আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি মাঝে মধ্যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটায়। তারা আওয়ামী লীগ নয়। কোনো দলের নয়। এরা দুর্বৃত্ত। এদের ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তা না হলে তারা সুযোগ নেবে। এ বছর এবং আগামী বছর খুব ক্রুশিয়াল। কারণ সামনে নির্বাচন। এ বছর অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে।
বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের শুধু পরমাণু বোমা আছে। আমাদের পরমাণু বোমার দরকার নেই। আমাদের পরমাণু বোমা আমাদের জনগণ। আমাদের তরুণ সমাজ। তাহলে বেগম খালেদা জিয়া কিভাবে বলেন যে, সরকার বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্রে পরিণত করছে। আমরা তো পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছি। পাকিস্তানি কায়দায় রাষ্ট্র চালিয়েই আমরা আজ তাদের থেকে এগিয়ে। পাকিস্তান যতোই চেষ্টা করুক। তারা বাংলাদেশকে আর পেছনে ফেলতে পারবে না।
সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের ৪৬তম বিজয় উৎসব উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছি। অনেকেই অবাক হন। অনেকে কল্পনাও করেনি বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব উন্নয়নে। প্রতিদিনই নতুন নতুন ফিনিক্স পাখির সৃষ্টি হচ্ছে এখানে। টাইম ম্যাগাজিন আজ পাকিস্তানকে বলছে বিপজ্জনক দেশ। আর বাংলাদেশ সর্বোপরী সমীক্ষা অনুযায়ী জিডিপি, রাজনৈতিক, সামাজিক সব দিক থেকেই এগিয়ে আছে। আর পদ্মাসেতু হলে বর্তমান জিডিপি ৭.২৮ থেকে বেড়ে ৮.৭৮ হয়ে যাবে। আজ বাংলাদেশের ফরেন কারেন্সি ৪৩ বিলিয়ন ডলার, শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ। সব দিক থেকেই এগিয়ে আছে দেশ। এই পরিসংখ্যান তো সব দিক থেকেই আমরা যে পাকিস্তান থেকে এগিয়ে, তাই দেখায়।
তিনি বলেন, 'আজ বেগম জিয়া ও মির্জা ফখরুল সাহেব বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ কী শুনি মন্থরার মুখে। আপনারাই তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় পাকিস্তান যখন বাংলাদেশের বিরোধিতা করছিল, তখন তাদের সমর্থন জানিয়েছিলেন। আমরা পাকিস্তানি কায়দায় দেশ চালাচ্ছি না। আমরা (আ’লীগ) বরং দেশকে সঠিক ট্র্যাকে নিয়ে এসেছি। আপনারা দেশ ও তরুণ সমাজকে লাইনচ্যুত করেছিলেন। আমরা (আ'লীগ) ট্র্যাকে নিয়ে এসেছি তাদের। আমরা কারো সাথে কম্প্রোমাইজ করিনি। শেখ হাসিনা কারো সাথে কম্প্রোমাইজ করেননি। যদিও তাকে এ বিষয়ে অনেক বড় বড় রাষ্ট্রের নায়কেরা ফোন করেছিলেন। কিন্তু তিনি তাতে কোনো কর্ণপাত করেননি।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ভুল থাকতেই পারে। তবে কারো সাথে কম্প্রোমাইজ আ'লীগ করেনি। রাজনৈতিক কৌশল পরিবর্তন করা মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশের সৃষ্টির চেতনা এবং আদর্শিক কৌশল পরিবর্তন করা নয়। আগামী নির্বাচনের জন্য নতুন নতুন জোট হতে পারে। আগামী নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উৎখাত করতে আমরা সফল হবো। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আগামী নির্বাচনে আ'লীগই জয়ী হবে।
সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, খ্রিস্টান, সনাতন এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের কেউ নিজেদের মাইনোরিটি ভাববেন না। মুসলমানের ভোটের মূল্য বেশি, আপনার কম, এরকম কিছু নয়। সবার ভোটের মূল্য সমান। আপনারা ইনফিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগবেন না।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ইন্দো-বাংলার সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে এখন। দুই দেশ অংশিদারিত্বে যাই করছে, তা বাংলাদেশ ও ভারতের মিউচুয়াল প্রফিটের জন্য। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও বংশধরদের জন্য ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৃত্তিতে পড়ার সুযোগ দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকারের তরফ থেকে। এর কারণ, যাতে এই প্রজন্ম তাদের (মুক্তিযোদ্ধা) অবদান সম্পর্কে ভালোমতো জানতে পারে। ইন্দো-বাংলা সম্পর্কের মাইলস্টোন স্থাপিত হয়েছে গত এক বছরে। ভারতের যাবার জন্য সবচেয়ে বেশি ভিসা পেয়েছেন বাংলাদেশীরা। এর মূল কারণ ভারত নিঃস্বার্থভাবে চায় বাংলাদেশের উন্নয়ন। ভারত বিশ্বাস করে, দুই দেশের মধ্যে পর্যটক, ব্যবসা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষের সফরের মাধ্যমে দুই দেশেরই সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।
এ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ভারত বাংলাদেশের এক দারুণ বন্ধু। একাত্তরের রাখিবন্ধনে আবদ্ধ। আমাদের আর কারো সাথে বন্ধুত্ব করার ইচ্ছা নেই। একাত্তরে ভারত ও ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের অবদান বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না। ভারত বাংলাদেশীদের সে সময় খাদ্য, আশ্রয়, অস্ত্র সবকিছুই দিয়েছিল। এ শুধুমাত্রই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব। আর কিছু নয়। ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণত্যাগকারীদের প্রতি এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য ভারতের প্রতি সম্মান’ শীর্ষক আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন