|
অজয় দাশ গুপ্ত
dasguptajoy@hotmail.com |
|
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা : রাজনীতির অশুভ সংকেত
30 October 2017, Monday
খালেদা জিয়া সক্রিয় হতে না হতেই শিরোনামে চলে এলেন। তার গাড়িবহরে হামলার খবরে দেশে বিদেশে মানুষের মনে বিরূপ প্র্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বৈকি। সরকার বা দেশ চালকেরা এমন কোনো দুধের নহর বইয়ে দিচ্ছেন না যে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। দেশে গণতন্ত্র থাকার মানে সবার মতামত সহ্য করা। গ্রহণ বা বর্জনের বিষয়টা মানুষ ঠিক করবে। সবাই জানেন এই সরকারের আমলে প্রভূত উন্নতি আর অর্জনে আছে দেশ। রাস্তাঘাট থেকে নানা শিল্পে যা ঘটেছে যেসব স্বাছন্দ্যের ছোঁয়া লেগেছে সেগুলো আগে দেখা যায়নি। আবার এটাও ঠিক লাগামহীন দ্রব্যমূল্য আর গুম-খুন কিংবা চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ মানুষের জান। তারা ভালো ভাবে জীবনযাপন করতে পারলে কিশোরী মেয়েটি ভাতের অভাবে আত্মহত্যা করেছে এমন খবর আসত না। সত্য বা মিথ্যা যাই হোক খবরটা চড়ানো বা বিশ্বাস করানোর মতো প্ররিবেশ তো তৈরি হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়া কার্যকর একটা বিরোধী দলের প্রতি মানুষের মনোযোগ থাকতেই পারে। বিএনপির অতীত বা পুষে রাখা প্রতিশোধের কথা বাদ দিলে তাদের গোপন জনপ্রিয়তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এখন বহু বছর পর তিনি যখন রোহিঙ্গা পরিদর্শনে বের হলেন তার সঙ্গে থাকা মিডিয়ার গাড়িবহরে মূলত এই হামলার কারণে সরকারকেই মানুষ প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং এটাই স্বাভাবিক।
ঘটনার কেন্দ্রস্থল যদি ফেনী হয়তো আমরা মনে রাখব এই এলাকার একদা ত্রাস আওয়ামী লীগের নেতা জয়নাল হাজারী টিকতে পারেননি। রাজনীতিতে আজ তিনি শূন্য। বিএনপির ত্রাস প্রবাত কর্নেল জাফর ইমামের অত্যাচারের কথাও ভুলিনি আমরা। তিনিও পারেননি। ভিপি জয়নাল নামে পরিচিত আরেক নেতার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেছে কলঙ্কিত এক অডিও ভিডিও টেপের কারণে। তবে এক জায়গায় বড় মিল। তিনজনই পেশী বলে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চাইতেন। আজ সেই ফেনীতে খালেদার গাড়িবহরে হামলা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, চিরদিন কারও সমান নাহি যায়।
তবে এই ঘটনায় কারা জড়িত এবং কারা মিডিয়া কর্মীদের ওপর হামলা করল সরকার বা কর্তারা যদি তা সত্যিকারভাবে বের না করেন তো মানুষ তাদের দিকেই আঙুল তুলবে। মনে রাখা দরকার অদর্শনের একটা শক্তি আছে। আর না দেখার আছে আকর্ষণ। খালেদা জিয়া এখন সেটা পাবেন। অন্যদিকে মনোটোনাস বা এক ঘেঁয়েমির দায় সরকারি দলকেই বহন করতে হবে। মানুষ এমন মনোটোনাস রাজনীতি ও একক শক্তিতে অভ্যস্ত হতে হতে এক সময় বাঁধনহীন হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব না থাকলে তা অনেক আগেই হতে পারত। খালেদা জিয়াকে দেখবার জন্য বা তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য মানুষ যেতেই পারে। আর তিনি রাজপথ দিয়ে যাবেন, না উড়ে যাবেন সেটা তার বা দলের ব্যাপার। এমন না যে রাজপথে কেন গেলেন সে কারণে এমন হামলার মুখোমুখি হতে হবে। এতে দেশের আইনশৃঙ্খলার বিষয়টাও ঠুনকো হয়ে ওঠে। বিএনপি এখন সরাসরি বলছে এটা সরকারি দলের লোকদের কাজ। এ কথা বলার হক মির্জা ফখরুলের আছে। এবং তা যদি হয় তো বলতে হবে এমন হামলা বা মিডিয়াকে জব্দ করার পরিণাম কি হয় সেটা আওয়ামী লীগের চাইতে ভালো কেউ জানে না। যদি তারা এটা করে থাকে তো বুঝতে হবে অপরিণামদর্শী এই ঘটনার দায় তাদের ভবিষ্যতকে আরও একধাপ পিছিয়ে রাখল।
একটি দেশে বহুমত ও পথের দল থাকবে তারা তাদের কথা বলবে এটাই গণতন্ত্র। আওয়ামী লীগের সমস্যা হলো তাদের দল পাওয়ারে এলেই এক শ্রেণির নেতা-কর্মী হিতাহিত ভুলে খুব বেশি লীগার হয়ে ওঠে। আবার এই এরাই সমস্যার সময় গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। নিকট অতীতের সব ঘটনাতেই এর প্রমাণ আছে। ফলে যারাই হামলা চালাক তাদের খোঁজে বের করা সরকারি দল ও সরকারের দায়িত্ব। আর একটা কথা না বললেই নয়। এই হামলা বিনা উসকানিতে হয়েছে। খালেদা জিয়া বিএনপি বা তাদের রাজনীতি আইনত সিদ্ধ। তারা দেশের সংবিধান ও আইন মোতাবেক দলীয় রাজনীতি করেন ফলে তাদের গাড়িবহরে হামলার ভেতর দিয়ে শক্তি বা বাহাদুরি দেখানো দ-নীয়। তাছাড়া এতে মানুষকে আরও একবার খালেদা জিয়ার প্রতি দুর্বল করে তোলা ছাড়া আর কোনো লাভ দেখি না। যখন যারা সরকারে থাকে আমাদের দেশের মতো দেশে তারা চাপে থাকে এটাই স্বাভাবিক। সে চাপ কমাতে পেশী কোনোদিন কাজ করেনি। কাজ করেছে দূরদর্শীতা বা জনগণের সঙ্গে থাকা।
আমি বলব এই ঘটনায় বিএনপির লাভ হয়েছে। তাদের হারিয়ে যাওয়া ফোকাস মিডিয়াকে রাগিয়ে তোলা আর মানুষের মনে সহানুভূতি জাগানোর সবগুলো কাজ করে দিয়েছে হামলাকারীরা। আবারও বলছি, জনমনে খালেদা জিয়াও বিএনপির প্রতি যে সহানুভূতি বা সমর্থন সেটাকে স্বীকার করে নিয়ে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হলে এবং অপরাধীদের বিচার না হলে কলঙ্ক হয়েই থাকবে এই হামলা। যার জবাবের জন্য খুব বেশি দেরীও করতে হবে বলেও মনে হয় না।আস
লেখক: কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন