এখন নানান নামে ‘জঙ্গি’ দমনের নানা অভিযান চলছে। কোনোটার নাম টোয়াইলাইট, কোনোটার নাম হিট ব্যাক, কোনোটার নাম ম্যাক্সিমাস, কোনোটার আছে অন্য কোনো নাম। যেকোনো জায়গা হঠাৎ ঘেরাও দিয়ে বলা হচ্ছে, এর ভেতরে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছে। আর রেখে দিয়েছে অনেক গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র। বলা হচ্ছে, জঙ্গিরা এখন অনেক আধুনিক হয়ে গেছে। তারা ঘরে বসেই তৈরি করতে পারে ব্যাপকবিধ্বংসী সব বোমা-গ্রেনেড। ভাগ্য ভালো যে, এখনো বলা হয়নি, তারা ঘরের মধ্যেই তৈরি করতে পারে ট্যাংক কিংবা বোমারুবিমান। র্যাব-পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কুমিল্লা শহরের এক বাড়িতে রয়েছে জঙ্গি আস্তানা। সেখানে অভিযান চালাতে হবে, কিন্তু বাগড়া দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ছিল, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার আগে কোনো অভিযান চালানো যাবে না। র্যাব-পুলিশ একেবারে যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিয়ে ছিল। শুক্রবার সকালে তারা সেই কথিত জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে দেখতে পায়, সে বাড়িতে জঙ্গি তো দূরের কথা, কোনো মানুষই থাকে না। একেবারে ফাঁকা।
তাহলে এমন আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি কেন করা হলো? সেটা কি এ কারণে যে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের সময় এমন ‘জঙ্গিবিরোধী’ অভিযান চালিয়ে গোলাগুলি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা? নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। ফলে নির্বাচন অনেকাংশে সুষ্ঠু হয়েছে। যদিও সরকারের লোকেরা বিভিন্ন কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিয়েছে, সিল মেরেছে এবং বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। তবুও এই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জয় লাভ করেছেন। বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ যদি সন্ত্রাসের আশ্রয় না নিত তাহলে ভোট পড়ত এক লাখ ৭০ হাজার। তার মধ্যে তিনি পেতেন এক লাখ ২০ হাজার ভোট। তবে ব্যবধান যদি সামান্য হতো, তাহলে কী হতো? জাল ভোটের জোরেই আওয়ামী প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হতো। কেউ কি এ পরিস্থিতি বানচাল করার মিশন নিয়ে জঙ্গি আস্তানার ভুয়া খবর ছড়িয়ে দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছিল?
সিলেটের জঙ্গি আস্তানায় যে অপারেশন চালানো হয়, তার নাম দেয়া হয়েছিল ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’। তাতে চারজন নিহত হয়েছিল। সে কথায় পরে আসছি। কিন্তু মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় যে অভিযান চালানো হয়, তার নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন হিটব্যাক’। বাড়িটি প্রায় ৩৪ ঘণ্টা ঘিরে রাখার পর ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে ‘ছিন্নভিন্ন সাত থেকে আটজনের লাশের অংশ’ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, বুধবার বিকেলেই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা নিহত হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের ওই অপারেশন সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। অভিযান শেষে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলো ধাঁচের ওই টিনশেড একতলা বাড়ির বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ছড়িয়ে রাখা হয়েছিল। সেগুলো সরিয়ে ও ‘বিস্ফোরণ ঘটিয়ে’ নিষ্ক্রিয় করার পর ভেতরে ঢুকে মানুষের দেহের বিভিন্ন অংশ ছড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়।
মৌলভীবাজারের অপর ‘জঙ্গি আস্তানা’টি শুক্রবার পর্যন্ত ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় তারা অপারেশন স্থগিত ঘোষণা করে। শনিবার থেকে আবার অপারেশন চলবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই লেখা যখন প্রকাশিত হবে, ততক্ষণে অভিযান সমাপ্ত হয়ে যাবে। বুধবার ওই আস্তানা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হলেও বৃহস্পতিবার দোতলা ওই বাড়ি থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। গোলাগুলি বা বিস্ফোরণের শব্দও সারা দিনে শোনা যায়নি।
তবে নাসিরপুরের ঘটনাও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল সূত্র বলেছে, লাশগুলো ছিন্নভিন্ন অবস্থায় ছিল। সেখান থেকে তারা চারটি শিশু, দুই বয়স্ক মহিলা ও এক পুরুষের লাশ চিহ্নিত করতে পেরেছে। মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে তারা শহরের বড়হাট আবু শাহ দাখিল মাদরাসা গলিতে দোতলা বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা হিসেবে শনাক্ত করে ঘিরে রাখেন। ওই বাড়ি ঘিরে রাখার পর সেখানকার তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বুধবার ভোরে শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নাসিরপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানাটি শনাক্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশের মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটা সূত্র ধরে কাজ করছিলাম। নিহত ব্যক্তিরা নব্য জেএমবির সদস্য, সেটা আমরা মোটামুটি নিশ্চিত।’ তিনি বলেন, বাসার তত্ত্বাবধায়কের তথ্য মতে ওই ভবনে নিহত ব্যক্তিরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। তবে পুলিশ সে তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারেনি। এর আগে বুধবার ওই বাসার তত্ত্বাবধায়ক জানিয়েছিলেন, গত জানুয়ারি মাসে মাহফুজ পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ওই বাড়ি ভাড়া নেন। বাড়িতে মাহফুজের স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি, চার শ্যালিকাসহ আটজন ছিল। শ্যালিকাদের দু’জন ছিল একেবারেই শিশু। একজনের বয়স ছিল কয়েক মাস মাত্র। হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে লাশগুলো পাওয়া গেছে তার মধ্যে একটি পুরুষের, দু’টি বয়স্ক মহিলার ও চারটি শিশুর।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ওই চারটি শিশু নিশ্চয়ই জঙ্গি ছিল না। একটি শিশুর বয়স ছিল মাত্র দু-তিন মাস। আশা করি, পুলিশ স্বীকার করবে, সেও জঙ্গি ছিল না। এ শিশুটির মা উন্মাদ ছিলেন- এমন দাবি বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক করেননি। বয়স্ক অপর নারী ছিলেন ‘জঙ্গি’ মাহফুজের শাশুড়ি। তার জঙ্গি হওয়ার বয়স নেই। তাহলে জঙ্গি হওয়ার জন্য অবশিষ্ট থাকে মাহফুজ। এই বাড়িতে ওই পরিবার ছাড়া আর কোনো বাসিন্দা ছিল না। ফলে কোনো দাবি-দাওয়ার জন্য মাহফুজ কাউকে জিম্মি করেনি। এ কথা সে নিশ্চিতভাবেই জানত যে, পুলিশ যদি এই বাড়িতে হামলা চালায়, তবে বাড়ির সবাইকেই মরতে হবে। সে ক্ষেত্রে মাহফুজ অভিযানের আগে তার শাশুড়ি ও শিশুদের বাসা থেকে বের করে দিতে পারত। তা না করে এই শিশুদেরও সে কেন নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য বাড়ির ভেতরে রেখে দিলো?
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, মাহফুজ যখন দেখল, পালানোর আর কোনো পথ নেই, তখন সে প্রতিটি শিশুসহ সবার পেটে বোমার বেল্ট বেঁধে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সবাই আত্মহত্যা করল বুধবার। সকালে মাহফুজ গ্রেনেড হামলা চালিয়ে নাকি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। সেটাও অসম্ভব বলে মনে হয়। একটি গ্রেনেড ফাটিয়ে শত শত পুলিশ আর সমবেত জনতার মধ্য দিয়ে দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ চার শিশু ও দুই নারী নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া কি সম্ভব ছিল? এ দিকে আবার বুধবার বিকেলে তাদের আত্মহননের কথা জানলেও বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সোয়াত যাওয়ার পর থেকে থেমে থেমে বা একনাগাড়ে তিন শতাধিক গুলির শব্দ শোনা যায়। অথচ পুলিশই জানায়, বুধবার বিকেলেই তারা নিহত হয়েছে। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার দিনে বাড়িটি লক্ষ্য করে এত গুলি ছোড়া হলো কেন? এ প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এটি সোয়াতের অভিযান পরিচালনার কৌশল। তাদের যে এসওপি, ট্রেনিং ম্যানুয়াল- সেগুলো অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করে। যেহেতু নির্দিষ্ট তথ্য ছিল না, তাই এটা হতেই পারে।’ এই ঝাঁক ঝাঁক গুলি কি মৃতদেহগুলোকে ছিন্নভিন্ন করার জন্য যথেষ্ট ছিল না?
প্রশ্ন উঠেছে সিলেটের শিববাড়ি এলাকার আতিয়া ভবনে জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়েও। সেই ভবনে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ‘বিএনপি-জামায়াতের মদদপুষ্ট’ চার ইসলামি জঙ্গি অবস্থান নিয়েছে, এমন গোপন খবরের ভিত্তিতে সেখানে হামলা চালায় র্যাব-পুলিশ। প্রথমে তারা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। শিববাড়ির এ ভবনটি পাঁচতলা। তার গা ঘেঁষে আছে আরো একটি চারতলা ভবন। আর পুলিশ এই ভবন দু’টির অন্য বাসিন্দাদের ঘরের ভেতরে থাকতে বলে। তবে ৩০ ঘণ্টা পরে সেনাবাহিনীর প্যারা- মিলিটারি কমান্ডোরা ওই দুই ভবনের ৭০ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে আনে। তবে তারা কেউ জঙ্গিদের হাতে জিম্মি ছিল না। পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী স্বেচ্ছায় নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। পুলিশ সূত্র কোনো কোনো মিডিয়ায় জানিয়েছে, ওই জঙ্গিরা বাড়ির নিচতলায় গর্ত খুঁড়ে বসেছিল আর সোয়াত টিমকে এসে তাদের সাথে লড়তে বলছিল। ততক্ষণে র্যাব-পুলিশের সাথে যোগ দেয় এবং ঢাকা থেকে সোয়াত টিম সিলেট রওনা হয়ে যায়।
গত ২৪ মার্চ একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেল একদল পুলিশ ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছে। তবুও পুলিশের তরফ থেকে বলা হলো, জঙ্গিরা গোলাবারুদ ইমপ্রোভাইস এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের ফাঁদ পেতে রেখেছে ফ্ল্যাটে ও বাড়ির সিঁড়িতে। ফলে ওই ভবনে প্রবেশ নিরাপদ নয়। ২৫ মার্চ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা সেখানে হাজির হন এবং ভবনের বাসিন্দাদের নিচে নামিয়ে আনেন। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল ইসলাম বললেন, ‘জিম্মিদের’ উদ্ধার করা হয়েছে। ২৫ মার্চ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় সেনাবাহিনী তাদের অপারেশন শুরু করে। আর এ সময় মিডিয়াকর্মীদের ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে সরিয়ে দেয়া হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্যারা-কমান্ডোরা অভিযান শুরুর সাথে সাথে মুহুর্মুহু গুলি ও বোমার শব্দ তারা শুনতে পেয়েছেন। মাঝে মধ্যেই গ্রেনেড এবং আরআর ব্লাস্টের শব্দ তারা শুনতে পেয়েছেন। ২৬ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টায় সেনাবাহিনী তাদের দ্বিতীয় ব্রিফিংয়ে জানান, ‘জঙ্গিরা উচ্চ প্রশিক্ষিত’। তারা সেনাবাহিনীর ছোড়া গ্রেনেড বিস্ফোরণের আগেই আবার সেনাবাহিনীর দিকে ছুড়ে দিচ্ছে।
পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর জঙ্গিদের দু’টি হামলা মারাত্মক আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এ সময় ঘটনাস্থলের ২০০ গজের মধ্যে বেশ কিছু সরকারদলীয় সদস্যদের সমবেত হতে দেখা যায়। জঙ্গি হামলায় পরিস্থিতি খানিকটা এলোমেলো হয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন মারা যান। আহত হন প্রায় ৪০ জন। তাদের মধ্যে ছিলেন দু’জন র্যাব কর্মকর্তা, একজন লে. কর্নেল ও একজন মেজর। ওই লে. কর্নেল আজাদও পরে মারা যান। আহত বাকিদের বেশির ভাগই ছিলেন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য। ২৬ মার্চ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল প্রেস বিফিংয়ে জানান, অপারেশনে দুই জঙ্গি মারা গেছে। আরো এক বা একাধিক জঙ্গি এখন ঘরের ভেতরকার গর্তের মধ্যে বেঁচে আছে। ভবন ও এর সিঁড়িতে ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে। তাদের কাছে রয়েছে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র ও তারা বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। এ কারণে পরদিনও অপারেশন চলবে। এ সময় কোনো কোনো মিডিয়ায় লেখা হয়েছিল, এই অপারেশন র্যাব, সোয়াত ও সেনাবাহিনী একযোগে পরিচালনা করছে। কিন্তু ২৫ তারিখ দুপুরে একজন সেনাকর্মকর্তা জানান, ‘এই অপারেশন একান্তই সেনাবাহিনী পরিচালিত।’
এ কথা মানতেই হবে, পুলিশ জঙ্গিদের সক্ষমতা সম্পর্কে অবহিত ছিল। সে কারণেই তারা ২৩ মার্চ রাতে ওই বাড়ি ঘেরাও করে ফেলেছিল। তারা নিশ্চিত জানত যে, সংঘর্ষ ছাড়া এই জঙ্গিরা ছাড়বে না। কিন্তু পুলিশ কেন বাড়ির অন্য বাসিন্দাদের ভেতরে থাকার নির্দেশ দিলো? জঙ্গিরা যদি ওই বাড়ির অন্য কাউকে জিম্মি করে বসত, তাহলে কী হতো? এ দিকে মিডিয়াও এই পরিস্থিতিতে জিম্মি হয়ে পড়েছিল। তারা রিপোর্ট করছিল পুলিশের বরাত দিয়ে আর লং শর্টে কিছু ফুটেজ দিয়ে। ২৭ তারিখের ব্রিফিংয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল বললেন, বাকি দুই জঙ্গিও নিহত হয়েছে। আর সেখানে এখন আর কোনো জঙ্গি নেই বলেই মনে হয়।
অপারেশন টোয়াইলাইট শেষ হয় ২৮ মার্চ। কিন্তু এই পাঁচ দিন এলাকার জনগণকে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয়া হয়েছিল, ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল, অনেক রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আর জঙ্গিরা পাঁচ দিন ধরে বিশ্বব্যাপী প্রচার পাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আইএস দাবি করেছে, এ অভিযান তারাই চালিয়েছে। পুলিশ বলেছে, সুইসাইডাল ভেস্ট পরে দু’জন আত্মহত্যা করেছে। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে অন্য ভেস্টগুলো এমনিতেই বিস্ফোরিত হওয়ার কথা। আবার পুলিশের ঘেরাও করা জায়গার ভেতরে কী করে ওই জঙ্গিরা বিস্ফোরকভর্তি ব্যাগ রেখে আবার তাদের আস্তানায় ফেরত যেতে পারল, সেটাও কম বড় প্রশ্ন নয়। আর সেটা বিস্ফোরিত হয়ে মারা গেল ছয়জন আর আহত হলো ৪০ জন।
তবে জঙ্গিবাদ দূর করার এটা সঠিক পথ নয়। সমাজে গণতন্ত্র, সহনশীলতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ অবারিত করার মধ্য দিয়েই এর অবসান সম্ভব। অন্য কোনো পথে নয়।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন