নির্বাচনকালীন সময়ে একটি সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা শুরু হয়েছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের কামনাও তাই। কিন্তু জনগণের সেই প্রত্যাশার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে চলছে শাসক দল।
অনেকের মতে, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের কিংবদন্তিতুল্য ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ ও ওবায়দুল কাদেরদের মতো নেতাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ও ভাবসাব গণতন্ত্রের অশনিসঙ্কেত স্পষ্ট করছে। বিরোধী দলসহ দেশের সব জনগণ চাচ্ছে নির্বাচন-সহায়ক সরকার। কিন্তু সরকারের কর্তাব্যক্তিরা যে আভাস-ইঙ্গিত দিচ্ছেন তাতে মনে হয়, তারা নিজেদের সরকারকেই নির্বাচন-সহায়ক সরকার বলে চালাতে চাচ্ছেন। কিন্তু দেশের জনগণ তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতায় জানে, এ দেশের কোনো রেগুলার সরকারই নির্বাচন-সহায়ক সরকার হয় না- তারা কার্যত হয় নির্বাচন-সংহারক সরকার। বর্তমান সরকার আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে এ দিক দিয়ে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক, যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে হবে না; নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। আর সে নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকারই সহায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে- এটাই আমাদের সংবিধানের নিয়ম।
একই টোন তোফায়েলের কণ্ঠেও। ‘আগামী নির্বাচন সহায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে’- বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারই আগামী নির্বাচনে সহায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে। বাংলার মাটিতে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির আগে যেকোনো দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন যে সরকার, তার অধীনে এবং নির্বাচন কমিশনারের কর্তৃত্বে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রয়োজনে ডায়েরিতে লিখে রাখুন, সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া আসবেন।’
তিনি আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’কেও টেনে এনে বলেছেন, ওবামা, থেরেসা ও শেখ হাসিনায় কোনো পার্থক্য নেই। সেসব গণতান্ত্রিক দেশে রেগুলার সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারলে আমাদের সহায়ক সরকার লাগবে কেন?’
এ প্রশ্নটি এ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অপরিচিত কোনো নাবালেগ ছেলের নয়। এ প্রশ্নটি রেখেছেন এ দেশের এক ঝানু পলিটিশিয়ান।
এই কিংবদন্তিতুল্য ছাত্রনেতার কথা শুনে মনে হয়, ১৯৯৪-৯৬ সালে কিংবা এর আগে সেসব দেশে রোনাল্ড রিগ্যান ও মার্গারেট থেচারদের রেগুলার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতো না। মনে হয়ে যেন সেসব দেখে তখন তারা বেগম খালেদা জিয়ার অধীনে নির্বাচনে আসতে পারেননি, বরং জানের শত্রু জামায়াতকে সাথে নিয়ে নির্বাচন-সহায়ক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ৩০০ দিনের বেশি হরতাল ডেকেছিলেন।
কয়েক দিন আগে এরশাদের ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের এক মহিলা এমপি তো সরাসরি বলে দিয়েছেন, এ দেশে নির্বাচনের আর দরকার নেই। শেখ হাসিনাই সারা জীবনের জন্য প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। সরকারের মনের কথাটিই ওই মহিলা এমপি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন। আওয়ামী নেতাদের এই সাহস নেই। থাকলে হয়তো নিজেদের গৌরবময় অতীতের ওপর জুলুম করে ইতিহাসে এভাবে ‘গণতন্ত্রের ভাঁড়’ হিসেবে চিহ্নিত হতেন না।
গণতন্ত্রের এসব বরপুত্রের যুক্তি আর এক গৃহস্থের বাড়িতে হানা দেয়া ডাকাতের ‘যুক্তি’র মধ্যে যেন মিলে যায়। যে গরু বিক্রির টাকা নেয়ার জন্য ওই ডাকাত বাড়িটিতে হানা দিয়েছে, এসে দেখে গরুটি বিক্রি হয়নি। রাগে-ক্ষোভে ডাকাত গৃহস্থকে পেটায় আর বলে- হারামজাদা, দাম কম হলে আমার হতো, তাতে তোর কী ক্ষতি হতো? গরু বিক্রি করলি না কেন?’
নিজের গরুর মতো নিজের ভোটের মালিক আর জনগণ নেই। গরুর আসল মালিক অন্যরা, ভোটের আসল মালিকও অন্যরা। তাদের ইচ্ছাতেই ২০১৯ সালে বাংলার মাটিতে ভোট হবে।
বর্তমান শাসক শ্রেণীর যে গুটিকয় নেতা তাদের কথাবার্তা দিয়ে সর্বাধিক চমক সৃষ্টি করেছেন এবং সব সময় সংবাদ শিরোনাম হয়ে থাকেন, তন্মধ্যে ওবায়দুল কাদের অন্যতম। এক-এগারোর সময়ে কোনো কোনো কথা বলে তিনি যেমন সঙ্কটে পড়েছিলেন, পরে আবার এই কথার জোরেই সেই ফাড়া কাটিয়ে উঠেছেন। দু’টি দলের অনেক নেতার ভাগ্য ঝুলে গেলেও বিস্ময়করভাবে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। মাঝখানে কায়দা করে মহাভারত পাঠরত অবস্থার এক ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে আরো বিস্ময়কর ফল পেয়েছেন। অনেক বাঘা বাঘা নেতাকে পেছনে ফেলে পার্টির সাধারণ সম্পাদক পদটিও অর্জন করেছেন।
এর পর থেকে সত্যি যেন মহাভারতের বর বা শক্তি ভর করেছে। বাংলাদেশে অনেক সামরিক শাসক ক্ষমতায় বসেছে, কিন্তু এমপি পর্যায়ের কোনো মানুষের গায়ে জনসমক্ষে হাত তোলেননি। তিনি কিন্তু তুলেছেন।
ওবায়দুল কাদেররা দেখিয়ে দিয়েছেন গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি আমাদের সবার জন্য কী বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। গণতন্ত্র সব মানুষের মর্যাদা বা ঐঁসধহ ফরমহরঃু নিশ্চিত করে, কিন্তু স্বৈরতন্ত্রে শুধু একজন বা গুটিকয়েকের জন্যই এই মর্যাদা নিশ্চিত থাকে। কারো কারো বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ও নানা আলামত দেখে মনে হচ্ছে, উত্তর কোরিয়া হতে আমাদের আর খুব বেশি দিন লাগবে না। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে দেখে আশপাশের সবাই তটস্থ। অনেক ছবিতেই দেখবেন, আশপাশের লোকজন খাতা-কলম নিয়ে তার নির্দেশ টুকে নিচ্ছে। পাছে আবার কোন কথাটি ভুলে যায়। কেউ তার কোনো বক্তব্যে অমনোযোগী হলে আক্ষরিক অর্থেই উড়িয়ে দেয়া হয়। এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিম জং উনের বক্তব্যের সময় ঘুমিয়ে পড়ায় তাকেও নাকি মিসাইল মেরে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নিজের দাদার আদরের মেয়ের জামাই এবং নিজের সেকেন্ড ইন কমান্ডকেও কুকুর দিয়ে ভক্ষণ করিয়েছেন। উন্নয়নের ভেলকি দেখিয়ে আমাদের মূলত সে দিকেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেখানে এক শ্রেণী অন্য শ্রেণীর দাস হয়ে পড়তে পারে। এই কদর্যতার সাথে সাথে গণতন্ত্রের সৌন্দর্যের খবর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের গোচরে আসছে।
উত্তর কোরিয়ার পাশেই দক্ষিণ কোরিয়ায় বিপরীত চিত্র দেখা যায়। সামান্য জাহাজডুবি হলে বিবেকের তাড়নায় সেখানকার প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। আধ্যাত্মিক পরামর্শক ও বান্ধবীর আর্থিক কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে প্রেসিডেন্টকে সরে যেতে হয়। শাসকদের মাঝে যে জবাবদিহিতা গণতন্ত্র তৈরি করে, গণতন্ত্রহীনতা সেই শাসক শ্রেণীকে নির্লজ্জ দানবে পরিণত করে। আমরাও যেন স্বদেশে তেমন আলামত দেখতে পাচ্ছি।
২.
"Many of life's failures are people who did not realize how close they were to success when they gave up."- Thomas A. Edison - ঞযড়সধং অ. ঊফরংড়হ অর্থাৎ, যখন মানুষ কোনো কিছুর ওপর থেকে আশা ছেড়ে দেয় তখন তারা জানে না যে, তারা সফলতার কতটুকু দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল।’
আমাদের জাতীয় জীবনের এই ক্ষণটিতে এডিসনের এই গুরুত্বপূর্ণ উক্তিটি স্মরণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামও একই পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। আমাদের নানা হতাশা গ্রাস করেছে। বিভিন্ন কুশলী প্রচারণায় বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। মানুষের অধিকার আদায়ের এই সংগ্রামটিকে নিয়েও গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। হতাশ হলে চলবে না। এটি ১০০ মিটারের স্প্রিন্ট নয়, একটি ম্যারাথন দৌড়। মানসিক ও লজিস্টিক উভয় ক্ষেত্রে এর প্রস্তুতি থাকতে হবে।
প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছে। গণদাবির প্রতি তোফায়েল ও ওবায়দুলদের এই অবজ্ঞারও একটা সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। বর্তমান সরকারকে তার সিকোয়েন্সিয়াল কনসিকোয়েন্স ভোগ করতেই হবে। ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’।
চাপাবাজি আর কোথাও হালে পানি পাচ্ছে না। অর্থনীতির তলা আক্ষরিক অর্থেই ফুটো হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নবিষয়ক সার্ভেতে এই দেশের নামটি তলানিতে আসছে। তার পরও সরকার নিজের ঢোল নিজে পিটিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ বলে গলাবাজি করছে। এসব দাবির পেছনে সাপোর্টিং ডকুমেন্টের তোয়াক্কা করছে না। ঘরে ঘরে ‘আই অ্যাম এ জিপিএ ফাইভ’ দিয়ে ভরে ফেলছে, তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে। কিন্তু শিক্ষার মান কোন পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে, তা দেশবাসী টের পাওয়া শুরু করেছে। উন্নয়নের মহাসড়কে নয়- দেশটিকে চড়িয়ে দেয়া হয়েছে জিম্বাবুয়ের পথে। The Economistসহ বিশ্বের নামীদামি গণমাধ্যমে এসব রিপোর্ট আসছে। শাক দিয়ে এসব মাছ আর ঢাকা যাবে না।
বর্তমান সরকারকে যে ইন্ডিয়া ঠেক দিয়ে রেখেছিল, তাদের কাছেও বাস্তব অবস্থা পরিষ্কার হয়ে পড়েছে। ইন্ডিয়ার কাশ্মিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। নিজের দেশের ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ কোটি মুসলিম বাংলাদেশকে নিয়ে ইন্ডিয়ার এই খেলাটি খুব একটা পছন্দ করছে না। ইন্ডিয়ার পঁয়ত্রিশ কোটির সাথে বাংলাদেশের ষোলো-সতের কোটি মানুষের অসন্তোষ ইন্ডিয়ার জন্য খুব একটা সুখকর হবে না। ওদিকে পাকিস্তান ও চায়নার মৈত্রীর জন্য নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে পড়েছে। অধিকন্তু ইউএসের বিপরীতে চায়না-পাকিস্তানকে নিয়ে রাশিয়ার টিট ফর ট্যাট কৌশল পুরো বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে। কাজেই নিজের নাক কেটে ইন্ডিয়া আমাদের গণতন্ত্রের যাত্রাকে ভঙ্গ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারবে না। বাংলাদেশের গণতন্ত্রই বরং ইন্ডিয়ার জন্য অধিকতর স্বস্তির কারণ হতে পারে।
এ অবস্থায় সব হতাশা ঝেড়ে বিএনপিকে নিজেদের দাবি আরো স্পষ্ট করে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে হবে। যেকোনোভাবেই হোক, নির্বাচনে অংশগ্রহণের তাড়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জনগণ যেনতেন নির্বাচন চায় না; নির্বাচনী ব্যবস্থায় ও লুটেরা সরকারের একটা আমূল পরিবর্তন চায়।
বিএনপি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে ভুল করেনি। ভুল করেছিল দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীদের কুপরামর্শে নির্বাচনের পরই এবং চূড়ান্ত বিজয়ের আগেই আন্দোলন স্থগিত করে দিয়ে। ২০১৪-এর পর পর আন্দোলন অব্যাহত রাখলে সরকার একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে বাধ্য হতো। কাজেই অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের আন্দোলনের ছক সাজাতে হবে। শুধু কোনোভাবে সংসদে যাওয়া নয়, সরকারের সব অন্যায়-অবিচার প্রতিরোধের দায় চেপেছে বিএনপির কাঁধে। এ ব্যাপারে ব্যর্থ হলে ইতিহাস বিএনপিকেও ছাড়বে না।
৩.
এ মুহূর্তে জনগণের প্রয়োজন ও প্রত্যাশা- একটি নির্বাচন-সহায়ক সরকার। আমরা ভুল করে শুধু ব্যক্তিকে নিরপেক্ষ করতে চাই। অথচ দরকার একটি সিস্টেম নিরপেক্ষ করা। ব্যক্তির নিরপেক্ষতা অনির্ণেয় ও তর্কের বিষয়। এ ক্ষেত্রে যার গলার জোর বেশি, তার দাবিই টিকে যায়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কনসেপ্ট ছিল মূলত একটি সিস্টেম নিরপেক্ষ করা। এই কনসেপ্টের ওপর যে ক’টি সরকার গঠিত হয়েছে সেসব উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে সব পক্ষ কখনোই একযোগে সন্তুষ্ট ছিল না। কিন্তু তাদের সার্বিক ফলাফল সব সময় নিরপেক্ষ হয়েছে।
এ বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাব বিএনপির পক্ষ থেকে তৈরি করা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। দুই দল থেকে পাঁচজন করে মন্ত্রী নিয়ে একটি সহায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গতবারও দেয়া হয়েছিল, কিন্তু শেখ হাসিনা সে সরকারের প্রধান থাকতে চাওয়ায় বিএনপি সঙ্গত কারণেই সেটা মেনে নিতে পারেনি।
একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এই মেকানিজমটি দু’টি দলের প্রত্যাশার কাছাকাছি। তবে কেন্দ্রে সরকারি দলের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন-সহায়ক সরকারের প্রধান থাকায় এর ভারসাম্যে যে অসমতা সৃষ্টি হবে তাকে নিউট্রালাইজ করার জন্য ফর্মুলাটিকে আরো বিস্তৃত করার চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে।
মূল ফর্মুলা হলো, সর্বস্তরে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স প্রয়োগ করা। এখানে নিরপেক্ষ মানুষ খোঁজার প্রয়োজন নেই। দু’টি প্রধান দল বা জোট থেকে পাঁচজন করে সদস্য নিয়ে জেলা ও উপজেলাপর্যায়েও একই ধরনের নির্বাচন-সহায়ক পরিষদ গঠন করা যেতে পারে। সংক্ষেপে এই সরকারের কাঠামোটি হতে পারে নিম্নরূপ :
১) নির্বাচন-সহায়ক সরকার : প্রধানমন্ত্রীই এই সহায়ক সরকারের প্রধান থাকতে পারবেন। এই সরকারের নীতিনির্ধারণী কোনো ক্ষমতা থাকবে না। শুধু রুটিনওয়ার্ক করবেন। তবে স্বরাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয় বিরোধী দলের কাছে দিতে হবে। সরকারি দলের পাঁচজন এবং বিরোধী দলের পাঁচজন মিলে এই সরকার গঠিত হবে। কে কোন মন্ত্রণালয় পাবেন তা আগে থেকেই নির্দিষ্ট থাকবে।
২) নির্বাচন সহায়ক জেলা পরিষদ : কেন্দ্রীয় সরকারের আদলে, প্রত্যেক জেলায় ১০ জন সদস্য নিয়ে এই পরিষদ গঠিত হবে। দু’টি দল বা জোট থেকে পাঁচজন করে সদস্য নিয়োগ পাবেন। এদের প্রধান থাকবেন সেনাবাহিনীর কর্নেল বা তদূর্ধ্ব র্যাংকের একজন অফিসার। ৬৪টি জেলার ডিসি ও এসপির মধ্যে অর্ধেক ডিসি আর এসপি নিয়োগ করা হবে সরকারি দলের মন্ত্রীদের পরামর্শে এবং বাকি অর্ধেক নিয়োগ হবে বিরোধী পক্ষের মন্ত্রীদের পরামর্শে। যে জেলায় ডিসি নিয়োগ হবে সরকারদলীয় মন্ত্রীদের পরামর্শে, সেই জেলায় এসপির নিয়োগ হবে বিরোধীদলীয় মন্ত্রীদের সুপারিশে বা ইচ্ছায়।
৩) নির্বাচন-সহায়ক উপজেলা পরিষদ : জেলা পরিষদের আদলে প্রত্যেক উপজেলায় ১০ জন সদস্য নিয়ে এই পরিষদ গঠিত হবে। দু’টি দল বা জোট থেকে পাঁচজন করে সদস্য নিয়োগ পাবেন। এই সহায়ক পরিষদের প্রধান হিসেবে থাকবেন সেনাবাহিনীর মেজর র্যাংকের একজন অফিসার। দেশের সব উপজেলার ইউএনও এবং থানার ওসির মধ্যে অর্ধেক নিয়োগ হবে সরকারি দলের মন্ত্রীদের পরামর্শে এবং বাকি অর্ধেক নিয়োগ হবে বিরোধী পক্ষের মন্ত্রীদের পরামর্শে। যে উপজেলায় ইউএনও নিয়োগ করা হবে সরকারদলীয় মন্ত্রীদের পরামর্শে, সেই উপজেলায় ওসির নিয়োগ হবে বিরোধীদলীয় মন্ত্রীদের সুপারিশ বা ইচ্ছায়।
এটি হলো মূল থিম। তারপর খুঁটিনাটি নিয়ে ভাবা যেতে পারে। কোনো সিস্টেমে দুর্বল দিক রাখা হলে তা অস্বচ্ছতাকে উৎসাহিত করে। রাজনীতি দিয়েই রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। এই সিস্টেম চালু করতে পারলে ব্যক্তিনিরপেক্ষতা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার হবে না।
অনেকেই এতে সংবিধানের দোহাই দিয়ে বলবেন, ‘বিএনপি যেহেতু সংসদে নেই, কাজেই তাদের এখানে সম্পৃক্ত করার সুযোগ নেই।’ এটা যুক্তি নয়, খোঁড়া যুক্তি। ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। এ ধরনের ইচ্ছে আমরা অতীতে বেশ কয়েকবার দেখিয়েছি। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানুষের জন্যই সংবিধান। সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। আজ এটা বিএনপির জন্য দরকার, আগামীবার আওয়ামী লীগের জন্য এর দরকার পড়বে।
সবার মাঝে শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আল্লাহ আমাদের জাতীয় নেতৃত্বকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার তৌফিক দান করুন।
minarrashid@yahoo.com
উৎসঃ dailynayadiganta
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন