গোলাম মাওলা রনি
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, আগামী ২৭ নভেম্বর দুনিয়ার সর্বজনশ্রদ্ধেয় দুজন মানুষ বাংলাদেশ ভ্রমণে আসবেন। তারা আসবেন আপনার একটি মহৎ কর্মকে সমর্থন জানিয়ে পুরো ঘটনাটিকে পৃথিবীবাসীর নিকট প্রচার করে আপনাকে সাহায্য ও সহযোগিতা করার উদ্দেশ্য নিয়ে। বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা স্বচক্ষে দেখার জন্য এবং সমস্যাটি সমাধানে আন্তর্জাতিক সব গোষ্ঠীকে উদ্যোগী হিসেবে মাঠে নামানোর ব্রত নিয়ে মুসলমানদের গ্র্যান্ড ইমাম এবং খ্রিস্টানদের পোপ এক সঙ্গে বাংলাদেশে আসছেন ২৭ নভেম্বর।
বাংলাদেশের মানুষ মহামান্য পোপের গুরুত্ব, সম্মান এবং প্রভাব সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই জানেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, ১৫ কোটি মুসলমানের দেশে মুসলমানদের গ্র্যান্ড ইমাম সম্পর্কে ধারণা খুবই সীমিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, মিসরের গ্র্যান্ড ইমামকে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা মহাদেশ, দূরপ্রাচ্যের দেশগুলো এবং পশ্চিমা দুনিয়ার মুসলমানরা নিজেদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে মানে যেমনটি মানে ইরানিরা তাদের ধর্মীয় নেতাকে। মিসরের রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে গ্র্যান্ড ইমাম পদটি দ্বিতীয় অবস্থানে অর্থাৎ প্রেসিডেন্টের পর এবং প্রধানমন্ত্রীর পূর্বে হলেও সার্বিক বিচারে তিনি মিসরের সবচেয়ে ক্ষমতাবান, প্রভাবশালী এবং শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর, আল আজহার মসজিদের গ্র্যান্ড ইমাম। শরিয়া আদালতের প্রধান বিচারপতি। তিনিই প্রেসিডেন্টকে শপথবাক্য পাঠ করান। যে কোনো দ- মওকুফ করেন এবং প্রেসিডেন্টকে পদচ্যুত করেন। তার ফতোয়াই মুসলিম বিশ্বের শরিয়া আদালতগুলোর সর্বোচ্চ আইন।
বর্তমান গ্র্যান্ড ইমাম আহাম্মদ ইল তায়েব বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রচ- সহানুভূতিশীল। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন। তার নির্দেশেই মিসর সরকার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবাধে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি আপনার প্রতি যারপরনাই কৃতজ্ঞ। আমরা সম্প্রতি মিসর ভ্রমণের সময় গ্র্যান্ড ইমামের দপ্তরের মুখ্য সচিবের সঙ্গে একটি বৈঠকের যে সুযোগ হয়েছিল, সেই সুবাদে আপনার সম্পর্কে তাদের ইতিবাচক মনোভাব জানার সুযোগ পেয়েছিলাম।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, কূটনৈতিক পর্যায়ে মিসরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। বাংলাদেশে নিযুক্ত মিসরের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইজ্জত ইব্রাহিমের একটি ঘটনা নিয়ে শুল্ক অধিদপ্তরের বাড়াবাড়ির কারণে মিসরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যে টানাপড়েন শুরু হয়, তা আজও সমাধান হয়নি। ফলে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মিসরের বাজারটি আমাদের জন্য দৃশ্যত বন্ধ রয়েছে। সেখানে কর্মরত বিপুলসংখ্যক বাঙালি নানা দুঃখ-দুর্দশা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। আল আজহারসহ মিসরের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এ অবস্থায় গ্র্যান্ড ইমামের বাংলাদেশ ভ্রমণের সংবাদে মিসর প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
প্রিয় নেত্রী, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মিসর হলো সর্বদিক থেকে অগ্রসরমাণ একটি আধুনিক দেশ। মিসরবাসী বাংলাদেশিদের যেভাবে মর্যাদা দেন, সেভাবে অন্য কোনো দেশ দেয় না। সেখানে কর্মরত বাঙালিদের আয়-রোজগারের হার মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাঙালিদের তুলনায় অনেক বেশি। কাজেই এসব বিষয় মাথায় রেখে গ্র্যান্ড ইমামের বাংলাদেশ ভ্রমণকে আপনি দেশের স্বার্থে কাজে লাগাবেনÑ এ আস্থা রেখে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন