মুসলিমা পারমুল: জীবন সুন্দর করার তিনটি নবুয়ত ভিত্তিক ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা
10 Dec, 2017
অনুবাদ: সাদিক হাসান
সম্পাদকের কথা:
ভিডিওতে বর্ণিত বিষয়গুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ প্রকাশের লক্ষ্যে কিছু কাজ করা হয়েছে।
আবু দার এবং মু'য়াজ বিন জাবাল রাঃ থেকে বর্ণীত যে, রাসুল সাঃ বলেছেন :
"সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করো, মন্দকে ভালো দ্বারা দূরীভূত করো আর মানুষের সাথে উত্তম আচরণ করো।" (তিরমিযী)
যখন আমি হাদিসখানা পাঠ করি তিনটি মূলভাব আমার হৃদয়পটে ভেসে উঠে।
হাদিসের প্রথমাংশে রাসুল সাঃ বলেছেন, যেকোন অবস্থায় তাক'ওয়া অবলম্বন করতে। তাকওয়া কিভাবে অর্জিত হয়? কিভাবে সর্বাবস্থায় আল্লাহরকে স্মরণ করা যায়। আর এর অর্থই বা কি?
মূলত হাবিল আর কাবিলের ঘটনা আমাকে সে বিষয়টিই মনে করিয়ে দেয়। যা কোরআনে সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেছেন।
{আর সত্য সহযোগে তাদের আদমের দুই ছেলের কাহিনী শুনিয়ে দাও, যখন তারা উভয়েই কুরবানি পেশ করলো আল্লাহ একজনের (কুরবানি) কবুল করে নিলেন, অপরজনের (কুরবানি) কবুল করলেন না। অতঃপর সে বললো "আমি তোমাকে হত্যা করবো"
জবাবে (অপরজন) বললো, আল্লাহ শুধুমাত্র মুত্তাকীদের কুরবানি কবুল করে থাকেন।} (০৫:২৭)
তারা উভয়েই যখন কুরবানি উপস্থাপন করলো আল্লাহ একজনের কুরবানি কবুল করলেন আর অন্যজনের কুরবানি কবুল করলেন না। হাবিল ছিল সে ভাগ্যবান যার কুরবানি আল্লাহ কবুল করেছিলেন। তখন হিংসার বশবর্তী হয়ে কাবিল হাবিলকে বললো "আমি তোমাকে হত্যা করবো।"
বাইবেলে এই বিষয়টি সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে এভাবে যে: হাবিল ছিল গবাদি পশুপালক আর কাবিল ছিল কৃষক।
যখন তারা তাদের কুরবানি উপস্থাপন করেছিলো, হাবিল তার পালের সেরা পশু নির্বাচন করেছিলেন, অন্যদিকে কাবিল তার কৃষি পন্যের বাড়তি অংশ উপস্থাপন করেছিলো।
যখন আপনি বিষয়টি নিয়ে ভাববেন, দেখবেন একজনের কুরবানি ছিল সর্বোত্তম বস্তু আর অন্যজনের কুরবানি ছিল সাধারণ বস্তুর। ইবাদত কিংবা আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার সাধনার পথও দুই ধরনের। ভাইয়ের হুমকির বিপরীতে হাবিলের জবাবও ছিল অত্যন্ত চমৎকার: "আল্লাহ তারটাই কবুল করেন যে শুধুমাত্র প্রভুর উদ্দেশ্যেই কাজ করে থাকে।"
এখানে তিনি ভাইকে বলছিলেন যে, আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ত্যাগের জন্য মূলত কাজ করে তা কতটুকু একান্ত আল্লাহর জন্য নিবিষ্ট হয় তার উপর ভিত্তি করে।
এখন আমরা যখন কোন ইবাদতের কথা চিন্তা করি তা হল, হালাল/ অনুমিত যে কোন কাজ আমরা করি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করা হয়। এখানে একটি বিষয় ভাবুন, যে কাজগুলো করছেন তা শুধুমাত্র ইবাদতই নয় বরং তা ত্যাগ বা কুরবানি।
-ইবাদত শুধুমাত্র ইবাদত হিসেবেই নয় বরং আমাদের তা গ্রহণ করতে হবে নজরানা হিসেবে।
-যখন আপনি কাজে যান, তাও আল্লহার উদ্দেশ্যে নজরানা হিসেবেই গ্রহণ করুন।
-যখন আপনি মানুষের সাথে মিশছেন তা শুধুমাত্র দু'জন ব্যক্তির পারস্পারিক সম্পর্ক ছাড়াও আল্লাহর উদ্দেশ্যে নজরানা হিসেবেই কাজ করুন।
যখন আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে কোন পরিকল্পনা করছেন বা রেস্টুরেন্টের পরিচারকের সাথে কথা বলছেন, তা যেন শুধু আপনি আর তাদের মাঝে কোন কথোপকথন না হয় বরং তা যেন হয় আল্লাহর জন্যই।
এখন, আমরা কোন ধরণের কোরবানি করতে চাই? এই তালিকার কোন কিছু থেকে কি আপনি পরিত্রাণ চান?
আমি আমার ইবাদত করেছি।
আমি কাজে দেখিয়েছি।
অথবা আপনি এই মনোভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন যে "আমি আমার ইবাদতকে সমৃদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং তাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানি করার চেষ্টা করছি।"
যখন আপনার সার্বক্ষণিক তাকওয়াই একমাত্র লক্ষ্য হয়, তবে হাবিলের কুরবানির কথাই মনে রাখতে হবে। আল্লাহর জন্য কোন কিছু ত্যাগ করাই হলো সর্বাবস্থায় ও সর্বগুণে শ্রেষ্ঠ যা আপনি করছেন।
এভাবেই আমরা সর্বোপরি আমাদের সাক্ষ্যকে নবায়ন করতে পারি; আমরা প্রমাণ করছি আল্লাহ ছাড়া আমাদের ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই, আল্লাহ তায়ালাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
হাদিসের দ্বিতীয় অংশ হলো আমাদের আশা নিয়ে বেঁচে থাকা, যেখানে ভালো কাজ দিয়ে মন্দ কাজকে অপসারণ করতে পারি। আমি মনে করি এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের সামনে রাখতে হবে।
প্রথমত, আমাদের নিজেদের অবস্থান জানতে হবে। ভাল কাজ দিয়ে মন্দকে পরিবর্তন করতে গেলে আমাদের জানতে হবে প্রকৃতপক্ষে আমরা কি করছি; আমাদের জানতে হবে আমাদের আভ্যন্তরীণ অবস্থান ও বাহ্যিক কার্যাবলী সমন্ধে।
আমাদের নির্ণয় করতে হবে আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী না দূরবর্তী অবস্থানে আছি কারণ আমাদের বিবেক আমাদের জানান দেয় কোন প্রকার পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছি কিনা।
হয়ত আমরা আমাদের বাহ্যিক কার্যকলাপের কোন বিচ্যুতি বউপলব্ধি করতে পারিনা কিন্তু বিবেক দ্বারা বুঝতে পারি আল্লাহর সাথে আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে, যার দ্বারা আমরা আমাদের কাজগুলোকে নির্ণয় করতে পারি।
এই মূল্যায়ন চরম পর্যায় ছাড়া হওয়া উচিৎ: ছোটখাটো বিষয়কে অবমূল্যায়ন কিংবা অতিমূল্যায়ন করা যাবেনা কেননা নিজেকে ঘৃণা করা তাওবাহ বা ক্ষমার লক্ষ্য হতে পারেনা।
সুতরাং প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজেকে জানা, অথবা নিজের মানসিক অবস্থা ও দৈহিক কর্মকান্ডের উপলব্ধি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন