আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ যেন ক্রমান্বয়ে এক আতঙ্কের জনপদে পরিণত হচ্ছে। সর্বত্রই এক ভয়ের সংস্কৃতি। খুনের ভয়, গুমের ভয়, ধর্ষণের ভয়। ভয় হয় কখন ধরে নিয়ে যায়, চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে ফেলা হয়। ভয় হয় নিত্যনতুন কালো আইনের। গোয়েন্দাভীতি, ছাত্রলীগভীতির পাশাপাশি মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে দেয়ারও ভয়। পুলিশের গ্রেফতারবাণিজ্যের ভয়। কখন কোন বিপদ এসে হাজির হয়, সেই ভয় সর্বক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ায়। এই ভয়ের সংস্কৃতিতে বসবাস করতে গিয়ে বলতে হয় মানুষ এক প্রকার অসহায় ও দিশেহারা হওয়ার উপক্রম।
ভয়ের সংস্কৃতির সর্বশেষ শিকার হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন ছাত্রনেতা। আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানোর দুই ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়। চোখ বেঁধে তাদের নেয়া হয় মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে। গত ১৮ এপ্রিল এই ঘটনা ঘটে। তিন ছাত্রকে তুলে নেয়ার ঘটনা ওই দিন ক্যাম্পাসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা হল থেকে বেরিয়ে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের মিছিলের পরিপ্রেক্ষিতে এক ঘণ্টার মধ্যে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই তিনজনকে নেয়া হয়েছিল, বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝির। কিন্তু মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয় থেকে ফিরে এসে তারা জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিলের কারণেই পুলিশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। তারা জানান, ওই দিন সংবাদ সম্মেলন শেষ করে ক্যাম্পাসের হাকিম চত্বরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে তারা কথা বলছিলেন। বেলা ১টার দিকে রিকশায় করে ওই তিন ছাত্র চাঁনখারপুলে দুপুরের খাবার খেতে যাচ্ছিলেন। ঠিক এ সময় ওঁৎ পেতে থাকা গোয়েন্দারা ঢাকা মেডিক্যালের ইমার্জেন্সির সামনে তাদের রিকশার গতিরোধ করে এবং তাদেরকে সাদা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক এই তিন ছাত্রনেতা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র নুরুল হক, এমবিএর ছাত্র রাশেদ খান মেনন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র ফারুক হাসান। নুরুল হক সাংবাদিকদের জানান, ন্যায়ের জন্য আন্দোলন করতে এসে তাদের হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, মাইক্রোবাসে তোলার পর তার মাথায় হেলমেট দেয়া হয়। এরপর গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে টেনেহিঁচড়ে তাদের নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঝিনাইদহ সদর থানার বাড়ি থেকে তার দিনমজুর বাবাকেও পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। তার বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তাদের পরিবার আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ এ ধরনের জুলুমের শিকার হয়েছেন। তাদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে কিংবা সরকার পতনের ছিল না। শিক্ষাজীবন শেষ করে যাতে চাকরির একটা নিশ্চয়তা পেতে পারেন, সে লক্ষ্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন তারা। এ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা আছে এবং মেধার ভিত্তিতে মাত্র ৪৪ শতাংশ চাকরি পেয়ে থাকেন। এ অবস্থায় কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলন শুরু করেন। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি সমর্থন জানান। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আন্দোলন স্থগিত করেছে। দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন ছিল জরুরি। কিন্তু তা না করে পুলিশ ছাত্রদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে এবং মামলার ভয় দেখাচ্ছে। একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ অবস্থান নিয়েছে। কোটা আন্দোলনে জড়িতদের ব্যাপারে খোঁজখবর করছে। শাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে ছাত্রদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-আতঙ্ক। শিক্ষাজীবনও অনিশ্চিত হওয়ার উপক্রম। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে ভীতির। কোটা সংস্কারের বিষয়টি দীর্ঘ দিনের একটি অমীমাংসিত বিষয়। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী বের হচ্ছেন; কিন্তু তারা চাকরি পাচ্ছেন না। সর্বশেষ শ্রম জরিপ (২০১৬-১৭) অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। এই বিপুল বেকারের চাকরি আশুকরণীয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে একবাক্যে প্রায় সবাই ন্যায্য আন্দোলন বলেছেন। তারা কোটাপ্রথা তুলে দিতে বলেননি। কোটা সংস্কার করতে বলেছেন। প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিকগোষ্ঠী কিংবা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে তারা নন। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি সমতার সৃষ্টি করে যৌক্তিকভাবে কোটা নির্ধারণ করার জন্য তারা কোটা সংস্কার চেয়েছেন। কিন্তু সংসদে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে পুরো কোটাপ্রথা বাতিলের ঘোষণা দেন, তাতে এক ধরনের অভিমানই প্রকাশ পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি এভাবে আশা করেন না। যৌক্তিক সুরাহার মাধ্যমে বিষয়টি এখানেই শেষ করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হওয়া প্রয়োজন।
নতুন কালো আইনের ভয়
ভয়ের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আরো একটি কালো আইন নিয়ে আসছে ক্ষমতাসীনেরা। ভিন্নমত পুরোপুরি দমন করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি প্রহসন সম্পন্ন করে ক্ষমতা কব্জায় রাখার নীলনকশা হিসেবেই এ আইনটিকে দেখা হচ্ছে। এ আইনটি হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করে সেই ধারার বিষয়বস্তুগুলো ঘুরেফিরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাখা হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে প্রস্তাবিত এ আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হওয়ার পর এ নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা হয়। সরকার আপত্তিকর কিছু ধারা বাদ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু ৯ এপ্রিল জাতীয় সংসদে আইনটি উত্থাপনের পর দেখা যায়, কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এমনকি ‘ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি’বিষয়ক ৩২ ধারার মতো আরো কঠিন ধারা জুড়ে দেয়া হয়েছে। আইনটির কয়েকটি ধারা নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং তাদের প্রতিনিধিরাও সরকারের কাছে আপত্তি জানায়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং দেশে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন ধারাগুলো বাদ দেয়ার দাবি জানায়। কিন্তু সব জনমতকে উপেক্ষা করে আইনটি করতে যাচ্ছে সরকার।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাটি একটি বড় কালাকানুন হিসেবে চিহ্নিত হয়। ৯ বছর ধরে সরকার এই কালাকানুন ব্যবহার করে ভিন্নমতকে জব্দ করেছে। ফলে ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি প্রবল হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় সরকার ৫৭ ধারা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আসে। এই আইনের কয়েকটি ধারা ৫৭ ধারার চেয়েও ভয়াবহ। আইনটি পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে তিনটি বিষয় জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় গুরুতর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন। এ আইনে এমন অনেক নতুন অপরাধ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। এটা পুলিশি রাষ্ট্রের বিপদের কথাই মনে করিয়ে দেবে। ফৌজদারি আইনের আওতায় নৃশংস অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায় দণ্ডবিধিতে যে শাস্তির পরিমাণ স্থির করা আছে, শাস্তির সেই অনুপাতের তুলনায় ডিজিটাল আইনের আওতায় জেল ও জরিমানার পরিমাণ বহু গুণ বাড়ানো হয়েছে। আদালতে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলেও প্রচলিত দণ্ডবিধির আওতায় শাস্তির মাত্রা নির্ধারণে বিচারকের স্বাধীনতা অবারিত রাখা হয়েছে। যেমন- দণ্ডবিধিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়া আছে। জরিমানার টাকার অঙ্ক বেঁধে দেয়া নেই, কিন্তু ডিজিটাল আইনে ন্যূনতম কারাদণ্ড ও জরিমানার টাকা নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে।
সাংবাদিকতা ও আইনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি একটি ভয়াবহ কালো আইন। এ আইনটি দেশকে অধিকতর পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করবে। বাংলাদেশে ভিন্নমতের চর্চা করা, সৎ সাংবাদিকতা করা, সরকারের অন্যায় অবিচার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। এটা সমাজে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করবে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করবে। এ আইনটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
দেশের দুঃসহ অবস্থা
দেশের দুঃসহ অবস্থা নিয়ে এখন শুধু বিরোধী দল বিএনপিই বলছে না, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার পক্ষ থেকেও চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডি ১৭ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, দেশের ব্যাংক খাত এখন বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েছে। ২০১৭ সাল ছিল ব্যাংক খাতের কেলেঙ্কারির বছর। আর এখন ব্যাংক খাত এতিম হয়ে পড়েছে। কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি এখন হয়ে গেছে আয়হীন কর্মসংস্থান। পত্রপত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়, ঝুঁকির ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে ব্যাংক খাতই বেশি উদ্বেগের। ব্যাংকের পাশাপাশি দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক পরিস্থিতিও খারাপ হয়ে পড়েছে। ব্যাংকের মতো খেলাপি ঋণের পরিমাণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে। দেশের ৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণের পরিমাণ পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি নিয়ে চলছে লুকোচুরি। সরকার বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। কিন্তু বিশ্বব্যাংক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, এই প্রবৃদ্ধি কোনোভাবেই ৬ দশমিক ৫ থেকে ৬ দশমিক ৬ শতাংশের বেশি হবে না। এডিবি বলছে, এই প্রবৃদ্ধি বড়জোর ৭ শতাংশ হতে পারে।
দেশের পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেছে, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীসহ শত শত গুমের ঘটনাই প্রমাণ। ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার আজ ছয় বছর অতিবাহিত হলেও তার পরিবার জানতে পারেননি তিনি আদৌ বেঁচে আছেন কি না। গত ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার ষষ্ঠবার্ষিকীতে পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বিএনপিকে নির্মূল করতে চাচ্ছে। দলের নেতাকর্মীদের নামে ৭০ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে। আসামির সংখ্যা ১৮ লাখ। মামলায় অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। নেতাকর্মীরা পুলিশের গ্রেফতারবাণিজ্যের শিকার হচ্ছে। দেশের পরিস্থিতি কেমন তা সরকারের শরিক, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের মধ্যেও ফুটে উঠেছে। তিনি সম্প্রতি খুলনা, রংপুর ও চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে জনসভা করে এসব বক্তব্য দেন। চট্টগ্রামে তিনি বলেন, দেশে এখন আর নির্বাচন হয় না; শুধু সিল মারা হয়। সুশাসনের ‘স’-ও নেই। কখন কে গুম হবে, কে খুন হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
পরক্ষণেই তিনি বলেন, আল্লাহ জানে কাল আবার জেলে যেতে হয় কি না! তাকে আর ‘স্বৈরাচারী’ না বলার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দয়া করে আমাকে আর স্বৈরাচারী বলবেন না। বর্তমান সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বৈরাচারী ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্নীতিতেও আন্তর্জাতিকভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। শেয়ারবাজার আজ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। কোনো দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুট হয় না। কেবল বাংলাদেশেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুট হয়েছে। নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। লাশ পাওয়া যাচ্ছে ধানক্ষেতে। ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছিল, আজ সেই চালের দাম ৬০ টাকা।
ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা ছিল, আজ সারা দেশে লাখ লাখ বেকার। হতাশ হয়ে বেকাররা ইয়াবা খাচ্ছে। জিপিএ ৫ পায়, অথচ ইংরেজিতে নাম লিখতে পারে না। আগে পাস করা কঠিন ছিল, এখন ফেল করা কঠিন। সবাইকে পাস করাতে হবে, না হলে শিক্ষামন্ত্রীর চাকরি থাকবে না। রংপুরে এরশাদ বলেন, বর্তমানে একদলীয় শাসন চলছে। সর্বত্র দলীয়করণ, লুটপাট। ব্যাংকে টাকা নেই। নির্বাহী বিভাগ কারো কথা শোনে না। দেশের মানুষ অশান্তিতে আছে, অস্থিরতার মধ্যে বাস করছে। মানুষের শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ মুক্তি চায়, পরিবর্তন চায়। এখন খুনের মহোৎসব চলছে। নারী ধর্ষণ এতই হচ্ছে যে, নারী হয়ে জন্ম নেয়াই যেন অভিশাপ। এখন ব্যাংকের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। অথচ কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। মানুষ আজ মনখুলে কথা পর্যন্ত বলতে পারছে না। এ অরাজক অবস্থা দেশের মানুষ আর দেখতে চায় না।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন