ড. আবদুল লতিফ মাসুম
আকাশে মেঘ দেখে বোঝা যায় বৃষ্টি হবে। আবহাওয়াবিদেরা বলতে পারেন- কোথায়, কখন ও কী মাত্রায় বৃষ্টিপাত ঘটবে। রাজনীতির আবহাওয়া দেখে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অনুমান করতে পারেন, রাজনৈতিক আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি কী? রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা দুইভাবে রাজনীতিকে বোঝার চেষ্টা করেন। তথ্য ও উপাত্ত ব্যবহার করে সরেজমিন গবেষণা। অতীত ও বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিত বিচার-বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আগাম অনুমান করা। যেকোনো গবেষণার আগে একটি হাইপোথিসিস বা গবেষণা-পূর্ব অনুমান ঠিক করতে হয়। এই নিবন্ধের বক্ষ্যমাণ অনুমান- শিগগিরই একটি নির্বাচনের ঘোষণা আসতে পারে। এটি তথ্য-প্রমাণ বা ভেতরের খবরনির্ভর কোনো মন্তব্য নয়। মেঘ দেখে বৃষ্টি হওয়ার অনুমানের মতো কথা। বৃষ্টি না-ও হতে পারে। আর তা হলে ফকিরের কেরামতি জাহির হবে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আবহাওয়া খুব কুটিল ও জটিল মনে হয়। কখনো ঈশান কোণে ঝড়ের আভাস লক্ষ করা যায়। আবার কখনো বা মেঘের কোলে রোদ হাসে, বাদল যায় টুটি। ঘনঘোর কালো মেঘের আড়ালে সূর্য হাসে বলে কেউ কেউ আশা করেন।
বাংলাদেশে সব কিছুতেই একটু বেশি আবেগ, উত্তেজনা ও বাড়াবাড়ি ঘটে। কোথায় রয়েছে আগামী নির্বাচন, তা নিয়ে ঝগড়াঝাটি ও মাতামাতিতে দেশ সরব। সম্ভাব্য প্রার্থীরা সব দলের নেতা-পাতিনেতারা এখন নাকি নিজ নিজ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন। সাংবিধানিক ভোটের অন্তত দুই বছর আগে তিনি ভোটের আহ্বান জানিয়েছেন। এত আগাম নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর কারণ হিসেবে পর্যবেক্ষকেরা দু’টি বিষয় আবিষ্কার করতে পারেন। প্রথমত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটকেন্দ্রিক অপনোদন প্রধানমন্ত্রীর বিবেককে তাড়া করতে পারে। দ্বিতীয়ত, আগাম ভোট নিয়ে আগামীকে আরেকটু এগিয়ে রাখা। আওয়ামী বলয়ে খোলাখুলি কথাটি এ রকম, তারা যে করেই হোক ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান। ওই বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হবে। স্বাধীনতার দল হিসেবে তারা মনে করে এটা তাদের প্রাধিকার। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে এটা তাদের অন্যায় চিন্তা নয়। একটি নিয়ম নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে তারা হাজার বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলেও কারো কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে জাপান, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় নিজ নিজ সরকারি দল ক্ষমতায় আসীন রয়েছে। ভারতে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। বাংলাদেশে ওইসব দেশের মতো স্বাভাবিকতা, নিয়মতান্ত্রিকতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কারণেই এই গুমোট অবস্থা।
বলছিলাম সহসাই নির্বাচনের কথা। সম্ভবত সুদক্ষ ও দূরদর্শী রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি যুৎসই সময় খুঁজছিলেন। সব দেশে এ রকমই হয়। সরকার যদি তার জনপ্রিয়তায় কোনো কারণে দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল হয়, তাহলে তারা আগাম নির্বাচন বা মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে পারে। অবশ্য সরকারের তরফ থেকে আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা সব সময়ই নাকচ করা হয়েছে। যা হোক, উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ব্রিটেনের তেরেসা মে ব্রেক্সিট : ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে অতিমাত্রিক আস্থায় আগাম নির্বাচন দিয়েছিলেন। অবশ্য তার সে আশায় গুড়েবালি পড়েছে। সে অন্য কথা।
আগাম নির্বাচনের কারণ ও পরিবেশকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক- উভয় দিক দিয়েই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। প্রথমত, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য বর্তমানে একটি অধিকতর অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। রোহিঙ্গা সঙ্কটকে কেন্দ্র করে অবশেষে প্রধানমন্ত্রী যে মানবিকতা দেখিয়েছেন তা দেশে ও বিদেশে তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। নির্বাচনী রাজনীতিতে তিনি অনেক এগিয়ে আছেন। সুতরাং তিনি চাইলেই একটি আগাম নির্বাচন ঘোষণা করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক পরিসরে জঙ্গিবাদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার সরকারের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। বিগত নির্বাচন সম্পর্কে বিরূপ মনোভাবাপন্ন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যদি তারা দেখাতে পারেন, সমাগত নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশ নিয়েছে, তাহলে তাদের ভেঙে যাওয়া আস্থার অনেকটাই মেরামত করা সম্ভব হবে।
তৃতীয়ত, বর্তমান সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলন থেকে অনেকটা নিরাপদ আছে। এত দিনে গায়ের জোরে তারা সবাইকে নিস্তব্ধ করতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল নতুন রণকৌশল নিয়েছে। গায়ে পড়ে ঝগড়া করলেও বিএনপি সে ফাঁদে পা দিচ্ছে না। তারা তাদের মতো করে শক্তি সঞ্চয় করছে।
চতুর্থত, আমলাতন্ত্র তৃণমূল থেকে সচিবালয় পর্যন্ত তাদের আওতাধীনে রয়েছে। তারা তাদের হুকুম তামিল করার জন্য অপেক্ষা করছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১৪-এর নির্বাচন সম্পর্কে পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা, ঝানু আমলা প্রকাশ্যেই দাবি করেছিলেন, তিনিই উপজেলা নির্বাহী থেকে সচিব পর্যন্ত সবই নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।
পঞ্চমত, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সর্বত্র সক্রিয় ও সংগঠিত রয়েছে। যেকোনো নির্বাচনী প্রকৌশলকে বাস্তবায়নের জন্য তারা অতীতের মতো পারঙ্গমতা প্রদর্শনে সক্ষম রয়েছে। তবে নির্বাচন সহায়ক সরকার হলে অথবা দৈব দুর্ঘটনাক্রমে তাদের যদি ক্ষমতাহীন থেকে নির্বাচন করতে হয় তাহলে অন্য কথা। তখন তাদের নির্বাচন তো দূরের কথা, মিছিলেও লোক পাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রপতি প্রকারান্তরে এ কথা বলে ক্ষমতাসীন দলকে হুঁশিয়ার করেছেন।
এসব ইতিবাচক বিষয়ের পর নেতিবাচক বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা যাক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা সুরক্ষার সুকৌশল ভালো করেই জানে। তাদের উদ্দেশ্যÑ তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই। ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য তাদের ছল কল বল প্রয়োগে দ্বিধা নেই। মানুষ কী বলবে তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। তারা হয়তো মেকিয়াভ্যালি বা কৌটিল্যের ওই মতবাদে বিশ্বাস করে যে, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব কিছু করাই জায়েজ।’ ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা এর প্রামাণ্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। অতি সম্প্রতি উদাহরণগুলো দিলে বিষয়টি আরো বোধগম্য হয়ে উঠবে।
১. প্রধান বিচারপতিকে দিয়ে এর যে খেল দেখাল, তা নাগরিক সাধারণের দীর্ঘকাল মনে রাখার মতো ঘটনা। ষোড়শ সংশোধনীর রায় যখন তাদের বিরুদ্ধে গেল, অবশেষে তারা বলেছিল- শুধু পদত্যাগ করলেই হবে না, তাকে দেশত্যাগও করতে হবে। এটি কোনো মাস্তানের হুমকি ছিল না। সরকারের দায়িত্বশীল অংশ থেকে এ হুমকি উচ্চারিত হয়েছিল। এখন তা বাস্তবে কার্যকর করা হয়েছে। এ লেখাটি যখন পাঠক পড়ছেন তখন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে যাবেন। হ্যাঁ, তিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবেই দেশত্যাগ করেছেন এবং এভাবেই হয়তো আর তার কার্যকালে দেশে ফিরবেন না বা ফিরতে পারবেন না। এটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য বিরাট সাফল্য। তিনি যদি সত্যি সত্যিই সরকারকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করতে পারতেন, তাহলে বিপর্যয় ঘটতে পারত।
২. কবি নজরুল বলেছিলেন- ‘নিক্ষত্রীয় করিব বিশ্ব’। আর আওয়ামী লীগ রাখতে চায় না তাদের কোনো শত্রু। উল্লেখ্য, রাজনৈতিক বিরোধীদের শত্রুর মতোই গণ্য করে আসছে। সহসাই নির্বাচন যদি ঘোষিত হয়, তাহলে নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ করতে পারে এ রকম ব্যক্তিত্ব, দল বা জোটকে মাঠে নামতে না দেয়ার কৌশল অবলম্বন করছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী শক্তির প্রতি তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা খালি মাঠে গোল দিয়েছিল। এবার তারা মাঠটিই খালি করতে চায়। ওই সময়ে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে নির্বাচনযোগ্য ব্যক্তি ও দলকে মাঠে নামার সুযোগ দেয়া হয়নি। এখন যাতে নির্বাচনের অনেক আগে বিরোধীরা টিম সাজাতে না পারে, সেরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে।
দু’টি পৃথক মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত। অপর দিকে দেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকার মানহানি মামলায় পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকা মহানগর আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নামঞ্জুর করে বিচারক এ পরোয়ানা জারি করেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ শুনানির দিন ধার্য ছিল ১২ অক্টোবর। তিনি লন্ডনে পা ও চোখের ডাক্তার দেখানোর অ্যাপয়েন্টমেন্টের নথিপত্র আদালতে দাখিল করা সত্ত্বেও জামিন নামঞ্জুর করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এর আগে ১০ অক্টোবর কুমিল্লার জেলা জজ আদালত বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে হুকুমের আসামি হিসেবে পেট্রোল বোমা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। দীর্ঘ দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, বেগম জিয়াকে নির্বাচনের আগেই অন্তরীণ করা হবে অথবা সাজা দিয়ে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা হবে। সর্বশেষ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার দুটোই কার্যকর করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে না পারেন, তাহলে বিএনপি কঠিন সমস্যায় পড়বে। তখন সরকারের পক্ষে বিএনপিকে নিয়ে রাজনৈতিক খেলা সহজতর হবে।
৩. নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে অথবা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, অর্থাৎ নির্বাচনী প্রকৌশল প্রতিহত করতে পারে এমন কোনো শক্তি, দল বা ব্যক্তিকে জেলের বাইরে না রাখাকে নিরাপদ মনে করছে না আওয়ামী লীগ সরকার। তাই দেখা যায়, সম্ভাব্য শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শোচনীয় রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। গত একপক্ষকালে দু’টি পর্যায়ে জামায়াতের প্রায় সব পদাধিকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে জামায়াতের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলও রয়েছেন। প্রথম শ্রেণীর নেতৃবৃন্দের ফাঁসির পরে দ্বিতীয় সারির নেতারা নেতৃত্বে ছিলেন। এখন নেতৃত্ব তৃতীয়পর্যায়ে বর্তেছে। নির্বাচন হলে জামায়াত স্বনামে-বেনামে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, এ রকম সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরই এই পাইকারি গ্রেফতার করা হলো।
৪. বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের আর সব রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা অনুসরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই লেবার পার্টির নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে কল্যাণ পার্টির সাধারণ সম্পাদককে গুম করা হয়। বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয়পর্যায় পর্যন্ত নতুন করে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই দমননীতি বেশি কার্যকর রয়েছে।
৫. বিশ দলীয় জোটের যারা জাতীয় সংসদে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, তাদের ইতোমধ্যে কাউকে হত্যা করা হয়েছে, কেউ বা গুমের শিকার হয়েছেন অথবা জেলে রয়েছেন। তারা যাতে প্রতিদ্বন্দ্বী না হতে পারেন, সেজন্য নতুন করে মামলা দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রবীণ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হচ্ছে।
৬. নতুন করে সরব হয়েছে দুদক। সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নে প্রকারান্তরে সহায়তা করছে তারা। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, একটি তালিকাও তৈরি করেছে সংস্থাটির গোয়েন্দা ইউনিট। এ তালিকায় স্থান পেয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পাতিনেতা ও সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা। দৃশ্যমানভাবে বিষয়টি সব দলের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করার কথা থাকলেও কার্যত এটি বিরোধী দলের প্রার্থিতা বাতিলে কাজ করবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে।
এসব বিষয় বিবেচনা করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, সহসাই আওয়ামী লীগ নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারে। কার্যত আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী আরো এক বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবে। পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী তারা সংসদ ভেঙে না দিয়েই নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। আইন অনুযায়ী এই সংসদ ২০১৯ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তিন মাস আগে সংসদ থাকা অবস্থায় নির্বাচন হলে অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। সে অবস্থায় ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী সময় থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা যেকোনো সময় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সুতরাং এখন নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণায় তেমন কোনো বাধা নেই। প্রাকৃতিক আবহাওয়া অনুযায়ী বাংলাদেশে নভেম্বর-এপ্রিল সময়কাল শুকনো থাকে। সে হিসেবে ডিসেম্বর-মার্চ সময়কালটি রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের জন্য অনুকূল। তাই নভেম্বরে নির্বাচন ঘোষিত হয়ে মার্চে শেষ হলে বিস্ময়ের কিছুু থাকবে না। আওয়ামী লীগ সরকার ভালো করেই বুঝতে পেরেছে, নির্বাচনটি গতবারের মতো সহজ হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে সতর্ক করেছেন, এবারে নিজ নিজ যোগ্যতা ও আস্থাবলে জিততে হবে। তিনি নির্বাচনের পরিপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়াতে উপর্যুক্ত প্রাক-নির্বাচনী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, যাতে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। সেই সাথে তার নিরঙ্কুশ বিজয়েও বাধা থাকবে না। সে ক্ষেত্রে তারা চাইছেন বিএনপি যেন প্রয়োজনে ১০০ আসন নিয়ে শক্তিশালী বিরোধী দলে থাকে।
ইতোমধ্যে ইঙ্গিত মিলেছে, গৃহপালিত বিরোধী দলকে এবার আর তারা নিচ্ছেন না। তারা পচে গেছে, তাদের প্রয়োজনও ফুরিয়েছে। সুতরাং বিএনপিকে এরশাদীয় কায়দায় অন্তর্ভুক্ত করলে আইন ও ক্ষমতা দু’টিই বাঁচবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে- A Politician thinks for the next election but a statesman thinks for the nation। দেশের নাগরিকসাধারণ আগামী দিনের কার্যাবলি দেখে রাজনীতিক ও রাষ্ট্রনায়কের পার্থক্য বুঝতে পারবে আশা করি।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন