এক.
বউ-শাশুড়ির ঝগড়া বা কাইজ্জা বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য হয়ে আছে। শিক্ষাদীক্ষায় বা সামাজিকভাবে যেসব পরিবার একটু অগ্রসর হয়েছে, তাদের মাঝে এই কাইজ্জা স্নায়ুযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।
এই ধরনের কাইজ্জার মাধ্যমে মনের ক্ষোভ প্রশমনের যে সুযোগ ছিলÑ স্নায়ুযুদ্ধে পর্যবশিত হওয়ার পর ক্ষোভ রিলিজের সেই সুযোগটি সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। বোটল্ড আপ বা বোতলজাত করা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ প্রায়ই অত্যন্ত নির্মম এবং হিংস্র হয়ে পড়ে। সমাজের মারাত্মক উঁচু পর্যায় থেকে এ ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ বধূ-মৃত্যুর কয়েকটি সংবাদ ইদানীং জাতির কানে এসেছে। যারা নিজের মেয়েকে এ ধরনের শক্তিশালী বেয়াইদের বাড়িতে পাঠিয়েছেন, অগত্যা কপালটা খারাপ হয়ে গেলে তাদের আল্লাহ আল্লাহ জপা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। বেয়াই বা বেয়াইনের রক্তচক্ষু দেখে আদরের মেয়েটির জন্য মন খুলে কাঁদতেও পারেন না।
সমাজবিজ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে দেখতে পারেন। স্নায়ুযুদ্ধের চেয়ে আগের মতো সশব্দ ঝগড়াকেই অধিকতর মঙ্গলজনক বলে মনে হতে পারে। এ ধরনের কাইজ্জা শুধু গ্রামবাংলার রসের হাড়িটিকেই ভরে দেয়নি, সমাজের স্বাস্থ্যটি ভালো রাখার নিমিত্তে এর একটা বাস্তব উপকারিতাও ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব কাইজ্জার অবয়বটি হতো বর্তমানে বিরোধী দলবিহীন সংসদের মতো। ফলে তার ডিফেক্ট বা ক্রুটিটি সহজেই বোধগম্য। পদাধিকার বলে গ্রামবাংলার সেইসব গুচ্ছ সংসদের সংসদ নেত্রী হতেন শাশুড়ি। বাড়ির অবিবাহিতা ননদটি সরকারি দলকে ইচ্ছেমতো বলার সুযোগ করে দেয়ার নিমিত্তে স্পিকার সাজতেন। বাড়ির বাদবাকি সবাই মোটামুটি সরকারদলীয় এমপির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন।
স্বল্পভাষী শ্বশুর মহাশয় যথারীতি প্রেসিডেন্টের ভূমিকা গ্রহণ করতেন। সরকারের লিখিত বক্তৃতাটিই তিনি একটু গুরুগম্ভীর স্বরেই আবৃত্তি করে যেতেন। মাঝে মাঝে পরিবেশটুকু হালকা করার জন্য একটু আধটু আলগা কিছিমের হাসি মশকরাও করতেন। ‘তিনি নিজেও কয়েকটি মেয়ের বাবা’ অর্থাৎ তিনি সবার প্রেসিডেন্ট এ ধরনের সেন্টিমেন্টাল বুলি আওড়াতেন। কিন্তু এই প্রেসিডেন্ট মহাশয়ের কথার সাথে তার কাজগুলো কখনোই মিলত না। পারিবারিক (সরকারি) ইগো বা স্বার্থ থেকে তিনি এক চুলও এদিক সেদিক নড়তেন না।
এসব গল্পের নায়িকা বধূটি মাঝে মাঝে সংসদে গিয়ে দু-একটি কথার জবাব দিতে পারত কিংবা সংসদের বাইরে থাকা মূল বিরোধী দলের মতো চুপ মেরে থাকতে হতো। এ ধরনের কনফ্লিক্টে নায়কের ভূমিকা নিয়ে সবার মাঝেই সর্বদা সন্দেহ কাজ করত। সরকারি পক্ষ ও বিরোধী পক্ষ কেউই তার ওপর পূর্ণ আস্থাটি রাখতে পারতেন না। নায়কের অবস্থা হতো অনেকটা বহুরূপী এরশাদের মতো। একবার নিজের সহোদরকে খুশি করার জন্য কো-চেয়ারম্যান বানান তো পরক্ষণেই আবার নিজের বিবির মান ভাঙাতে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বলে ঘোষণা দেন। যে কবি প্রতিভা এতদিন কম বয়স্কা সুন্দরীদের জন্যই সংরক্ষিত ছিল, অবস্থা এতটুকু বেগতিক হয়েছে যে, সেই কবিকে এখন প্রায় আশি বছরের বিবির মান ভাঙানোর জন্য কবিতা লিখতে হয়।
যা হোক, সরকারদলীয় এমপিদের সম্মিলিত করতালির মধ্য দিয়ে সংসদনেত্রী নিজের বাপ-দাদার খান্দানের বাঘ ভাল্লুক মারার কীর্তি কাহিনী মনের সুখে বয়ান করে যেতেন। অন্য দিকে, নতুন বেয়াই বাড়ির সব ছোটলোকিপনা দাঁড়ি কমাসহ মহান সংসদে তুলে ধরতেন। নিরীহ গ্রামবাসীর কাছে সব খান্দানের ইতিহাস ‘ক’ থেকে ‘চন্দ্রবিন্দু’ পর্যন্ত জানা আছে। তার পরেও অহেতুক ঝামেলা এড়ানোর জন্য কেউ মুখে টুঁ শব্দটি উচ্চারণ করতেন না।
এ রকম এক কাইজ্জার সময় শাশুড়ি তার পুত্রবধূকে পোড়ামুখী বলে গালি দেন। কিন্তু গালিটি দেয়ার সময় মুখটি এতটুকু বাঁকিয়েছিলেন যে, পোড়া শব্দটি উচ্চারণের সাথে সাথে মুখের চোয়ালটি হঠাৎ আটকে যায়। অনেক চেষ্টা করেও সেই হা করা মুখটি আর বন্ধ করা যায়নি। গ্রামের নিরীহ মানুষ এটাকে স্রষ্টার পক্ষ থেকে তাদের জন্য রহমতের বৃষ্টি হিসেবে গণ্য করে।
গ্রামের বৈদ্য কবিরাজ এই সুযোগে মুখরা শাশুড়ির গালে ও থুতনিতে মনের মতো চড় থাপ্পড় বসায়। তাতেও কোনো কাজ হয় না। সন্ধ্যায় থানা সদরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার ডাক্তারেরা মেকানিজমটি বুঝতে পারায় অতি সহজেই ছুটিয়ে ফেলেন। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো, চোয়ালটি স্বস্থানে ফিরে আসার পর শাশুড়ি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুত্রবধূর দিকে তির্যক দৃষ্টি হেনে দুর্ঘটনার আগে শুরু করা গালির বাকি অংশটি শেষ করেন। তার মুখ থেকে বের হয়, মুখী।
দুই .
আমার এক দাদীর শরীরে একসময় মারাত্মক চুলকানি বা খাওজ্জানি দেখা দেয়। ওঝা, বৈদ্য ও ক্যানভাসারদের কাছ থেকে অনেক মলম বা ওষুধ লাগিয়েও চুলকানির হাত থেকে বেচারি রক্ষা পাচ্ছিলেন না। তখন তার এক সুহৃদ তাকে মরিচ চিকিৎসার পরামর্শ দেয়। কোন ওষুধ যত ধরে, তা তত কাজে লাগে। এই ফর্মুলা অনুযায়ী শরীরের চুলকানির জন্য মরিচের ওপর আর কোনো ওষুধ নেই। তিনি মরিচ বেটে এক শুভদিনে তার চুলকানির জায়গাগুলোতে আচ্ছামতো লাগিয়ে দিলেন। তারপর বুড়ির সে কী নাচ ! মনে হলো, মাইকেল জ্যাকসন বা ম্যাডোনাও সেই নাচের সামনে কিছু না। বড়রা অনেকেই তার প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও আমরা ছোটরা বুড়ি মানুষের সেই নাচ মজা করে উপভোগ করেছিলাম।
তথাকথিত এক-এগারোর সময়ে এই গল্পটি দৈনিক যায়যায়দিনে বিশেষ কারণে উল্লেখ করেছিলাম। দুর্নীতিকে সমূলে উৎপাটন করতে গিয়ে তখনকার কয়েকজন চিকিৎসক জাতির ওপর মরিচ চিকিৎসা শুরু করেছিলেন। তাদের সেই চিন্তা আর আমাদের গ্রামের সেই দাদীর চিন্তা ভাবনায় কোনো ফারাক ছিল না। তখন আমাদের সেসব লেখায় যারা উপকৃত হয়েছেন এবং নিজ দলের সংস্কারবাদীদের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন, তারা নিজেরাই আজ জাতির ওপর সেই একই মরিচ চিকিৎসা আরো ভয়াবহ আকারে শুরু করেছেন।
আজকের উন্নয়নের পায়রারা বলছেন, গণতন্ত্রের দরকার নেই, দরকার উন্নয়ন। আর সেজন্যই দরকার হয়ে পড়েছে জাতির ওপর মরিচ চিকিৎসা। এক-এগারোর ফেরেশতারা তেমন ভঙ্গিতেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ শুরু করেছিলেন।
তখন লিখেছিলাম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধটা হলো মূলত একটি সমাজের জন্য আর্থিক, নৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের যোগফল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সেই সংগ্রামে জিততে হলে যুগপদ এই চারটি সংগ্রাম একসাথে চালিয়ে যেতে হবে। কাজেই পলিটিশিয়ান এবং বিজিনেসম্যানদের ওপর যে সর্বনাশা মরিচ চিকিৎসা শুরু হয়েছে, তাতে জাতি দুর্নীতি নামক রোগ থেকে কখনোই মুক্তি পাবে না। বরং আমার এই দাদীর মতো কিছুক্ষণ নেচে আরো ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হবে। আদতে হয়েছেও তাই। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সেসব হাতুড়ে চিকিৎসকরাই দায়ী- এক-এগারোর প্রাক্কালে যাদের আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ভেবে মারাত্মক ভুল করেছিলাম। আমাদের গণতন্ত্র যতটুকু অগ্রসর হয়েছিল, এরা তা ভেঙে দিয়ে জাতিকে বর্তমান দুর্দশায় ফেলে দিয়েছে।
সারা বছর ঘুমিয়ে থেকে হঠাৎ করে আমাদের সততা ও উন্নয়নের বোধটি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সততা ও উন্নয়নের এই খরগোশ সবসময় গণতন্ত্রের কচ্ছপ থেকে পিছিয়ে পড়ে। তাই কচ্ছপের গতিতে ইন্ডিয়া এগিয়ে যাচ্ছে, খরগোশের স্পিড আর স্পিরিট নিয়ে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ নামক দেশগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে। বন্ধু ইন্ডিয়া তাদের অনুসরণ না করে আমাদের পাকিস্তানকে অনুসরণ করতে উৎসাহ জোগাচ্ছে! সারা পৃথিবী থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। কারণ দেশের গার্মেন্টসহ সব ব্যবসা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে।
দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা বন্ধ হলে জনগণের অন্ন সংস্থানের উপায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে। সেসব অভাবী মানুষের কাছে নীতি নৈতিকতার জ্ঞান অর্থহীন হয়ে পড়বে। অভাব যখন দুয়ারে এসে দাঁড়ায় প্রেম ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়। আর বেচারা নীতি কথার তো জায়গাই নেই। এই অভাবের তাড়নায় যে লোকটি দুর্নীতি শুরু করে, সেই অভাব মিটে যাওয়ার পরেও তার সেই দুর্নীতি থামাতে পারে না। তখন ‘সুযোগ মানুষকে চোর বানায়’Ñ এই ফর্মুলা তার ওপর আপতিত হয়ে পড়ে।
তখন আসে সিস্টেমের কথা, আসে আইনের শাসনের কথা। গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা একটি সমাজে জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। আর সামাজিক সচেতনতা একটি সমাজে কাক্সিক্ষত গণতান্ত্রিক উত্তরণটি ঘটায়।
একটি রাষ্ট্রে যখন গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা থাকবে না, তখন সেখানে কোনো জবাবদিহিতাও থাকবে না। একটি রাক্ষস যখন জেনে যায় যে তার আর কোনো দিন মরণ হবে না, তখন সে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়ে। গণতন্ত্রহীনতা একটি সরকারকে তেমন ধরনের রাক্ষস বানিয়ে ফেলে। নৈতিকভাবে দুর্বল এমন সরকারকে যেকোনো মতলববাজ বহিঃশক্তি সহজেই ব্ল্যাক মেইলিং করতে পারে।
কাজেই এখানে কোনো দলের পক্ষে বা অন্য কোনো দলের বিপক্ষে কথা বলছি না। এখানে একটা সিস্টেমের কথা বলছি। সিস্টেম খারাপ হলে সেখানে এক-এগারো বা অন্য কোনোবারের ফেরেশতা কিংবা বিএনপি আওয়ামী লীগের বদ বান্দা- সবাই একই ধরনের আচরণ শুরু করবে। আবার সিস্টেম যতই সুন্দর হোক না কেন- যারা এই সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করবেন, তারা যদি প্রজ্ঞাবান এবং উন্নত নৈতিক ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন না হন, তবে তাতেও কাক্সিক্ষত ফলাফলটি আসবে না।
কাজেই কোনোরূপ মরিচ চিকিৎসা নয়- আমাদের শুরু করতে হবে একসাথে এই চারটি সংগ্রাম- আর্থিক, সামাজিক, গণতান্ত্রিক ও নৈতিক সংগ্রাম। যারা এর একটি বাদ দিতে চান তারা আর যাই হন না কেন, কখনোই এ দেশের হিতাকাক্সক্ষী হতে পারেন না। এরা জ্ঞানপাপী, এরা দেশ ও জাতির চরম শত্রু।
কাজেই দেশের ভেতর থেকে হোক বা বাইরে থেকে হোক, যারা সরকারকে এই মরিচ চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন, তারা দেশের তো নয়ই, এই সরকারেরও প্রকৃত বন্ধু নহেন। এরা আজ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সরাসরি গণতান্ত্রিক চেতনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এদেরই উৎসাহে বা পরামর্শে সরকার বর্তমান বাঘের পিঠে চড়ে বসেছে। সব পক্ষের মাঝে শুভবোধ উদয় হলে এই বাঘের পিঠ থেকে এখনো নিরাপদে নামা সম্ভব। অন্য কোনো অস্বাভাবিক উপায়ে সরকার পরিবর্তন নয়, এখনো যদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে পারি, সেটাই হবে সর্বোত্তম উপায়। সেই রাস্তা এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি। আওয়ামী লীগের মাঝে এখনো যে প্রজ্ঞা ও বিবেক অবশিষ্ট রয়েছে তাদের বরাবরে এই আবেদনটি রাখছি। এখনো সজাগ হন, এই দেশ ও জাতিকে রক্ষা করুন।
এটা না করে যদি আমরা ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেই, তাহলে তা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। মুসলিম বিশ্বে যেসব দেশে স্বৈরতন্ত্র জেঁকে বসেছিল, সেসব দেশের কয়েকটিতে আজ মারাত্মক গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। বাকিদের অবস্থাও ত্রাহি ত্রাহি। কোনোরূপ ব্রেক না কষলে আমরাও সেই একই পরিণতির দিকেই দ্রুত ধাবিত হবো। একই কাজের পরিণতি তো আর ভিন্ন হতে পারে না। আজ আমরা সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়ার জনগণের দুঃখ দুর্দশা দেখে যেভাবে চোখের পানি ফেলছি। কিছু দিন পর হয়তো আমার আপনার সন্তানদের কষ্ট ও দুর্ভোগ দেখে অন্যরা চোখের পানি ফেলবে। স্মার্ট বোমা যতই স্মার্ট হোক, তা তো আওয়ামী লীগ আর বিএনপি-জামায়াতের বাড়িঘর আলাদাভাবে শনাক্ত করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ মরুক আর বিএনপি-জামায়াত মরুক মরবে আমার দেশের মানুষ।
পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ এখনো আমাদের হাতে আছে, কিছু দিন পর সেটাও আর আমাদের হাতে থাকবে না। এসব ভেবে আগামী পাঁচটি সাধারণ নির্বাচন জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে করার আগেকার সেই প্রস্তাবটিই তুলে ধরছি।
নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে ধ্বংস ও কলুষিত করা হয়েছে, সেগুলোকে রিপেয়ার করতে এ ধরনের উদ্যোগ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প আমাদের সামনে নেই।
আমাদের সেনাবাহিনী জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে এই কাজটি করতে পারে। এই দেশটিকে যারা রক্ষা করতে চান, এখনো দেশটিকে নিয়ে ভাবেন তাদের সবার সমীপে এই দাবিটি আবারো পেশ করছি। জাতিসঙ্ঘের অধীনে এই শান্তিরক্ষী বাহিনীতে আমাদের সেনাবাহিনীই থাকতে পারে। এই বাহিনী শুধু নির্বাচনের আগেই থাকবে না, সরকার পরিবর্তনের পর পর এ দেশে যে সহিংসতা হয়, এই প্যাকেজের মাধ্যমে সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কাজেই ক্ষমতা ছাড়তে আমাদের সরকারি দলগুলোর মাঝে সর্বদা যে মারাত্মক ভীতি কাজ করে, এই পদ্ধতির মাধ্যমে সেই ভীতিও আর থাকবে না।
এভাবে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে কয়েকটি নির্বাচন হলে জাতিসঙ্ঘকে প্রভাবিত করার দুষ্টবুদ্ধি কোনো সরকারি দলের মধ্যে থাকবে না। তখন সব দলই নিজেদের খারাপ মানুষগুলো সরিয়ে ভালোগুলোকে সামনে আনার চেষ্টা করবে। নিজেদের জনগণের শাসক না ভেবে সত্যিকারের সেবক বলে গণ্য করবে। পর পর কয়েকবার এভাবে চললে জনগণের উপর্যুপরি সচেতনতায় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে পড়বে।
আমার এই প্রস্তাবটি পছন্দ না হলেও অন্য কোনো সমাধান নিয়ে দ্রুত আলোচনায় বসুন। দেশটিকে বাঁচান। দেশের মানুষকে বাঁচান। কেমন যেন ভয়াবহ ধ্বংসের গন্ধ পাচ্ছি। কারণ দেশপ্রেমের কোনো সার্টিফিকেট হাতে না থাকলেও এই দেশটিকে বড্ড ভালোবাসি।
minarrashid@yahoo.com
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন