গত ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমারের এককালের বার্মা, উত্তর রাখাইন, এককালের আরাকান অঞ্চলে যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে বর্বরোচিত হামলা হয়েছে, এ কথা বাংলাদেশের সবারই জানা রয়েছে। ফলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ যে সংকটে পড়েছে, তাও এখন সবার জ্ঞাত। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এবারই প্রথম বিশ্বব্যাপী কয়েকটি দেশ ছাড়া রোহিঙ্গানিধনকে জাতিগত নির্মূল ও গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সোচ্চার হয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু এ ধরনের নৃশংসতা এবারই প্রথম নয়। বস্তুতপক্ষে মিয়ানমারে ১৯৬২ সালের পর থেকে শুধু আরাকান অঞ্চলেই নয়, জাতিগতনিধন প্রক্রিয়া তৎকালীন বার্মার প্রায় সব জাতিগোষ্ঠীই প্রত্যক্ষ করেছে। তবে জাতিগোষ্ঠীর বেশিরভাগই বার্মা (মিয়ানমার) সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে এ নিধনের প্রতিরোধ করেছে। ওই সময় থেকেই বিশেষ করে বার্মা বা মিয়ানমার ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের মধ্যে রয়েছে। এর অবসান আজও হয়নি।
অবশ্য বার্মা বা মিয়ানমার (বর্তমান নামেই অবহিত হবে) স্বাধীন হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গারাও তাদের ওপর বিভিন্ন নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি, বরং প্রতিবাদ সহিংসতার শিকার হয়ে বিভিন্ন দেশে পালিয়েছে। ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে ফিরে গিয়েছিল। তবুও বিভিন্ন আঙ্গিকে হয়রানি শেষ হয়নি। এর পর ১৯৯৩ সালে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা পুনরায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল এবং অল্পসংখ্যক ফিরে গেলেও ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা রয়ে গিয়েছিল। তাদের অনেকেই বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছিল। এখনো ওই সময়কার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ অঞ্চলে রয়ে গিয়েছে। এবারে আসাদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ এবং এ আগমন বন্ধ হয়নি। কবে বন্ধ হবে, তাও বলা যায় না।
বাংলাদেশ সরকার দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি এ সমস্যার সমাধান হবেÑ এমন ভাবার কোনো কারণ আপাতত দৃশ্যমান নয়। মিয়ানমার উত্তর রাখাইনের এসব রোহিঙ্গাকে প্রথম থেকেই বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করে নাগরিকত্ব, এমনকি জাতিগত স্বীকৃতিও দেয়নি। এসবই জানা তথ্য। মিয়ানমার তার ইতিহাসকে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, এ জনগোষ্ঠী রাখাইন অঞ্চলে ১৮৪২ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ গঠন করার পর আসা। কাজেই এর আগে যারা মিয়ানমার বা তৎকালীন বার্মায় স্থায়ী ছিল, তাদের মধ্যে গণ্য নয় এবং ওই ব্যাখ্যাই নাগরিকত্বের প্রথম শর্ত।
এসবই এখন পুরনো কথা। আমাদের দেশে এসব বিষয় নিয়ে প্রতিদিনই প্রচুর লেখা হচ্ছে, হচ্ছে বিতর্ক আর আলোচনা। আমরা সবাই যারা এর সঙ্গে মাঝে মধ্যে যুক্ত হই বা হচ্ছি, আমাদের মধ্যে অনেকেই এ দেশটির সঙ্গে আগে তেমন পরিচিত ছিলাম না। আজও তেমনটি নই। অবশ্য ভারত ছাড়া আর যে দেশটি আমাদের প্রতিবেশী, সেটিই মিয়ানমার বা এক সময়কার বার্মা। বার্মা, আকিয়াব বা রাখাইন এবং এ অঞ্চলের রাজধানী এক সময়ের আকিয়াব বা বর্তমানের সিতওয়ে বন্দর বাংলা সাহিত্যের অনেকাংশজুড়ে উল্লেখিত রয়েছে। এক সময়ের রেঙ্গুন বর্তমানের ইয়াঙ্গুন এখন আর রাজধানী নেই। ওই শহরটি এখন মিয়ানমারের প্রধান বাণিজ্যিক শহর। ব্রিটিশ সময়কার তৈরি ওই শহরটি এখন প্রতিদিনই রূপ বদলাচ্ছে। এক সময়কার ঝিমিয়ে পড়া রেঙ্গুন এখন নতুন চাঞ্চল্যে ভরপুর। আমরা সাধারণ মানুষ এ দেশটি সম্পর্কে কতখানিই বা খবর রাখি কিংবা রেখেছি। এমনকি আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতেও ভারত যতখানি জায়গাজুড়ে রয়েছে, এর শতকরা ২৫ ভাগও এ দেশের জায়গায় নেই বা ছিল না। আমরা এ দেশের সঙ্গে তেমন উষ্ণ সম্পর্কও গড়ে তুলতে পারিনি। এ কারণেই আমরা এ দেশটির সামান্যতম পরিচয়ও পাইনি। আমরা সাধারণ মানুষও মিয়ানমারকে তেমন গুরুত্ব দিইনি। অথচ ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে মিয়ানমার বা বার্মা সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ছিলÑ যা এখন আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে।
আমিও প্রায় ৩০ বছর ধরে যে মিয়ানমার বা বার্মাকে চিনেছি, ওই গ-ি থেকে মাঝে মধ্যে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও পারিনি। কাজেই এ দেশের অভ্যন্তরের কিছু বিষয় জানার আগে যা জানা প্রয়োজন, তা হলো মিয়ানমারের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। এ অনুচ্ছেদ তারই একটি প্রয়াস। মিয়ানমার দেশটি যেমন জটিল, তেমনি এরই ইতিহাসও বহু শতাব্দীর। তবে ইতিহাস ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কিছু ধারণা নেওয়ার আগে প্রয়োজন মিয়ানমারের কিছু বৈশিষ্ট্য জানার।
মিয়ানমার বা এককালের বার্মাÑ যে নামটি আমাদের কাছে অধিক পরিচিত, তা ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে ১৪৮ বছর পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৪৮ সালে ৪ জানুয়ারি। আর প্রথম বিদ্রোহ করে উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ড ও চীন লাগোয়া অঞ্চলের ‘কারেন’ হিসেবে পরিচিত জনগোষ্ঠী ১৯৪৯ সালের ৩১ জানুয়ারিÑ যখন তৎকালীন বার্মা রাইফেলের তোড়ে সেনাবাহিনী কারেন করপোরাল স বো মি রাইফেলের প্রথম গুলি ছুড়ে কারেন অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত কারেন বিদ্রোহীরা বিশাল বাহিনী কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি তৈরি করে বর্তমানের মিয়ানমার সামরিক শক্তির সঙ্গে যুদ্ধরত। কারেন অঞ্চলের বহু মানুষ ভিটামাটি ছাড়া হয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে এবং এখনো রয়েছে। শুধু কারেনই নয়, বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল প্রায় সব উপজাতি বা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ।
মিয়ানমার একক জাতিগোষ্ঠীর দেশ নয়, বহুজাতিক রাষ্ট্র। এর প্রধান গোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে প্রধান ১৩টি, পক্ষান্তরে ৮টি মিয়ানমার কর্তৃক স্বীকৃত। ওই ১৩টি হলো কারেন, সান, চিন, তাকোরাকোনী, কাচিন, লিস্যু, রোয়াং, ওয়া, লেহ, পাও, নাগা ও কারেন্নি। তাদের মধ্যে রয়েছে মিয়ানমার কর্তৃক স্বীকৃত ১৩৪টি উপজাতি। এর মধ্যে রোহিঙ্গারা বাদ পড়েছে। দক্ষিণ রাখাইনে যেসব মুসলমান সম্প্রদায় রয়েছে, তারা ‘কামান’ নামে পরিচিত এবং ১৩৪ উপজাতির মধ্যে গণ্য। মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় গোষ্ঠীÑ যাদের বাস লোয়ার বা নিম্ন মিয়ানমার অঞ্চলে, তারা বার্মিজ নামে পরিচিত। বার্মিজরা মিয়ানমারের ৫ কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ২৫৩ জনের মধ্যে ৬৮ শতাংশ। মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার ৮৭ দশমিক ৯ শতাংশ ‘তেরাভেদা’ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তেরাভেদা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা গৌতম বুদ্ধের ‘পালি’ জোটের প্রধান বাহক মনে করে থাকে। অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ৬ দশমিক ২ শতাংশ খ্রিস্টান, ৪ দশমিক ২ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী এবং বাদবাকি ১ দশমিক ৬ শতাংশ।
মিয়ানমারে প্রধান ৭টি ভাষা স্বীকৃত। এর মধ্যে রয়েছে কাচিন, কাইয়া, কারেন, চিন, মন, রাখাইন ও সান ভাষা। জাতীয় ভাষা মিয়ানমারি বা বর্মী।
মিয়ানমারের আয়তন ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫৭৮ বর্গকিলোমিটার এবং আয়তনের দিক থেকে মিয়ানমার বিশ্বের ৩৯তম বৃহৎ দেশ। মিয়ানমারের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, উত্তর-পশ্চিমে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা এবং পূর্বে চীন, লাওস ও থাইল্যান্ড। মিয়ানমার বঙ্গোপসাগরের দীর্ঘতম তটের দেশ প্রায় ১ হাজার ৯৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। প্রধান তিনটি বন্দর সিতওয়ে (আকিয়াব), ইয়াঙ্গুন ও মৌলমিন বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রবন্দর। চীন হালে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের ‘মেড’ দ্বীপে তৈরি করেছে গভীর সমুদ্রবন্দর।
মিয়ানমারের সরকারি নাম ‘রিপাবলিক অব দি ইউনিয়ন অব মিয়ানমার’। এই নামে হলেও মিয়ানমার প্রকৃত অর্থে ইউনিয়ন নয়Ñ যেমনটি ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ‘ইউনিয়ন অব বার্মা’ হিসেবে পরিচিত ছিল। মিয়ানমারের বর্তমান রাজধানীর নাম নেইপিদো এবং নতুন শহর হলেও অন্যতম বৃহতম শহর। মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর বর্তমানের প্রধান বন্দর শহর ও পূর্বতন রাজধানী ইয়াঙ্গুন।
মিয়ানমার ৭টি রাজ্য ও ৭টি অঞ্চলে বিভক্ত। রাষ্ট্রটি হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণ দিকে উত্তর-দক্ষিণে তিনটি পর্বতমালা দ্বারা বিভাজিত। এর মধ্যে প্রধান রাখাইন ইয়োমা, বাগো ইয়োমা ও সান ইয়োমা। প্রতিটি উপত্যকা তিনটি প্রধান নদী দ্বারা বিধৌতÑ ইরাবতী, সালউইন ও সিতাং নদী। ইরাবতী মিয়ানমারের দীর্ঘতম নদী। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২ হাজার ১৭০ কিলোমিটার। তা পতিত হয় দক্ষিণে মারতাবান উপসাগরে। মিয়ানমারের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী ইরাবতী নদীবিধৌত অঞ্চলেই বসবাস করে। এ উপত্যকাটি রাখাইন ইয়োমা ও সান উপত্যকার মাঝের সমতল ভূমি। রাখাইন রাজ্যটি প্রায় সমুদ্রতটজুড়ে এবং অধিকাংশ সমতলভূমি ও রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে বন্দর (আকিয়াবে) তটে। কাজেই ওই রাজ্যের ভূকৌশলগত গুরুত্ব সর্বাধিক।
মিয়ানমারে বয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৩০টি বড় শহর, ৬৪টি উপশহর ও ৩৭৭টি শহর। রাখাইন অঞ্চলের ঐতিহাসিক রাজধানী ও গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক শহরের নাম ম্রোক ইউ।
রাখাইন স্টেটÑ যা আমাদের কাছে অতি পরিচিত, এর আয়তন প্রায় ৩৬ হাজার ৭৬২ বর্গকিলোমিটার। আরাকানি ভাষা মিয়ানমারের উপভাষা। রাখাইন রাজ্যের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩১ লাখ ৮৮ হাজার ৮০৭। রাখাইন রাজ্যের স্বীকৃত উপজাতিদের মধ্যে রয়েছে রাখাইন, কাসান, ম্রো, খামি ও অন্যরা। রাখাইনের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী তেরাভেদা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। অন্যরা ইসলাম ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কথিত আছে, রাখাইন শব্দটি পালিভাষা থেকে গৃহীত। এর অর্থ রাক্ষাপুরা, যৎকৃতি ভাষায় রাক্ষাসপুরা। এর মানে, যারা নিজেদের সত্তা বজায় রাখে। তবে ব্রিটিশ শাসন আমল থেকেই এ অঞ্চল আরাকান নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬২ সালের পর সামরিক জান্তা বার্মার নাম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আরাকানের নামও পরিবর্তন করে। তৎকালীন আরাকান ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয় প্রথম এঙ্গলো বার্মিজ যুদ্ধের পর (১৮২৪-২৬)। মংডু রাখাইন অঞ্চলের ৫টি বিভাগের মধ্যে অন্যতম। এ অঞ্চলেই রোহিঙ্গাদের প্রধানতম বাস। এ রাজ্যের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের কারণে এখানে রয়েছে ৫টি বিমানবন্দরÑ সিতওয়ে, কায়পাকু, আন্তওয়ে, অন ও মনোউং। প্রধান ৪টি নদী নাফ, কলোদান, লেমরো ও মেয়উ নদী। মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলের ৭৫ শতাংশ গরিব জনগোষ্ঠী। তবে বর্তমানে চীন ও ভারতের অর্থলগ্নি ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত হতে পারে রাখাইন অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য। প্রধানতম কৃষিকাজই কম জোগানদারি।
বর্তমানে রাখাইন অঞ্চলের রাজধানী সিতওয়ের দক্ষিণে চীনের অর্থনৈতিক বিনিয়োগ বেশি। অন্যদিকে সিতওয়ের উত্তরে ভারতের কালাদান প্রকল্প ও সিতওয়ের উত্তরে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরির প্রকল্প হাতে রয়েছে। এখানে রয়েছে ভারত-চীনের ভূকৌশলগত প্রতিযোগিতা। ভারতের কালাদান প্রকল্পের উত্তরাংশে ছিল মূলত রোহিঙ্গাদের বাস।
রাখাইন অঞ্চলের গরিব জনগোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গারা রয়েছে সবচেয়ে নিম্নে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা কিছুটা শিক্ষিত ও তুলনামূলকভাবে অবস্থাপন্ন ছিল, তাদের বেশিরভাগই অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি পেতে বিভিন্ন দেশে দেশান্তরিত হয়েছে। রয়ে গেছে ভাগ্যাহত মানুষ। তাদের মধ্যে প্রায় নতুন-পুরনো মিলিয়ে প্রায় ৮-৯ লাখ গৃহহারা হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা কবে তাদের জন্মভূমিতে ফিরতে পারবে, তা বলা কঠিন। এটি একটি মানবিক বিপর্যয়। এটি একটি জাতিনিধন এবং বড় আকারের গণহত্যা। মানুষের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় কোনো দেশের নাগরিক না হওয়া বা স্টেটলেস জনগোষ্ঠী হওয়া। রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠী।
মিয়ানমার সম্পর্কে খুব সংক্ষেপে উল্লেখ করলাম মাত্র। তবে এতটুকুতেই মিয়ানমারের মতো জটিল রাষ্ট্রের পরিচয় দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ভবিষ্যতে এ রাষ্ট্রের অন্যান্য দিক তুলে ধরার চেষ্টা করব।
এম সাখাওয়াত হোসেন : সাবেক নির্বাচন কমিশনার, কলাম লেখক ও পিএইচডি গবেষক
উৎসঃ আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন