বাংলাদেশে সেক্যুলাররা যে এখন সমাজে পরিত্যক্ত, সে উপলব্ধিটুকুও তাদের নেই। আওয়ামী লীগ সরকার একসময় তাদের ব্যবহার করেছে। কিন্তু প্রয়োজন যখন ফুরিয়েছে, তখন ছেঁড়া ন্যাকড়ার মতো ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। এখন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো তারা শুধু লাফান, মায়ের দুধের ভাগ পান না। ফলে তাদের ক্ষোভ আরো বেড়ে গেছে। তারা টেলিভিশন টক-শোতে গিয়ে আবোল-তাবোল বলতে শুরু করেছেন। পত্রিকায় আবোল-তাবোল লিখছেন। কিন্তু ফায়দা কিছুই হচ্ছে না। ‘সেক্যুলারগিরি’ করতে গিয়ে তারা এ দেশের উত্থান, অবস্থান, ইতিহাস, সমাজ সব কিছুই ভুলে গেছেন, কিংবা কিছুই তাদের ধারণায় নেই।
কিছু দিন আগে টক শোতে এক সেক্যুলারকে বক্তব্য দিতে দেখা গেল। আজব তামাশা! তাতে বোঝা গেল যে, ওই সেক্যুলার নেতা ভুলেই গেছেন যে, এ দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের শতকরা ৮৮ ভাগ মুসলমান। তারা আরো ভুলে গেছেন, বাংলাদেশ ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ। আর ওআইসির ৫৭ সদস্য দেশের মধ্যে জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এখানে মুসলমানরা তাদের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে তারা উদার বলে কট্টরপন্থার বিরোধী। তবে কি সেক্যুলারিজম ইসলামবিরোধী? টিভির ওই টক-শোতে ওই সেক্যুলার নেতা বাংলাদেশে ইসলাম বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। তার কথায় মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের ইসলামি পটভূমি তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না।
তিনি হাতে একটি বই নিয়ে এসেছিলেন। শিশুদের অক্ষর জ্ঞানের সচিত্র বই ছিল সেটি। বইটি নেড়েচেড়ে দর্শকদের দেখিয়ে অত্যন্ত বিদ্রƒপাত্মকভাবে তিনি এর সমালোচনা করছিলেন। বইটির উন্নতমানের প্রকাশনার কথাও বলছিলেন। কিন্তু আলোচনা শুরু করতেই বোঝা গেল, তিনি বইটির প্রশংসা করতে আসেননি, বরং এর বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে এসেছেন। তিনি দেখালেন, বইটিতে স্বরে ‘অ’ চেনাতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘অজু’। ‘আ’ চেনাতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘আজান’। ‘ন’ চেনাতে ‘নামাজ’। ‘র’ চেনাতে ‘রোজা’। তার বক্তব্য, এর উদ্দেশ্য হলো, শিশু মনের ওপর ইসলামের প্রভাব সৃষ্টি করা। আর এটা খুবই অন্যায় কাজ। ‘অ’-তে অজগর, ‘আ’-তে আম-এত দিন লেখা হয়ে আসছিল। সেটা কেন বদলানো হলো? কিন্তু মুসলমানের দেশে ‘ব’-তে যখন ‘বলি’ লেখা হলো, তখন এসব সেক্যুলারকে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি। তিনি খুব স্পষ্ট করেই বললেন যে, এসব ইসলামি শব্দ ব্যবহারের কারণেই তিনি ক্ষুব্ধ। কারণ এই সেক্যুলার বাংলাদেশের স্কুলে ইসলামের কোনো উপস্থিতি থাকতে পারবে না। কেন পারবে না, এর কারণ হিসেবে তিনি ক্লাসের ১২ শতাংশ অমুসলিম শিক্ষার্থীর কথা বলেননি। তদুপরি তিনি বরং বলতে চাইলেন যে, বাংলাদেশের স্কুলের শিশুদের ইসলামের কথা বলা হবে সব চেয়ে বিপজ্জনক। তাদের কিছুতেই ইসলামের কথা শোনানো যাবে না। ইসলামি শব্দ শেখালে তারা জঙ্গি হয়ে যাবে। আসলে এটি আলোচকের চরম অজ্ঞতা ও দায়িত্বহীনতারই বহিঃপ্রকাশ।
তবে তিনি যদি ক্লাসের অমুসলমান শিশুদের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করতেন, তাহলেও সেটা হয়তো একটা যুক্তি হতে পারত। তবে ১২ শতাংশ সংখ্যালঘিষ্ঠ শিশু যদি ৮৮ শতাংশের ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারে, সেটা তো তাদের জন্য ও সমাজের জন্য ভালো বিষয় হওয়ার কথা। সেক্যুলারদের এসব কথার ফলে ইসলামপন্থীদের মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, তারা বাংলাদেশে ইসলামেরই বিরোধিতা করছেন। ফলে আশঙ্কা হতে পারে, ইসলাম বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সরকার ক্রমেই এসব নাদান ব্যক্তির কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। আর হেফাজতে ইসলামকে কাছে টেনে নিয়েছে। কারণ সরকারের জন্য সেক্যুলাররা একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সরকার তাদের বিদায় করতে কসুর করছে না। সরকার মনে করে, আগামী নির্বাচনে এই সেক্যুলাররা সরকারের জন্য বোঝা, সম্পদ নয়। এর আন্তর্জাতিক কারণ বিষয়ে গত ২৪ জুন দৈনিক দিনকালে ‘আশ্বাস মিলে নাই’ শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকেরা তা পড়ে দেখতে পারেন।
ওই সেক্যুলাররা স্বভাবগতভাবে ইসলামের বিরোধিতা করে থাকেন। তাদের এক কথা, ইসলাম ধর্মবিষয়ক কথা, ইসলাম ধর্মবিষয়ক শিক্ষা কিংবা ইসলামি জীবনাচরণ জঙ্গিবাদের জন্ম দেয়, কিন্তু তাদের দৃষ্টিতে অন্য কোনো ধর্মে জঙ্গিবাদ নেই। তাই যদি হবে, তাহলে ভারতে হিন্দু উগ্রবাদের তাণ্ডবে, শুধু গরুর গোশত রাখা বা খাওয়ার অভিযোগে শতাধিক মুসলমানকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে কেন। এতে প্রকাশ্যে রাষ্ট্রের অনুমোদন রয়েছে। এই সেক্যুলারদের দৃষ্টিতে কেবল ইসলাম খুবই বিপজ্জনক। তাহলে কি ৮৮ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করবে? অথবা নাস্তিক হয়ে যাবে? সেটা যে কোনো দিনই সম্ভব নয়, সেক্যুলারদের সে সম্বন্ধে কোনো ধারণা আছে কি? বাস্তবতা হলো, একসময় যে সরকার সেক্যুলারদের ইন্ধন দিয়ে ইসলামবিরোধী ধুয়া সৃষ্টি করেছিল, তারাই এখন তাদের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে হেফাজতের সঙ্গে ভাব করছে। মূলত ইলেকশনকে সামনে রেখে সরকার এখন হেফাজতের সঙ্গে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এ দেশে সেক্যুলাররা কখনোই জনপ্রিয় গোষ্ঠী ছিল না। তৃণমূলে তাদের কোনো সমর্থন নেই। তাদের সামনে আনা হয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াতবিরোধী আন্দোলন জাগিয়ে তোলার জন্য। সরকারের সে উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির কথিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেক্যুলারদের সমর্থনে এ সরকার ক্ষমতায় বসেছে। তবে সরকার এখন একেবারেই ইউটার্ন নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আর জামায়াতবিরোধিতা এখন ইতিহাসের অঙ্গ। তাই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে ইসলাম।
হেফাজতের সঙ্গে সরকারের দহরম-মহরমে একেবারেই যেন ক্ষেপে উঠেছেন সেক্যুলাররা। তারা কঠোর ভাষায় সরকারের সমালোচনা শুরু করে দিলেন। বলতে থাকেন, সরকার নির্লজ্জভাবে ইসলাফম মৌলবাদী হেফাজতের কাছে আত্মসমর্úণ করেছে। এ কথা বলার কারণ ছিল, সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালতের প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবী থেমিসের বিকৃত মূর্তি স্থাপনের পর হেফাজতের কথায় অপসারণের কারণে। ওই মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আদালতই। আবার হেফাজতের দাবি মেনে নিয়ে আদালতই তা অন্যত্র স্থাপন করেছেন। এতে প্রধানমন্ত্রীও সায় দিয়েছিলেন। তিনিও বলেছিলেন, মূর্তিটি সেখানে স্থাপন করার কাজটা তার পছন্দ হয়নি। মূর্তিটি সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি, সিনিয়র আইনজীবী ও তার সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই মূর্তিটি সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। মূর্তি কেন সরিয়ে নেয়া হলো, তা নিয়ে সেক্যুলাররা নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করলেন। এই সমালোচনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি তাদের জিরো থেকে হিরো বানিয়েছেন। অর্থাৎ জানিয়ে দিলেন, তাদের ছুড়ে ফেলে দিতেও তার সময় লাগবে না। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, সরকার যদি সমর্থন না দেয় তাহলে বাংলাদেশে কোথাও সেক্যুলারদের ঠাঁই হবে না, বরং তারা জনগণের রুদ্ররোষের মুখে পড়বে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য সর্বাংশে সত্য।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই বাণী তাদের কানে ঢোকেনি। কারণ তারা ইসলামসংশ্লিষ্ট সব কিছুর বিরোধিতা করতে থাকেন এবং কেউ কেউ এমন কথাও বলে বসেন যে, সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে যদি মূর্তিটি সরিয়ে ফেলা হয়, তাহলে মসজিদগুলোর পরিণতি একই হবে। মৌলবাদের বিরোধিতা করার নামে তারা যুক্তিহীনভাবে ইসলামের বিরোধিতা করলেন। সেক্যুলাররা ভাবতেই পারেননি যে, শেখ হাসিনা তাদের পথে বসিয়ে দেবেন। তবে এই সরকারই শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে ইন্ধন দিয়েছে এবং সেই ইন্ধনে কিছু সেক্যুলার ব্লগার ইসলাম, কুরআন ও হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর বিরুদ্ধে অসংস্কৃত অশ্রাব্য কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দিতে শুরু করেছিলেন। এসব বক্তব্য এতটাই অগ্রহণযোগ্য ছিল যে, পশ্চিমা দেশগুলোতে যারা ইসলাকে ঘৃণা করে, তারা পর্যন্ত এমন কথা কোনো দিনই বলেননি বা বলার কথা কল্পনাও করতে পারেন না। এটাও ঠিক যে, ক্ষমতাসীন দল ও সেক্যুলারদের মধ্যে এই বিরোধ এবং ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থান কোনো অবস্থাতেই দেশের জন্য কল্যাণকর নয়। লক্ষ করলে দেখা যাবে, যখন সরকার ও সেক্যুলাররা ইসলামের বিরুদ্ধে একধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, তখন অতি দ্রুত জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল। সে প্রবণতা এখন অনেকখানি কম। আপনি যখন আমার বিশ্বাসকে আঘাত করেন এবং তার প্রতিবাদ করতে বাধা দেন, তখন যেকোনো পথে আমি প্রতিবাদ করেই যাবো। এই সত্যটি সরকার এবং সেক্যুলারদের সম্যক উপলব্ধি করা দরকার। তা না হলে বাংলাদেশের উদার ইসলামি দেশ বলে যে সুনাম রয়েছে, তা বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য। বাংলাদেশের উদার গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামি দলগুলোর। সেক্যুলারদের ভেবে দেখা দরকার, যুদ্ধাপরাধের বিচার এখন আর কোনো ইস্যু নয়। তেমনি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আন্দোলনও শিকেয় উঠেছে। সে কারণে সরকার সেক্যুলারদের থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। সেক্যুলাররা যদি সমাজের ভেতরে সামান্যতম ভিত্তিও তৈরি করতে চান, তাহলে তাদেরকে এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে যে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ইসলাম একটি উদারনৈতিক ধর্ম।
আরো একটি বিষয় এখানে লক্ষণীয়। আর তা হলো, এখানে বিপুল জনগণ তাদের ধর্ম নিয়ে গর্বিত। আর সে কারণে বিরাটসংখ্যক তরুণ-তরুণী এখন স্বেচ্ছায় হিজাব পরতে শুরু করেছেন। প্রতিদিন আরো অধিক সংখ্যায় তরুণ-তরুণী নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে হাজির হচ্ছেন। এ জন্য তাদের কেউ জোর করেননি। কিন্তু হিজাব পরতে বা নামাজ পড়তে তাদের কেউ যদি বাধা দেয়, তাহলে সমাজে ব্যাপক সঙ্ঘাতের সৃষ্টি হবে। এর হয়তো আরো একটি কারণ আছে। আর তা হলো, দেশের দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে তরুণ সম্প্রদায় ইসলামকে আদর্শ হিসেবে বেছে নিচ্ছে। সেক্যুলারদের অবশ্যই এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ইসলামি মূল্যবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তা যদি তারা করতে পারেন, তাহলে দেখতে পাবেন, নামাজি ও হিজাবধারীদের অনেকেই নামাজ ও হিজাবসহ তাদের সমর্থন করছে। তা না করে তারা প্রকাশ্যে ইসলামের বিরোধিতা করে যাচ্ছেন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের বইয়ে কেন ইসলামি শব্দ থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে। আবার মূর্তি সরালে ৮৮ শতাংশ মুসলমানের দেশে মসজিদ নিয়ে হুমকি দিয়ে এখন পুলিশ পাহারায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় কথা, সেক্যুলারদের আল্লাহ, কুরআন এবং হজরত মুহাম্মাদ সা:কে খুব হালকাভাবে নেয়া উচিত নয় এবং এর বিরুদ্ধে মন্তব্য করা অনুচিত, যা করছিলেন সেক্যুলার ব্লগাররা। তাদের এই কাণ্ডজ্ঞান থাকা উচিত যে, আল্লাহ, কুরআন, হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর বিরুদ্ধে মন্তব্য আমাদের সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের বরং মানুষকে বোঝানো উচিত যে, তাদের আন্দোলনের সঙ্গে ইসলামের সঙ্ঘাত নেই বরং তারা বাংলাদেশে কী ধরনের সমাজ চান, তার একটা রূপরেখা জনসমক্ষে তুলে ধরতে পারেন। তা থেকে দেখা যেতে পারে, কিছু মানুষ তাদের সমর্থন করছে। কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চাইলে তাদের বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com
উৎসঃ dailynayadiganta
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন