ছোটবেলায় আমরা গল্প শুনেছি আলাদিনের জাদুর চেরাগ দিয়ে সব স্বপ্নপূরণ হয়ে যায়। আলাদিনের জাদুর ওই চেরাগ ঘষা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা দৈত্য বেরিয়ে এসে তিনটি ইচ্ছাপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলে- ‘হুকুম করুন, জাঁহাপনা’। এরপর যা ইচ্ছে চাইবেন আর তা পূরণ হয়ে যাবে।
ছোটবেলায় এ গল্প শুনে আমারও বেশ ইচ্ছে হতো যদি এমন একটি চেরাগ পেতাম। একটু বয়স যখন বাড়ে বুজ-জ্ঞান হয়, তখন বুঝতে পারি এতো গল্প। বাস্তবে আলাদীনের ‘জাদুর চেরাগ’ বলে কিছু নেই।
কিন্তু এখন মাঝ বয়সে এসে মনে হয়, ছোটবেলার ‘আলাদীনের চেরাগ’ নিছক গল্প নয়, এতো বাস্তব। তা না হলে সরকারি ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সিদ্দিকী নাজমুল আলম ব্যাংক মালিক, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ সাড়ে ছয় কোটি টাকায় গ্রামে রাজপ্রাসাদ করেন কি করে!
সম্প্রতি আলাদীনের চেরাগের খবর দিয়েছে বণিক বার্তা। পত্রিকাটির খবরে জানা যায় সরকারি ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল এখন ব্যাংক মালিক।
২০১১ সালের জুলাইয়ে ২৭তম কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সিদ্দিকী নাজমুল আলম। এর এক বছর পরই ব্যাংক উদ্যোক্তা বনে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষের এ শিক্ষার্থী। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া দ্য ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের ৩৯ ব্যক্তি উদ্যোক্তার একজনে পরিণত হন।
প্রতিষ্ঠাকালেই ব্যাংকটির ১০ লাখ শেয়ারের মালিক হন জামালপুরের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ঢাকায় আসা সিদ্দিকী নাজমুল আলম। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা হিসাবে ফারমার্স ব্যাংকের মূলধনে ছাত্রলীগের এ সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোগান দিয়েছেন এক কোটি টাকা।
তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা বলছেন, নেতা হওয়ার পর আর্থিকভাবে অস্বাভাবিক উত্থান হয় নাজমুলের। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে তার লাইফস্টাইলে। দামি গাড়ি, ফ্ল্যাট, শহর ও গ্রামে বহুতল বাড়িসহ বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি।
ছাত্রলীগের পদে থেকে দামি গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে তখন সিদ্দিকী নাজমুল আলম সে সময় বলেছিলেন, তার বন্ধু মেহেদী হাসান গাড়িটি তাকে উপহার দিয়েছেন। ব্যাংকের শেয়ার কিনে উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়েও গতকাল একই কথা বলেন তিনি। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সিদ্দিকী নাজমুল আলমের সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ারের মালিক আমি নই। আমার বন্ধু মেহেদী হাসান ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক। সে আমার নামে ব্যাংকটিতে এক কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে। শেয়ারবাজার বা ব্যাংক বিষয়ে তেমন কোনো ধারণা নেই আমার।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় ব্যাংকের উদ্যোক্তা হওয়ায় লঙ্ঘিত হয়েছে সংগঠনের গঠনতন্ত্রও। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) ধারায় বলা হয়েছে, বিবাহিত, ব্যবসায়ী ও চাকরিতে নিয়োজিত কোনো ছাত্র ও ছাত্রী ছাত্রলীগের নেতা হতে পারবেন না।
২০১১ সালের ১২ জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বে ছিলেন সিদ্দিকী নাজমুল আলম। সে সময়ে ব্যাংকের উদ্যোক্তা হয়ে গঠনতন্ত্রের এ ধারা লঙ্ঘন করেছেন তিনি।
সিদ্দিকী নাজমুল আলমের পরিচিতজনদের উদ্ধৃত করে বণিক বার্তা জানায়, জামালপুরের পাথালিয়ার একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠেন তিনি। তার বাবা ছিলেন খাদ্য বিভাগের কর্মচারী। একতলা টিনশেডের একটি বাড়ি ছিল তাদের। জামালপুর জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সিদ্দিকী নাজমুল আলম সবার বড়।
তার সমসাময়িক সময়ে দায়িত্ব পালন করা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হওয়ার পর সবসময়ই আর্থিক টানাপড়েনে থাকতেন নাজমুল। কিন্তু ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর বদলে যায় তার জীবন। সাদামাটা জীবন ক্রমেই হয়ে ওঠে বিলাসবহুল। দলীয় পদকে এক্ষেত্রে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছেন তিনি। উদ্যোক্তা হয়েছেন ব্যাংকেরও। শুধু ব্যাংক নয় এখন নাকি যুক্তরাজ্যে বাড়িও কিনতে যাচ্ছেন তিনি। তাই অনেক দিন ধরে সেখানে অবস্থান করছেন।
এদিকে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের ব্যাংক মালিক বনে যাওয়ার চাঞ্চল্যকর খবরের ঝড় থামার আগেই পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগের বিত্তবৈভবের মালিক বনে যাওয়ার আরেক চাঞ্চল্যকর কাহিনী। ছাত্রলীগ সভাপতি হওয়ার মাত্র দুই বছরের মাথায় বিলাসবহুল বাড়ি তৈরির বিষয়টি নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড়ও সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সব মহলে। মাদারীপুর সদরে সোহাগ কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নতুন এ বাড়ি তৈরি করেছেন বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। তিনতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি তুলেছেন সোহাগ। বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে মাত্র এক মাস আগে।
এলাকার একটি সূত্র জানিয়েছে, মাদারীপুরের সবচেয়ে অভিজাত বাড়িটির মালিক এখন সাইফুর রহমান সোহাগ। ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পরই তিনি যেন আলাদীনের চেরাগ পেয়ে যান। ডুপ্লেক্স এই বাড়িটির পাশেই ছাত্রলীগ সভাপতির আগের টিনশেড বিল্ডিং এখনো রয়েছে। নতুন বাড়িটি দেখতে এলাকার মানুষরা এখন ভিড়ও করছেন বলে নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।
সাইফুর রহমান সোহাগের বাবা এইচএম আবদুর রহমান একজন শিক্ষক এবং মা সমাজসেবী মর্জিনা খানম পেশা অবসরপ্রাপ্ত পরিবার কল্যাণ সহকারী। তিন ভাইয়ের মধ্যে সাইফুর রহমান সোহাগ দ্বিতীয়। তার বড় ভাই মাহবুবুর রহমান সোহেল সুইডেনের লিনিয়াস ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছেন। সুইডেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাইফুর রহমান সোহাগের আরেক ভাই আরিফ হোসেন সুমন সুইডেন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। এই দুইভাইকেও সুইডেন পাঠিয়েছেন সোহাগ।
যদিও ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ জানিয়েছেন, আমার দুই ভাই প্রবাসী এবং বাবা-মায়ের টাকায় এ বাড়ি করা হয়েছে। ছাত্রলীগ সভাপতি হওয়ার আগেই বাড়ির কাজ শুরু হয়েছিল এবং শেষও হয়েছে তিনি সভাপতি হওয়ার আগে।
এলাকাবাসী বলছে এ বাড়ির পুরো টাকাই সোহাগের। তার বাবা -মা'র তেমন কোন টাকা বা সম্পদ ছিল না। সুইডেনে এক ভাই চাকরি করলেও আরেক ভাই পড়ছে।
এভাবে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের মিটিংয়েও কথা উঠেছে। সম্প্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সায়েম খান তার নির্ধারিত বক্তব্য দিতে গিয়ে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জানতে চান, আপনারা (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) এত টাকা বাসা ভাড়া দেন সেই টাকা পান কোথায়? আপনাদের টাকার উৎস কি? তিনি ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মানাধীন শেখ রাসেল টাওয়ারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশনের কাছ হতে চাঁদা তোলারও অভিযোগ তোলেন এবং তার কাছে এ সম্পর্কিত তথ্যপ্রমাণ আছে বলে জানান। সায়েম খানের এইসব অভিযোগের জবাবে সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন বলেন, ছাত্রলীগের জন্য নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আমাদের মাসে দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা দেন। তখন সায়েম খান বলেন, সেই টাকাতে তো আমারও ভাগ আছে, আমার ভাগ কোথায়? সভায় ছাত্রলীগ নেতাদের এইসব বিলাসী জীবনযাপনের প্রতি প্রশ্ন তুলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের রোষানলেও পড়তে হয়েছে তাকে। এর আগে ১৩ জানুয়ারি হেলিকপ্টারে করে ঈশ্বরদীতে এক সম্মেলনে যোগ দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে প্রতিদিনই শিরোনাম হচ্ছে ছাত্রলীগ। এইসব নিয়ে খোদ সরকার দলীয় নেতাদেরই বিব্রত হতে হচ্ছে।এমনকি ২০০৯ সালের ৩ এপ্রিল ছাত্রলীগের এইসব কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে সংগঠনটির ‘সাংগঠনিক নেত্রী’র পদ থেকে ইস্তফা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ছাত্রলীগকে খারাপ খবরের শিরোনাম না হতে পরামর্শ দেন এবং ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ সোহরোওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ছাত্রলীগের পুনর্মিলনীতে ছাত্রলীগকে শপথ পাঠ করিয়ে খারাপ খবরের শিরোনাম না হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেন। কিন্তু তারপরেও সংগঠনের খারাপ খবরে শিরোনাম থেকে বের হতে পারছে না সংগঠনটি। বরং নিত্য নতুন ঘটনায় তারা প্রতিনিয়তই খারাপ খবরের শিরোনাম হয়ে চলেছে। সর্বশেষ ২০ এপ্রিল ২০১৭ তে প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরশেষে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সংগঠনের বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যকলাপ নিয়ে শাসান আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক।
এত পরামর্শ ও সাবধান বাণীর পরও ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, যেকোনো ধরনের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখলদারি মেনে নিয়ে ব্যবসায়-বাণিজ্য কিংবা উন্নয়নকাজ চালাতে হবে। এ থেকে স্পর্শকাতর সরকারি কাজও বাদ যাচ্ছে না।
সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় গ্যাস অনুসন্ধানে কূপ খননের কাজে কর্মরত ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। তিতাস গ্যাস ফিল্ডের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করে তারা এই প্রকল্প ম্যানেজারকে মারধর করে। এ অবস্থায় সেখানে কর্মরত বিদেশীরা ভয়ে পালিয়ে অন্য স্থানে আশ্রয় নেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে সশস্ত্র অবস্থায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালায়। হামলাকারীরা এই প্রকল্পে ব্যবহৃত, গাড়ি, জ্বালানি ও খাবার কোন ঠিকাদার সরবরাহ করে তা জানতে চান। ঢাকার ঠিকাদারেরা এগুলো সরবরাহ করে জানার পর প্রকল্প ব্যবস্থাপককে মারধর করা হয়। হামলার এ ঘটনা থেকে প্রমাণ হয় মূলত ঠিকাদারি বা চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে।
অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছাত্রলীগ সারা দেশে কিভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা এর একটি উদাহরণ মাত্র। স্থানীয় পর্যায়ের একজন নেতা কী ধরনের বেপরোয়া যে, গ্যাস খননের মতো স্পর্শকাতর ও সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছে। শুধু তা-ই নয়, প্রকল্প কর্মকর্তাকে মারধর পর্যন্ত করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে এ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, তারা যাই করুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিতে পারবে না। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, সারা দেশে এখন এমন অবস্থা বিরাজ করছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, গত আট বছরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনায় ১২৫ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে ৭১ জনই সংগঠনটির নিজেদের কর্মী। এদের মধ্যে আবার ৬০ জন নিহত হয়েছেন নিজেদের বিভিন্ন উপদলের কোন্দলে।
সংঘর্ষের অনেকগুলো ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অর্থ উপার্জন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার প্রায় সবগুলো সংঘর্ষেরই মূল কারণ। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যার/ যাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিও তারাই নিয়ন্ত্রণ করে।
শুধু ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সম্পাদকই নয়, সারা দেশে ছাত্রলীগ চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে নেমে পড়েছে। কয় বছর আগেও যারা এক হাজার টাকার নোট দেখেননি তারা এখন গাড়ি বাড়ির মালিক। বেনসন সিগারেট খেয়ে ধুঁয়া ছড়েন অন্যের দিকে। শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন, বাচ্চাদের লেখাপড়া করান ইংলিশ মিডিয়ামে। মাস শেষে খরচ লাখ টাকা। একজন ছাত্র মাস শেষে লাখ টাকা যোগাতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে।
বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন, পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে। আজ মনে হচ্ছে ছাত্রলীগ ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে বেশ সক্ষম হয়েছে।
কাদের গনি চৌধুরী
লেখক: জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন