ভারতের কংগ্রেস দলের হাল ধরলেন রাহুল গান্ধী। ১৬ ডিসেম্বর শনিবার নয়াদিল্লিতে দলের প্রধান কার্যালয়ে মা সোনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এবং দর্শক সারিতে ছিলেন রাহুলের ছোট বোন প্রিয়াংকা গান্ধী। এর মাধ্যমে কংগ্রেসে রাহুল যুগের শুরু হলো। কংগ্রেসের নেতৃত্ব পাওয়ার দিক থেকে রাহুল হলেন নেহরু-গান্ধী পরিবারের ষষ্ঠ সদস্য।
ভারতের ১৩২ বছরের পুরনো রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেসের সাথে নেহরু-গান্ধী পরিবার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরুর বাবা মতিলাল নেহরু ব্রিটিশ আমলে কংগ্রেসে নেহরু-গান্ধী পারিবারিক রাজনীতির সূচনা করেছিলেন। তিনি দুই দফায় কংগ্রেসের সভাপতি হন। আর জওয়াহেরলাল নেহরু পাঁচ দফায় কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৪ সালে তার মৃত্যুর পর তারই কন্যা ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি কয়েক দফায়, দীর্ঘকাল কংগ্রেসের নেতৃত্বে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ১৯৮৪ সালে নিজ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর ছেলে রাজীব গান্ধীর হাতে কংগ্রেসের দায়িত্ব বর্তায়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব্ পালনকালে রাজীবও আততায়ীর হাতে নিহত হন। এরপর কংগ্রেসের নেৃতত্ব দেন প্রথমে নরসিমারাও এবং পরে ১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের দায়িত্ব গ্রহণ করেন রাজীবের ইতালীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী। তিনি টানা ১৯ বছর কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ভরাডুবির আগের ১০ বছর ভারত শাসন করেছে কংগ্রেস। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের বিপর্যয় এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দলটি। এই জটিল অবস্থার মধ্যেই দলের দায়িত্ব নিলেন রাহুল। গত ১১ ডিসেম্বর যখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে রাহুলের নাম ঘোষণা করা হয়, তখন তিনি গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। পরদিনই গুজরাটের আহমেদাবাদে সংবাদ সম্মেলন করে কংগ্রেসের নতুন সভাপতি বলেন, দলকে শক্তিশালী করাই হবে তার অগ্রাধিকার। আর ১৬ ডিসেম্বর মা সোনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে দলের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে রাহুল বলেছেন, সব সময় মহান নেতাদের পথ অনুসরণ করেই আমি এগোব।
কংগ্রেস প্রধান হিসেবে রাহুল গান্ধীর দায়িত্ব নেয়ার জল্পনা-কল্পনা বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছিল। প্রথম ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে দ্য ইকোনমিক টাইমস খবর প্রকাশ করে যে, রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিচ্ছেন। এ নিয়ে মিডিয়া ও রাজনীতিতে বেশ হইচই পড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে সোনিয়া গান্ধীর অস্ত্রোপচার হলে নেতৃত্বের পরিবর্তন নিয়ে এই জল্পনা বেগ পায়। এ সময় মায়ের অসুস্থতার পরিপ্রেক্ষিতে রাহুলও দলে বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেন। অবশেষে এর ছয় বছর পর খবরটি বাস্তবে রূপ নিলো। অর্থাৎ রাহুল কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণ করলেন। কংগ্রেসের মূল টার্গেট অবশ্য তাকে দলের সভাপতি করাই নয়, তাকে নির্বাচনে বিজয়ী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী করা। খ্যাতিমান ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার লিখেছেন, ‘এ নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটা খুব ভালো করেই জানা আছে যে, কংগ্রেস পার্টি হতাশাজনকভাবে নেহরু-গান্ধী বংশের ওপর নির্ভরশীল। কংগ্রেস সভাপতি পদে রাহুলকে মনোনীত করাই প্রত্যাশিত ছিল। বিশেষভাবে সোনিয়া গান্ধীর দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে রাহুল গান্ধীর দলের ভার গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল।’
কুলদীপ নায়ার আরো লিখেছেন, ‘‘রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত রাহুল গান্ধীর রেকর্ড কোনো দিক থেকেই চিত্তাকর্ষক নয়। রাজনীতিতে তিনি খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। দলকে টেনে তোলার কোনো ক্ষমতা রাহুলের মধ্যে এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। তবে এ অবস্থারও পরিবর্তন হতে পারে। ইন্দিরা গান্ধীও ‘গুঙ্গি গুড়িয়া’ বা বোবা পুতুল নামে পরিচিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কিছু দিনের মধ্যেই সবার, এমনকি বিরোধীদেরও মন জয় করেন তিনি। রাজীবকেও সবাই মেনে নিয়েছিলেন। তাই রাহুল গান্ধীকেও মেনে না নেয়ার কোনো কারণ নেই। তবে এটা নির্ভর করবে তিনি দলকে কিভাবে টেনে তুলবেন এবং নির্বাচনে জেতাতে পারবেন এর ওপর। এ জন্য তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।”
কংগ্রেসের প্রধান হওয়ায় রাহুল গান্ধীকে আমাদের অভিনন্দন। ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেসের অবস্থা এখন ভালো নয়। কংগ্রেসকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য রাহুল গান্ধী পরিশ্রম করছেন, এটা আমরাও লক্ষ করছি। হিন্দুত্ববাদের বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের কথা বলছেন রাহুল। আমরা মনে করি, বিজেপি চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে না দিল্লির। এখন অবস্থা বেগতিক হলেও অদূর ভবিষ্যতে কংগ্রেস যে ক্ষমতায় আসতে পারে, এটা যে কেউ মনে করেন। রাহুলের প্রধানমন্ত্রী হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। তবে কংগ্রেসকে নিয়ে বাস্তব কারণেই বাংলাদেশের ভয়ও আছে। অতীতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বরাবরই কংগ্রেস নাক গলিয়েছে। ভারতে গণতন্ত্র এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া সাবলীলভাবে চলতে পারলেও বাংলাদেশে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আর বাংলাদেশে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে নেপথ্যে জোরালো ভূমিকা রেখেছে ভারতের কংগ্রেস সরকার। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই বিশ্বাস করেন, ভারতীয় কংগ্রেসের হস্তক্ষেপের কারণেই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ভারতের কংগ্রেস বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে কখনোই বড় করে দেখেনি। তারা দেখেছে তাদের পছন্দনীয় রাজনৈতিক দল তথা আওয়ামী লীগের স্বার্থ। এই দলকে ক্ষমতাসীন করার জন্য সব সময়ই তারা ভূমিকা রেখেছে।
ভারতীয় রাজনীতিক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তার সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত বইতে এ কথা পরোক্ষভাবে স্বীকারও করেছেন। প্রণব মুখার্জি তার ‘কোয়ালিশন ইয়ারস’ বইটিতে স্পষ্ট করেই বলেছেন, বাংলাদেশের ১৯৯৬ সালের নির্বাচন, ২০০৮ সালের নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের বিনা ভোটের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাসীন করার ক্ষেত্রে কী কী ভূমিকা তারা রেখেছিলেন। একদিন হয়তো এ কথাও প্রকাশ পেতে পারে যে, ১৯৮২ সালে বিএনপিকে ক্ষমতাচ্যুত করে জেনারেল এরশাদের রক্তপাতহীন ক্যু ও সামরিক শাসন জারি, ১৯৯৬ সালের জেনারেল নাসিমের ব্যর্থ ক্যু এবং ২০০৬ সালের মইন-ফখরুদ্দীনের জরুরি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার ‘ক্যু’র ক্ষেত্রেও নেপথ্য ভারতের একটা ভূমিকা ছিল।
রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের সভাপতি কিংবা ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। সেটা ভারতের জনগণ ও রাজনৈতিক দলের নিজেদের ব্যাপার। তবে রাহুল গান্ধী সমীপে আমাদের এতটুকু বলার আছে যে, আমরা চাই বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং নির্বাচনপ্রক্রিয়া যাতে আমাদের মতো করে বিকশিত হতে পারে। নির্বাচন ও গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যাতে অতীতের মতো তাদের কারণে বাধাগ্রস্ত না হয়। কংগ্রেস থেকে রাহুল পুরো ভারতের নেতৃত্বে এলে তিনি যেন আমাদের ওপর মোড়ল হয়ে না বসেন। প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সহযোগিতা আমরা চাই, তবে কোনোভাবেই খবরদারি আমরা চাই না।
ভারতের সম্পর্ক যেন এ দেশের জনগণের সাথে হয়, কোনো দলের সাথে না হয়। রাহুল জানিয়েছেন, মহান নেতাদের পথ অনুসরণ করবেন। আমরাও চাই রাহুল একজন গণতন্ত্রমনা, প্রতিবেশীর প্রতি সহানুভূতিশীল ও উদার রাজনীতিক হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি যেন র-এর ষড়যন্ত্রে পা না ফেলেন। প্রতিবেশীদের অশান্তির কারণ না হন। নোংরা খেলায় মেতে না ওঠেন। মহান নেতাদের মহান আদর্শ পথই তিনি বেছে নেবেন আশা করি। রাহুলকে আরো বুঝতে হবে, ভারত একটি বিশাল গণতান্ত্রিক দেশ। ভারতের গণতন্ত্র স্থিতিশীল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। তার প্রতিবেশীরাও যদি ভালো থাকে, সেসব দেশেও যদি গণতন্ত্র স্থিতিশীল হতে পারে তাহলে ভারতেরও লাভ। ভারতকে বুঝতে হবে, একটি দেশকে নিয়ন্ত্রণে রেখে, চাপে রেখে সাময়িকভাবে সুবিধা আদায় করতে পারলেও বেশিদিন এর সুফল ভোগ করা যায় না। পাশের দেশে স্থিতিশীলতা না থাকলে সেটা ভারতকেও আঘাত করবে।
আমরা চাই আমাদের গণতন্ত্র সঠিকভাবে বিকশিত হয়ে উঠুক। রাজনীতি স্বচ্ছ হোক। আমাদের রাজনীতিতে ভারতের অতিমাত্রায় হস্তক্ষেপের কারণে আমরা কী দেখছি? একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন দেশের সব সম্ভাবনাই নষ্ট করে দিচ্ছে। জোরপূর্বক একপেশে নির্বাচন হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি দেশরক্ষা বাহিনীকে পর্যন্ত বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এর ফলে ‘নির্বাচনে’ এখন আর ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। জেতার জন্য ভোটের দরকার হচ্ছে না। জনগণ বা ভোটার হয়ে পড়ছে গৌণ। জেতার জন্য র্যাব-পুলিশই যেন যথেষ্ট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রহসনকেই চড়াগলায় বলা হচ্ছে ‘নির্বাচন’।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান ১৯ সেপ্টেম্বর এশিয়াটিক সোসাইটিতে একটি বক্তৃতায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি এখন ব্যবসায়ের সম্প্রসারিত অংশ হয়ে গেছে। আর টাকা হলো নির্বাচন জেতার পথ। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক শৃঙ্খলাকে ক্ষয় করেছে। নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব দেখা যাচ্ছে না। দলগুলোর ভেতরে অর্থ ও পেশিশক্তি প্রবেশ করছে। এর ফলে রাজনীতি ধনীদের খেলায় পরিণত হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘মতিঝিলের খেলাপিরা (ঋণখেলাপি) রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা পান, যা তাদের মাস্তান পুষতে সহায়তা করে। এই মাস্তানেরা তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে, এমনকি রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখলে সহায়তা করে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এখনো আমরা একটা নির্বাচনী ব্যবস্থা খুঁজছি, যা সারা বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। ১৯৯০ সালে গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের স্বৈরতন্ত্রের পতনের পর মানুষ মনে করেছিল, গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম হয়েছে। সেই পুনঃগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখন বিতর্কিত হয়ে পড়ছে।’
রেহমান সোবহানের সব কথাই খাঁটি। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে তো নির্বাচনে জেতার প্রশ্ন আসে। এখন তো নির্বাচনই হচ্ছে না। বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা রাষ্ট্রকে এমনভাবে কব্জা করেছেন যে, সব কিছুই তাদের হাতের পুতুল। যেমনি নাচাও, তেমনি নাচবে পুতুল। রাজনীতি এখন শুধু ধনীদেরই খেলা নয়, বর্তমান একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিকদেরও খেলা। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠীর কাছে অতীতের এরশাদের স্বৈরতন্ত্রকে তুচ্ছ বলাই শ্রেয়। তাই এই কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান না হলে গণতন্ত্র, নির্বাচন কিংবা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার কথা চিন্তা করা অলীক চিন্তা ছাড়া কিছু নয়। অধ্যাপক রেহমান সোবহান কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং এতে ভারতের ভূমিকায় আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়েও বলা প্রয়োজন।
ট্রাম্পের দুর্বৃত্তপনা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিশ্বব্যাপী এক অশান্ত অবস্থা বিরাজ করছে। নির্বাচনের আগ থেকেই বিশ্বসম্প্রদায় আশঙ্কা ব্যক্ত করছিল, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে বিশ্বের স্থিতিশীলতা দারুণভাবে ব্যাহত হবে। তাদের আশঙ্কা সত্যে পরিণত হয়েছে। কখন যে যুদ্ধে জড়িয়ে যায় বিশ্ব, সেটাই এখন সবার উদ্বেগের বিষয়। ইতোমধ্যে উত্তর কোরিয়া বনাম যুক্তরাষ্ট্র প্রচণ্ড উত্তেজনা চলছে।
এর মধ্যেই মুসলিম বিশ্বে ‘আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন’ ট্রাম্প। গত ৬ ডিসেম্বর ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার এই ঘোষণা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়কে নিদারুণ মর্মাহত করেছে। দেশে দেশে ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গত ১৩ ডিসেম্বর ৫৭ সদস্যের ওআইসির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে মুসলিম দেশের নেতারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, জেরুসালেম ফিলিস্তিনের রাজধানী। এটাকে ইসরাইলি রাজধানী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি কেউ মানবে না। মুসলিম নেতারা জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতিদানের আহ্বান জানান। সম্মেলনের ঘোষণায় বলা হয়, জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তিপ্রক্রিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা না করা পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে কোনো শান্তি বা স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান বলেন, ট্রাম্পের ঘোষণায় ইসরাইল পরিচালিত সব ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।’ তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে ওআইসির এত গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে সৌদি আরবের বাদশা কিংবা যুবরাজ উপস্থিত ছিলেন না। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে এ সম্মেলনে পাঠানো হয়। ওই দিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সৌদি যুবরাজকে ইসরাইল সফরের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, যা মুসলিম বিশ্বকে বিস্মিত করছে।
জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতিকে তুরস্ক জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে বাতিল ও অকার্যকর করানোর কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছে। ইস্তাম্বুলে এক সমাবেশে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান এ ঘোষণা দেন। মুসলিম বিশ্বে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। গত শুক্রবার আল-আকসা মসজিদে ৩০ হাজার মুসলমান নামাজ আদায় করেন এবং নামাজের পর বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ইস্তাম্বুল, কুয়ালালামপুর, জাকার্তাসহ বিভিন্ন দেশেও বিক্ষোভ হয়েছে। কুয়ালালামপুরে মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভে অংশ নেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী জোটের চেয়ারম্যান, ৯৩ বছর বয়স্ক বিশ্বনেতা ড. মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একজন ‘আন্তর্জাতিক গুণ্ডা ও খলনায়ক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জেরুসালেমই ফিলিস্তিনের রাজধানী। মুসলমানদের পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ রয়েছে পূর্ব জেরুসালেমে। ট্রাম্পের এই স্বীকৃতি কেউ মানবে না।’ ট্রাম্পের দুর্বৃত্তপনা এবং যুদ্ধের দামামা পৃথিবীকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করায়, সেটাই দেখার বিষয়।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক,
সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাতীয় প্রেস ক্লাব
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন