তেমন কিছুই করেনি।
হিটলারের ফাইনাল সলিউশন শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে খোদ জার্মানি থেকে। ইতিহাস ও সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, হিটলার ব্রিটেন ও রাশিয়া আক্রমণ না করলে হয়তো ইউরোপে যুদ্ধ আরও দেরিতে হতো। রাশিয়ায় ইহুদি নিধন আরও আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। এমনটাই আমার মনে হয়েছিল সারাজেভোতে মানবতাবিরোধী অপরাধের জাদুঘর দেখার সময়। বারবার মনে হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতার সময়ের কথা। ক্রোয়েশিয়ায় যদি অর্থডক্স সার্বদের হাতে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের নিধন না হতো তাহলে হয়তো ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র এত তাড়াতাড়ি মাঠে নামত না।
ছিমছাম সুন্দর শহর সারাজেভো, মাঝ দিয়ে এক সময়ের খরস্রোত মিলজাকা নদী বয়ে যাচ্ছে। বৃহত্তর সারাজেভো শহরের জনসংখ্যা ৬,৪৩,০১৬ মাত্র।
যাহোক বসনিয়া-হারজেগোবিনা এ অঞ্চলের দরিদ্রতম দেশ। মাথাপিছু আয় প্রায় সাড়ে চার হাজার মার্কিন ডলার। প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকা- কৃষি তবে কিছু কিছু শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ এখনো তেমনভাবে দাঁড়াতে পারেনি। ক্রমেই বাইরের লগ্নি বসনিয়ার অর্থনীতি চাঙ্গা করছে। সারাজেভোসহ অন্যান্য অঞ্চল প্রচুর পর্যটককে আকর্ষণ করছে। পর্যটনশিল্প আয়ের অন্যতম উৎস। ইউরোপের পর্যটন অঞ্চলের মধ্যে ১৪তম স্থানে বসনিয়া-হারজেগোবিনাÑ যার মধ্যে রয়েছে ক্রোয়েটস এবং সার্ব দুটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল।
বসনিয়ানরা প্রচুর রক্ত দিয়ে তাদের স্বাধীনতা রক্ষা করেছে। সবচেয়ে বড় হত্যাযজ্ঞ ঘটেছিল স্রাবেনিয়ায়। আমাদের উপস্থিতিতেই স্রাবেনিয়ার হত্যাযজ্ঞের ২২ বছর স্মরণ করা হচ্ছিল। একটি ছোট গ্রামের ৮ হাজার নারী-শিশু আর বৃদ্ধকে হত্যা করেছিল সার্ববাহিনী। এরা সবাই ছিল মুসলিম। যাকে নাম দেওয়া হয়েছে এথনিক কিন্সিং। প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ বসনিয়াবাসীকে হত্যা করা হয়েছিল ওই যুদ্ধে। বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীর ইউরোপে এমন ঘটনা ঘটবে তা ভাবা যায়নি। বিশ্বের পরাশক্তিও প্রায় দশ বছর এ অঞ্চলের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছিল। যখন পদক্ষেপ নিয়েছিল ততক্ষণে ইউরোপের ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায় যুক্ত হয়েছিল।
আমাদের সফর শেষ হয়েছিল সার্বিয়া, বুলগেরিয়া হয়ে রোমানিয়ার রাজধানী ‘বুখারেস্ট’।
এম সাখাওয়াত হোসেন : সাবেক নির্বাচন কমিশনার, কলাম লেখক ও পিএইচডি গবেষক
উৎসঃ আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন