মিনা ফারাহ
রোহিঙ্গা ক্রাইসিস হলো কিছু বিগপাওয়ার আর সুপারপাওয়ারদের সমন্বয়ে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত একটি সাকসেসফুল মাস্টারপ্ল্যান। রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। লাখ লাখ মানুষ কতকাল ঘেরাবেষ্টনীর মধ্যে সীমিত থেকেও প্রতিক্রিয়াহীন থাকতে পারে? ‘জেলে থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত সত্ত্বেও কেউ কি জেলে থাকতে চায়?’ পরে ছড়িয়ে পড়তে পারে ভয়ঙ্কর রোগবালাই থেকে মহামারী। বেকারত্ব ও হতাশা থেকে সৃষ্টি হতে পারে অরাজকতা, এমনকি সন্ত্রাসও। এ জন্য ক্ষমতাসীনেরা কতটুকু দায়ী? এ পরিস্থিতি হবে, বহু আগেই জানার পরও কোনো ধরনের প্রস্তুতি না নিয়ে যা প্রমাণ করল। বন্ধুরাষ্ট্রের দোহাই দিয়ে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার আচরণে লিপ্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শক্তি প্রদর্শনের ঘোর বিরোধী ও ‘গণহত্যা’ শব্দটি উচ্চারণের বিরুদ্ধে হাইকমান্ড। জাতিসঙ্ঘে বারবার চীন-রাশিয়ার ভেটোর বিরুদ্ধে সুনসান নীরবতা।
যেসব বন্ধুরাষ্ট্র সরাসরি পক্ষ নিলো, ভারত তাদের অন্যতম। তা সত্ত্বেও বন্ধুত্বের নামে এসব কী দেখছি? প্রয়োজন, ৭১-এ ইন্দিরার মতো হাইকমান্ডেরও চীন-রাশিয়ায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে ভেটোর বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়ে দেয়া।
সবাইকে কখনো কেউই একই সাথে খুশি করতে পারবে না। সেটা করতে গিয়েই বাংলাদেশের ওপর একটার পর একটা ক্রাইসিসের সৃষ্টি করেই চলেছে ক্ষমতাসীনেরা। রোহিঙ্গা ক্রাইসিসের সমাধান আর ২০ দলকে হামলা-মামলা দিয়ে সিরাজ সিকদারের মতো দৌড়ের ওপর রাখা এক নয়। বিরোধী দলকে যা খুশি করলেও কিচ্ছু হবে না। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্রাইসিসের জন্য যারা দায়ী, টায়রনদের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি করলেই ক্ষমতা থেকে আউট। ধারাবাহিকভাবে ২০৪১ পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখলেও রোহিঙ্গা ক্রাইসিসের সমাধান ক্ষমতাসীনদের দিয়ে অসম্ভব। কারণ, তাদের গোড়ায় গলদ। ক্রাইসিসের গভীরতা বেশির ভাগই উপলব্ধির বাইরে। ভেটোপাওয়ারদের যুদ্ধে লাখ লাখ রোহিঙ্গার জীবন লণ্ডভণ্ড। এদের ক্ষতি কেউই পূরণ করতে পারবে না। পরাশক্তিরা চোখে মরিচের গুঁড়া মাখিয়ে কাঁদছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই না। নিরাপত্তা পরিষদের গ্লাস অর্ধেক খালি নাকি অর্ধেক ভর্তি নিয়ে নানান প্রশ্ন। সবার আগে তারা পুঁজিবাদীদের স্বার্থ দেখে। একই ইস্যুতে কতবার ভেটো দিলো চীন-রাশিয়া, কিন্তু জাতিসঙ্ঘ কি কিছু করতে পেরেছে? ৬ নভেম্বর রেজুলেশনের বিরুদ্ধে আবারো ভেটো দিয়ে প্রমাণ করল, বাংলাদেশের শত্র“র সংখ্যাই বেশি। তার পরও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান, গামছা গলায় অসহায় কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার মতো! চার দিকেই ষড়যন্ত্রের ‘মাইন’ বিছিয়ে রেখেছে সু চির বন্ধুরা।
যেসব কারণে রোহিঙ্গারা এ দেশেই থাকবে। ১) ‘যাচাই-বাছাই’ করে ফেরত নিলে ১০ লাখের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি ঢুকতে পারবে না। বাঙালিয়ানা নিশ্চিত করেই রোহিঙ্গা বিতাড়ন। ২) দুই ভেটোপাওয়ারের অবস্থান সু চির পক্ষে, কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে কোনো ভেটোপাওয়ার নেই। ৩) ভারতের মতো ননভেটোপাওয়ার এবং আমেরিকার মতো ভেটোপাওয়ারের যুগলবন্দীতে, দ্বিতীয় ট্রাম্পকার্ডটিও সু চির হাতে। ৪) প্রত্যাবর্তনে অনীহা কিন্তু ত্রাণসহায়তায় হাজী মুহম্মদ মুহসীনের ভূমিকায় চীন-রাশিয়া-ভারত-আমেরিকা-ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ৫) বাংলাদেশেই ভাত ভাগাভাগি করে খাওয়ার ঘোষণায়, পরাশক্তিদের মধ্যে স্বস্তির মানসিকতা। ৬) মানবতাকে প্রাধান্য দিয়ে ভুয়া প্রশংসার ফুলঝুরি। এভাবেই প্রত্যাবর্তনের বিষয়টিকে ক্রমেই গুরুত্বহীন করছে। ৭) রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিষয়ে দিল্লির অবস্থান স্পষ্ট। তারাও পুশইন করছে...
প্রসঙ্গ, রক্তপিপাসু গণতন্ত্রের মানসকন্যার গণতন্ত্রের আসল-নকল চেনা নিয়ে। সু চিদের হাতে গণতন্ত্র ও ভাল্লুকের হাতে খন্তা এক। বানরের গলায় কি মুক্তার হার শোভে? কবিগুরু লিখেছেন, ‘এই মণিহার আমায় নাহি সাজে’। হ্যাঁ, সু চিদের শরীরজুড়ে নোবেলের তাবিজ কিংবা অক্সফোর্ডের কবজ কোনোটাই সাজে না; বরং যা করছে, হিটলারের হুন্তা বাহিনীর হুবহু। হিটলারেরও খায়েশ ছিল, জার্মানিকে ইহুদিশূন্য করে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা। মিত্রবাহিনীর সহায়তায় নুরেমবার্গ ট্রায়ালে নাৎসি পার্টির বড় সুলতানদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল, সবাই জানে। এখন সেই মিত্রবাহিনীই চিৎকার করে বলছে- মিয়ানমারে ‘গণহত্যা’ কিন্তু দিন শেষে সু চিই তাদের বন্ধু! রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবারই বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা যেন শতাব্দীর সেরা জোক। তার পরও নোবেল কমিটির যা করা উচিত, করেনি। বরং রোহিঙ্গা ক্রাইসিসে পশ্চিমাদের স্বস্তি দেয়ার জন্য হয়তো শান্তির নোবেল তৈরি হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের জন্যও।
সু চিরা কখনোই আমার লেখা পড়বে না। কিন্তু আমি সু চিদের মন পাঠ করতে পারি বলেই ২৪ অক্টোবরের কলামের শেষের লাইনে যা লিখেছিলাম, অক্ষরে অক্ষরে সত্য হলো। ৬ নভেম্বর নয়া দিগন্তসহ অন্যান্য পত্রিকার খবর, মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাচ্ছে না ইউরোপ-আমেরিকা। আমেরিকা চায় কূটনৈতিক সমাধান। রাখাইন সফর শেষে ৫০০ হিন্দু রোহিঙ্গাকে গ্রহণের নির্দেশ সু চির। কোথায় প্রমাণ, রোহিঙ্গারা ফেরত যাবে?
উল্টো সু চিই বলছেন, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ভিক্ষার আশায় ক্ষমতাসীনেরাই নাকি ফেরত দিচ্ছে না। আমি এই নরপিশাচের কথাই বলছি। সু চিদের পোড়ামাটি মেগা প্রকল্পের অন্যতম পার্টি বাংলাদেশ। রাখাইন প্রজেক্টগুলো সফল করতে রীতিমত হিটলারের ভূমিকায় মাঠে নেমেছে সু চি সমর্থিত গং। বারবার আকাশসীমা লঙ্ঘনের পরও বন্ধুত্বের অজুহাত যেন দেশবাসীর সাথে মশকারা।
রোহিঙ্গাদের বাবা-মা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়, সুতরাং কন্যাদায়গ্রস্ত বাবার আচরণও অবান্তর। কন্যার বিবাহ নিয়ে কান্নাকাটিতে সমাধান নেই। রোহিঙ্গাদের ডিএনএ অনুযায়ী মিয়ানমারই তাদের বাবা-মা। এর পরও শক্তি প্রদর্শনের বদলে ভাত ভাগ করে খাওয়ার ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন। অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদেরও ভাতের লোভ দেখিয়ে প্রলুব্ধ করা কেন? কারো সাথেই পরামর্শ না করে একক সিদ্ধান্তের অন্যতম বিপর্যয়ের নাম রোহিঙ্গা। চীন-রাশিয়া-ভারতের অবস্থান অগ্রিম জেনেও এই বোঝা চাপিয়ে দেয়ার সব দায়ভার কার?
যে কারণে রোহিঙ্গারা স্থায়ী হচ্ছে। প্রতিবারই ইস্যু উঠলে চীন-রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভেটো দেবে আমেরিকা। ‘আমেরিকাকে সমর্থন দেবে প্রাচ্যের আমেরিকা- ভারত।’ ভেটোর সমীকরণেই রোহিঙ্গা ক্রাইসিস আটকে থাকবে অনন্তকাল। চীন-রাশিয়ার বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দ করার ক্ষমতা হাইকমান্ডের নেই। করলে আম-ছালা দুটোই যাবে। সুতরাং ৭১-এ ইন্দিরার ভূমিকা হবে না। হঠাৎ লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা নিয়ে নানান গুঞ্জন।
২
প্রবাদে আছে, ভাল্লুকের হাতে খন্তা দিলে কী হয়! ভাল্লুক কি খন্তা দিয়ে ফার্নিচার বানাবে? নাকি রান্নার খড়ি বানিয়ে খালামণিকে দেবে! না। ভাল্লুক সেসব কিছুই করবে না। প্রশ্ন, ‘গণতন্ত্র ভুল হাতে পড়লে কী হয়?’ গৃহবন্দী সু চির রাজনৈতিক মৃত্যু শেষে পুঁজিবাদীদের আঁতুড়ঘরে পুনর্জন্ম হয়েছে। হত্যাকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে মিয়ানমারকে ধনী রাষ্ট্র বানাতে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে বসেছে সু চিও। তবে খুনিদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে গণতন্ত্রের মানসকন্যা উপাধি যেন এক-এগারোর দ্বিতীয় সংস্করণ। আমেরিকার উদ্দেশে যাত্রার আগে মিডিয়ার সামনে হাইকমান্ডেরও ঘোষণা, ক্ষমতায় গেলে এক-এগারোর সরকারকে বৈধতা দেবে। সু চি টাইপের গণতন্ত্র কি ক্ষমতাসীনদেরও পরিকল্পনায়? গণতন্ত্রের মানসকন্যার সংজ্ঞা কী? ২৪০০ বছর আগে, একুশ শতাব্দীর জটিল প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন পণ্ডিত সক্রেটিস। হেমলক দিয়ে হত্যার আগে টায়রনদের আদালতে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমিই সবচেয়ে জ্ঞানী। কারণ, একমাত্র আমিই জানি যে, আমি আসলেই কিছু জানি না।’ তারই ছাত্র প্লেটো, রিপাবলিক-৬ বইতে ব্যাখ্যা করেছেন, গণতন্ত্রকে কেন ঘৃণা করতেন সক্রেটিস!
প্লেটোর ভাষায়, সমাজকে তিনি একটি জাহাজের সাথে তুলনা করে বলেছিলেন, ঝড়ের মধ্যে যাত্রাকালে তোমরা কাকে নাবিক হিসেবে চাও? অবশ্যই চাইবে বিজ্ঞ নাবিক। তাহলে কিভাবে নির্ধারণ করবে, দেশ শাসনের উপযুক্ত কারা? ইলেকশনে ভোট দেয়া একটি দক্ষতা, বিলাসিতা নয়। অন্যান্য শিক্ষার মতোই ভোট দেয়া শিখতে হলে সমাজকে অবশ্যই শিক্ষিত হতে হবে। সক্রেটিস কখনোই চাননি সবাই ভোট দিক; কিন্তু তারাই দেবে যারা ভোট সম্পর্কে গভীরভাবে জানে। তা না করলে গণতন্ত্র হবে বিপজ্জনক। একেই বুঝিয়েছেন, ভাল্লুকের হাতে খন্তা। ‘বুদ্ধিবৃত্তিক গণতন্ত্র থেকে হুজুগে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক করেছেন সক্রেটিস।’ পুরান গ্রিসের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, দেবতার মতো সুন্দর আচরণ করে গণতন্ত্রের বারোটা বাজিয়ে মিলিটারি শাসন কায়েম করেছিল অ্যালসিবায়াডেস। পরে ভয়ানক অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো এথেন্স। নির্বাচনে জিততে ধোঁকা মারার উদাহরণ দিয়ে বলেছেন দুই প্রার্থীর ডিবেটের কথা। একজন ডাক্তার, অন্যজন মিষ্টিবিক্রেতা। মিষ্টিবিক্রেতা ডাক্তারের বিরুদ্ধে বলেছে, ওই লোক তোমাদের ওষুধ খাইয়ে ভালো খাবার থেকে বঞ্চিত রাখে। ডাক্তার ওই ডিবেটে জিততে পারবে না। কারণ, মানুষ ভালো খাবার পছন্দ করে।
প্লেটোর ভাষায়, গণতন্ত্র ও ভোটের জন্য সক্রেটিস সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ‘শিক্ষা ও উন্নত মানসিকতার ওপর’। ২৪০০ বছর পর প্রমাণ হলো- হুন্তাদের ২৫ শতাংশ ক্ষমতা ভাগের কেবিনেটে সু চির মাকারি এবং ৫ জানুয়ারির ১৫৩ জন ভোটারবিহীন আইনপ্রণেতাদের সংসদীয় গণতন্ত্র যেন সহস্রাব্দের শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ। এসব টায়রনের বিরুদ্ধেই সতর্ক করেছিলেন সক্রেটিস।
বঙ্গোপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগর, কুশিক্ষিত কাণ্ডারিদের তাণ্ডবে কুকুর-বিড়ালের মতো মানুষ মরছে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ একই উন্নতির মহাসড়কে উঠে দেশবাসীকে ফেলেছে মহাবিপদে। কিছু দিয়েই সামলানো যাচ্ছে না ধস। উন্নয়নের মহাসড়কে ধসের বিস্তারিত অন্য লেখায়। তবে গণতন্ত্র নিয়ে সক্রেটিসের অবস্থান জানানোই লেখাটির উদ্দেশ্য।
সমঝোতার প্রসঙ্গটিও ফেলে দেয়ার নয়। যেমন স্কাইপের সেই বিখ্যাত সংলাপ- ‘আমি দাঁড়াইয়া যামু আর আপনে আমারে বসাইয়া দেবেন’। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, সমঝোতার রাজনীতিতে কেউ কাউকে দাঁড়াতে আর বসতে বলছে এবং ভাইস-ভার্সা।
কে কত সাহায্য দিলো, সারাক্ষণ সেই বাঁশিই বাজাচ্ছে ‘হ্যামিলনের বংশীবাদকেরা’ কিন্তু...।
ক্ষমতাসীনেরাও জানে পরাশক্তিদের মলম থেরাপিতে কাজ হচ্ছে না। চোখে মরিচ মাখিয়ে কান্নাকাটির অর্থ মানুষ বোঝে। ত্রাণসহায়তার কারণও স্পষ্ট। মুক্তিযুদ্ধের পর শরণার্থীদের যথার্থ ব্যবস্থা হলেও সিরিয়া কি ৩৫ লাখ নাগরিককে ফেরত নিয়েছে? আসাদ তো পুতিনের কথা শোনেন; কিন্তু কই? বাংলাদেশও যাদের নয়নের মণি, প্রত্যেকের কথা মিয়ানমার শুনতে বাধ্য; কিন্তু কই? বাংলাদেশ কোনো জার্মানি নয় যে, সস্তা শ্রমের প্রয়োজন আছে। সুতরাং সর্বস্তর থেকে যে দাবি আসা উচিত, দ্রুত চীন-রাশিয়ায় গিয়ে আর ভেটো না দিতে সরাসরি অনুরোধ। সেই গুড়েও বালি। কারণ, আওয়ামী লীগ মনে করেÑ একমাত্র তারাই সবজান্তা এবং ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে শুধু এক ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই কোনো কিছু জানে না। যত বিজ্ঞই থাকুক, এক ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউই সিদ্ধান্ত দেয়ার উপযুক্ত নয়।
রোহিঙ্গাদের বিষয়টি এখন এপর্যায়ে। রথ দেখব, কলাও বেচব। দেখতে এসে চুক্তির হিড়িক। ৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সমঝোতা চুক্তি করে গেল সিমেন্স কোম্পানি। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারিও তাই। মায়াকান্নার ঈশ্বর ইউরোপিয়ান দূতেরা সারা বছরই ব্যস্ত নিজেদের প্রফিট নিয়ে। সেফ জোনের বুদ্ধিদাতারা জেরুসালেমের ক্রাইসিস সৃষ্টি করে প্রফিটের অঙ্ক বাড়াতে চাইছে। ক্রাইসিসের মধ্যেও বাণিজ্য চুক্তিগুলো যেন চিতার আগুনে চা বানিয়ে খাওয়ার মতো জঘন্য। সবজান্তাদের কারণে ৯ বছর ধরেই এক ব্যক্তির ভুলের শিকার জাতি।
৩
মহাবিপদ যারা চাপিয়ে দিলো, সব ক’টি গণমানুষের শত্রু। যারা ভেটো দিচ্ছে তারাও বন্ধুর বদলে শত্রু। ’৭১-এ ভেটো দেয়া চীন কি বন্ধু ছিল?
সমস্যা একটাই। ২০৪১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে অনড় ক্ষমতাসীনেরা। এ কাজে তথাকথিত বন্ধুদের কাউকেই অখুশি করা যাবে না, বরং যেকোনো মূল্যে সবাইকেই খুশি রাখতে হবে এবং রোহিঙ্গা ক্রাইসিসও সেটাই।
সমাধানও আছে। পদত্যাগের দৃষ্টান্ত দেশে দেশে। ভাসুর হয়ে ভাবীর ঊরুর ঘায়ে হাত দেবে না তথাকথিত বন্ধুরা। সঙ্কটের সমাধান আওয়ামী লীগকে দিয়ে হবে না। কারণ, তাদের পলিসি সর্পরাজের মতো। যখনই ক্রাইসিস, তখনই ম্যাজিক। ব্যর্থতার দায় কাঁধে বহু মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, সচিবদের পদত্যাগের উদাহরণ। যেমন- পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির জন্য আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ। ব্রেক্সিটের দায় কাঁধে ডেভিড ক্যামেরনও তাই। বাড়ির পাশেই আরশিনগরের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী থেকে সুরেশ প্রভু, রেল দুর্ঘটনায় প্রায় হাফ ডজন রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ কিংবা পদত্যাগের বাসনা- কল্পনা নয়। সুতরাং ৯ বছরের সঞ্চিত ব্যর্থতার দায় কাঁধে পদত্যাগই হতে পারে সময়ের শ্রেষ্ঠ দাবি। কেন নয়? ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশ- গণতন্ত্রের রঙ ও গান এক। ২০ দলকে দাঁড়াতেই দেয় না। একমাত্র মানুষ জাগলেই ফুল ফুটবে। ফুটবেই, কারণ সক্রেটিসের মিষ্টিবিক্রেতাদের দেশবাসী প্রায় চিহ্নিত করে ফেলেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন