সাধারণভাবে মনে করা হয়, ভারতীয় জনগণ কয়েকটি বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জন করেছে। যেমন সংবিধান সমুন্নত রাখার একটি ঐতিহ্য সৃষ্টি করা কম গৌরবের বিষয় নয়। ‘রাষ্ট্রপতি’ পদটিকে সংসদীয় গণতন্ত্রে আলঙ্কারিক মনে করা হলেও এর প্রাতিষ্ঠানিকতা ধরে রাখার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনকে একটি সক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার কৃতিত্বটিও বিবেচনায় নেয়ার মতো। ভারতীয়দের স্লোগান হিন্দু, হিন্দুস্তান ও হিন্দি- ভারতের বহুত্ববাদী ধারণা ও ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে সাংঘর্ষিক। ভারতীয়রা বলতে চান- এটা এক ধরনের বাস্তবতা। এই কথিত বাস্তবতা ও সাংঘর্ষিক অবস্থার বৈপরীত্য কোনো বড় রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। তা ছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউনিয়ন সমন্বিত রাষ্ট্রকে ধর্ম-বর্ণ ও গোষ্ঠীবাদের ঊর্ধ্বে কিছু কমন মূল্যবোধ তৈরি করতে হয় যার ওপর বহুত্ববাদ দাঁড়ায়; যাতে ইউনিয়নভুক্ত রাজ্যগুলো অস্বস্তিবোধ না করে। ভারতে এখনো সেটা অনুপস্থিত। অথচ ভারতের ১৪ জন রাষ্ট্রপতিই বহুত্ববাদ ও সমাজ-সংহতির কথা বলেছেন। ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে বহুত্ববাদের প্রাণ ভেবেছেন। ভারতীয় রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে অন্য কোনো শ্রেণী চরিত্র খুঁজবার গরজ কম। ভাবনাটা থাকে, দেশ জাতির জন্য নিরাপদ ও কমিটমেন্ট থাকা চাই। প্রাইজ প্রমোশন কিংবা জাতীয় অবদানের স্বীকৃতি দিতেও ভারত সরকার একাধিক রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছে। আবার সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হওয়ার মতো একটা ব্যাপারও আছে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারতীয় রাষ্ট্রপতিরা হচ্ছেন যথাক্রমে- ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ, রাধা কৃষ্ণানন, জাকির হোসেন, ভিভি গিরি, ফখরুদ্দিন আলী আহমদ, বিডি জেট্টি, এন এস রেড্ডি, জ্ঞানী জৈল সিং, আর ভেঙ্কটরামান, শঙ্কর দয়াল শর্মা, কে আর নারায়ণান, এ পি জে আবদুল কালাম, প্রতিভা পাতিল, প্রণব মুখার্জি ও রামনাথ কোবিন্দ।
তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন দলীয় রাজনীতির বিবেচনায় স্বতন্ত্র। কংগ্রেস সমর্থিত ছিলেন কয়েকজন- জনতা পার্টির ছিলেন একমাত্র এন এস রেড্ডি। সাধারণত ভারতীয় প্রেসিডেন্ট হতে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আনুগত্যটাই মুখ্য। এর বাইরে এমন ক’জন প্রেসিডেন্ট ছিলেন- যাদেরকে সম্মাানিত ও পুরস্কৃত করার জন্যই এই পদে বসানো হয়েছিল। যেমন ভারতের পরমাণু বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম।
সমাজবিজ্ঞানীরা যা বলেন, তা মাথায় নিলে বহুত্ববাদের যে সৌন্দর্য সেটা ভারত কখনো উপভোগ করেনি এবং করবে না। কারণ হিন্দু ধর্মের মিথ-মিথোলজির বাইরে অভিন্ন মূল্যবোধ এখনো ভারতকে নিয়ন্ত্রণ করে না। রাজনৈতিক বোঝাপড়ায় জনগণ নয়Ñ শাসকের ইচ্ছা এবং গোষ্ঠীতন্ত্র প্রাধান্য পায় এবং কুলীন হিন্দু প্রাধান্য নাকি আরেক বাস্তবতা। ডক্টর আম্বেদকর ভারতীয় সংবিধানের রূপকার। তিনি দলিত ছিলেন, এটা অহঙ্কার। তিনি দলিত হওয়ার কারণে স্বমহিমায় বিকশিত হতে পারেননিÑ এটা লজ্জার। মাওলানা আজাদকে নিয়েও সোজাসাপটা মন্তব্য করলে একই উপসংহার দাঁড়াবে।
একই সংবিধানের অধীনে জীবিত ও চর্চিত ১২২টি ভাষাভাষীর ১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারত। সব রাজ্যে হিন্দি ভাষা সমাদৃত নয়, তবে মধ্যস্থতাকারী ভাষা হিসেবে হিন্দি সামনে রয়েছে। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি আনুষ্ঠানিক বিদায় নেয়ার সময় বহুত্ববাদ ও বৈচিত্র্যকে ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রাণ বলেছেন। তিনি কুলীন হিন্দু, অর্থাৎ ব্রাহ্মণ। কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদী ছিলেন, এটা কেউ মনে করেন না। তার স্থলাভিষিক্ত হলেন নিরামিষ-ভোজী রামনাথ কোবিন্দ, দলিত নেতা। তিনি হলেন ভারতের ১৪তম প্রেসিডেন্ট। প্রণব বাবু আমাদের চেনা মানুষ। বাংলাদেশের বৃহত্তর যশোরের নড়াইলে তার শ্বশুরবাড়ি। আমাদের পড়শি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের সন্তান তিনি। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর নজরে পড়ে শেষ পর্যন্ত সোনিয়ার সমর্থনে এই কংগ্রেস নেতা রাষ্ট্রপতি ভবন ছুঁয়ে জীবন সায়াহ্নে এসে দাঁড়ালেন। তার ভাষায়, তিনি ভারতীয় পার্লামেন্টের সৃষ্টি। এটা ঠিক, সাংবিধানিক ধারা অক্ষুণ্ন রাখার ক্ষেত্রে ভারতের পড়শি অন্য কোনো দেশের ঐতিহ্য ভাণ্ডার এতটা সমৃদ্ধ নয় যতটা ভারতীয় জনগণ অর্জন করেছে। এটা এক দিকের চিত্র। অন্য দিকটিও উপেক্ষার নয়। প্রণব মুখার্জির রাজনৈতিক দর্শন অনেকটা ক্ষমতাশ্রয়ী ও সুবিধাভোগী ধরনের। সুশীল প্রকৃতির রাজনীতিবিদ হলেও অনেক নীতিগত প্রশ্নে প্রণব বাবু বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনার ব্যাপারে পূর্বাপর চুপ থেকেছেন। আবার বাংলাদেশের সুহৃদ হওয়ার অর্থ করেছেন দলকেন্দ্রিক, জনগণভিত্তিক নয়। জ্যোতি বসু থেকে মমতা কেউ বাংলাদেশীদের কাছে অপরিচিত নন, অচেনা নন রামনাথও। রামনাথ ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি, যিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য। রাষ্ট্রপতি ভবনে এর আগে এতটা হিন্দুত্ববাদীর প্রবেশের নজির নেই। সংঘ পরিবার অতিমাত্রায় সাম্প্রদায়িক হিসেবে পরিচিত। এর আগেও দলিতদের রাষ্ট্রপতি ভবনে ঠাঁই হয়েছে- কে আর নারায়ণান দলিতদেরই পরিচিত মুখ। রামনাথ আইনজীবী। রাজনীতির বাইরেও তিনি দলিতদের নেতা। সাবেক এমপি, বিহারের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছেন। উত্তর প্রদেশের মানুষ খুশি। এই প্রথম তাদের রাজ্য থেকে রাষ্ট্রপতি হলেন। রামনাথও বহুত্ববাদের কথা জোর দিয়ে বলেছেন।
তবে একটা কথা স্পষ্ট, প্রণব মুখার্জির রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে কংগ্রেসকেন্দ্রিক। তিনি পূর্বাপর কংগ্রেসি হিসেবে পরিচিত। বর্ণহিন্দু হয়েও তিনি ধর্মনিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করতেন।
অপর দিকে, রামনাথের রাজনীতি বিজেপির মতাদর্শিক মিত্র ও অনুপ্রেরণা, সেবক সংঘকেন্দ্রিক। সংঘ পরিবারের রাজনীতিতে কংগ্রেসের মতো ভড়ং নেই। তারা হিন্দি, হিন্দু ও হিন্দুস্তান সমীকরণে একাট্টা। ধর্মান্ধতার সব অভিযোগ তাদের মাথায় রয়েছে। তাই একটি আলঙ্কারিক পদে বসে রামনাথ গুণগত পরিবর্তনের জন্য কিছুই করার নেই। তিনি দলিত হয়ে ব্রাহ্মণ হওয়ার ভান করতে পারেন। ক্ষমতার আশীর্বাদের জন্য এতটুকু করা একজন রাজনীতিবিদের পক্ষে সম্ভব। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, রামনাথ কৌলীন্য অর্জন করবেন, বরং বর্ণবাদের হাতে ব্যবহৃত হয়ে দলিতদের স্বার্থ বিকাবেন না।
প্রণব মুখার্জির সাথে রামনাথ কোবিন্দের অনেক ব্যাপারে মিল নেই। দু’জন স্বতন্ত্র মানুষের মিল-অমিল নিয়ে আমাদের কোনো বাড়তি ভাবনা নেই। রামনাথ ভারতের প্রেসিডেন্ট। তাকে সম্মান করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি ক্ষমতাচর্চায় তেমন কোনো প্রভাবক হওয়ার কথা নয়। তবে দলিতদের ভাগ্য বদলে তার অবস্থান দৃঢ় হলে দলিতরা উপকৃত হবে। ভারতে দলিত তথা তফসিলি সম্প্রদায় অনুগত প্রজা এবং বঞ্চিত শ্রেণী। এরাই ভারতের গরিষ্ঠ কাতারের মানুষ। বহুত্ববাদের যে দোহাই ভারতের রাষ্ট্রপতিরা দেন, বাস্তবে শাসকেরা সেটা অনুসরণ করেন কম। এই বৈপরীত্য যতটা কমবে, ভারত ততটাই লাভবান হবে।
অনেকের জানা নেই, বাস্তবের ভারত আর বিনোদন সাম্রাজ্যের ভারত আলাদা। ভারত পৃথিবীজুড়ে বিনোদনবাণিজ্যের বড় সওদাগর। কিন্তু এর পুরোটাই পোশাকি। কারণ ১৩০ কোটি মানুষের দেশটি প্রতিনিয়ত ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের কারণে। ৩৩ কোটি দেবতার এই দেশে গরুর চেয়ে মানুষের দাম কম, বিশেষত গো-রক্ষকদের কাছে। রামনাথ কোবিন্দ পূজনীয় এবং অনুপ্রেরণা হতে হলে তাকে তফসিলি থেকেই হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তার মৌলিকত্ব কতটা থাকবে, সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। নরেন্দ্র মোদি রামনাথকে জানেন দীর্ঘ দিন ধরে। তাই তাকে পছন্দ করে প্রেসিডেন্ট হাউজে বসিয়েছেন। কারণ মোদি রাষ্ট্রপতি ভবনের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি না করে এটিকেও ব্যবহার করার জন্য তার মেরুতেই রাখার পক্ষে, যদিও সাংবিধানিকভাবেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে এড়িয়ে চলার সাধ থাকলেও সাধ্য নেই রাষ্ট্রপতির।
বহুত্ববাদের দৃষ্টিতে ভারতের অবস্থান কোথায় তা খুঁজে দেখার গরজ অনেক। জাতপাত ও দারিদ্র্যের ভেতর ভারতীয়দের বসবাস। বলিউড আশ্রয়ী ভারতীয়ের সংখ্যা অল্প। নিরঙ্কুশ জনগোষ্ঠী এখনো নিম্নবিত্তের তলানিতে রয়েছে। সব রাজ্যেই দারিদ্র্য মুখ ব্যাদান করে আছে। অশিক্ষার পরিধি বড়। জীবনযাত্রায় সভ্যতার ছোঁয়া কম। এত বর্ণবৈষম্য ও শ্রেণীর বিভেদ রেখে বহুত্ববাদ হয় না। ভারতের রাজ্যগুলোর বন্ধন এখনো বৃহৎ ভারতের রোমান্টিক মহাভারতীয় ধারণাপ্রসূত। তা বহুত্ববাদকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠেনি। তা ছাড়া কাশ্মির থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত বহুত্ববাদী সমাজের শেকড় কাটার মতো শক্তির অভাব নেই। মাওবাদীরা নিস্তেজ হয়েছে, নিশ্চিহ্ন হয়নি। তেমনি পূর্ব ভারতের অবস্থাও। অনেক রাজ্যেই ক্ষোভের ইস্যু রয়েছে।
ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাস দীর্ঘ পৌনে ২০০ বছরের। কাশ্মির কাশ্মিরিদের- এ দাবি কোনো দিন বাতাসে মিলিয়ে যাবে না। তার সাথে চীন-পাকিস্তানের অবস্থান। নেপালে ভারতীয় প্রভাব কমে যাওয়া, শ্রীলঙ্কার আলাদা পররাষ্ট্রনীতি ভারতের জন্য বিব্রতকর। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির জন্য ভারতের বহুত্ববাদ এখনো প্রস্তুত নয়। তার ওপর ঐক্য সংহতির বন্ধন শিথিল। সমাজবিজ্ঞানীরা এখনো ভারতীয় সমাজকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্তরে রাখার পক্ষে। আর্য সমাজ ভেঙে পড়ার পর মোগলরা ঐক্যের মালা গেঁথে ছিল। ব্রিটিশরা সেটাকে ‘ভাগ কর শাসন কর’ নীতির শেষ দরজায় নিয়ে গেছে। তাই ভারত ব্রিটিশ ধারার গণতন্ত্রচর্চার ক্ষেত্রে কিছুটা নৈপুণ্য দেখালেও বহুত্ববাদের পথে কমই অগ্রসর হতে পেরেছে। বরং নেহরু যে ভারতের নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারত সেই অবস্থানও পাল্টে ফেলেছে। ভারত সম্পর্কে ধারণা পেতে নেহরুর ‘দি ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’ ও মাওলানা আজাদের ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’ বইয়ের সাথে আল বেরুনির ‘ভারত তত্ত্ব’ মগজে নেয়া ভালো। তা ছাড়া ইবনে খালদুনের সমাজ বিশ্লেষণও বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।
সমাজবিজ্ঞানের জনক ইবনে খালদুন মনে করতেন, সমাজও প্রাণশীল। সমাজ-সংহতিই এর প্রাণ। সমাজ-সংহতির সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের ইতিহাসই সমাজ জীবনের জন্ম-মৃত্যুর ইতিহাস। সমাজ-সংহতির আয়ুষ্কাল তিনি মনে করতেন ছয় পুরুষ। দুই পুরুষ জন্ম ও প্রতিষ্ঠার যুগ। দুই পুরুষ বৃদ্ধি ও প্রসারে যুগ, শেষ দুই পুরুষ সমাজ জীবনের ক্ষয় ও লয়ের যুগ। ইবনে খালদুনের আরো একটি মৌলিক তত্ত্ব হচ্ছে- সভ্যতা সংস্কৃতিতে এবং বাস্তব সম্পদে দুর্বল কিন্তু সমাজ সংহতিতে বলিষ্ঠ, এমন সমাজ বাস্তব সমাজে ধনী কিন্তু সমাজ-সংহতিতে দুর্বল, এমন সমাজকে পরাভূত করে থাকে। ক্ষুদ্র বাহিনী বড় বাহিনীকে পরাজিত করে। ভারত বিজয়ী আর্যসমাজ, পারস্য ও রোমান সভ্যতার বিপরীতে মুসলিম বেদুইনদের জয়কে তিনি উপমা হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন।
দ্বিধাগ্রস্ত ও সংহতিহীন বিরাট বাহিনী ক্ষুদ্র বাহিনীর মোকাবেলায় পরাজিত হওয়ার ইতিহাস আরো অনেক দীর্ঘ। ভারত রাজনীতিতে এগিয়েছে। সমাজ-সংহতিতে পিছিয়েছে। তাই অনেক অর্জনই কসমেটিক্সের প্রলেপের মতো। আমাদের জানা মতে, এই যুগেও পৃথিবীতে দুটো দেশ ধর্মকে সংস্কৃতির মেলবন্ধনে উপস্থাপনের প্রয়াস পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইরানিরা একক ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠী হওয়ার কারণে এর জীবনীশক্তি অনেক বেশি মজবুত। তাই সমাজ-সংহতির ক্ষেত্রে ধর্ম ক্যাটালিস্ট হয়ে আছে। ধর্ম আছে, স্লোগান নেই। বাড়াবাড়ি নেই। আক্ষরিক সাম্প্রদায়িকতাও অনুপস্থিত। অন্য দিকে, ভারতও হিন্দুত্ববাদকে সংস্কৃতির প্রলেপ দিয়ে বিনোদনের ধারায় উপস্থাপন করেছে। এটা জাত-পাত ও বর্ণবাদে পিষ্ট অসহিষ্ণু ভারতের জন্য ইরানের মতো সুফল দেবে না। কারণ বহুত্ববাদকে যেসব বিষয় চ্যালেঞ্জ করে- এটাও অন্যতম। ভারতের জনগোষ্ঠী এখনো জাত-পাত, বর্ণ ও ধর্মে বহুধাবিভক্ত। এ কারণেই জি বাংলা, স্টার ও জলসাসহ ভারতের মিডিয়ার হিন্দু ধর্মাশ্রয়ী বিনোদন সংস্কৃতির আয়ু দীর্ঘজীবী হলেও বহুত্ববাদ ঠাঁই পাবে না। সমাজ-সংহতির আবেদনকে সাম্প্রদায়িকতা গিলে খাবে। মানবিক আবেদনের ওপর দাঁড়ালে বস্তুবাদও ঠাঁই পায় কিন্তু আরোপিত সংস্কৃতির বিলুপ্তি ঘটে, নয়তো রূপান্তর প্রক্রিয়ায় অন্য কিছু দাঁড়ায়। তাই ভারতীয় রাষ্ট্রপতিদের বহুত্ববাদ ও সমাজ-সংহতির ধারণা হনুজ দূরঅস্ত।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন