গোলাম মাওলা রনি
আমি মাঝে মধ্যে অবাক হয়ে ভাবি এবং সাধ্যমতো কারণ খুঁজে বেড়াই- কেন লোকজন মীর জাফরকে এত ঘৃণা করে! ঘটনাটি ঘটেছিল ১৭৫৭ সালে। এরপর বহু বছর চলে গেছে। তবুও মানুষ বেঈমানি, মুনাফেকি ইত্যাদি বদ খাসলতের জন্য কেন বারবার সবার আগে তার নামটি উচ্চারণ করে! অথচ তিনি যা করেছেন তার চেয়েও নোংরা কাজ করে ইতিহাসের পাতায় অনেকেই নায়ক-মহানায়ক হিসেবে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন। রাজনীতির জন্য কূটকচাল, বেঈমানি, বিশ্বাসঘাতকতা, ভ্রাতৃহত্যা, মাতৃহত্যা কিংবা পিতৃহত্যা যেখানে সচরাচর ঘটে এবং ঘটনার নায়কেরা পরবর্তী জীবনে মহান উপাধিতে ভূষিত হন, সেখানে বেচারা মীর জাফর আলী খানের কপালে কেন এত বদনামি! এসব বিষয় বিস্তারিত আলোচনার আগে মীর জাফরের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলে নেই।
আমার মতে, মীর জাফর কোনো যেনতেন লোক ছিলেন না। বর্তমান বাংলাদেশের চেয়েও প্রায় আড়াই গুণ বড় একটি ভূখণ্ডের রাজনীতি এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে জড়িত ছিলেন প্রায় ৪৫ বছর। এই সুদীর্ঘ সময়ে তিনি কখনো সেনাপতি, কখনো প্রাদেশিক শাসক বা গভর্নর আবার কখনো বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান সেনাপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এরপর দুই দফায় তিনি বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব হয়েছিলেন এবং ক্ষমতাসীন অবস্থাতেই মারা গিয়েছিলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা এবং ইংরেজদের তল্পিবাহক হিসেবে ক্ষমতায় বসার পরও তার চলার পথ সহজ সরল ছিল না বরং প্রচণ্ড সংগ্রাম, যুদ্ধবিগ্রহ ও প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে তাকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হয়েছে।
ক্ষমতায় বসার পর প্রথমে ইংরেজদের সাথে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত, তারপর দিল্লির মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের রাজকীয় ৩০ হাজার সৈন্যের সাথে যুদ্ধ ইত্যাদির পরও তিনি বেশ পাকাপোক্তভাবে ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ইংরেজদের স্থায়ীভাবে তাড়ানোর জন্য তিনি গোপনে ডাচ্ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে হাত মিলিয়েছিলেন; কিন্তু আপন জামাতা মীর কাসিম এই ঘটনা ইংরেজদের কাছে প্রকাশ করে দিলে পুরো পরিস্থিতি উল্টে যায়। ইংরেজরা যুদ্ধ করে ডাচ্ বণিকদের বাংলা থেকে তাড়িয়ে দেন এবং তাদের সাথে চক্রান্তের অভিযোগে মীর জাফরকে ক্ষমতাচ্যুত করে তার জামাতা মীর কাসিমকে নবাব পদে বসান। পরবর্তীকালে মীর কাসিম বিদ্রোহী হয়ে ইংরেজদের সাথে বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন। বাংলার জটিল রাজনীতি এবং মীর জাফরের দক্ষতা ও সফল কূটনীতির কারণে ইংরেজরা পুনরায় তাকে সিংহাসনে বসান এবং এ অবস্থায় ১৭৬৫ সালের ১৭ জানুয়ারি ৭৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
উল্লিখিত সাদামাটা ইতিহাস পড়লে সাধারণ পাঠকেরা সঙ্গত কারণেই মীর জাফর সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। কারণ আপন পিতাকে হত্যা করে কিংবা কয়েকজন সহোদরকে হত্যা করে সিংহাসন দখল করেছেন, এমন নামকরা রাজা-বাদশাহর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। অন্য দিকে আপন মুনিবকে বিপদে ফেলে অথবা মুনিবকে হত্যা করে সিংহাসন দখল করা প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধান সেনাপতিদের সংখ্যাও অসংখ্য। মীর জাফরের প্রথম মুনিব নবাব আলীবর্দী খান ও তার মুনিব নবাব সরফরাজ খানকে হত্যা করে বাংলার মসনদ দখল করেছিলেন। কাজেই কেন একই অপরাধের কারণে ইতিহাস আলীবর্দী খানকে পুষ্পমাল্য দেবে এবং মীর জাফরকে কলঙ্কহার পরাবে, সেটা নিয়েই আজকের নিবন্ধে বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করব।
মীর জাফরের প্রতি মানুষের ঘৃণার পরিমাণ কতটুকু, তা আন্দাজ করার জন্য যে কেউ মুর্শিদাবাদ গিয়ে তার পরিত্যক্ত প্রাসাদটি দেখে আসতে পারেন। কয়েক শতাব্দী ধরে স্থানীয় লোকজন প্রাসাদটির নাম দিয়েছেন নিমকহারাম দেউড়ি। মানুষের সীমাহীন ঘৃণা, অভিসম্পাত এবং কথ্যরীতিতে প্রতিনিয়ত গালিগালাজের কারণ অনুসন্ধানের আগে মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও দোয়াপ্রাপ্তির নিয়ামতগুলো আলোচনা করা দরকার। আমাদের ইতিহাসের হাজী শরীয়তুল্লাহ, পীর মহসিন উদ্দিন দুদুমিয়া, তিতুমীর, মাস্টারদা সূর্যসেন কিংবা ইলা মিত্রের কাহিনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা দেশ ও দশের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কোনো উপকার করতে পারেননি কিংবা দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসাতে পারেননি। তবে কেন যুগ যুগ ধরে মানুষ তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে আসছে! তারা কেউ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন না কিংবা ক্ষমতা দখলের কোনো ইচ্ছা তাদের ছিল না। তারা শুধু বাংলার মানুষকে ভালোবেসেছিলেন এবং মানুষের স্বাধীনতা, অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পাশাপাশি একটি দুর্নীতিমুক্ত, অত্যাচার ও অপরাধমুক্ত স্বাধীন ও সার্বভৌম-মাতৃভূমির কথা কল্পনা করতেন।
এবার ইতিহাসের সেসব নায়ক-মহানায়ক সম্পর্কে কিছু বলি, যারা রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। বাংলার কিংবদন্তির শাসক গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ তার পিতাকে হত্যা করে সিংহাসনে বসেছিলেন। অন্য দিকে সম্রাট আওরঙ্গজেব তার ভাই ও পিতার ব্যাপারে অভিযোগমুক্ত ছিলেন না। আমৃত্যু বন্দী রেখে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করেছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যও তার পিতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন। এত কিছুর পরও তারা ইতিহাসের মহানায়ক। কারণ, তারা দেশের মানুষের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিলেন। সমাজ ও রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মানুষের অধিকার, সুশাসন ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য তারা জীবন উৎসর্গ করে গিয়েছিলেন। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা, চাওয়া-পাওয়া, সুখ-দুঃখ ইত্যাদি তারা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতেন এবং সেভাবে সবাইকে সম্মান করতেন। মানুষকে অপমান করা এবং দেশের স্বার্থ বিদেশের কাছে জলাঞ্জলি দেয়ার কথা যেমন তারা কল্পনা করতেন না, তেমনি জনস্বার্থকে সব সময় ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিতেন। দলবাজি, আত্মীয়করণ ও অবিচার করার ইতিহাস তাদের জীবনকে স্পর্শ করতে পারেনি। ফলে ইতিহাসের নির্মোহ বিচারে তারা মহাকালের রাজনীতির নায়ক এবং মহানায়কে পরিণত হয়েছেন।
উপরি উক্ত ঘটনার আলোকে এবার মীর জাফরের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করা যাক। তিনি আপন সাহসে কিংবা শক্তিবলে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে লড়াই করে ক্ষমতা লাভের কথা চিন্তাও করতেন না। বাংলার জনগণের প্রতি তার কোনো দরদ-মায়া-মমতা কিংবা আবেগ অনুভূতি ছিল, এমন কোনো প্রমাণ ইতিহাসে নেই। কাপুরুষতা, চক্রান্ত ও অন্যের হাতের পুতুল হওয়ার যোগ্যতা ছাড়া রাষ্ট্রক্ষমতা দখল এবং টিকে থাকার কোনো উপায় তার জানা ছিল না। নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে তিনি যেমন বিদ্রোহী হওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি, তেমনি ইংরেজদের সাথে মনোমালিন্য হওয়ার পর তার জামাতা মীর কাসিমের মতো অস্ত্র তুলে যুদ্ধ করার হিম্মত দেখাতে পারেননি, বরং যে ইংরেজরা তাকে সিংহাসনচ্যুত করে মীর কাসিমকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল, তারাই আবার মীর কাসিমকে হত্যার পর যখন মীর জাফরকে সিংহাসনে বসার প্রস্তাব করেন; তখন ব্যক্তিত্বহীন ও লোভী সত্তার দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে মীর জাফর পুরো পুতুল নবাব হওয়ার জন্য ছুটে গিয়েছিলেন।
মীর জাফর বাকচাতুর্যে অত্যন্ত পটু ছিলেন। হম্বিতম্বি করা, সাহস শক্তির দম্ভ করে তার মুনিবদের বিভ্রান্ত করে বড় বড় পদ বাগিয়ে নেয়ার অসাধারণ ক্ষমতা তার ছিল। নিজের কাপুরুষতা প্রমাণিত হওয়ার পর তিনি বেশ কয়েকবার গুরুতর শাস্তির মুখোমুখি হন। কিন্তু বাকচাতুর্য ও ছলচাতুরীর যোগ্যতা দিয়ে সব বিপত্তি কাটিয়ে উঠে কাক্সিক্ষত পদ-পদবি দখল করে নিয়েছিলেন। তিনি জীবনে যুদ্ধ করেননি, কিন্তু প্রায় এক লাখ নিয়মিত সৈন্যের প্রধান সেনাপতি ছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি সব সময় মনিবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার পরও নানা ছলছুতায় নিজের কর্তৃত্ব বজায় রেখেছেন। নবাব আলীবর্দী খান একবার মীর জাফরকে পদচ্যুত করেছিলেন। ১৭৪৭ সালে তিনি যখন বিহারের সুবেদার ছিলেন, তখন মারাঠা সেনাপতি রঘুজি বোসাল বিহার আক্রমণ করেন। মীর জাফর ঠিক পলাশী প্রান্তরের মতো পুরো সেনাবাহিনী নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে মারাঠাদের লুটপাটের রাস্তা করে দেন। পরে নবাব আলীবর্দী রণাঙ্গনে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন এবং বিহারের সুবেদারের পদ থেকে মীর জাফরকে পদচ্যুত করেন।
মীর জাফরের কাপুরুষতা, চক্রান্ত করার বিস্ময়কর ক্ষমতা ও কোনো কাজ না করে পদ-পদবি এবং প্রতিদান বাগিয়ে নেয়ার জন্যও তিনি ইতিহাসের এত ঘৃণা পেতে পারেন না। কারণ রাজ্য, রাজা, রাজধানী ও রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে এমন চরিত্রের লোক অতীতে যেমন ছিলেন, তেমনি বর্তমানেও আছেন এবং আগামীতেও থাকবেন। মীর জাফরের প্রধান অপরাধ ছিল, দেশের স্বাধীনতা বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়া এবং বাংলার মানুষের রক্ত-মাংসের উপার্জনের স্ফীত হওয়া রাজকোষের সব অর্থ ইংরেজদের উৎকোচ হিসেবে প্রদান করা। এ ছাড়া তিনি বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারি কাজকর্ম, খাজনা আদায়, ইজারা প্রভৃতি অনেক কিছু একচেটিয়াভাবে তার প্রভু ইংরেজ বেনিয়াদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তার রাজদরবার, সরকার ও সেনাবাহিনীর মূল কর্তৃত্বও তিনি বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিকিয়ে দেয়ার কারণেই তিনি ইতিহাসের অবিরত ঘৃণার ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছেন। ইংরেজদের ভারতবর্ষ শাসনের নামে প্রায় ২০০ বছর শোষণ, নির্যাতন ও লুটপাট চালানোর সুযোগ মীর জাফরই করে দিয়েছিলেন। একটি সময়ে বলা হতো, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য অস্তমিত হয় না। সমগ্র দুনিয়ায় ব্্িরটিশরা নানা ছলচাতুরী, জাল-জালিয়াতি, কূটকৌশল ও চক্রান্ত করে বহু দেশ, জনপদ এবং সাম্রাজ্য দখল করেছিল। কিন্তু বাংলার মতো বিশাল ভূখণ্ড যত সহজে ও স্বল্প সময়ে তারা মীর জাফরের মাধ্যমে দখলে নিতে পেরেছিল, এমনটি দুনিয়ার অন্য কোথাও হয়নি। অন্য দিকে মীর জাফর যেভাবে বাংলার রাজভাণ্ডারের চাবি ইংরেজদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, তেমনটি পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাস ঘাঁটলে দ্বিতীয় নজির মিলবে না। ফলে ইতিহাসের নির্মম বিচারে তাবৎ দুনিয়ায় একজনই মীর জাফর সৃষ্টি হয়েছে এবং দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, তার জন্ম ও মৃত্যু বাংলার মাটিকে কলঙ্কিত করেছে এবং তার কুকর্মের দায় বহন করতে গিয়ে দেশীয় রাজনীতিতে যুগযুগান্তরে বহু মীর জাফরের প্রেতাত্মা পয়দা হয়েছে।
এবার মীর জাফরের রাজনীতি রাজনীতির মীর জাফর সম্পর্কে কিছু তাত্ত্বিক ও রূপক আলোচনা করে আজকের প্রসঙ্গ শেষ করব। মীর জাফর বা মীর জাফর প্রকৃতির মানুষের রাজনীতি হলো সাধারণত ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ব্যক্তিস্বার্থের জন্য যাদেরকে দরকার, এই শ্রেণীর লোকেরা অত্যন্ত সফলতার সাথে সেসব প্রয়োজনীয় সঙ্গী-সাথী ও সাহায্যকারীদের জুটিয়ে নেয়। এদের কাছে নীতি-নৈতিকতা, ধর্ম-কর্ম, মানবতা ইত্যাদি সব কিছুই কেবল লোক দেখানো। প্রয়োজনে তারা মহাধার্মিক বা মুনিঋষি প্রকৃতির তপস্বী সেজে লোকদের বোকা বানিয়ে ধোঁকা দিতে পারে অনায়াসে। আবার প্রয়োজন হলে রাতারাতি বেশ পরিবর্তন করে রাক্ষুসে রূপ ধারণ করে যেকোনো তাণ্ডব চালাতে তাদের কোনো অসুবিধা হয় না। মীর জাফরদের কাছে পিতা-মাতা, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, সন্তান-সন্ততি এবং রাষ্ট্র কেবলই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি ও অভিলাষ পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দয়ামায়ার মতো মানবিক গুণাবলিকেও তারা ভণ্ডামির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।
মীর জাফরদের রাজনীতির ফলে সংশ্লিষ্ট ভূখণ্ডে অসংখ্য ছোটখাটো মীর জাফর সৃষ্টি হয়ে যায়- অনেকটা বড় শয়তান, মেঝো শয়তান ও ছোট শয়তানের মতো। মীর জাফরি রাজনীতির ফসল হিসেবে সৃষ্ট মেঝো ও ছোট মীর জাফরেরা পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলে। ইতিহাসের মীর জাফরকে যদি বড় শয়তান হিসেবে আখ্যা দেই, তবে মেঝো শয়তান হিসেবে সবার আগে নাম চলে আসে মীর জাফরপুত্র মিরনের। এর পরের ধাপের ছোট শয়তান বলতে আমরা জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফ, মোহাম্মদী বেগ প্রমুখের নাম বলতে পারি। বড় মীর জাফর পয়দা হয় প্রকৃতিগতভাবে। জন্ম থেকেই এরা মীর জাফরি শুরু করে এবং তাদের রাজনীতির কারণেই মেঝো ও ছোট মীর জাফরদের সৃষ্টি হয়।
বাংলার ইতিহাসের বড় মীর জাফর হয়তো একজনই, কিন্তু তার বিষবাষ্পের রাজনীতির কারণে সৃষ্ট হাজার হাজার মেঝো ও ছোট মীর জাফর শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমাদের দেশ, কাল ও সমাজকে যেভাবে নিঃশেষ করে দিচ্ছে; তা পৃথিবীর অন্য কোনো ভূখণ্ডে দেখা যায় না। কারণ, ওইসব দেশে কোনো কালেই মীর জাফর পয়দা হয়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন