মুনজের অাহমদ চৌধুরীঃ হাজারো ঘরপোড়া অাগুন,বিমানে সপ্ন পোড়ানো অাগুন। তবু অামাদের বিবেকের অাগুনটা জ্বলে না। অামরা রয়ে যাই অামাদের অাপন নীচতায়, ক্ষুদ্রতায়। অন্যের দোষ খোজাঁয়,মৃত বোনের নামেও গীবতে,কী বিভৎসতায়। পুলিশ হেফাজতে বিএনপি কর্মী হত্যা, সাংবাদিক নির্যাতন,দুর্ঘটনায় স্বজন হারানো মানুষের অার্তি। মৃত্যু অার বেদনার মিছিল দেশময়।
অামরা লেখবার জন্য শোকগাথা লিখি। মানুষজন পড়বার জন্য পড়েন। প্রযুক্তির অবারিত বাতায়ন বিবেক জাগাতে পারেনি। যদি পারত তবে স্বাধীন দেশে, গনতন্ত্রের হাফপ্যান্ট পরা রাষ্ট্রে পুলিশ হেফাজতে মানুষ মরলে মানুষ প্রতিবাদ করতো। বোধ বলে যদি কিছু থাকবার বাকী থাকত,তাহলে বিমান দুর্ঘটনার পর অামরা সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স,বৈমানিকের চরিত্র নিয়ে মাততাম না। দায়িত্ববোধ যদি কিছুটাও অবশিষ্ট থাকত,তবে এতবড় বিমান দুর্ঘটনার পর অামরা সবাই স্যোশাল মিডিয়ায় এয়ারলাইন্স এক্সিডেন্ট এক্সপার্ট সাজতাম না।
মানুষের বেদনা, দুর্ঘটনা, মৃত্যু কোন কিছুই এখন অার মানুষকে স্পর্শ করতে পারছে না। কলিজাগুলো যান্ত্রিকতা বোধকরি পাথর করে দিয়েছে। কী অাশ্চর্য। শোক,অশ্রু,সহমর্মীতা বড্ড খেলো হয়ে বাহ্যিকতায় ঝুলছে কেবল স্যোশাল মিডিয়ায়। প্রোফাইল,কাভার পিক অার ষ্টাটাসে। সবার কথা বলছি না। ব্যাতিক্রম অবশ্যই অাছে। কিন্তু ব্যাতিক্রম তো অার যাপিত বাস্তবতাকে অতিক্রম করতে পারে না। অসত্যপ্লাবিত, অনায্যতায় সংকূল সময়ের স্রোত। দেশে সবকিছুর দাম বাড়ে কেবল। সবচেয়ে কমদামী এখন মানুষের জীবন। জীবনগুলি এখানে খরচ হয়ে যায়। মিরপুরে পুড়িয়ে দেওয়া হল বা পুড়ে গেল ২৫ হাজার মানুষের বাড়ীঘর। পুলিশ হেফাজতে মারা হল বা মারা গেলেন ছাত্রদল কর্মী মিলন। কার কাছে বিচার চাইব এত মৃত্যুর? তবু অামরা অাপন স্বার্থ,সুবিধা অার নিরাপত্তামগ্নতায় নীরব থাকি। বোধের বিবেকের হায়রে নিম্নগামী সূচকের ধারা। যাদের কথা বলবার,লেখবার তারা নীরব। যাদের কথা শুনবার নয়,তারাই বলছেন। মানুষ তাই হয়ত জাগছে না।
রফিক আজাদের কবিতার লাইনগুলি ধার করে বলি – ‘আমরা খুব ছোট হয়ে গেছি? যেদিকে তাকাবে তুমি দেখতে পাবে ক্ষুদ্রের বিস্তার… ছোট হয়ে গেছে সব,অতঃপর, কোকিলের ছদ্মবেশে দাঁড়কাক বসেছে শাখায়।
অাগামীর জন্য অামরা কী রেখে যাচ্ছি?
তবু অাশায় থাকি,শয়তানরূপী মানুষের ভীড়ে মানুষরূপী দেবতাদের দেখবার। অাহা কতকাল, অামার মতোন অাধেক মানুষের ভীড় দেখি কেবল ,মানুষ দেখি না।
পুনশ্চঃ একাধিক রিপোর্টে দেখলাম কাঠমুন্ডুতে ফার্ষ্ট অফিসার পৃথূলার প্রথম ফ্লাইট ছিল সেটি। অাইসিওর নিয়ম অনুযায়ী যিনি বিমান চালনায় থাকবেন, ফ্লাইটের নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি কোন অবস্থাতেই কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ করবেন না। কিন্তু, শেষ চার মিনিটের অডিও রেকর্ডে অামরা শুনেছি, কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ করছিলেন ক্যাপ্টেন অাবিদ সুলতান। তার মানে দাড়ায় ফ্লাইটটি অবতরনের অাগ মুহুর্তে ফ্লাইটটি পরিচালনা করছিলেন ফার্ষ্ট অফিসার পৃথুলা রশিদ। ত্রিভূবন বিমানবন্দরের মতো বিশ্বের অন্যতম ঝুকিঁপুর্ন একটি বিমানবন্দরে একজন নবীন পাইলটকে দিয়েই কি ফ্লাইটটি ল্যান্ডিং করানো হয়েছিল? দূর্ঘটনার এতটা সময় পেরিয়ে গেলেও সে প্রশ্নের উত্তরের খোজেঁ কোন রির্পোট পাইনি অামাদের মিডিয়ায়।
মুনজের অাহমদ চৌধুরী
লন্ডন ১৪ই মার্চ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন