মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গারা দীর্ঘ দিন ধরেই নিপীড়নের শিকার। কিন্তু এবারের সহিংসতা এতটাই ব্যাপক হয়েছে যে, অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এই ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের কারণে আন্তর্জাতিক বিশ্বকেও সজাগ হতে দেখা গেছে। এবারের মতো বিশ্বপ্রতিক্রিয়া অতীতে দেখা যায়নি।
শান্তিতে নোবেলজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির এত দিনের ‘দেবতুল্য’ ভাবমর্যাদা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানে সু চির সমর্থন ও গণহত্যায় মদদের জন্য তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় বইছে। ফলে এবার জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের সাহস পর্যন্ত তিনি দেখাতে পারেননি। দাবি উঠেছে তার নোবেল পুরস্কারসহ অন্যান্য পুরস্কার প্রত্যাহারের। কিন্তু সু চি অনমনীয়। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তিনি বলে দিয়েছেন, রাখাইনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে তিনি এবং তার সরকার ভীত নয়। অর্থাৎ তার মদদে চার জেনারেলের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ অবস্থায় ২৮ সেপ্টেম্বর জোরালো পদক্ষেপের জন্য জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক বসে। কুয়ালালামপুরে আন্তর্জাতিক গণ-আদালতে গণহত্যর জন্য মিয়ানমারকে দোষী সাব্যস্ত করে ইতোমধ্যে রায় হয়েছে এবং গণহত্যায় সংশ্লিষ্টদের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করা হয়েছে।
দ্বৈত চেহারার সু চি
১৯৯১ সালে সু চিকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার কারণ হিসেবে নরওয়ের নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছিল- গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে জাতিগত সংহতি প্রতিষ্ঠায় তার প্রচেষ্টাকে সম্মান জানাতে চায় নোবেল কমিটি। একুশ বছর পর ১৬ জুন ২০১২ নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করে সেই বিবৃতির কথা স্মরণ করে সু চি বলেছিলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন বিশ্ব গড়া যেখানে কেউ উদ্বাস্তু, গৃহহারা ও আশাহীন থাকবে না। এমন বিশ্ব গড়তে হবে, যার প্রতিটি প্রান্তে জনগণ স্বাধীনভাবে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। আসুন, আমরা এমন শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তুলি, যেখানে আমরা নিরাপত্তার মধ্যে ঘুমাতে পারি এবং জেগে উঠতে পারি সুখের মধ্যে।’
সেদিন সু চির এই অমিয় বাণী অনেককেই উজ্জীবিত করেছিল। অনেকেই বিশ্বাস করেছিল সু চিই বদলে দেবেন মিয়ানমারকে। কর্তৃত্ববাদী শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। গণতন্ত্র ও মানবিকতা দিয়ে ভরিয়ে দেবেন তার দেশকে। ক্ষমতায় এসে স্টেট কাউন্সিলর হিসেবে সরকারের নেতৃত্বে থেকে ঠিকই সু চি বদলে দিয়েছেন তার দেশ মিয়ানমারকে। তবে সেটা গণতন্ত্র আর মানবিকতা দিয়ে নয়, সামরিক জান্তার পথ অনুসরণ করে। বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়ে। জাতিগত নিধন আর গণহত্যায় মদদ দিয়ে।
এটা ঠিক, ‘আমরা’ শব্দটিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সু চি এখন নিজে অবশ্য নিরাপত্তার মধ্যে ঘুমাতে এবং সুখের মধ্যে জেগে উঠতে পারছেন! তবে যেটা বাস্তব তা হচ্ছে, একটা সংখ্যালঘু জাতিসত্তা চিরতরে নির্মূল হয়ে যাচ্ছে। এমন বিশ্বই সু চি গড়েছেন, যেখানে রোহিঙ্গা মুসলমানরা প্রাণ বাঁচাতে নিজের মাতৃভূমি থেকে পালিয়ে উদ্বাস্তুর খাতায় নাম লিখিয়েছে। এমন বিশ্বই সু চি তাদের জন্য গড়ে দিয়েছেন যেখানে আজ তারা উদ্বাস্তু, গৃহহারা, আশাহীন। আর শান্তি! সেটা তো হয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে, তাদের বাড়িঘর ও গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে, শিশুদের নৃশংসভাবে হত্যা করে, নারীদের ধর্ষণ আর নির্যাতন করে। ২৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক যুগান্তরের খবর : উখিয়া শরণার্থী শিবিরে এমন ১৩০০ রোহিঙ্গা শিশু এসেছে, যাদের মা-বাবা কেউ নেই।
একদিন আন্তর্জাতিক বিশ্ব মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য অং সান সু চির ত্যাগ ও সংগ্রামকে খুবই মূল্য দিয়েছিল। কারণ এর জন্য সু চি দীর্ঘ দিন লড়াই করেছেন। প্রায় দুই দশক তার কেটেছে কখনো গৃহবন্দী অবস্থায়, কখনো ইয়াঙ্গুনের কারাপ্রকোষ্ঠে। সেদিন তাই পৃথিবীর শান্তিকামী, মানবতাবাদী ও গণতন্ত্রমনা মানুষ তার সংগ্রামের সমর্থক হয়েছিল। তার মুক্তির জন্য তারা রাজপথে মিছিলও করেছে।
সু চি ত্যাগের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। পেয়েছেন শাখারভ পুরস্কার। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। লন্ডনের ওয়েস্ট মিনস্টার হলে যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে ভাষণ দেয়ার বিরল সম্মানে ভূষিত করা হয় তাকে, যেখানে বিদেশী কোনো নারীর ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন প্রথম। এর আগে শুধু ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথই এ ধরনের ভাষণ দিয়েছেন। শুধু কি তাই, মার্কিন কংগ্রেসের সর্বোচ্চ সম্মাননা কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পরিয়ে দেয়া হয় তার গলায়। তিনি লাভ করেন কানাডার সম্মানজনক নাগরিকত্ব।
কিন্তু সু চির কাছে এসব সম্মান এখন তুচ্ছ ও মূল্যহীন। একজন নোবেলজয়ী ও মানবাধিকারের প্রবক্তা হিসেবে তার যে বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল, সেসব তিনি বিসর্জন দিয়েছেন।
মার্কিন জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ ড. গ্রেগরি এইচ স্ট্যান্টনের ভাষায় ‘সু চি তার বাবা অং সানের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। কারণ বার্মার মূল সংবিধানে রোহিঙ্গা মুসলিমসহ সব গোষ্ঠীকেই সে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে বার্মার স্বাধীনতার বহু আগে থেকে রোহিঙ্গারা সেখানে বসবাস করে আসছিল। অং সান রোহিঙ্গাসহ জাতিগত সংখ্যালঘুদের ধারণ করে একটি বুদ্ধিদীপ্ত নীতি গ্রহণ করেছিলেন। এমনকি তিনি তার মন্ত্রিসভায় সুচিন্তিতভাবে একজন মুসলিম মন্ত্রী নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু সু চি বাবার অনুসৃত নীতি থেকে ছিটকে বের হয়ে এসেছেন। বার্মা মিয়ানমার হওয়ার অনেক আগে থেকেই সেখানে জেনোসাইড-প্রক্রিয়া শুরু হয়। এখন সু চি এর দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নিয়েছেন। সরকার আঁকড়ে থাকার স্বার্থেই তিনি তার নৈতিক কর্তৃত্ব সমর্পণ করেছেন। ‘ক্ষমতা-ক্ষুধার্ত’ রাজনীতিবিদে রূপান্তরিত হয়েছেন। তিনি ভাবতে শুরু করেছেন, তিনিই তার স্বদেশভূমির ত্রাণকর্তা। অথচ তিনি জানেন না একজন ব্যক্তিই কোনো একটি দেশের ত্রাতা হতে পারেন না (প্রথম আলো, ২২ সেপ্টেম্বর)।
সু চির কর্মকাণ্ডে আজ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী সবাই লজ্জিত। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা ডেসমন্ড টুটুর বয়স এখন ৮৫ বছর। সু চির উদ্দেশে তিনি যে চিঠি লেখেন, সেটা অনেকের মনে দাগ কাটে। তিনি লেখেন, ‘বার্ধক্য আমাকে গ্রাস করেছে, আমি এখন জরাগ্রস্ত, সব কিছু থেকে অবসর নিয়েছি। ঠিক করেছিলাম সর্বজনীন বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে আর কিছু বলব না; কিন্তু আজ তোমার দেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের গভীর সঙ্কটে সেই নীরবতা আমি ভাঙছি।’ সাবেক এই আর্চবিশপ চিঠিতে আরো বলেন, ‘হে আমার বোন, মিয়ানমারের রাজনৈতিক ক্ষমতার শিখরে পৌঁছানোই যদি তোমার নীরবতার কারণ হয়ে থাকে, তার জন্য সত্যিই বড় বেশি দাম দিতে হচ্ছে- আমরা প্রার্থনা করি তুমি ন্যায়বিচারের পক্ষে মুখ খোলো, মানবতার পক্ষে কথা বলো। দেশের মানুষের ঐক্যের জন্য কথা বলো। আমরা প্রার্থনা করি, যাতে তুমি এই নিপীড়ন বন্ধে হস্তক্ষেপ করো।’ ডেসমন্ড টুটুর এই আবেগময় চিঠি বিশ্ববিবেককে নাড়া দিলেও সু চির মনে এতটুকু রেখাপাত করেনি।
শান্তিতে আরেক নোবেলজয়ী বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সু চিকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন- ‘মিস সু চি, আপনি বর্তমানে ঘৃণার পরিবেশ দিয়ে আবদ্ধ হয়ে আছেন। এই সমস্যার চাবিকাঠি যেহেতু একমাত্র আপনারই হাতে, তাই এই পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসে সঙ্কট সমাধান করুন।’ এ কথারও ভ্রূক্ষেপ করেননি তিনি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এক সময় মহীয়সী হিসেবে যে আসন সৃষ্টি করেছিলেন, সেই সু চি আজ তাদেরই সমালোচনার মুখে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি ওয়েবসাইটে চার লাখ মানুষ সু চির নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহার চেয়েছে। কানাডায় বিক্ষোভ হয়েছে তার সম্মানজনক নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করে নেয়ার। সু চির জীবনীকার জাস্টিন উইন্টলেরও তাকে সমালোচনা করতে ছাড়েননি। তার ভাষায়- ‘সু চি তার নিজের প্রচার করা মূল্যবোধই মানছেন না’।
সু চি জাতির উদ্দেশে ৩০ মিনিটের যে ভাষণ দেন, সে সম্পর্কে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা তার ভাষণকে বিশ্বকে বিভ্রান্ত এবং বোকা বানানোর চেষ্টা বলেই মন্তব্য করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে- ‘ভাষণে সু চি স্পষ্ট করেছেন, তিনি ও তার সরকার রাখাইনের সহিংসতার বিষয়ে বালুতে মাথা গুঁজে রেখেছেন। তার বক্তব্যটি মিথ্যার আশ্রয়। যারা আক্রান্ত তাদেরই তিনি দোষারোপ করেছেন।’
কুয়ালালামপুরে আন্তর্জাতিক গণ-আদালতের শুনানির শেষ দিনে সু চির ভাষণে ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রাখাইন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ভীত নই’- এসংক্রান্ত উক্তির উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ সাক্ষী ও বাদিপক্ষের আইনজীবীরা সুস্পষ্টভাবে বলেন, ‘আপনি ও আপনার সরকার যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণে ভয় না পান, তাহলে বিশ্বের রোষানলে পড়ার ভয়ে ভীত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন।’ জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এই ভাষণের আগের দিন বলেছিলেন, এটাই সু চির শেষ সুযোগ।’ সেই সুযোগ সু চি গ্রহণ করেছেন বলে মনে হয়নি।
২০১০ সালে গৃহবন্দী দশা থেকে সু চির মুক্তির পর বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাথে আমিও আনন্দিত হয়েছিলাম। সেদিন অনেকটা আবগেপ্রবণ হয়েই লিখেছিলাম- ‘মিয়ানমারে গণতন্ত্রের ফুল ফোটাবেন সুচি’ (আমার দেশ, ৭ নভেম্বর ২০১১)।
এখন মনে হচ্ছে, সেদিন সত্যিই প্রতারণার শিকার হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সু চিও বুঝি নেলসন ম্যান্ডেলা। বোকার স্বর্গেই ছিলাম। সবাই যে ম্যান্ডেলা হতে পারে না, সেটা সু চি নিজেই দেখিয়ে দিয়েছেন। মিয়ানমারে তিনি গণতন্ত্রের ফুল নয়, সংহতির বদলে জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দিয়েছেন এবং মানবিকতার বদলে গণহত্যায় মদদ জুগিয়েছেন। এসব এজন্যই করেছেন, তার অন্তরজুড়ে ছিল ক্ষমতা আর ক্ষমতা। তিনি দেখছেন মিলিটারি না চাইলে ক্ষমতায় আসতে বা থাকতে পারবেন না। সেটাই তার অগ্রাধিকার, জাতিগত সংহতি এখানে বড় নয়। তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না, বিশ্বের খুব কমসংখ্যক মানুষই সেটা দেখাতে পারে। নেলসন ম্যান্ডেলা খুব কমসংখ্যক মানুষেরই একজন বলে দেখাতে পেরেছেন, যা সু চির ক্ষেত্রে চিন্তা করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।
সুচির রোহিঙ্গা ও মুসলিমবিদ্বেষ
রোহিঙ্গা মুসলিম ইস্যুতে সু চির বর্তমান নীরবতা ও বিদ্বেষ নতুন কিছু নয়। কারণ এই ইস্যুতে তিনি বরাবরই নীরব থেকেছেন। সু চি কখনোই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সহানুভূতি দেখাননি। ২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ ও চরম নিপীড়নের ঘটনার সময় তিনি সরকারে ছিলেন না। তবুও টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত করেননি। সারা বিশ্বের মানবাধিকার কর্মী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ নিয়ে তখনো প্রশ্ন তুলেছিল। ২০১২ সালের ৩ নভেম্বর বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা মুসলিম ইস্যুতে কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার মূলে কী রয়েছে তা দেখার আগে রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলে তিনি তার নৈতিক অবস্থানের অমর্যাদা করতে পারেন না।
২০১৫ সালের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে প্রচারাভিযানের সময় তিনি রাখাইনের সহিংসতার ইস্যুটি এড়িয়ে গেছেন। ওই নির্বাচনে তিনি কোনো মুসলিম প্রার্থীও দেননি। তার দল এনএলডির বড় অংশ বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। রোহিঙ্গাদের তারা ‘বাঙালি’ বলে এবং মিয়ানমারে তাদের থাকার অধিকার নেই বলে প্রকাশ্যেই মন্তব্য করেছে। ওয়াশিংটন পোস্টের খবর- ২০১৬ সালে মিয়ানমারে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে সু চি বলেছিলেন, ‘রাখাইনে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ‘রোহিঙ্গা’ নামে অভিহিত করবেন না।’ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ জাতির উদ্দেশে ভাষণে সু চি একবারের জন্যও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি। তিনি বলেন, ‘রাখাইন থেকে মুসলিম জনগোষ্ঠী কেন পালিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে, তার সরকার সেটা অনুসন্ধান করতে চায়।’ এ কথার মাধ্যমে তিনি এত ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞকেও অস্বীকার করেন।
অং সান সু চি যে প্রচণ্ড মুসলিমবিদ্বেষী, এরও প্রমাণ রেখেছেন বিবিসিতে তার সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারের সময়। বিবিসির সাক্ষাৎকারটি নিচ্ছিলেন মিশেল হোসেন। তিনি একজন মুসলিম। এ কথা জানতেন না সু চি। রোহিঙ্গা মুসলিম প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন তিনি। বিবিসি সাংবাদিকের মুসলিম পরিচয় পাওয়ার পর তার মন্তব্য ছিল- ‘বিবিসির সাংবাদিক যে একজন মুসলিম ছিলেন এ কথা আমাকে আগে জানানো হয়নি।’ অর্থাৎ সাংবাদিকের পরিচয় আগে জানলে হয়তো তিনি সাক্ষাৎকার দিতেই রাজি হতেন না। কতটা বিদ্বেষ থাকলে এমন আচরণ কেউ করে, সু চি নিজেই তার উদাহরণ।
রাখাইনের ঘটনা সুস্পষ্ট গণহত্যা
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বর্বর সহিংসতাকে এবার জোরালোভাবেই ‘জাতিগত নিধন’ এবং ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সহিংসতার ব্যাপকতা পর্যালোচনা করে বলা হয়েছে, গণহত্যা বা জেনোসাইড সংঘটিত হলে যেসব আলামত পাওয়া যায়, তার সব উপাদানই এতে রয়েছে। গত ২৫ আগস্টের পর থেকে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে, যা ছিল পৃথিবীর নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের একটি। রোহিঙ্গাদের ১০ হাজারের বেশি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দেখা গেছে, মোট ৪৭১টি রোহিঙ্গা গ্রামের মধ্যে ২১৪টি গ্রামই নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। অং সান সু চি তার ভাষণে দাবি করেছেন- ‘৫ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর শুদ্ধি অভিযান বন্ধ করা হয়েছে।’ কিন্তু অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২২ সেপ্টেম্বর স্যাটেলাইট চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বলেছে, রাখাইনের রোহিঙ্গা গ্রামগুলো এখনো জ্বলছে। ১৩ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন গ্রামের বাড়িঘরে আগুন জ্বলার দৃশ্য প্রমাণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। রাখাইনের ৮০টিরও বেশি স্থানে বিশাল এলাকা পুড়িয়ে দেয়ার প্রমাণও দিয়েছে অ্যামনেস্টি। সর্বশেষ অবস্থা হচ্ছে রাখাইনের রোহিঙ্গা গ্রামগুলো এখন বিরানভূমি।
বিবিসি, আলজাজিরা, ওয়াশিংটন পোস্ট, ইকোনমিস্ট ও টাইম ম্যাগাজিনসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবরগুলোতে ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী, মিলিশিয়া ও রাখাইনের বৌদ্ধ জঙ্গিরা গ্রামগুলো ঘেরাও করেছে, শিশুদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, পুরুষদের ঘরে আটকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। নারীদের সঙ্ঘবদ্ধ করে সেখান থেকে বেছে বেছে আলাদা করে তাদের ধর্ষণ এবং অন্যদের হত্যা ও নির্যাতন চালিয়েছে। এমনও দেখা গেছে, গুলিতে প্রাণ গেছে বাবার; চোখের সামনে লাশ ফেলেই প্রাণ বাঁচাতে ছুটে পালিয়েছে ছেলে। কেউ নাফ নদী পেরিয়ে, কেউ জঙ্গল-পাহাড় টপকে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। নদী ও সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকে নৌকাডুবিতে লাশ হয়েছে। এমন ১০৮ জন নারী-পুরুষ-শিশুর লাশ পাওয়া গেছে বাংলাদেশ সীমানায়। আবার অনেকে সীমান্তে পুঁতে রাখা বর্মি বাহিনীর স্থলমাইনে আহত কিংবা নিহত হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থলমাইনে আহত রোহিঙ্গার সংখ্যা অনেক। প্রাণ বাঁচাতে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছে বলে জাতিসঙ্ঘ উদ্বাস্তু কমিশন ইউএনএইচসিআরের রিপোর্ট।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রদান জেইদ রায়াদ আল হুসেইন বলেছেন, রাখাইনে যে হত্যাযজ্ঞ চলছে তা জাতিগত নিধনের উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, যখন রাখাইনে এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠীকে দেশছাড়া করা হয়, তাকে জাতিগত নিধন ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জাতিসঙ্ঘের ভাষণে বলেছেন, রাখাইনের ঘটনা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর শামিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, রাখাইনের সহিংসতায় পোড়ামাটি কৌশলে জাতিগত নিধনের সব উপাদান আছে।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মূল অভিযান চালিয়ে মিয়ানমার মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে- বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি দেশটির ওপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবরোধসহ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানসহ বিশ্বের অনেক নেতা রাখাইনের ঘটনাকে গণহত্যা উল্লেখ করে প্রতিবাদ করেছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা বিষয়ে দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করার পর সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইনের হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা বলেছে, তাদের মতো আমরাও তা-ই বলছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসঙ্ঘে দেয়া ভাষণে বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর জাতিগত নিধন চালানো হয়েছে।
কুয়ালালামপুরে আন্তর্জাতিক গণ-আদালত রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলমান রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো জেনোসাইড ও খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী কাচিনদের ওপর ‘যুদ্ধাপরাধ’ সংঘটনের দায়ে রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারকে দোষী সাব্যস্ত করে ২৩ সেপ্টেম্বর রায় দিয়েছেন। এতে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে গণহত্যায় সংশ্লিষ্টদের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) বিচারের সম্মুখীন করারও সুপারিশ করেছে। গত ১৮ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দী, বিভিন্ন দলিল, বিশেষজ্ঞদের সাক্ষী ও কৌঁসুলিদের শুনানির পর এ রায় দেয়া হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়, সু চি রাখাইনে গণহত্যার পক্ষে ওকালতি করেছেন। মিয়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি ও যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাংক হিসাব জব্দের কথাও বলা হয়।
ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর আন্তর্জাতিক আইনবিশেষজ্ঞ মার্ক কারসটেন এএফপিকে বলেন, গণহত্যা হলো একটি গোষ্ঠীকে পুরোপুরি নির্মূল করা। জাতিগত নিধনই একপর্যায়ে গণহত্যায় রূপ নেয়। মার্কিন জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ ও জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা ড. গ্রেগরি এইচ স্ট্যান্টন বলেন, সু চি সরকারের হত্যাযজ্ঞ হচ্ছে- জেনোসাইডাল ম্যাসাকার (গণহত্যামূলক নিধনযজ্ঞ)। আন্তর্জাতিক আইনে এটা নবম ও দশম স্তরে পৌঁছে গেছে। নবম ধাপ হলো নিশ্চিহ্নকরণ (এক্সটারমিনেসন) ও দশক ধাপ হলো প্রত্যাখ্যান করা (প্রথম আলো, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭)।
তিনি আরো বলেন, ষাটের দশক থেকেই জাতিসত্তার বৈশিষ্ট্য ধ্বংসের প্রক্রিয়া চালু করা হয়। তখনই আসলে জেনোসাইড-প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কোনো পক্ষ যদি এ রকম কোনো জাতিগত গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার প্রকল্প হাতে নেয়, এরপর কিছু লোককে হত্যা করে তাহলেই জেনোসাইড সংঘটিত হয়ে যায়। জেনোসাইড সমগ্র মানবগোষ্ঠী ও গোত্রকে স্পর্শ করে। ১৯৭৮ সালে অন্তত দুই লাখ ৭৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। তখন জেনারেল নে উইন নাগাসিন ‘ড্রাগন অপারেশন’ নামে যে অপারেশন চালান, তাতে হাজারো রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। ২০১২ সালে একজন বৌদ্ধ মহিলার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এক হাজার মুসলমান নিধন করা হয়। আর এবার ২০১৭ সালে পুলিশের কয়েকটি ফাঁড়িতে ‘আরসা’ নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলার অজুহাত এনে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। সন্ত্রাস দমনে মিয়ানমারের উদ্দেশ্য থাকলে তারা আরসা সদস্যদের খুঁজে বের করত। সংখ্যায় এরা বড়জোর ৫০ জন। এই ৫০ জনকে না খুঁজে গণহত্যা চালিয়ে একটি জাতিসত্তাকে নির্মূল করে দেয়ার উদ্দেশ্য পরিষ্কার।
কুয়ালালামপুরে গণ-আদালতে রাখাইনের তুলাতলি গ্রাম থেকে আসা একজন নারী তার জবানবন্দীতে বলেন, তার চোখের সামনে ২০০ থেকে ২৫০ জন নারীকে নিহত করা হয়েছে এবং শিশুকে কাটাছেঁড়া করে মৃতদেহ নদীতে ফেলা হয়েছে। এমন ফুটেজও সেখানে দেখানো হয়েছে, যাতে প্লাস্টিকের চালের বস্তায় লাশ ভাসছে। এক রোহিঙ্গা নারী জবানবন্দী দিয়েছেন, কী করে বন্দী রেখে গণধর্ষণের জন্য ২০ তরুণীকে বাছাই করা হয়। এরপর খালি বাড়িতে বন্দী রেখে গণধর্ষণের পর জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়ার শরণার্থী শিবিরে আসা ধর্ষণের শিকার এমন ২৫ জন নারীকে জাতিসঙ্ঘের চিকিৎসকদল চিকিৎসা দিয়েছে, এদের ২১ জনেরই ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।
রাখাইনে গণহত্যার নায়কেরা
রাখাইনে ২০১৪-১৫ সালে দাঙ্গার পর পাঁচ-সাত হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে বিভিন্ন জায়গায় কার্যত বন্দিশালায় রাখা হয়। ২০১২ সালে ব্যাপক রোহিঙ্গা নিধন ও বিতাড়নে ব্যাপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক সিনিয়র জেনারেল মিন অং হি লাইং। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তিনি ঘোষণা দেন এবার তারা যা করেছেন, অতীতের সরকার পারেনি। সু চি সরকার এবার ‘বাঙালি’ প্রশ্নের চূড়ান্ত সমাধান করবে। এই অভিযানে সু চির সায় আছে এবং তিনিও রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলছেন। রোহিঙ্গাদের নির্মূল করার দায়িত্বে সামরিক বাহিনীর এই সর্বাধিনায়ক ছাড়াও রয়েছেন আরো তিন জেনারেল। তারা হলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে লে. জেনারেল কায়াও সু, সীমান্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে লে. জেনারেল ইয়ে অং এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত লে. জেনারেল সেইন উইন। সামরিক প্রধান জেনারেল হি লাইংয়ের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তাকে আরো পাঁচ বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হয়। মিন অং হি লাইং ইতোমধ্যে ‘মিয়ানমারের কসাই’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। এই সামরিক গোষ্ঠীর পেছনে রয়েছে বৌদ্ধ জঙ্গি ধর্মগুরু উইরাথু। টাইম ম্যাগাজিন তার ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ করেছিল- দ্য ফেস অব বুদ্ধিস্ট টেরর (বৌদ্ধ সন্ত্রাসের মুখ)।
সু চি ও জেনারেলরা কারাদজিসকে স্মরণ করুন
গণহত্যা চালিয়ে বাঁচতে পারেননি বলকান কসাই রাদোভান কারাদজিস। গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে তার ৪০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত সংঘটিত বসনিয়ার যুদ্ধে বিপুল হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০১৬ সালের ২৬ মার্চ হেগের আন্তর্জাতিক আদালত সার্বনেতা কারাদজিসকে কয়েকটি অপরাধে জড়িত থাকায় মোট ১১টি অভিযোগ আনে এবং ১০টিতেই তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। কারাদজিসের মদদ ছাড়া এই যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হতো না বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে রাখাইনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। রাখাইনের সহিংসতায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে সু চির স্পষ্ট মদদ রয়েছে। তাই এখনো গণহত্যা বন্ধ এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন তথা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়ে তাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে না নিলে সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয়, সু চিসহ তার সহযোগী জেনারেলদেরও আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হতে পারে। তাই সু চিদের উচিত কারাদজিসের পরিণাম স্মরণ করা।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন