চোখের মণি দেখেই মিথ্যেবাদী শনাক্ত!
08 October 2017, Sunday
পশ্চিম আফ্রিকায় একসময় মিথ্যাবাদী ধরা হতো পাখির ডিম দিয়ে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হতো। এরপর তাদের হাতে তুলে দেয়া হতো ডিম।
এ ডিম একে একে হাতবদল হতো। হাতবদল হওয়ার পথে যার হাতে ডিমটি ভাঙত, সে-ই মিথ্যাবাদী। প্রাচীন চীনে অবশ্য পাখির ডিমের বদলে ব্যবহার করা হতো এক মুঠো চাল।
সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিবোতে দেয়ার পর যার মুখে চাল শুকনো থাকবে, সে-ই নাকি মিথ্যাবাদী! চাল পড়ার চল অবশ্য এ দেশেও অনেক জায়গায় আছে। খবর কলকাতা টোয়েন্টিফোর।
মানুষের এসব প্রাচীন বিশ্বাসকে অনেকে বলেন কুসংস্কার। এর পেছনে আছে মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যাও। আর বিজ্ঞান সত্য-মিথ্যা যাচাই করার জন্য অনেক আগেই আবিষ্কার করেছে ‘পলিগ্রাফ টেস্ট’। ১৯২১ সালে আবিষ্কৃত এ যন্ত্রটি মানুষের কাছে ‘লাই ডিটেক্টর’ বা মিথ্যেবাদী শনাক্তকারী হিসেবেই বেশি পরিচিত। যদিও সেটি শতভাগ নির্ভুল ফল দিতে পারে না।
আর ব্যয়বহুলও। তবে এবার এলো মিথ্যাবাদীদের ধরার নতুন প্রযুক্তি- যার নাম ‘আই ডিটেক্টর’ বা চোখ শনাক্তকারী।
‘লাই ডিটেক্টর’ যন্ত্রটি এখনও সবচেয়ে ব্যবহৃত হয়। রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় হেরফের কিংবা মানসিক প্রতিক্রিয়া মাপজোখ করে মিথ্যাবাদী নির্ণয় করে ডিভাইসটি।
তবে যুগে যুগে ‘পলিগ্রাফ’- এর নানা পরিমার্জনা ও উন্নতিসাধন করা হলেও বিশেষজ্ঞরা কিন্তু পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারেননি। একবার অলরিল্ড নামে এক রাশিয়ান গোয়েন্দাকে ধরেছিল এফবিআই।
একবার নয়, দু-দুবার ‘পলিগ্রাফ টেস্ট’-এ উতরে যান অলরিল্ড। অবশ্য শুধু বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গোয়েন্দা নয়, কিছুটা বোকা গোছের মানুষও একটু কৌশলী হলেই উতরে যেতে পারেন ‘পলিগ্রাফ টেস্ট’।
তাহলে সঠিকভাবে মিথ্যাবাদী ধরার কী উপায়? দীর্ঘদিন গবেষণার পর বিজ্ঞানীরাও সায় দিয়েছেন- মিথ্যা ধরার উপায় লুকিয়ে চোখের তারায়! মানুষের অনুভূতির প্রতিফলন ঘটে চোখের মণি বা তারায়।
ভয়, ঘৃণা, আনন্দ কিংবা মিথ্যা বলায় প্রসারিত হয় চোখের মণি। মিথ্যা বললে আমাদের চোখের মণি যতটুকু প্রসারিত হয়, সেটা এক মিলিমিটারের ভগ্নাংশ সমান।
বেশির ভাগ মানুষই সাদা চোখে তা ধরতে পারে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ রাজ্যের ‘কনভার্স’ নামে একটি সংস্থা এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছে, যা দিয়ে মিথ্যা বলার সময় মানুষের চোখের মণির প্রসারণ ধরা যায়। যন্ত্রটির নাম ‘আই ডিটেক্টর’।
একটি ক্যামেরা ব্যবহার করে চোখ এবং অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের ভাঁওতাবাজি ধরা হয়। ‘লাই ডিটেক্টর’-এর চেয়ে সস্তা হওয়ায় ‘আই ডিটেক্টর’-এর জনপ্রিয়তা ক্রমে বাড়ছে। এখন এ ডিভাইসটি বিশ্বের ৩৪টি দেশে সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে ব্যবহার হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন