বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকটের মুখে এর আগেও পড়েছিল, তবে এবারের সংকটের গভীরতা এবং মাত্রা অনেক বেশি। তাই ক্রমেই সংকট জটিল হয়ে পড়ছে। সমাধান সহজ নয়। বাংলাদেশ এমন সংকটের জন্য তৈরি ছিল না। এবার মিয়ানমার সামরিক বাহিনী, অং সান সু চি সরকার ও তেরাভেদা কট্টরপন্থি শক্তি মিলে এক অদ্ভুত জাতীয়তাবাদের জন্ম, যেখানে এক ধরনের হিংস্রতা আর একটি গোষ্ঠীর জন্য ঘৃণা জন্ম দিয়েছে। যাদের আমরা রোহিঙ্গা বলে জানি। এই রোহিঙ্গাদের বাঙালি এবং বেশিরভাগ মুসলমান হওয়ায় উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের শুধু ঘৃণার পাত্রই হয়নি, বরং এক ধরনের আতঙ্কেরও সৃষ্টি করেছে। এক ধরনের ভীতির প্রচার করা হয়েছে যে, ক্রমেই রাখাইন অঞ্চল একটি মুসলিম অঞ্চল হিসেবে মিয়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে, এর উদাহরণ মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাস থেকে টানা হয়েছে। ভিক্ষু ওম্বেথুরু এ তত্ত্বের জন্মদাতা বলে পরিচিত এবং তার পৃষ্ঠপোষকতায় ‘মাবাথা’ নামে বৌদ্ধ উগ্রবাদের উত্থানের সঙ্গে ক্রমেই যুক্ত করা হচ্ছে শ্রীলংকাকে। কাজেই এবারের রোহিঙ্গা সংকটের গভীরতায় একটি অহিংস ধর্মাবলম্বীদের একাংশ তাদের সব আক্রোশ গরিব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নেমে এসেছে।
বাংলাদেশের এ সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বের মিডিয়া, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব মিডিয়া দারুণ সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশ এ সংকট সমাধানে যেমন দ্বিপক্ষীয় পথ ধরেছিল, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সোচ্চার হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহু দেশের সাড়া পেলেও ভারত, চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি বলে দেশের সাধারণ মানুষের মনে এ তিন দেশ, বিশেষ করে ভারত ও চীনের অবস্থান নিয়ে এক ধরনের হতাশা রয়েছে। ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী, যার সঙ্গে চীনের সর্ববৃহৎ অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে। অপরদিকে চীনেরও বৃহৎ সীমান্ত রয়েছে মিয়ানমারের সঙ্গে। ভৌগোলিক ও ভূরাজনীতির বিবেচনায় চীন-মিয়ানমার সম্পর্কে উভয় দেশের জাতীয় স্বার্থ এবং অন্যান্য স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। চীন একমাত্র শক্তি যার গভীর প্রভাব রয়েছে মিয়ানমারের ওপর যা আর কোনো দেশের আছে বলে মনে হয় না।
চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের বা পুরনো বর্মার সম্পর্ক আজকের নয়, বরং এ সম্পর্ক স্থাপিত হয় ভারত এবং তৎকালীন বর্মায় ব্রিটিশ শাসনের শেষের দিকে এবং চীন মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রায় গোড়ার দিকে। এতে যখন বর্মায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা বলে কথিত নিষিদ্ধ ও গোপন সংগঠন কমিউনিস্ট পার্টি তার বর্মা (সিপিবি ঈচই) গঠিত হয়েছিল। এদের জন্ম হয় রেঙ্গুনে।
বর্মায় চীনা কমিউনিস্টপন্থিদের দীক্ষা হয় রেঙ্গুনে চীনা সম্প্রদায়ের একজন বুদ্ধিজীবী উওয়ে সি বা উ চিং সিনের মাধ্যমে, উ তখন সস্ত্রীক সাংহাই থেকে রেঙ্গুনে এসে বর্মা নিউজের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন (১৯২৯ সালে)। উর স্ত্রী রেঙ্গুনে চীনা ভাষার স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। বর্মা নিউজ পত্রিকাটি ছিল চীনা ভাষার পত্রিকা। উর উদ্দেশ্য ছিল বর্মায় স্থিত চীনাদের মধ্যে কমিউনিজমের তত্ত্ব ছড়ানো, একই সঙ্গে বার্মিজ বুদ্ধিজীবী যারা ইংরেজবিরোধী তাদেরও দলে টানা। উর একটি গোপন চিঠি ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ার পর উ বর্মা ছেড়ে যান। তার পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ততদিনে বর্মায় ছোট হলেও চীন আর বার্মিজ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কমিউনিস্ট ভাবধারা ছড়িয়ে পড়ে। জন্ম নেয় সিপিবি বা বর্মা কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু তখনো বর্মার এই উঠতি কমিউনিস্ট পার্টি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি বা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৪০ সালের মধ্যেই চীনের কমিউনিস্ট পার্টি শক্তি সঞ্চয় শুরু করে ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছিল। ওই বছরই সিপিবি তাদের তরুণ সদস্য ব্রিটিশবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য অং সান এবং তার ঘনিষ্ঠ হ্লা মাইয়িং পরে যিনি বো ইয়ান অং নামে পরিচিতকে চীনে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই দুজন গোপনে রেঙ্গুন থেকে একটি ভুল জাহাজে চড়ে চীনের কুন মিং-এর উদ্দেশে রওনা হলেও তারা দক্ষিণ চীনের জাপানের দখলে থাকা অময় নামক জায়গায় পৌঁছলে জাপানি গোয়েন্দারা এই দুজনকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বদলে টোকিওতে নিয়ে যায়।
টোকিওতে এই দুজনকে জাপানের আসন্ন অভিযানকে সমর্থন দিতে অনুরোধ করে জানানো হয় যে, জাপান বর্মা দখলের এক বছরের মাথায় স্বাধীনতা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। অং সাং বর্মায় ফিরে এলেন এবং তার অপর সঙ্গী ব্যাংককে রয়ে গেলেন। অং সাং বর্মায় বাদবাকি ১৯ জন ছাত্রনেতাকে নিয়ে গোপনে পুনরায় টোকিওতে পৌঁছেন। তবে ইতিহাস বলে এদের মধ্যে অনেকেই দক্ষিণপন্থি ছিলেন, যাদের সঙ্গে বেশ সময় থেকেই জাপানের গোয়েন্দাদের যোগাযোগ ছিল। দক্ষিণপন্থিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন উনু, যিনি পরে সেনাপ্রধান এবং সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দখল করেছিলেন। এই তিরিশ জনই বর্মার ইতিহাসে নায়কের মর্যাদায় আসীন রয়েছেন এবং এরাই ইতিহাসে ৩০ কমরেড হিসেবে চিহ্নিত। যাহোক এদের সামরিক ট্রেনিং দেওয়া হয় ওই সময় জাপানের দখলে থাকা তাইওয়ানে। পরে ব্যাংককে ফিরে গঠিত হয় বর্মা ইনডিপেনডেন্স আর্মি। ১৯৪২ সালে জাপান সুভাষচন্দ্র বোসের আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে বর্মা দখল করলে বর্মা ইনডিপেনডেন্স আর্মির সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে ক্রমেই তিরিশ কমরেড পরিষ্কার বুঝতে পারলেন যে, জাপান সহজে বর্মাকে স্বাধীনতা দিতে যাচ্ছে না। যে কারণে বর্মার জাতীয়তাবাদীরা দুজন পরিচিত কমিউনিস্টপন্থি সদস্য থাকিন থেইন পে এবং থাকিন টিনসকে কলকাতা পাঠানো হলো ব্রিটিশ ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। স্বাধীনতার আশ্বাসের পর মার্চ ২৭, ১৯৪৫ সালে বর্মার জাতীয়তাবাদীরা জাপানের পরিবর্তে ব্রিটিশ পক্ষ অবলম্বন করেছিল। বার্মিজ জাতীয়তাবাদীরা যখন দিক পরিবর্তন করছিল তার বহু আগ থেকেই কারেন এবং কাচিনরা জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল। এই দুই গোষ্ঠী জাপানের দখলদারিত্বে প্রথমদিকে বর্মা ইনডিপেনডেন্টস আর্মি জাপানের সহায়তায় তাদের ওপর যে অত্যাচার চালিয়েছিল তা ভোলেনি। স্মরণযোগ্য যে, বিআইএর সদস্যরা ১৯৪২ সালে রোহিঙ্গা নিধনে মত্ত হয়ে তাদের উত্তর আরাকানে ঠেলে দিয়েছিল। এখান থেকেই সংখ্যালঘু জাতীয়গোষ্ঠীর সঙ্গে সংখ্যাগুরু বর্মাদের সঙ্গে সংঘাতের শুরু।
যাহোক জুলাই ১৯৪৭ সালে অং সাং নিহত হওয়ার পর দক্ষিণপন্থি জাতীয়তাবাদী ‘৩০ কমরেড’-এর একজন, উনূ স্বাধীন বর্মার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তাকে সরিয়ে আরেক কমরেড নেউইন মার্চ ২, ১৯৬২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। স্বাধীনতার পর উনূর প্রধান বিরোধ উপজাতিদের কাছ থেকে নয় বরং শুরু হয় বামপন্থি সিপিবি (বর্মা কমিউনিস্ট পার্টি) থেকে। সিপিবি স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রাখলেও দক্ষিণপন্থিরা তাদের ক্ষমতার বাইরে রাখে। সিপিবি দ্বিতীয় শক্তিশালী দল হিসেবে দ্রুত প্রচার পাচ্ছিল। যদিও সিপিবি প্রথমদিকে বর্তমান ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এমএলডি) পূর্বসূরি শাসকগোষ্ঠী এন্টি ফ্যাসিস্ট পিপলস ফ্রিডম লিগের (এএফপিএফএল অঋচঋখ) অন্তর্ভুক্ত একটি অঙ্গ ছিল। সিপিবি ১৯৮৪ সালের মার্চ মাসে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টিতে পর্যবসিত হয়ে তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সব সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল। ওই সময় শুধু বর্মাতেই নয়, মালয়ে (বর্তমানের মালেশিয়া) ইন্দোচীন (বর্তমানের ভিয়েতনাম, লাওস এবং কম্বোডিয়া) এবং ফিলিপাইনের ব্যাপক কমিউনিস্ট আন্দোলন ও সব সংগ্রামের সূত্রপাত হয়।
গবেষকরা এর পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণকে চিহ্নিত করেন। একটি পোল্যান্ডে সোশ্যালিস্ট সোভিয়েত রাশিয়ার দার্শনিক আন্দ্রে জাদানভের ‘কমিনফরম’ তত্ত্ব যা বিশ্বে দুটি ধারার উল্লেখ করেছিল। এর একটি ‘সাম্রাজ্যবাদ’, অপরটি সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে বের হয়ে জাতীয়তাবাদীদের উত্থান যাদের আজও প্রগতিশীল বলে চিহ্নিত করা হয়। এ তত্ত্ব বহু যুগ আফ্রো-এশিয়ান দেশগুলোয় জাতীয়তাবাদী প্রগতিশীল শক্তির উত্থান ঘটিয়েছে। পশ্চিমের অনেক গবেষক ওই সময় বলেছিলেন, কমিনফরমের পুনর্জন্ম হয়েছিল ১৯৩০ দশকের কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল, কমিটেন্টের কবর থেকে।
বর্মা এবং ইন্দোচীন অঞ্চলে কমিউনিস্ট তথা সমাজবাদীদের উত্থানের দ্বিতীয় কারণটি ছিল ১৯৪৮ সালে কলকাতায় বামদের বিশ্ব সমাবেশ। ওই সমাবেশের মূল তত্ত্ব ছিল সোভিয়েত সোশ্যালিজম আফ্রো-এশিয়ান (অভৎড় অংরধহ) সদ্য ঔপনিবেশিক শক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া দেশগুলোর মুক্তির ও মুক্তি-পরবর্তী সমাজগঠনের বিজয়ী তত্ত্ব। তখনো আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে রত। এর পরপরই কলকাতায় আরও বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠিত হয় এশিয়ান ইয়ুথ কনফারেন্স ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সালে। ওই সমাবেশের নাম ছিল ‘এশিয়ান ইয়ুথ কনফারেন্স’। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এমনকি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকেও অনেক বামপন্থি ছাত্রনেতা যোগ দিয়েছিলেন। যারা পরবর্তীকালে তৎকালীন পাকিস্তানে বামধারার রাজনীতির অগ্রপথিক হিসেবে চিহ্নিত হন।
কলকাতার ওই সমাবেশটি হয়েছিল তৎকালীন ওয়েলিংটন স্কয়ার, বর্তমান রাজা সুবোধ মল্লিক স্কয়ার, এর একটি বিশাল হলরুমে। জায়গাটি দিয়েছিলেন ওই সময়ের বাঙালি জাতীয়তাবাদের নেতা মল্লিক, যার নামে এ স্কয়ারটি। ওই সম্মেলনে যাদের শুভেচ্ছা বার্তা পড়ে শোনানো হয়েছিল, যাদের অনেকেই ওই সময় আদৌ কমিউনিজম বা সোশ্যালিজমের ভক্ত ছিলেন না, তাদের মধ্যে ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, বর্মার উনূ, ভিয়েতনামের জাতীয়তাবাদী নেতা হো চি মিন, চেক কমিউনিস্ট নেতা ক্লেমেন্ট গটওয়াস্ত, প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের পতœী ইলিয়েনর রুজভেল্ট। কলকাতার সমাবেশই এ অঞ্চলে কমিউনিজম তথা সোশ্যালিস্ট আন্দোলনকে গতি দেয়।
এ সম্মেলনের প্রায় এক বছরের মাথায় ১৯৪৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ চীনে গণমুক্তি ফৌজের এবং কমিউনিস্ট চীনের বিজয় এসব দেশের তরুণ নেতাদের মাওবাদে আকৃষ্ট করতে থাকে। এশিয়ার দেশগুলোতে চীনের কমিউনিস্টদের তত্ত্ব দারুণভাবে প্রভাবিত করে। মার্ক-লেনিনের তত্ত্বের সঙ্গে যুক্ত হয় মাও তত্ত্ব। দারুণ জাগরণ তৈরি করে আফ্রো-এশিয়া ল্যাটিন আমেরিকার সদ্য স্বাধীন এবং স্বাধীনতাকামী দেশের তরুণ রাজনীতি ও সমাজবিদদের। প্রকৃতপক্ষেই বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত হয়Ñ পুঁজিবাদ আর সাম্যবাদ বা সোশ্যালিস্ট কমিউনিস্ট বিশ্বধারায়। ওই সম্মেলনের পর এ অঞ্চলে, বিশেষ করে ভারতের তেলেঙ্গানায় সিপিআইর নেতৃত্বে আন্দোলন হয়। অপরদিকে সিপিবির নেতা বা থেইন টিন এবং অন্যরা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, বর্মা কমিউনিস্ট পার্টি চীনাধারার সঙ্গে যুক্ত হবে। ধারণ করবে মাও-এর তত্ত্ব। এর অন্যতম কারণ বর্মার প্রতিবেশী দেশ চীন এখন গণচীন নামে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কমিউনিস্ট দেশ। এর পরপর ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ বর্মা সরকারের বিরুদ্ধে মার্চ ১৯৪৮ সাল থেকে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির অনুকরণে ‘বাগো’ থেকে সব সংগ্রামের সূত্রপাত করে। সিপিবির বিদ্রোহের পেছনে ছিল বাঙালি হেমেন্দ্রনাথ ঘোষাল (গ.ঘ. এযড়ংধষ), যিনি ইয়েবো বা কমরেড বা টিন নামে পরিচিত ছিলেন, তার তত্ত্ব যার মূলমন্ত্র ছিল সামন্তবাদী এবং প্রতিক্রিয়াশীলদের নিষ্পেষণ থেকে বর্মার কৃষকদের মুক্তি। ঘোষাল একাই ছিলেন না, তার সঙ্গে আরেক বাঙালি ড. নাগ, যিনি ইয়েবো তুন সং নামে পরিচিত। ড. নাগ ছিলেন সিপিবির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ক্রমেই বর্মার কমিউনিস্ট আন্দোলন বিস্তার শুরু করে এবং সব সংগ্রামে যুক্ত হয় উপজাতীয় স্বায়ত্তশাসনকামীরা।
বর্মার কমিউনিস্ট আন্দোলন চীনের ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের সামনে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করে। তাদের মতে, বর্মা শুধু প্রতিবেশীই নয়, বর্মা হবে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের পিঠস্থান। শুরু হয় বর্মায় নড়বড়ে গণতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে, যা ছিল সাম্রাজ্যবাদের উত্তরসূরি, তাদের বিরুদ্ধে কমিউনিস্টদের দ্বারা পরিচালিত গৃহযুদ্ধ। ১৯৫০ সালের উত্তপ্ত গৃহযুদ্ধের ডামাডোলে উনূ সরকারকে ১০,০০০ যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করে ব্রিটেন এবং অন্যান্য কমনওয়েলথ দেশ। অস্ট্রেলিয়া, তৎকালীন মিলোন এবং পাকিস্তান মিলে ৬ মিলিয়ন পাউন্ড উনূ সরকারকে সহায়তা দেয় কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে।
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্ত)
এম সাখাওয়াত হোসেন : সাবেক নির্বাচন কমিশনার, কলাম লেখক ও পিএইচডি গবেষক
উৎসঃ আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন