কিছুদিন আগে পুলিশের দুর্নীতি নিয়ে খোদ পুলিশেরই এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমালোচনায় মনোনিবেশ করলেন। তার বক্তব্যের সারমর্ম ছিল-কতিপয় পুলিশ সদস্যের দুর্নীতি এবং অপকর্মের দায়ভার পুরো পুলিশ বাহিনী নেবে কেন? এই বক্তব্যের জন্য তিনি যেমন প্রশংসিত হয়েছেন, তেমনি আবার অনেকের কাছে বিরাগভাজনও হয়েছেন। বিষয়টি বেশ কয়েকটি পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে।
একটা বিষয় ভালোই লাগল। আত্মসমালোচনার আওয়াজ এখন ঘরের বাইরেও চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ একটি পরিবর্তন এসেছে। আত্মসমালোচনা যখন আর কোনো পেশার গ্লানি নয়, তখন সে পেশার মানোন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী।
অনেকেই হয়তো একমত হবেন যে, এদেশে এককভাবে সব থেকে বেশি আলোচিত-সমালোচিত পেশার তালিকায় পুলিশ বরাবরই এক নাম্বারে। চায়ের স্টলের আলোচনা, পত্রিকা, সাহিত্য, নাটক-সিনেমা, মানুষের অনুমানজুড়ে বিস্তৃত হয়ে আছে পুলিশের সমালোচনা। এক কথায় বললে পুলিশের সমালোচনা একটি জনপ্রিয় টপিকও বটে। গুলিস্তানের মোড়ে দাঁড়িয়ে আপনি পুলিশের সমালোচনা করে একটি বক্তব্য দিন, দেখবেন হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে হাতে তালি দিতে থাকবে। ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিন, দেখবেন হাজার হাজার 'লাইক' আর 'শেয়ার'-এর বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
একজন জনপ্রিয় ফেসবুকিস্ট নাকি তার প্রতি তিনটি স্ট্যাটাসের মধ্যে একটি পুলিশকে কটাক্ষ করে দিয়ে থাকেন। কারণ এই ইস্যুতে 'লাইক' বেশি পড়ে। সম্ভব হলে তিনি নাকি সবগুলোই পুলিশ নিয়ে দিতেন। কিন্তু দেখতে খারাপ লাগবে বলে তিনি তা দেন না। অবশ্য 'ভয়' বলেও তো একটা কথা আছে!
এই যে ধরুন আমার এই স্ট্যাটাস। এখানে যে আমি খুব কম 'লাইক' পড়বে তা আমি নিশ্চিত। কারণ আমি পুলিশের পক্ষে লিখেছি।
আসলে পুলিশের সমালোচনা শুধু সমালোচনায় সীমাবদ্ধ থাকে না, কখনও কখনও তা বাণিজ্য, জনপ্রিয়তা কিংবা স্বার্থ উদ্ধারের কৌশলও হয়ে উঠে। একবার তো এক টিভি চ্যানেল ঈদের সময় গরুর ট্রাকে পুলিশের চাঁদাবাজির এক্সক্লুসিভ ভিডিও দেখাতে গিয়ে আগের বছরের ভিডিও দেখিয়ে দিয়েছিল। পুলিশের দুর্নীতির আবার আগের বছর বা পরের বছর কী? একটা হলেই হলো। কিন্তু না, বিধিবাম হলেন উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি আঙ্গুল তুলে যখন ভুলটি দেখিয়ে দিলেন তখন তারা ‘ক্ষমা প্রার্থনা' করলেন। কারণ, পুলিশ প্রধান সে বছর গ্যারান্টি দিয়েছিলেন যে, হাইওয়েতে কোনো চাঁদাবাজি হচ্ছে না। কিন্তু, এই চাঁদাবাজি না হওয়ার তো তেমন ‘নিউজ ভ্যাল্যু' নেই, আবার এদিকে চলতি বছরের কোনো ভিডিও নেই। তাহলে আর কী করার, চালিয়ে দিয়েছিলেন।
একটি দেশ বা সমাজের শুধু একটি পেশা কখনও খুব খারাপ' বা 'খুব ভালো' হতে পারে না। কাল্পনিক কোনো সমাজ বা দেশে হতে পারে। তাই যেকোনো সমাজের দুর্নীতি জন্য সমালোচিত পেশার তালিকা অনেক লম্বা। এই তালিকায় কেউ বাদ যায় না। শুধু কম আর বেশি। কিন্তু তাই বলে কি এই অজুহাতে পুলিশের দুর্নীতি মাফ পেয়ে যাবে? কখনও না। কেউ মাফ পাবে না। কেউ না। সমালোচনা চলবেই।
এই সমালোচনা না চললে পুলিশের দুর্নীতি হয়তো আরও বেশি হতো। সেবার মান কমে যেত, আর এই পেশা থেকে মেধাবীরাও মুখ ফিরিয়ে নিত। কিন্তু না, তা হয়নি। দিন দিন মেধাবী এবং ভালো পুলিশ অফিসারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভেতরে ভেতরে ধীরগতিতে হলেও অনেক মানোন্নয়ন হচ্ছে। তাই দুর্নীতির এই লম্বা তালিকাটি ধরে একে একে বাকি পেশাগুলোর সমালোচনাও করতে হবে। সবারই মানোন্নয়ন দরকার আছে বৈকি।
কেউ যদি তার পেশা নিয়ে সমালোচনা সহ্য করতে না পারে, তাহলে বুঝতে হবে আত্মশুদ্ধির জায়গাটা স্তব্ধ হয়ে গেছে। সেই পেশার আর কোনো মানোন্নয়ন হবে না। সামনে শুধু অসম্মান, গালিগালাজ আর অপদস্ত হওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই।
তাই, আসুন অন্যের সমালোচনার পাশাপাশি আত্মসমালোচনাও করি। না হলে যে, নিজ পেশার অস্তিত্বও বিলীন হয়ে যাবে। আমরা তো কেউ আর পুরোপুরি ‘ধোয়া তুলসি পাতা না'। কিছু না কিছু ময়লা সব পেশাজীবীর গায়েই মেখে আছে। আমার বা আপনার না হোক, অপর কোনো সহকর্মীর। তাই বড়াই করবো কিসের!
সব পেশার প্রতি সম্মান জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ। বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।
ছানোয়ার হোসেন
লেখক: কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের এডিসি
dhakatimes24
পাঠক মন্তব্য
SOME OF YOU ARE DOING A GOOD JOB BUT WHY AS A BAHINI , YOU ARE ACTING AS AWAMI VARATE BAHINI?
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন