কলাম লিখতেই হয়
ছিলাম সৈনিক, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের একজন সৈনিক। ১৯৯৬-৯৭ সাল থেকে অবসর জীবনে আছি। অবসর জীবনের শুরুতেই হয়ে যাই কলমসৈনিক, আরো পরে হলাম টেলিভিশনের পর্দায় ‘আলাপসৈনিক’। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাস থেকে কলাম লেখা শুরু করি, আজ অবধি লিখছি। টেলিভিশনের পর্দায় যাওয়া শুরু করি ২০০২ সালে, আজ অবধি যাচ্ছি। লেখা এবং বলায় যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত, তার মধ্যে অন্যতম হলো রাজনীতি। ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অব্যাহতভাবে রাজনৈতিক বিষয়ে লিখেছি এবং বলেছি। বিশ্বাস করি, রাজনীতি হওয়া উচিত জনমুখী, কল্যাণমুখী, সততাভিত্তিক, মেধানির্ভর, জ্ঞানভিত্তিক ও দক্ষতা উৎসারিত। আমার বিশ্বাসের তাড়নায় এবং সমমনাদের উৎসাহে ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে অনেকেই মিলে রাজনৈতিক দল গঠন করেছি, নাম ‘বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি’।
প্রথমবারে ছিলাম প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, পরবর্তীতে কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত চেয়ারম্যান। রাজনৈতিক কর্মী হলেও পত্রিকায় কলাম লেখার তাগাদা বা আহ্বান একটুও কমেনি, তাই লিখতেই হয়। যথাসম্ভব নিয়মিতভাবে লিখি নয়া দিগন্ত পত্রিকায় প্রত্যেক বুধবার। কিন্তু অনিবার্য প্রয়োজনে ৯ আগস্ট বুধবারের পরিবর্তে ৮ আগস্ট মঙ্গলবার এবং ১৬ আগস্ট বুধবারের পরিবর্তে ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার আমার কলাম প্রকাশিত হয়েছে। ৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রকাশিত পাঁচটি কলাম ছিল নির্বাচনকালে নিরাপত্তা এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন বা সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে। এই প্রসঙ্গে আবারো লিখব, অসমাপ্ত কথাগুলো তুলে ধরার জন্য তিন-চার সপ্তাহ পর। আজকের কলামটিসহ আগামী দুইটি বা তিনটি কলামের কেন্দ্রবিন্দু হবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ প্রদত্ত, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলসংক্রান্ত রায়ের কিছু বক্তব্য বা মন্তব্য।
সংবিধান সংশোধন এবং সুপ্রিম কোর্ট
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ বা পার্লামেন্ট, গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশের সংবিধানে অনেকগুলো সংশোধনী এনেছে। ১৯৭৬-৭৭ এই সময়কালে এবং ১৯৮২-৮৬ সময়কালে তৎকালীন মার্শাল ল’ গভর্নমেন্ট বা সামরিক আইন সরকারগুলো সংবিধানে যেসব সংশোধনী এনেছে, সেগুলো পরবর্তীতে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ কর্তৃক র্যাটিফাই বা অনুমোদন করা হয়। মার্শাল ল’ গভর্নমেন্ট সংবিধানে যেসব সংশোধনী আনার পর সংসদ কর্তৃক র্যাটিফাই করা হয়েছিল অথবা খোদ পার্লামেন্ট কর্তৃক সংবিধানে যেসব সংশোধনী আনা হয়েছিল, এর কয়েকটি সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক বাতিল করা হয়েছে পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে।
অর্থাৎ বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক সংবিধানের সংশোধনী প্রসঙ্গে রায় দেয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়; পুরনো ঘটনা। এটি তাদের এখতিয়ারভুক্ত, বাংলাদেশের সংবিধানই সুপ্রিম কোর্টকে এই ক্ষমতা দিয়েছে। এবার জুলাই-আগস্ট মাসে শেষবারের মতো ঘটনাটি ঘটল। তার আগে ঘটেছিল ২০১১-১২ সালে। কিন্তু এবার অর্থাৎ ২০১৭ সালে, রায় প্রকাশের পর, পার্লামেন্টের সরকারি দল তথা বাংলাদেশ শাসনকারী রাজনৈতিক দলের নেতাদের কর্তৃক এমন সব অশোভন, অসাংবিধানিক, নেতিবাচক এবং বিচার বিভাগের প্রতি আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা শুরু হলো- যা অতীতে সচরাচর ঘটেনি বা দেখা যায়নি। এর বর্ণনা দেয়া আজকের কলামের উদ্দেশ্য নয়; এর কারণ ও ফলাফল পরে আলোচনা করব।
বিচারপতি অপসারণ প্রসঙ্গ
আজকের কলামের উদ্দেশ্য, জুলাই মাসে মৌখিকভাবে প্রদত্ত সংক্ষিপ্ত রায়ের প্রেক্ষাপটে, আগস্ট মাসে লিখিতভাবে প্রদত্ত দীর্ঘ ও পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে শামিল কিছু কথার ওপর মন্তব্য করা বা আলোচনা। তবে তার আগে, পাঠকদের মধ্যে যারা বেশি ব্যস্ত, তাদের সুবিধার্থে একটি অনুচ্ছেদে একটু স্মৃতিচারণ বা সূচনা বক্তব্য প্রদান করা বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশ পার্লামেন্ট তিন বছর আগে সংবিধানের ওই ধারাটি সংশোধন করেছিলেন, যে ধারা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের চাকরি থেকে অপসারণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
১৯৭২-এর নভেম্বরে গৃহীত এবং সে বছর ডিসেম্বর থেকে কার্যকর বাংলাদেশের সংবিধানে বিধান ছিল এইরূপ যে, নির্ধারিত আইন বা নিয়ম মোতাবেক প্রয়োজনে পার্লামেন্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের চাকরি থেকে অপসারণ করতে পারবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী দ্বারা বাকশাল নামে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছাড়াও সংবিধানের আরো অনেক কিছুই সংশোধন করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আমলে সংশোধিত অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে এটিও ছিল যে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের চাকরি থেকে অপসারণ করার ক্ষমতা পার্লামেন্টের বদলে প্রেসিডেন্টের হাতে ন্যস্ত করা হলো। প্রেসিডেন্ট ছিলেন বঙ্গবন্ধু স্বয়ং।
১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসের ৬ তারিখ থেকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হন প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। তিনি বিচারপতি অপসারণসংক্রান্ত ব্যবস্থাকে কঠোর এবং বিচারপতিদের প্রতি অসহনশীল মনে করেছিলেন। তাই জিয়াউর রহমান আদেশ দিয়েছিলেন যে, বিচারপতিদের চাকরি অপসারণের ক্ষমতার অধিকারী হবে তথা অপসারণের জন্য চূড়ান্ত ও অলঙ্ঘনীয় সুপারিশ করবেন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে থাকার কথা প্রধান বিচারপতি এবং পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুইজন বিচারপতি। এই নিয়মে প্রায় ৩৬ বা ৩৭ বছর চলেছে। আওয়ামী লীগের ২০০৯-১৩ সরকার এই পদ্ধতি মেনে নিয়েছে।
১৬তম সংশোধনী ও কোর্টের রায়
২০১১ সালে যখন সংবিধানে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক সংশোধনী আনা হয় (সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী), তখনো আওয়ামী লীগ সরকার বা আওয়ামী লীগের প্রাধান্যপুষ্ট পার্লামেন্ট ওই ব্যবস্থা মেনে নিয়েছে, কিন্তু হঠাৎ করেই তিন বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের পার্লামেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানে ১৬তম বা ষোড়শ সংশোধনী আনয়ন করে। ১৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের যে সংশোধন করা হয় তার ফলে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা (সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে) পার্লামেন্টের হাতে ন্যস্ত হয়। এই সংশোধনীটি বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক মহলে এবং আইনজীবী মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে।
একপর্যায়ে এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট আবেদন করা হয়। রিট আবেদনকারীর বক্তব্যের সারমর্ম হলো- ১৬তম সংশোধনী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে এবং এই সংশোধনী সংবিধানবিরোধী। হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিচারপতিরা দীর্ঘ শুনানি শেষে পার্লামেন্ট কর্তৃক কৃত ১৬তম সংশোধনীটি বাতিল ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন। হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল মামলা রুজু করে। দীর্ঘ শুনানি শেষে আপিল বিভাগ রায় প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োজিত সব বিচারপতি, তথা মোট সাতজন সবাই মিলে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গঠন করেছিলেন এবং ওই বেঞ্চ আপিল মামলার শুনানি করেছেন। আরো উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের আহ্বানে বাংলাদেশের উচ্চতম আদালতের ১০ জন দেশবরেণ্য আইনজীবী ‘আদালতের বন্ধু’ তথা অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করা হয়, যখন নিষ্পত্তিযোগ্য বা বিবেচনাযোগ্য বিষয়টি জটিল অথবা অতি জনগুরুত্বপূর্ণ বা সাংবিধানিকভাবে জটিল ও স্পর্শকাতর। অর্থাৎ অ্যামিকাস কিউরি অবশ্যই প্রবীণ বিজ্ঞ আইনজীবী হন। তাদের কাজ হলো, তাদের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার আলোকে, বিষয়টি বুঝতে ও নিষ্পত্তি করতে আদালতকে সহায়তা করা। অ্যামিকাস কিউরি মামলার কোনো পক্ষের আইনজীবী নন; তারা থাকেন নিরপেক্ষ, তাই তাদেরকে বলা হয় ‘আদালতের বন্ধু’।
১৬তম সংশোধনীর আপিলের শুনানিকালে ১০ জন অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে ৯ জন এক প্রকারের মতামত দিয়েছেন তথা- সংশোধনী বাতিলের পক্ষে এবং একজন মতামত দিয়েছেন সংশোধনী বহাল রাখার পক্ষে। অর্থাৎ ৯ জন অ্যামিকাস কিউরির মতে, বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে দেয়া অসাংবিধানিক। একজন অ্যামিকাস কিউরির মতে বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে দেয়া সংবিধানসম্মত। আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, সে রায় মোতাবেক বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে দেয়া অসাংবিধানিক এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণকারী। যখন শুনানি চলছিল, তখন আপিল বিভাগে মোট বিচারপতি ছিলেন সাতজন। আপিল বিভাগ যখন রায় প্রদান করেন, তখন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ তথা সাতজন বিচারপতি প্রত্যেকেই একমত হয়েছেন যে, সংশোধনী বাতিলযোগ্য। ওই মর্মে তারা আদেশ প্রদান করেছেন। এইরূপ পূর্ণাঙ্গ আদালতের বা পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের সর্বসম্মত রায় ঘন ঘন হয় না। এবার সর্বসম্মত রায় প্রদানের মাধ্যমে বিষয়টির গুরুত্ব অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলা হলো।
ঐকমত্যের আদেশটি প্রথমে মৌখিকভাবে প্রদান করা হয়। চার সপ্তাহ পর পূর্ণাঙ্গ লিখিত রায় প্রকাশ করা হয়েছে। লিখিত রায়ে দেখা গেল যে, এই রায়ের প্রায় অর্ধেক অংশ তথা মূল রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। বাকি ছয়জন বিচারপতির মধ্যে একজন বিচারপতি অতিরিক্ত কিছুই লিখেননি, শুধু প্রধান বিচারপতির সাথে ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন। অন্য পাঁচজন বিচারপতি প্রত্যেকেই প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের অতিরিক্ত কিছু কথা বা যুক্তি বা ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন। সংশ্লিষ্ট প্রকাশক সেই রায়টি বই আকারে প্রকাশ করেছেন। লিখিত রায়টিতে মোট ৮০৯টি অনুচ্ছেদ আছে। আদালত যে নিয়মে ও যে সাইজের কাগজে আদেশ টাইপ করেন, ওই রকম কাগজে রায়টির দৈর্ঘ্য ৭৯৯ পৃষ্ঠা। পুস্তক আকারে প্রকাশিত রায়টির দৈর্ঘ্য ২২০ পৃষ্ঠা। এটি ইংরেজি ভাষায় লেখা। যেকোনো পুস্তক প্রকাশক ইচ্ছা করলেই সুপ্রিম কোর্টের রায় লিখিতভাবে প্রকাশ করতে পারবেন না, এর জন্য নির্ধারিত কয়েকজন অনুমোদিত প্রকাশক আছেন। এরূপ একটি প্রকাশনার নাম ‘দি এপেক্স ল রিপোর্টস’।
রায়টি পড়েছি
আমি নিজে এই রায়টি পূর্ণাঙ্গভাবে পড়েছি। একজন আইনজীবী যেভাবে পড়তেন সেই নিয়মে নয়, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, রাজনীতির একজন ছাত্র হিসেবে, সচেতন নাগরিক হিসেবে, যেন প্রয়োজনীয় কথা বলতে পারি, লিখতে পারি। ওই রায়ের যেসব মন্তব্য আলোচনা করতে চাই, তার মধ্যে অন্যতম হলো নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি না করা এবং সুষ্ঠুভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা এবং অপরিপক্ব পার্লামেন্ট প্রসঙ্গ।
দুইটি অনুচ্ছেদ ইংরেজিতে
রায়ের দুইটি অনুচ্ছেদের ভাবার্থ লিখলেই পারতাম, কিন্তু আমি ইংরেজি অংশটুকু হুবহু উদ্ধৃত করছি যেন আমার ভাবার্থ প্রকাশের অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটি, যেকোনো জ্ঞানী পাঠক নিজ গুণে সমন্বয় করে নিতে পারেন।
The Apex Law Reports. Citation X ALR (AD) 2017 (2)
192. This court was of the view that the government shall strengthen the Election Commission with all powers for holding a free and fair Parlimentary election and that there will be automatic filling up of the vacancies of the Election Commission without the intervention of the government. None of the succeeding governments took any step in this regard. Even the opposition political party has not also reised this point either in the Parliament or in any forum with the net result that the Election Commission has not been institutionalized as yet.
193.
Unless the National Parliamentary Election is held impartially and independently free from any interference, the democracy cannot flourish. In the absence of credible election, a credible Parliament cannot be established. As a result, our election process and the Parliament remain in infancy. The people cannot repose trust upon these two institutions and if these institutions are not institutionalized to gain public confidence and respect, no credible election can be held. In the absence of a free and fair election the Parliament cannot be constituted with wise politicians and this may impede institutionalization of the Parliament itself. If the Parliament is not matured enough, it would be a suicidal attempt to give the Parliament the power of removal of Judges of the higher judiciary. The judiciary should not be made answerable to the Parliament. More so, the political parties should be cautious in selecting their candidates for the national elections. As noticed above, even in matured democracy, where election mechanism has been institutionalized and the parlimentarians are elected in free and fair elections, they also could not properly transact the business of removal of Judges of the highest court impartially.
রায়ের দুইটি অনুচ্ছেদের প্রেক্ষাপট
ইংরেজিতে উদ্ধৃত করা অনুচ্ছেদগুলোর ঠিক আগের অনুচ্ছেদে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট বাতিলসংক্রান্ত রায়ের প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়েছে। বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের সাতজন বিচারপতির বেঞ্চের মধ্যে, প্রধান বিচারপতিসহ চারজন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের পক্ষে ছিলেন, অপর তিনজন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে ছিলেন। বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি চলাকালেও অ্যামিকাস কিউরি বা ‘আদালতের বন্ধু’ হিসেবে প্রাজ্ঞ অভিজ্ঞ কয়েকজন আইনজীবীকে মনোনীত করা হয়েছিল। অ্যামিকাস কিউরিদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে ছিলেন। যা হোক, বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে রায় দেয়া হয়েছিল। মৌখিকভাবে সংক্ষিপ্ত রায় প্রদানের সাত দিনের মধ্যে জনাব খায়রুল হক স্বাভাবিক অবসরে চলে যান। অবসরে চলে যাওয়ার ১৬ মাসের মাথায় পূর্ণাঙ্গ লিখিত রায় প্রকাশ করা হয়। অবসর জীবনে রায় লেখার প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, সেই বিষয়ে আজকের কলামে কিছু বলব না। বিচারপতি সিনহার নেতৃত্বে প্রদত্ত রায়ের ১৯২ নম্বর অনুচ্ছেদটি বোঝার সুবিধার্থেই খায়রুল হকের প্রসঙ্গটি আনলাম।
রায়ের ১৯২ অনুচ্ছেদের ভাবার্থ
বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে যে রায় দেয়া হয়েছিল সেই রায়ে আশা করা হয়েছিল, বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে এমনভাবে শক্তিশালী করবে যে, ওই নির্বাচন কমিশন যেন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার তথা স্বাধীন ও উন্মুক্ত বা পক্ষপাতহীন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারেন। সেই রায়ে আশা করা হয়েছিল যে, সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নির্বাচন কমিশনের শূন্য পদগুলো পূরণ হবে। এস কে সিনহার নেতৃত্বে প্রদত্ত রায়ে মন্তব্য হচ্ছে, ২০১১ বা ২০১২ সালের পরবর্তী বাংলাদেশের কোনো সরকারই ওপরে ব্যক্ত আশাগুলো পূরণের লক্ষ্যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বিচারপতি সিনহার নেতৃত্বে প্রদত্ত রায়ে মন্তব্য হচ্ছে, বিরোধী দলও এই বিষয়টি পার্লামেন্টে বা অন্য কোনো ফোরামে উপস্থাপন করেনি। এ রায়ে মন্তব্য হচ্ছে, সরকার বা বিরোধী দল কর্তৃক এইরূপ নিষ্ক্রিয়তা বা নিশ্চুপতার ফল হলো, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এখনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। অতপর ১৯৩ অনুচ্ছেদে দীর্ঘ মন্তব্য আছে, যা পরের অনুচ্ছেদে উল্লেখ করছি।
রায়ের ১৯৩ অনুচ্ছেদের ভাবার্থ
জাতীয় সংসদের নির্বাচন যদি স্বাধীনভাবে, পক্ষপাতহীনভাবে এবং কোনো প্রকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া অনুষ্ঠান করা না যায় বা করা না হয়, তাহলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ছাড়া গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা বা গঠন করা সম্ভব নয়। ফলে আমাদের দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং আমাদের দেশের পার্লামেন্ট এখনো শৈশবেই রয়ে গেল। জনগণ এই দুইটি প্রতিষ্ঠানের ওপরে বিশ্বাস বা আস্থা স্থাপন করতে পারছে না। যদি এই দুইটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে জনগণের আস্থা ও সম্মান অর্জন করা না হয়, তাহলে কোনো বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
স্বাধীন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া জ্ঞানী বা মেধাবী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হতে পারবেন না এবং এ কারণে পার্লামেন্টের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হয়। পার্লামেন্ট যদি যথেষ্ট পরিপক্ব না হয়, তাহলে ওই অপরিপক্ব পার্লামেন্টের হাতে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া বিচার বিভাগের আত্মহত্যার শামিল। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে তাদের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সচেতন ও সাবধান হতে হবে। এই রায়ের ওপরের অনুচ্ছেদগুলোতে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে বা আলোচনা করা হয়েছে, পরিপক্ব গণতন্ত্রেও যেখানে নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে এবং যেখানে পার্লামেন্টের সদস্যরা উন্মুক্ত ও গ্রহণযোগ্যভাবে নির্বাচিত হন, সেখানেও ওই ধরনের পার্লামেন্টগুলো বিচারপতিদের অপসারণের কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারেনি।
রায়ের দুইটি অনুচ্ছেদের সারমর্ম
এতক্ষণ রায়ের ১৯২, ১৯৩ অনুচ্ছেদের ভাবার্থ উপস্থাপন করেছি। এখন সারমর্ম টানছি। রায় মোতাবেক- ১. বর্তমান বাংলাদেশ সরকার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ২. নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়নি। ৩. নির্বাচন কমিশন এবং পার্লামেন্টের ওপরে মানুষের আস্থা ও শ্রদ্ধা নেই। ৪. বর্তমান পার্লামেন্ট এখনো শৈশবে, অর্থাৎ ভবিষ্যতে কোনো সময় কৈশোর পার করবে; তারপর যুবক হবে। ৫. বর্তমান পার্লামেন্ট যথেষ্ট পরিপক্ব নয়। যেহেতু এই পার্লামেন্ট যথেষ্ট পরিপক্ব নয়, সেহেতু এই পার্লামেন্টের হাতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা দেয়া যায় না। অতএব দেয়া হলো না।
একটি প্রশ্ন দিয়ে কলাম শেষ করলাম
আজকের কলামের শেষ বাক্যগুলো হচ্ছে- একটি প্রশ্নের প্রেক্ষাপট ও প্রশ্ন। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে না দেয়া প্রসঙ্গে দেয়া রায়ের সাথে আমি একমত। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা বহাল থাকার পক্ষে আমি এবং এই মর্মে রায়টিকে স্বাগত জানাচ্ছি; কিন্তু একটি প্রশ্ন থেকে যায়। যথেষ্ট পরিপক্বতার অভাবের কারণে পার্লামেন্টকে যদি বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া না যায়, তাহলে ওই পার্লামেন্টকে কি দেশ শাসনের অংশীদার হওয়ার অধিকার অব্যাহতভাবে দেয়া যায়? এর উত্তর আলোচনা করব আগামীতে। রায়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ আলোচনা করব আগামীতে।
লেখক : মেজর জেনারেল (অব:); চেয়ারম্যান,
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন