সম্মানিত পাঠককে প্রথমেই নতুন বাংলা বছরের শুভেচ্ছা জানাই। এ বছর ঘটনাক্রমে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস ও রাত্রি একসাথে হয়েছিল যথা ১৪ এপ্রিল তারিখটি ছিল বাংলাদেশে অনুসৃত ক্যালেন্ডার মোতাবেক পয়লা বৈশাখ ১৪২৫ সাল এবং ওই দিনটিরই শেষে সূর্যাস্তের সাথে সাথে শুরু হয় বাংলাদেশে অনুসৃত হিজরি ক্যালেন্ডার মোতাবেক ২৭ রজব ১৪৩৯। পাঠক যেন বেয়াদবি না নেন সেজন্য আগেই সাবধানবাণী উচ্চারণ করলাম। কারণ পরবর্তী বাক্যটি হালকা মেজাজের বাক্য। দুনিয়া ও আখেরাত তথা ইহকাল ও পরকালের সন্ধিক্ষণ ছিল। এটা মহাসুযোগ ছিল মানুষকে পরীক্ষার, দুনিয়ার প্রতি কতটুকু মনোনিবেশ করেন এবং আখেরাতের প্রতি কতটুকু মনোনিবেশ করেন। দুনিয়ার জন্য আখেরাতকে ভুলে যান, নাকি আখেরাতের জন্য দুনিয়াকে ভুলে যান। কারণ, দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টি সম্পর্কে সচেতন ব্যক্তি ভারসাম্য সৃষ্টি করে চলবেন যদিও মনের অভ্যন্তরে প্রাধান্য থাকবে আখেরাতের প্রতি। বাংলাদেশে বিশেষ করে কয়েকটি বড় বড় মহানগরে পয়লা বৈশাখকে দুনিয়াবি আনন্দের আয়োজনে ভরপুর করা হয়েছে। দ্বীন ইসলামের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সাংঘর্ষিক এমন বেশ কিছু অভ্যাস বা কর্ম ওই অনুষ্ঠানমালায় সংযোজন করা হয়েছে।
মানুষের উদ্দেশ্য আনন্দ-ফুর্তি করা। কিন্তু এটা করতে গিয়ে জনগণেরই বৃহত্তর অংশের ধর্মীয় অনুভূতিতে কোনো প্রকার আঘাত লাগছে কি না অথবা ধর্মীয় অনুভূতিতে কোনো প্রকারের মানহানি হচ্ছে কি না সেটার দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। বাংলাদেশের সচেতন নাগরিকদেরর কেউ কেউ বলবেন- এ রকম কোনো আঘাত দেয়ার ঘটনা বা মানহানির ঘটনা ঘটেনি; আবার কেউ কেউ বলবেন, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি আঘাত দেয়ার ঘটনা বা মানহানির ঘটনা ঘটেছে। বাংলা ভাষায় বিখ্যাত ভারতীয় পত্রিকা ‘আনন্দবাজার’-এর ১৫ এপ্রিল ২০১৮ তারিখের একটি সংবাদ প্রণিধানযোগ্য। ওই সংবাদটির শিরোনাম ছিল, ‘ঢাকার পয়লা যেন অষ্টমীর একডালিয়া’। এই সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের কাছে গেছে। যে সংবাদের শুরুতেই কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করছি। ‘কার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে! কখনো মনে হচ্ছিল কলকাতার কলেজ স্কোয়ার বা একডালিয়ার পূজোমণ্ডপ। কখনো বা শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবের চেহারা। তা সে রমনার বটমূলের বৃন্দগানই হোক কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাজপথে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পুজো, বসন্ত উৎসবের মিলমিশে একাকার ঢাকার নববর্ষের সকাল।’
যা হোক, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার চার-পাঁচ দিন আগে থেকেই এই পয়লা বৈশাখের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জনগণকে সচেতন করেছে। মানুষ যেন মিছিলে মুখে মুখোশ না লাগায় ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সন্ধ্যার পর কোনো কর্মকাণ্ড থাকবে না এ রকম নির্দেশও জারি করেছে। ফলে মানুষের দুনিয়াবি আনন্দ কিঞ্চিত বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দুনিয়াবি আনন্দের শেষ হওয়া মাত্রই সূর্যাস্তের সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় পরকাল ও আখেরাতকেন্দ্রিক ইবাদতের রাত পবিত্র মিরাজের রজনী। জনগোষ্ঠীর বিশাল একটি অংশের মনোযোগ দিনের বেলার দুনিয়াবি আনন্দে এত বেশি নিবদ্ধ ছিল যে, তারা ভুলেই যায় রাতের কথা। জনগণের সবাই ভোলেনি। ফেসবুকে এবং এসএমএসের মাধ্যমে একজন আরেকজনকে মনে করিয়ে দিতে থাকে লায়লাতুল মিরাজের কথা।
আজকের আগে, আমার লেখা কলাম সর্বশেষ মুদ্রিত হয়েছে ২৮ মার্চ ২০১৮ তারিখে। পরবর্তী দুইটি বুধবার কোনো কলাম লিখিওনি, প্রকাশও হয়নি। নতুন বাংলা বছর শুরু হওয়ার পর এটিই প্রথম কলাম। এই কলামে শুরুতেই ওপরের অনুচ্ছেদে দুনিয়াকেন্দ্রিক ও আখিরাতকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডের সন্ধিক্ষণ বর্ণনা করে ওপরের অনুচ্ছেদে লিখলাম। যে কথা এখন অবতারণা করা প্রয়োজন, সেটি হলো তারুণ্য ও তারুণ্যের বিজয় প্রসঙ্গে। আমি বলব- তারুণ্যের বিজয় এবং প্রবীণের পরাজয়। বাংলাদেশের তরুণ সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার চার ভাগের তিন ভাগ। অর্থাৎ তরুণ-তরুণী মিলিয়ে দশ থেকে বারো কোটি। সেই তরুণ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেছে হাজার হাজার লাখ লাখ তরুণ। যারা ঢাকা মহানগরের অনেক জায়গায় এবং চট্টগ্রামসহ অন্যান্য মহানগরগুলোতে আন্দোলন করেছে। তাদের আন্দোলনের সূত্রপাত বেশ কয়েক সপ্তাহ আগের। কিন্তু মাঝখানে বিরতি ছিল। বিরতির পর চলমান এপ্রিল মাসে ৫-৬ তারিখের দিকে এই আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত হয়। এইবার তরুণদের প্রত্যয় ছিল তারা দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবে না।
যেমন কিনা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যয় ছিল ‘বিজয়ী হয়ে ফিরব নইলে ফিরব না।’ এবার অর্থাৎ এই এপ্রিলে ছেলেদের দাবি ছিল কোটা সংস্কার। তাদের দাবির মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কারের সিদ্ধান্ত না নিয়ে কোটাপদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছেন। বাংলায় একটি প্রবাদবাক্য আছে ‘মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি’। এখানে কিন্তু এই প্রবাদবাক্য প্রযোজ্য নয়। তরুণর মেঘ চেয়েছিল, তারা বৃষ্টি চায়নি। তাদেরকে নতুন করে সঙ্কটের মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে। কারণ অতীতের কোটাসুবিধাভোগী অনেকের মধ্যে কেউ কেউ বাতিলের সিদ্ধান্ত মানতে অপারগ। কিন্তু আন্দোলনকারী তরুণেরা বাতিলের জন্য দায়ী নয়। বাতিলের সিদ্ধান্ত এককভাবেই প্রধানমন্ত্রীর। যত কিছুই বলি, এ আন্দোলনে তারুণ্যের সাফল্য প্রণিধানযোগ্য ও প্রশংসনীয়। সরকারের সিদ্ধান্তের সাথে আমি একমত নই কিন্তু সরকারের কৌশলের প্রতি আমার প্রশংসা রইল। যদি প্রধানমন্ত্রী কোনো সিদ্ধান্ত না দিতেন, তাহলে এই আন্দোলন পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানমালাকে প্রভাবান্বিত করত এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যের কারণে আন্দোলন আরো তেজদীপ্ত হতো। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ত্বরিত সিদ্ধান্ত দিয়ে আন্দোলনকে স্তিমিত করে দিয়েছেন। একটা বেলুনকে বাতাসে উড়ানোর আগে বাতাস দিয়ে ফুলানো হয়। ফুলানোর জন্য শক্তি প্রয়োগ করতে হয়, যন্ত্র ব্যবহার করতে হয় অথবা মৌখিকভাবে বাতাস দিতে হয়। ওই একই বেলুনের থেকে বাতাসটা বের করার জন্য পরিশ্রম বেশি করতে হয় না। বেলুনের মুখের গিঁটটা ঢিলা করে দিলে অথবা একটা পিন দিয়ে গুঁতা দিলে বাতাস হু হু করে বের হয়ে যাবে অথবা সশব্দে বেলুনটি ফেটে যাবে। ছাত্রদের আন্দোলনের প্রায় তুঙ্গ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বেলুন থেকে বাতাসটি বের করে নিয়েছেন।
আমার নিজের অবস্থান আমি পরিষ্কার করে রাখি। আমি কোটা সংস্কারের পক্ষে, আমি কোটা বাতিলের পক্ষে নই। কারণ, বাংলাদেশে জনগোষ্ঠীর মধ্যে কারো-না-কারো জন্য অথবা কোনো-না-কোনো অংশের জন্য অথবা কোনো-না-কোনো সম্প্রদায়ের জন্য অনগ্রসর শব্দটি প্রযোজ্য। অতএব জনগণের অনগ্রসর অংশকে সহায়তা দেয়ার নিমিত্তেই কোটাব্যবস্থা রাখা যেতে পারে; সংবিধান অনুমতি দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতেই মুক্তিযোদ্ধারা বা মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কথা একটুখানি বলতেই হবে। ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স এখন ন্যূনতম ষাট হওয়াটাই স্বাভাবিক, যারা মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু সাংগঠনিক কাজের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তাদেরও বয়স এ রকম হওয়া স্বাভাবিক।
সেসব মুক্তিযোদ্ধার কোটার সুবিধা পাওয়ার কোনো অবকাশ নেই এবং প্রসঙ্গটিও তাদের জন্য অবান্তর। ষাট বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বয়স এখন ঊর্ধ্বে ৪০, নিম্নে ২০ হওয়া স্বাভাবিক। এবং এই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পরবর্তী প্রজন্মের বয়স ১০ বছর থেকে শুরু করে ৩০-৩২ বছর পর্যন্ত হতেই পারে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম প্রজন্ম, তাদের সন্তানেরা দ্বিতীয় প্রজন্ম এবং তাদের নাতিরা তৃতীয় প্রজন্ম। মুক্তিযোদ্ধাদের অনগ্রসর অংশ বলে আমি অপমানিত করব না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একটি বড় অংশ এবং সেই বড় অংশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম সমাজে সুবিধাবঞ্চিত অথবা নিপীড়িত অথবা কষ্টে নিপতিত অংশ। ১৯৭১ সাল এবং পরবর্তী এক-দেড় দশকের বেশি কঠিন পরিস্থিতি বা পরিবেশে প্রথম প্রজন্ম কষ্ট করেছে এবং তার ফলেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্ম রাষ্ট্র ও সমাজ কর্তৃক প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই তাদের জন্য অবশ্যই কিছু-না-কিছু করণীয় বাংলাদেশের সরকারের আছে। সেটা সাংবিধানিক পন্থায় হোক বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে হোক।
এবারের আন্দোলনে অনেকগুলো ছোট ছোট ইস্যু উঠে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলে, সরকারপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতা-নেত্রীদের আচার-আচারণের কথা ফুটে উঠেছে; নিঃসন্দেহে নেতিবাচক ছবি। তবে এই আন্দোলনে যেই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হঠাৎ করে পুরো আন্দোলনকে আচ্ছন্ন করেছে, পুরো আন্দোলনকে তেজদীপ্ত করেছে, পুরো আন্দোলনকে অধিকতর প্রত্যয়ী করেছে, সেটি হলো কৃষিমন্ত্রীর আগ্রাসী অশালীন বক্তব্য। কৃষিমন্ত্রী পার্লামেন্টে কী বলেছেন, কাকে রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন বা কোন পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, সেটা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অবকাশ নেই। কারণ, টেলিভিশনে সম্প্রচারের সেই অংশটি পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের মোবাইলে আছে। কৃষিমন্ত্রী নিঃসন্দেহে বৃহত্তর তরুণ গোষ্ঠীকে অপমানিত করেছেন। সে জন্যই বৃহত্তর তরুণ গোষ্ঠী আন্দোলনের সময় একবাক্যে প্রতিবাদী হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে দলীয় রঙ্গে কুক্ষিগত করায় পারদর্শী এবং কথায় কথায় সকাল-বিকেল মানুষকে টিটকারি মারায়, মানুষকে অপমান করায় যাদের অভ্যাস ছিল, তাদের প্রতি এ ঘটনার মাধ্যমে একটি সঙ্কেত গেছে। সঙ্কেতটি হলো, মুখ সামলে কথা বলা ভালো। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সম্পাদক নঈম নিজাম তার নিজের পত্রিকায় তিন-চার দিন আগে প্রথম পৃষ্ঠায় নিজ নামে প্রতিবেদন বা রিপোর্ট লিখে এই বিষয়টির প্রতি দেশবাসীর ও পাঠকের এবং ক্ষমতাসীনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সময় চলমান, কারো জন্য অপেক্ষা করে না। যেমনটি অতীতে অনেকগুলো কলামে বলেছি, তেমনিভাবে এখনো বলছি। ২০১৮ সালটি কারো জন্য বসে থাকবে নাÑ যেমন কিনা ২০০৭ বসে ছিল না, যেমন কিনা ২০০৮ বসে ছিল না, যেমন কিনা ২০১৪ বসে ছিল না অথবা যেমন কিনা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ কারো জন্য বসে ছিল না। মহান মুক্তিযুদ্ধ তার নিজস্ব গতিতে চূড়ান্ত সাফল্যের দিকে এগিয়ে ছিল। ২০১৮ সালে আমাদেরকে সাবধানতার সঙ্গে কয়েকটি বিষয়ের দিকে মনোনিবেশ করতেই হবে। একটি হলো, খেলার মাঠে একটি মাত্র দলকে দেখা যাচ্ছে। ওই দল মাঠ সমান নাকি মাঠ অসমান সেটা নিয়ে চিন্তিত নয়। ওই দল খেলার মাঠে আছে সত্য কিন্তু খেলার জন্য প্রাণপণ উদগ্রীব নয়; ওই দল ওয়াক-ওভার পেতে আগ্রহী। মাঠে না থাকতে পারে কিন্তু দল তো আছে আরো অনেক; সেসব খেলার দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি খেলার মাঠে নেমে খেলবেন নাকি মাঠের বাইরে থেকে খেলবেন; পা দিয়ে ফুটবল খেলবেন নাকি পা দিয়ে হ্যান্ডবল খেলবেন; সিদ্ধান্ত নিতে হবে হাত দিয়ে হ্যান্ডবল খেলবেন নাকি হাত দিয়ে ফুটবল খেলবেন; সিদ্ধান্ত নিতে হবে খেলার মাঠকে যারা দখল করে রেখেছে তাদের সাথে কোন ভাষায় কথা বলবেন ইশারায়, নাকি সাঙ্কেতিক ভাষা, নাকি স্বাভাবিক বাংলা ভাষায়।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি নির্বাচনমুখী দল। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি যেই জোটের অংশ সেটি নির্বাচনমুখী জোট। কিন্তু একটি কঠিন কথা, একটি অপ্রিয় কথা, একটি অস্বস্তিকর কথা, রাজনীতির অঙ্গনে কিছুটা প্রকাশ্যে কিছুটা অপ্রকাশ্যে, কিছুটা ভাসা ভাসা, কিছুটা ডুবুডুবুভাবে আলোচিত হচ্ছে বা উচ্চারিত হচ্ছে। সেই অপ্রিয় কথাটি বা প্রসঙ্গটি হলো, ২০দলীয় জোট কি শুধু আন্দোলনের নিমিত্তে করা জোট, নাকি আন্দোলনের ফলে বা আন্দোলনের শেষ প্রান্তে নির্বাচনের নিমিত্তেও জোট? আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন ও মতামত আজকের কলামে লিখলাম না। ভাসুর কী বলেছেন, দেবর-ননদ কী বলেছেন, শালা-সম্বন্ধী কী বলেছেন, মসজিদের মোয়াজ্জিন কী বলেছেন, রাজনীতির বড় ভাই ও ছোট ভাই কী বলেছেন, সাবেক গোয়েন্দা কী বলেছেন এবং অফিসের সহকর্মী ভাইয়েরা কী বলেছেন; সেগুলোও আজ উহ্য রাখলাম। কিন্তু সব সময় তো উহ্য রাখা যাবে না। কোনো-না-কোনো সময় আলোচনায় আনতেই হবে, আলোচনায় আসতেই হবে। এক দিকে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে দেশনেত্রীকে ছাড়া নির্বাচনে যাবো না, আবার আরেক দিকে নিশ্চিত না দেশনেত্রীকে কখন মুক্ত করে আনতে পারব; সরকার সঙ্কটটি ঘনীভূত করছে।
আজকের কলামটি আমার চিরাচরিত অভ্যাসের ব্যতিক্রম। অর্থাৎ অতীতের কলামগুলোর তুলনায় সংক্ষিপ্ত। আমি শেষ করছি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রসঙ্গ দিয়ে। বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত হওয়ার পরদিন সকালে ছুটে গিয়েছিলাম টঙ্গীতে তার আবাসে, অভিনন্দন জানাতে। দু’টি কারণ আছে। এক হলো মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের জীবনের ঐতিহাসিক অংশ (১৯৭০-৭১) বর্তমান গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে অবস্থিত ভাওয়াল রাজাদের রাজবাড়ির সাথে জড়িত। আর দ্বিতীয় কারণটি হলো, হাসান উদ্দিন সরকার একজন প্রথিতযশা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, যার সাথে আমার পরিচয় চার দশকেরও বেশি। গাজীপুরের গতবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি ছিলেন বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধান সমন্বয়কারী। আমাদেরকে প্রচারণার সময় সাথে নিয়ে ঘুরেছেন; এবং গাইডেন্স দিয়েছেন। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, তার নির্বাচনী প্রচারণা অত্যন্ত সুসংগঠিত হবে, অত্যন্ত প্রাণদীপ্ত হবে এবং ইনশাআল্লাহ ফলাফল তার অনুকূলে আসবে। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করার মজাই আলাদা। পার্লামেন্ট নির্বাচন আসতে দেরি। যেটা হাতের কাছে আগে এলো, সেটার ধুলোবালু গায়ে মাখার সুযোগ হারাতে চাই না।
লেখক : মেজর জেনারেল (অব:);
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন